গত দু’বছরে বলকান অঞ্চলের শহরগুলোতে বায়ু দূষণ বিপদজনক মাত্রায় বেড়ে গেছে। সারাজেভো এবং স্কোপিয়ে ইউরোপের সবচে’ দুষিত শহর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। শীতকালে এত কুয়াশা পড়ে যে, কিছুই দেখা যায় না। শহরে রাতের বাস স্টেশনগুলোতে তাঁবু স্থাপন করার জন্য সম্প্রতি স্কোপিয়ের তরুণেরা দাবি তুলেছেন। তাছাড়া স্কোপজের পথচারী এবং সাইকেল চালকরা নিরাপদ ফুটপাত এবং মোটরজাতীয় নয় এমন পরিবহনের জন্য অবকাঠামো নির্মাণেরও দাবি করেছেন।
নেটনাগরিকেরা তাদের দুর্দশার চিত্র ক্লিন এয়ার হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে টুইটারে তুলে ধরেছেন:
Вдиши длабоко! #ЧистВоздух pic.twitter.com/JVTNzBzVPC
— Коприва (@Kopriva) December 7, 2015
গভীরভাবে শ্বাস নিন। #ক্লিনএয়ার
,,Диши длабоко" – Игор Џамбазов
,,Не можам, загаден е воздухот" – Скопје #СкопјеНеДише #ЧистВоздух #БидиЗелен https://t.co/mLxSvbNZse— Цветко (@CvetkoBidiZelen) February 1, 2015
গভীরভাবে শ্বাস নিন।
আমি পারছি না। বাতাসে দুষণের মাত্রা অত্যাধিক।
Град Скопје набави и парни локомотиви #чиствоздух pic.twitter.com/6n42S3caB1
— The Macedonian дечко (@B0b0A) February 17, 2016
স্কোপজে শহরে এখনো কিছু বাষ্পচালিত ইঞ্জিন চালু রয়েছে। #ক্লিনএয়ার
গ্রাম অঞ্চল থেকে শহরে অভিবাসনের হার অনেক বেড়েছে। দ্রুততর হচ্ছে নগরায়ন। পৃথিবীজুড়েই এটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের যাতায়াতের চাহিদা মেটাতে গাড়ি সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। বলকানের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এখানকার গণপরিবহনের সংখ্যা অপর্যাপ্ত, মানেরও ঠিক নেই, তাছাড়া মানুষজনের মধ্যে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সবচে’ বড় কথা, এখনো ডিজেল চালিত গাড়ি বহাল তবিয়তে চলছে।
গাড়িগুলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে চলে। ফলে বাতাসে বিপুল পরিমাণ কার্বন ড্রাই অক্সাইড ছড়িয়ে পড়ে। এতে বায়ু দুষণের হারও বেশি হয়, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত কপ২১ সম্মেলনের সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, প্রতি বছর বায়ু দূষণ জনিত রোগে ৭ মিলিয়নের বেশি মানুষ মারা যায়। গাড়িতে ডিজেলের ব্যবহার বায়ু দূষণের অন্যতম মূল কারণ।
জীবন মানের উন্নয়ন নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ করে এমন একটি বেসরকারি সংস্থা ডেসপাসিও’র কার্লোস ফিলিপ পার্দো বলেছেন, আপনি যখন পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলবেন, তখন সবাই রাস্তার কথা বলছেন, সেটা ধরে নিবে। কিন্তু আমাদের আরো বেশি রাস্তার দরকার নেই। আমাদের গণপরিবহনের বর্তমান অবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। মানুষদেরকেও সাইকেল কিংবা হাঁটার মতো বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা খুঁজে নিতে হবে।
২০১৬ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে স্কোপিয়ের মেয়র কোসি ট্রাজানোভস্কি ১৭ মিলিয়ন ইউরো ব্যয়ে মেসিডোনিয়ার রাজধানীতে ৯০০০ মিটার প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণের ঘোষণা দেন। মূলত দেশটির ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি এমন পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তিনি গণপরিবহন জন্য অন্য কোনো সমাধান এবং পথচারী ও সাইকেল আরোহীদের জন্য প্রণোদনামূলক কোনো কিছুই বলেননি।
এই পরিস্থিতিতে কী করে অবস্থার উন্নয়ন করতে হয়, সেটা নরওয়ের কাছ থেকে শেখার আছে। একসময় নরওয়েতে এমন অবস্থাই ছিল। দেশটি রাস্তায় ডিজেল চালিত গাড়ির পরিবর্তে বৈদ্যুতিক গাড়ি নামায়। বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহার উৎসাহিত করার জন্য গাড়ির ওপর কর মওকুফ করে। বিনামূল্যে গাড়ি পার্কিংয়ের সুযোগ দেয়। এখন নরওয়েতে যতো গাড়ি বিক্রি হয়, তার এক-পঞ্চমাংশই বৈদ্যুতিক গাড়ি। নরওয়ে, সুইডেন, জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডে মাথাপিছু বাইসাইকেলের সংখ্যা অনেক বেশি। এসব দেশের শহরগুলোতে সাইকেল চালানোর জন্য বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ সামলাতে বলকান অঞ্চলের শহরগুলোতে নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। কমে যাচ্ছে সবুজের পরিমাণ। যদিও বিশেষজ্ঞরা বাজে এবং টেকসই নয় এমন নগর পরিকল্পনাকে দায়ী করেছেন। মেসিডোনিয়ার সবচে’ বেশি দুষিত শহর হিসেবে পরিচিত স্কোপজে এবং টেটোভোর নাগরিক এবং অধিকার আন্দোলনকর্মীরা স্থানীয় সরকারকে এ বিষয়ে দায় কাঁধে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
#ДоброУтро Град Скопје! Дури и за Европска недела на мобилност, Скопје беше крцато со коли. Сакаме акција не само декларација за #чиствоздух https://t.co/Xfch8HxC7I
— BanAna (@Banankata) September 26, 2016
Good morning, Skopje City government! Even during the European Mobility Week, Skopje was full of cars. We demand actions, not declarations on #CleanAir!
শুভ সকাল স্কোপিয়ে শহরের সরকার। ইউরোপীয় গতিশীলতা সপ্তাহে স্কোপিয়ে’র রাস্তা গাড়িতে ভর্তি। কোনো ঘোষণা নয়, আমরা কাজ দেখতে চাই। #ক্লিনএয়ার।
শহরে সবুজায়নের গুরুত্ব অনুধাবন করাতে ইকো সভেস্ট নামে মেসিডোনিয়ার একটি বেসরকারি সংগঠন ভার্টিকাল সিটি গার্ডেনের উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের প্রকল্পের নাম ‘সিটি ট্রি’। স্কোপিয়ে এবং টেটোভোতে বায়ু দুষণের হার বেশি হওয়ায় সেখানেই তারা প্রকল্প বাস্তবায় করছে। যদিও প্রকল্পের প্রচারাভিযান কাজের অংশ হিসেবে এক সংবাদ সম্মেলনে ইকো সভেস্ট-এর আনা কোলোভিক লেসোস্কা পরিষ্কারভাবে বলেছেন: সিটি ট্রি গাছের বিকল্প নয়, গাছের বিকল্প কিছুই হতে পারে না।