
ভিয়েতনামের প্রবীণেরা ভয়ে আঁতকে উঠতে পারে যদি আপনি আপনার ভাতের বাটির চপস্টিক সেখানে খাড়া ভাবে রাখেন। ছবি ফ্লিকারের কুইন ডোম্বব্রোস্কির পাতা থেকে নেওয়া। সিসি লাইসেন্সের আওতায় এই ছবি নেওয়া হয়েছে
ভিনহ ট্রান এর এই প্রবন্ধটি লাও ভাষা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে, যা একটি স্বাধীন ওয়েবসাইট, যেখানে পডকাস্ট তুলে ধরা হয়। এই সাইট মূলত ভিয়েতনামের কাহিনী তুলে ধরে। আর লেখা বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে গ্লোবাল ভয়েসেস-এ পুনরায় এই প্রবন্ধটি প্রকাশ করা হল।
ভিয়েতনামে কখনো ভাতের বাটির উপরে চপস্টিক বা ভাত খাওয়ার কাঠি খাড়া ভাবে রাখার কারণে কি হাতে বাড়ি খেয়েছেন? আর এর মানে কী? আসুন এই ধারণা সহ ভিয়েতনামের অন্যান্য কুসংস্কার সম্বন্ধে জেনে নেই।
১. কালো বেড়াল
বিশ্বের অনেক দেশে কালো বেড়াল এক অশুভ প্রাণী হিসেবে বিবেচিত হয়, কিন্তু ভিয়েতনামের নাগরিকদের জন্য দুর্ভাগ্য কালো বেড়ালের সাথে ঘরে প্রবেশ করে।
অধ্যাপিকা হোয়াং মাই এনগুয়েন কাছ থেকে আমরা এই ধারণার পেছনের ব্যাখ্যাটা পাচ্ছি।
অধ্যাপিকা এনগুয়েন বলেন যে এই কুসংস্কার সেই বিশ্বাসের শেকড়ে গ্রথিত যার সাথে মৃত্য, ঘরে একটি কালো বিড়ালের প্রবেশ এবং সেটির কফিনের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সাথে সম্পৃক্ত, কারো কারো মতে এই ঘটনায় হয়ত মৃত ব্যক্তিটি উঠে বসতে পারে। দৃশ্যত, এই গল্পটা কোন ধরনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছাড়াই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে গেছে। কিন্তু কেউ চায় না এই ঘটনা ঘটুক। এই ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য নাগরিকেরা যে কোন কিছু করতে প্রস্তুত।
২.বেজোড় সংখ্যায় ছবি না তোলা
যদি আপনি কোনদিন ভিয়েতনামের কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে যান, তাহলে খেয়াল করেন সেখানে ছবি তোলার সময় যদি কোন কারণে বেজোড় সংখ্যক ব্যক্তি সমবেত হয়েছে, তাহলে সাথে সাথে একজন ব্যক্তি ছবিতে জোড় সংখ্যা পূরণের জন্য দিয়ে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হবে? বেশ, এর পেছনে একটা “কারণ” আছে।
ভিয়েতনামের এক কুসংস্কার অনুসারে, ছবি তোলার সময় যে ব্যক্তি বেজোড় সংখ্যার ঠিক মাঝখানে থাকবে সে ছবিতে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে সবার আগে মারা যাবে, বিশেষ করে যখন কোন ছবিতে তিনজন ব্যক্তি থাকে, তাহলে মাঝখানের উক্ত ব্যক্তি সবার আগে মৃত্যু বরণ করবে, তবে কোন কারণে যদি তার দ্রুত মৃত্যু না ঘটে, তাহলে ছবিতে থাকা তিনজনের কপালে দুর্গতি আছে।
আরো একবার জানাই, এর পেছনে কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, কিন্তু জীবন হারানোর ঝুঁকি কে নিতে চায়?
৩. ভাতের বাটির উপরে চপস্টিক রাখা
ভিয়েতনামের প্রবীণরা আতঙ্কে আতকে উঠে যদি দেখে চপস্টিক ভাতের বাটির উপর খাড়া ভাবে রাখা আছে। এর কারণ কী?
কেউ কেউ বলে, এর কারণ এই অবস্থায় কাঠিগুলোকে দেখতে অনেকটা ধূপকাঠির মত লাগে (চপস্টিক থাকার কারণে ভাতের বাটিকে দেখতে অনেকটা ধূপদানির মত লাগে)।
অধ্যাপিকা নুগুয়েন বলেন এমন নয় যে ধূপদানি দুর্ভাগ্যের প্রতীক। তবে প্রায়শ ধূপদানি কোন মৃত ব্যক্তির স্মরণ সভায় রাখা হয়, যার ফলে পরিবারের কারো মৃত্যুর সাথে ধূপদানিকে সম্পৃক্ত করা হয়। তিনি বলেন এই ঘটনার ফলে কেউ দুর্ভাগ্যের পতিত হয়েছে এমন কোন নজির নেই, কিন্তু ল্যান বুই নামের এক ছাত্রী বলছেন যে তিনি এই ভাবে বাটিতে চপস্টিক রাখার বিষয়টি এড়িয়ে চলেন, কারণ তিনি এই ধারনার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন।
ব্যক্তিগত ভাবে আমার ধারণা নেই যে কুসংস্কার দুর্ভাগ্য ডেকে আনে কিনা, কিন্তু তারপরেও আমি সব ঘটনা এড়িয়ে চলি কারণ এগুলো বাজে আচরণ। এটি আমার নিজের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উপায়।
এখন আপনারা ভিয়েতনামের তিনটি জনপ্রিয় কুসংস্কার সম্বন্ধে বিস্তারিত জানলেন। এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পালা যে এই সকল কুসংস্কারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে, নাকি দুর্ভাগ্য এড়িয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে যে কেউ হয়ত আরো সামান্য কিছু জেনে নিজের পছন্দটি বেছে নিতে পারে, সে কি এই সকল কুসংস্কার মেনে চলবে, নাকি এড়িয়ে যাবে।
নীচের এই পডকাস্ট-এর মাধ্যমে আপনারা ভিয়েতনামের কুসংস্কার সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত শুনতে পারেন: