হোয়াইট রিবন নামক প্রচারণা সিঙ্গাপুরের পুরুষদের লিঙ্গীয় সহিংসতা প্রত্যাখানের আহ্বান জানাচ্ছে

White Ribbon campaign image from the Facebook page of AWARE

এ্যাওয়ার নামক ফেসবুক পাতায় হোয়াইট রিবন নামক প্রচারণার ছবি

সিঙ্গাপুরের লিঙ্গীয় সমতা বিষয়ক অ্যাডভোকেসি গ্রুপ হোয়াইট রিবন ক্যাম্পেইন নামক প্রচারণাকে সমর্থন করছে। এটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও কিশোরদের নিয়ে এক বৈশ্বিক আন্দোলন, যা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে যা কাজ করে যাচ্ছে।

এ্যাওয়ার বা দি অ্যাসোসিয়েশন অফ ওমেন ফর এ্যাকশন এন্ড রিসার্চ গত ২৫ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে এই প্রচারণার শুরু করেন, যা ঘটনাক্রমে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ দিবসে শুরু হয়।

বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে, এই প্রচারণা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের লিঙ্গীয় সহিংসতার ইতি টানার জন্য একটা সাদা ফিতা তাদের প্রোফাইলের ছবিতে আপলোড করার জন্য আহ্বান জানায়। প্রথম যারা এই প্রচারণার বিষয়টিকে তুলে ধরে তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হচ্ছেন সাতারু জোসেফ স্কুলিং, যিনি সিঙ্গাপুরের প্রথম স্বর্ণপদক বিজয়ী সাতারু। স্কুলিং, রিও অলিম্পিকে আমেরিকার কিংবদন্তির সাঁতারু মাইকেল ফেলপসকে পরাজিত করে স্বর্ণপদক জয় করেন।

তার ফেসবুক পাতায় লেখার সময় স্কুলিং জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেন যে “কারো উপর কর্তৃত্ব করা বা নির্মম আচরণ শক্তিমানের পরিচয় নয়।

এখন থেকে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশী করে পুরুষেরা গর্বের সঙ্গে নারীর প্রতি সহিংসতার ইতি টানার জন্য তাঁদের প্রতিশ্রুতি পালনে এগিয়ে আসবে। শক্তিশালী পুরুষ যে কোন ধরনের যৌন হয়রানি বিরুদ্ধে আস্ফালন প্রদর্শন করে, সেটা কোন ভাবে কেবল ঘরের ভেতরে সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য নয় (আলোচনার জন্য নয়)। আমাদের এমন এক সংস্কৃতি দরকার যা সম অধিকার প্রদর্শন করে, অন্যের প্রতি অশ্রদ্ধা নয়। একজন খেলোয়াড় হিসেবে, আমি সবাইকে জানাতে চাই শক্তিমত্তা মানে এই নয় যে কারো উপর কর্তৃত্ব ফলানো এবং কারো উপর জোর খাটানো।

Olympic gold medalist Joseph Schooling supports the White Ribbon campaign. Source: Facebook

অলিম্পিক স্বর্ণপদক বিজয়ী স্কুলিং হোয়াইট রিবন নামক প্রচারণা সমর্থন করছেনঃ সূত্র ফেসবুক।

এই হোয়াইট রিবন নামক প্রচারণা সিঙ্গাপুরের বেশ কয়েকজন পুরুষ নেতা ও এ্যাওয়ার নামক প্রচারণার অংশীদারদের লেখা চিঠি তুলে ধরেছে যে সকল চিঠিতে লেখা আছে “কিশোর এবং তরুণদের নির্দেশীকা ও পরামর্শ প্রদানের মত বিষয়, যাতে তারা উপলব্ধি করতে পারে পুরুষদের অবশ্যই নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে মুখ খুলতে হবে”।

এর মধ্যে একটি চিঠি লিখেছেন চিকিৎসক পোহ কিয়াং। তার চিঠি তার দুই ভাতিজার উদ্দেশ্যে লেখা যেখানে তিনি সত্যিকারের শক্তিমান হওয়ার প্রকৃত মূল্যের উপর গুরুত্ব প্রদান করেছেন:

তোমাদের মত, আমার জীবনের দুজন গুরুত্বপূর্ণ রমণী ছিলেন নারী-আমার দাদী (মাই আহ মা), আর আমার মা, আজ আমি যে “আমিতে” এবং যে নেতায় পরিণত হয়েছি, এর সবটাই তাদের ভালবাসার প্রভাবে। অল্প বয়স থেকে আমি শিখেছি শক্তি ও সামর্থ্য নারী বা পুরুষের হওয়ার উপর নির্ভর করে না। বাস্তবতা হচ্ছে, এই দুই নারীর কাছ থেকে আমি আবিস্কার করেছি শক্তিমত্তা বিষয়টি নিছক পুরুষালি নয়,যখন আতঙ্কের মুখোমুখি হওয়ার সময় দৃঢ়চেতা হয়ে তার মোকাবেলা করে, যখন বেদনায় এবং কাউকে হারানোর মত ব্যাথায় আক্রান্ত হয় তখন তারা তাদের সহনশীলতা প্রদর্শন করে, সাথে তারা যে কোন বঞ্চনায় দৃঢ়ভাবে তাঁদের শক্তি প্রদর্শন করে।

থিয়েটারের এক শিল্প নির্দেশক এ্যাড্রিয়ান পাং এই বিষয়ে আরেকটি চিঠি লিখেছেন, যিনি তার সন্তানদের লিখেছেন:

একজন শক্তিশালী পুরুষ হচ্ছে তিনি যিনি নাজুক হতে ভীতি নন এবং স্বীকার করেন যে তিনি ভয় পান, যিনি সবসময় সমবেদনা ও সংবেদনশীলতার চর্চা করেন, যিনি সবসময় সকল মানুষের জন্য সমান এমন এক পৃথিবীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সে রকম পৃথিবী গড়ার জন্য সক্রিয়।

আশা করা যায় যে, হোয়াইট রিবন বা সাদা ফিতা নামক প্রচারণার উদ্যোগ লিঙ্গীয় সহিংসতা নিয়ে কথা বলতে সাহায্য করবে, বিশেষ করে সিঙ্গাপুরের মত এক সমাজে যেখানে ৭০ শতাংশের মত যৌন হয়রানির ঘটনা পুলিশে রিপোর্ট করা হয় না। বেশ কয়েকটি জরিপ অনুসারে, সিঙ্গাপুরের সংগঠিত ১০টি যৌন সহিংসতার ৬টির ক্ষেত্রে ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা বারবার সহিংসতার শিকার হয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .