খোরো একটি প্রত্যন্ত শহর যেখানে গ্লোবাল ভয়েসেস কমিউনিটির সদস্য আলেকজান্ডার সোদিকভকে শিক্ষাগত গবেষণা পরিচালনা করার জন্য অন্যায়ভাবে গ্রেফতার ও বন্দী করা হয়।
খোরো প্রত্যন্ত একটি জায়গা কারণ তা মধ্য এশিয়ার তাজিকিস্তান পর্বতমালার মধ্যে অবস্থিত যা অনেকের সংজ্ঞায় দূরবর্তী এক অঞ্চল এবং এটা আরও দূরে মনে হয়, কারণ তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবে থেকে ১৪ ঘন্টার রাস্তা যদি ভূমিধস ও ব্রিজ মেরামতের কারণে রাস্তা বন্ধ না থাকে।
স্বশাসিত গোরনো-বাদাকসানের এক দিকে খোরো এবং অন্যদিকে ধূলো ধূসরিত মারঘাব। মেঘ-কাটা পামির হাইওয়েতে ভ্রমণকারীরা দ্রুত গাড়ী চালিয়ে যায় আশপাশের জনবসতিগুলোকে ছাড়িয়ে যেখানে আঞ্চলিকরা ছাড়া আর কারো দেখা মেলে না, এ যেন এই পৃথিবীর অভিজ্ঞতা নয়।
কিন্তু জিবিআও এবং এর প্রসাশনিক কেন্দ্র খোরো যে একজনের অধীন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাজিক প্রেসিডেন্ট এমোমলি রাহমন এর শাসন অধিবাসীদের তা মনে করিয়ে দেয়।
তাজিকিস্তান-একটি খুব দুর্বল রাষ্ট্র
আলেকজান্ডার সোদিকভের তাজিক ও এশিয়ান কেন্দ্রীয় রাজনীতি বিষয়ক লেখায় কঠোরতা, অন্তর্দৃষ্টি ও নিরপেক্ষতার ছাপ রয়েছে যা যেকোনো শীর্ষ রাজনৈতিক বিশ্লেষকের লেখা বহন করে। এছাড়াও তার আন্তজার্তিক অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তিনি নিজের জন্মভূমি সম্পর্কে গবেষণা এবং তা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
তাজিক কর্তৃপক্ষ অ্যালেক্স মত কাউকে হুমকি হিসেবে দেখতে পারে তা বুঝতে হলে, এটি জানা গুরুত্বপূর্ণ যে তার গ্রেপ্তার শক্তি প্রদর্শনের চেয়ে বরং দুর্বলতা প্রদর্শন করেছে কারণ ঐ অঞ্চলে তাজিকিস্তানের দুর্বল সরকারের দুর্বল উপস্থিতি রয়েছে।
গোরনো-বাদাকসান এবং খোরোকে প্রায়ই মিডিয়া তাজিকস্থান অ্যাকিলিসের গোড়ালি আচ্ছাদন হিসেবে আখ্যায়িত করে যা আসলে দুশান্বের (রাজধানী) নীতি-নির্ধারকদের জন্য একটি সরকারবিরোধী মনোভাব রয়েছে এবং সরকারের কার্যকারিতা রিট প্রকাশ করার বেশি কিছু না। কিন্তু এই উপমা টি তাজিকিস্তানের সরকার যে তাজিকিস্তানের সর্বত্র দুর্বল তা বোঝার জন্য যথেষ্ট নয়। যদি তাজিক রাষ্ট্রটিকে কখনো পৌরাণিক অ্যাকিলিসের মত, একটি ঐন্দ্রজালিক নদীতে চুবানো হয়, তাহলে তার শরীরের অধিকাংশ অংশ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। দশ লক্ষ তাজিককে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন যারা কাজ করছে/a> রাশিয়াতে শ্রমিক হিসেবে, পৃথিবীর সবচেয়ে রেমিট্যান্স নির্ভর দেশটিতে কাজ পেতে ব্যর্থ হয়ে, এবং লক্ষ লক্ষ তাজিকরা তাজিকিস্তানের মধ্যে থেকে প্রতিবছর শীতকালে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় থাকে।
