সিসিটিভি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি দ্রুতগতির টেম্পু একজন পথচারীকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে পথচারী ছিটকে রাস্তার একপাশে পড়ে যান। প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল তার। এক ঘণ্টার বেশি সময় সেখানে পড়ে ছিলেন তিনি। কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেননি। সিসিটিভি’র এই ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়াতে জনপ্রিয় হয়ে যায়।
১০ আগস্ট, বুধবার সকাল সাড়ে ৫টার সময়ে নয়াদিল্লির সুভাষ নগরের মেট্রো স্টেশনের কাছে এই ঘটনা ঘটে। দূর্ঘটনার শিকার ৪০ বছর বয়সী মতিবুল রাতের ডিউটি সেরে বাসায় ফিরছিলেন। তখনই দুধ পরিবহনকারী একটি টেম্পু তাকে সজোরে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়।
টেম্পু চালক নির্জন রাস্তা দিয়ে জোরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন এবং মতিবুলকে পিছন থেকে সজোরে ধাক্কা মারেন। টেম্পুর ধাক্কায় মতিবুল রাস্তায় পড়ে যান।
নরেশ ভিরাস্বরাপু নামের একজন মতিবুলকে ধাক্কার দেয়ার সিসিটিভি ফুটেজ ইউটিউবে আপলোড করেন। সেখানে দেখা যায়, চালক গাড়ি থেকে নেমে মতিবুলের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু যখন বুঝতে পারে, আঘাত মারাত্মক, তখন সে পালিয়ে যায়।
মতিবুল এক ঘন্টার বেশি সময় রাস্তায় পড়ে ছিলেন। এরমধ্যে ১৪০টি গাড়ি, ৮২টি থ্রি হুইলার, ১৮১ জন মোটরসাইকেল চালক এবং ৪৫ জন পথচারী আসা-যাওয়া করেছে তার পাশ দিয়ে। কেউ তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি।
সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায়, একজন পথচারী মতিবুলের কাছে এসে থামে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে কোন সাহায্য করার বদলে মতিবুলের মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিয়ে স্থান ত্যাগ করে।
#Delhi, India.Over 200 people callously walked past hit & run victim,Matibool. One give him a kick & stole his phone https://t.co/aiEIeh8jDR
— Fawzia Suleman (@Fawzia786) August 12, 2016
দিল্লি, ভারত। ২০০ জনের বেশি মানুষ নির্বিকারভাবে মতিবুলের পাশ দিয়ে হেঁটে গেল। একজন তো তাকে লাথি মেরে মোবাইল ফোন নিয়ে গেল।
অবশেষে পুলিশ এসে মতিবুলকে উদ্ধার করে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ততক্ষণে সে মারা গেছে।
মতিবুল যেখানে দুর্ঘটনার শিকার হন, সেখান থেকে মাত্র আধ ঘণ্টার দূরত্বে কয়েকটি হাসপাতাল ছিল।
মতিবুল দিনে ইলেক্ট্রিক রিক্সা চালাতেন। আর রাতে নৈশ প্রহরীর কাজ করতেন।
Who killed Matibool? The driver who hit him OR all those who saw him dying but chose to ignore and walk away? 8am #DilliMeriJaan @927BIGFM
— richa anirudh (@richaanirudh) August 12, 2016
মতিবুলকে কে হত্যা করেছে? যে গাড়ির চালক তাকে ধাক্কা দিয়েছে সে, না যারা তাকে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর দেখেও নির্বিকার চিত্তে হেঁটে গেছে?
I completely believe #humanityisdead in #Delhi #matibool case has left me ashamed of capital, it's people and its #hypocrisy #delhisucks
— Sonal Garg (@Sonalsparkle) August 12, 2016
আমি বিশ্বাস করি, দিল্লির মনুষ্যত্ববোধ মারা গেছে। মতিবুলের ঘটনায় এই শহর, শহরের লোকদের ভণ্ডামি আমাকে ক্রোধান্বিত করেছে।
সাফি বুল্লা ফেইসবুকে লিখেছেন:
In the rat race of Paisa Paisa paisa (money money money) we have lost the Humanity …..human touch
টাকার পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে ফেলেছি… মানবিকতাও আর নেই।
অনুপম রাজ ফেইসবুকে পরিহাসচ্ছলে বলেছেন:
Oh c'mon now! We are candle March specialist! Helping people is not our cup of tea!!
আহ্, কি বলেন! আমরা কিছু হলেই মোমবাতি প্রজ্চ্বলন করে প্রতিবাদ করতে পারি। কিন্তু মানুষকে সাহায্য করতে চাওয়া চাট্টিখানি ব্যাপার নয়।
নাজিবুল্লাহ সাইদালভি লিখেছেন:
Who steals the phone of a dying man? the devil himself.
মৃত্যু পথযাত্রী ব্যক্তির মোবাইল ফোন কে চুরি করলো? শয়তান একটা।
প্রনিত রায় চৌধুরী জানিয়েছেন, এটা শুধু দিল্লির সমস্যা নয়:
Shame on this country and this video is so wrong to single out Delhi, this happens in so many places and goes undocumented. RIP Matibool 🙁
দেশের জন্য লজ্জাজনক একটি ঘটনা। এই ভিডিও শুধু দিল্লির চিত্র তুলে ধরেছে। এই ধরনের ঘটনা সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘটছে। এবং এগুলো অনথিভুক্ত থেকে যাচ্ছে। মতিবুল শান্তিতে ঘুমাক।
সিসিটিভি ফুটেজের সাহায্য নিয়ে পুলিশ টেম্পু চালককে গ্রেফতার করেছে। তবে যে ব্যক্তি মোবাইল ফোন নিয়েছে, তাকে এখনো চিহ্নিত করতে পারেনি।
মতিবুলের ঘটনা দিল্লির ফুটপাত ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
মতিবুল ফুটপাত দিয়ে হাঁটলে টেম্পু তাকে ধাক্কা দিতে পারতো না। তবে দিল্লির বেশিরভাগ ফুটপাতই গাড়ি এবং নির্মাণাধীন ভবনের মালমশলার দখলে থাকে।
ভারতীয় ফেইসবুক ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন, পুলিশ এবং ভারতীয় আইনি ব্যবস্থার কারণে মানুষ মতিবুলকে সাহায্য করা এড়িয়ে গেছে। কারণ প্রত্যক্ষদর্শী এবং পথচারীরা যা দেখেছেন, তা নিয়ে রিপোর্ট করলে তাদের সেই অপরাধ তদন্তের সাথে যুক্ত করে ফেলা হয়। যা অনেকের কাছে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
মতিবুল মারা যাওয়ার পরে দিল্লি সরকার নতুন একটি ‘ইনসেনটিভ স্কিম’ ঘোষণা করেছে। এই স্কিমের আওতায় ট্যাক্সি ও অটোরিকসা চালকেরা দৃর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে পুরস্কার পাবেন।
পুলিশ আরো জানিয়েছে, যারা সহযোগিতা করবে তাদের হয়রানি করা হবে না। তাদের পরিচয়ও প্রকাশ করা হবে না।