সাইবারস্পেস প্রেসিডেন্ট রাহমন এর শাসনের জন্য অন্য কালশিটে জায়গা। জুন মাসের ৯ তারিখ থেকে, ইউটিউব এবং গুগলের অন্যান্য পরিষেবা কেউ “প্রযুক্তিগত কারণে” অবরোধ করা হয়েছে। [রুশ ভাষায়] ইউটিউব বা ফেসবুকে দেশে “প্রযুক্তিগত কারণে” তখনই বন্ধ করা হয় যখন: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে, , পুত্রের বিয়েতে প্রেসিডেন্ট রাহমনের মাতাল-নাচের একটি অবাঞ্ছিত ভিডিও, বা একটি বিশেষ বাহিনীর খোরোতে অভিযানের সময়। এবার যদিও ইউটিউব বন্ধ করার জন্যই বন্ধ হয়ে থাকতে পারে।
এটা সহজেই বোঝা যায় তাজিক সরকার ইন্টারনেট কেন অপছন্দ করে, যদিও দশজনের মধ্যে একজনের কাছে ইন্টারনেট সেবা পৌছে। তথ্য নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সীমিত হওয়া ছাড়াও ইন্টারনেট তাজিক রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে উপস্থাপন করতে বাধা প্রদান করে। দেশটিতেপৃথিবীর দীর্ঘতম পতাকাদণ্ড, সবচেয়ে বড় চাঘর, সবচেয়ে বড় পাঠাগার রয়েছে, এবং একদিনসবচেয়ে বড় পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে যা সরকার অনেক গর্ব নিয়ে প্রচার করে। এসব সাফল্য উদযাপনের পরিবর্তে, ইন্টারনেট প্রকাশ্যে শাসন ব্যবস্থাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে।
গত নভেম্বরে রাহমনের পুনঃনির্বাচনের আগে পাবলিক ফেসবুক দল প্লাটফর্মা ভর্তি ছিল নিরুৎসাহিত করার মত লোক দিয়ে যারা তাকে এমনভাবে দেখাচ্ছিল যে সে “রাহমিনেটর” (“আমি ফিরে আসবো”)
এবং অন্যান্য অমনোরম পরিচয়ে। তাজিক যোগাযোগ প্রধান বেগ জুখুরোভকে (এখন বেগ সাবুর) ডিসেম্বর ২০১২ সালে ফেসবুকে ব্লকের ন্যায্যতা চ্যালেঞ্জ করা হলে তিনি দুশান্বেতে তার অফিসে “তার অফিস সময়ে” তার সাথে দেখা করতে জুকারবার্গকে সমন জারি করেন এবং সাথে সাথেই তাজিক সাইবার জগতে হাসির পাত্র হয়ে ওঠেন।
কিন্তু জিবিআওতে, দেশটির দরিদ্রতম অংশ, ইন্টারনেট তেমন একটা ব্যবহার করে না।
খোরো এবং গরনো-বাদাখসানঃ কার স্বায়ত্তশাসনে?
১৯২৯ সাল পর্যন্ত, তাজিক সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (এসএসআর) নিজেই উজবেকীয় এসএসআর মধ্যে একটি স্বশাসিত প্রজাতন্ত্র ছিল। উচ্চ উচ্চতার গোরনো-বাদাখসান বিভাগ ‘একই এসএসআর এর মধ্যে একটি স্বশাসিত প্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিল, সোভিয়েত আমলে এবং তাজিক স্বাধীনতা্র আগের গৃহযুদ্ধে তা বজায় ছিল যেখানে অনেক বাদাখসানিস পরাজিত মার্কিন তাজিক বিরোধীদলের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল। অন্তত ৫0,000 মানুষ মারা গিয়েছিল একটি দ্বন্দ্বে যেখানে এমোমলি রাহমন সারাদেশের আনুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ সুসংহত করেছিল। তলোয়ারের জোড়ে ক্ষমতায় আসার কারণে রাহমন একই উপায়ে মরে যাবার ভয়ে থাকে।
১৯৯৭ সালে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এক দশক ধরে, খোরো বাহ্যত কোন বিরোধী ঘাঁটিতে পরিণত হয়নি। পামির হাইওয়ের একটি অনুর্বর সীমা, মরূদ্যান শহর যেখানে আকর্ষণীয় মেয়েরা প্রথাগত সংস্কৃতি ও ভাষার চর্চা করে এবং পামিরি পোষাক-আশাকে আলাদাভাবে স্বাগত জানায়। জিবিআও বাসিন্দাদের, যাদের অধিকাংশই ইসলামের ইসমাইলি শাখা অনুসরণ (সুন্নি ইসলামে প্রজাতন্ত্র অন্যত্র চর্চা যেমন ভিন্ন) সঙ্গে, উপাদান সহায়তার জন্য ইসমাইলি নেতা বাঁক আগা খান যুদ্ধ এবং সহিংস সশস্ত্র সংঘর্ষের নবায়ন মধ্যে সময়কালে violent armed clashes জুলাই ২০১২ সালে, দুশান্বে এবং জিবিআও-এর জীবন পৃথক ছিল, যেখানে জিবিআও-এর নাগরিকরা, যাদের অধিকাংশ ইসলামের ইসমাইলী শাখার অংশ (দেশটির অন্যান্য অংশ শিয়া অর্ধ্যুষিত), ইসমাইলী নেতা the আগা খানের শরণাপন্ন হয় সহায়তার জন্য।
কিন্তু ঘুমন্ত, অতিথিপরায়ণ খোরোর দীর্ঘ একটি অন্ধকার, গোপন রহস্য রয়েছে: আফগানিস্তানের সঙ্গে লূতাতন্তু-সীমান্তে অন্যান্য তাজিক শহরগুলির মতো খোরোরও পশ্চিমে রাশিয়া এবং ইউরোপের সংযোগ রয়েছে যা একটি আফিমের সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। বিদেশী গণমাধ্যম এই অঞ্চলের ওপর কাজ করে বলেছিল যে পাওয়ার ব্রোকার এবং সরকারী কর্মকর্তাদের মাঝে মাদক পাচারের লাভকে কেন্দ্র করে এক সপ্তাহ ব্যাপী বিশেষ বাহিনীর অপারেশনে জিবিআও'র যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। . অপারেশনটির কারণে ৫০ জন মানুষ নিহত হয়েছে, যা সফলের ধারে কাছে যায়নি। মার্কিন এক সাংবাদিকের মতে যে কিনাসাক্ষাৎকার নিয়েছিল খোরোর অভিবাসীদের গোলযোগ বিষয়ে (হয়রানি থেকে মুক্ত, সদিকভের রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের মতো নয়), সরকারী বাহিনীর অবস্থা এই সংঘর্ষে সবচেয়ে খারাপ ছিল।
জিবিআও'র অনাহূত কন্ঠস্বর
অ্যালেক্সের শিক্ষাগত মাঠ পর্যায়ের গবেষণা এ অঞ্চলের সংঘাত নিরসনের জন্য করা যা খোরোবাসী সরকারী বাহিনীর মধ্যর সংঘাতের [রুশ ভাষায়] পর করা হয়। মাদকের পাচারকে কেন্দ্র করে শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে পুলিশ ও স্থানীয়দের মধ্যে। একটি অস্বস্তিকর শান্তি পুনরুদ্ধার করার পূর্বে শহরের অধিবাসীদের সরকারি ভবন লক্ষ্য করে অগ্নিসংযোগ করে। সরকারের ঘনিষ্ঠ তাজিক মিডিয়া [তাজ] দাবি করে [তাজিক ভাষায়] সংঘাতে পশ্চিমা সম্পৃক্ততা রয়েছে।
জিবিআও এর অস্থিরতার জন্য একচেটিয়াভাবে সরকারকে দায়ী করা খুব সহজ হবে। তা সত্ত্বেও, দুশানবে'র অভ্যাস অঞ্চলের অধিবাসীদের অতীত দ্বন্দ্বের অসমাপ্ত অবশিষ্টাংশ হিসেবে দেখা, এবং উন্নয়নের কাজ না হওয়া এই অঞ্চলে সংঘাতের একটি বড় কারণ।
অ্যালেক্সের মতো গবেষকরা, তাদের মেধাগত চাহিদা এবং নিরপেক্ষ পদ্ধতি ব্যবহার করে একাডেমিক গবেষণার মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের জটিলতার বুঝতে রাহমন সরকারের মিত্র হতে পারে যে বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভুল ধারণা পোষণ করে আসা হচ্ছে। খোরোর সাথে কথোপকথন বন্ধ করার মধ্য দিয়ে, তাজিক সরকার কেবল অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয় প্রকাশ করেছে।