আপনি কি কখনো খেয়াল করেছেন আপনার বাচ্চারা অনলাইনে কি ভিডিও দেখছে, বিশেষ করে যখন আপনি তাদের হাতে একটি ট্যাবলেট পিসি বা মোবাইল ফোন ধরিয়ে দেন তাদের ব্যস্ত রাখতে? আপনার সন্তান যদি অন্য সবার মত হয়, তাহলে তারা নিশ্চয়ই কার্টুন চরিত্রের মাধ্যমে বর্ণিত জনপ্রিয় সুরের সাথে ছড়াগানের ভিডিও শুনতে ব্যস্ত থাকে। কখনও কি ভেবেছেন কেন এই বাচ্চারা তাদের শৈশবের অনেক সময় ব্যয় করে মজার এইসব ভিডিও দেখে?
সম্প্রতি ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম ইউটিউব ভিডিও চ্যানেলে চু চু টিভি সম্পর্কে একটি নতুন রিপোর্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় সবার মনোযোগ কেড়েছে। এই রিপোর্টে বর্ণিত হয়েছে কেন প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহক দ্বারা সমর্থিত এই চ্যনেলটি এতো জনপ্রিয় হয়েছে। বিনোদ চন্দর নামে একটি ভারতীয় উদ্যোক্তা চু চু টিভি শুরু করেছেন ২০১৩ সালে এবং এটি এখন এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে সর্বাধিক জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল এবং দর্শকের সংখ্যা বিচারে সারা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় শিশুদের শিক্ষামূলক ভিডিও চ্যানেল। এই চ্যানেলের মাত্র ১১৫টি ভিডিও সংগ্রহ গত তিন বছরে পাঁচশত কোটিরও বেশী দেখা হয়েছে।
My daughter is probably responsible for a major chunk of number of views. Chu chu TV rhyme zone! #GokhaiGayu https://t.co/oJpBdJI20I
— Kuhn-Al (@meaninist) July 13, 2016
আমার মেয়ে সম্ভবত চু চু টিভি ভিডিওগুলো এতো বেশী বার দেখার জন্য প্রধানত দায়ী। চু চু টিভি ছড়াগান জোন!
Tell me about it!! My night time ritual with little muchkin is CHU CHU TV without fail https://t.co/SEcllurZZ3
— anubha sinha (@anubha_sinha13) July 13, 2016
আমাকে এ নিয়ে বলতে হবে না!! রাতে আমার ছোটোর সঙ্গে চু চু টিভি না দেখলে চলেই না।
No wonder. I see every toddler watching #ChuChuTv on the phone. Great idea. https://t.co/XljNR2IGfK
— Sakshi Joshi (@sakshijoshi85) July 13, 2016
আশ্চর্যের কিছু নেই। আমি দেখি সব বাচ্চাই ফোনে #চুচুটিভি দেখছে। ভালো বুদ্ধি।
Why so busy baby? 😍 #chuchutv pic.twitter.com/zL5N7XjoVB
— aadctheparadox (@AnglcAmrDlCrz) June 7, 2016
কেন বাবু এত ব্যস্ত? 😍 #চুচুটিভি
কিভাবে এটি সফল?
বাচ্চারা পুনরাবৃত্তি ভালবাসে এবং বেশ কয়েকবার দেখা কোন গল্প নিয়ে তারা কথা বলা শুরু করে। চু চু টিভি প্রধানত জনপ্রিয় ছড়াগানগুলো নানা রং, চটুল সঙ্গীত, এবং দ্রুত বিটের সঙ্গে উপস্থাপন করে এবং এর মাধ্যমেই বাচ্চাদের অক্ষরজ্ঞান প্রদানে সক্ষম হয়। এই ভিডিওগুলো শিশুদের কথা বলা এবং শোনার দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং পুনরাবৃত্তিমূলক শব্দ ও বাচনভঙ্গির মাধ্যমে তাদের শব্দভান্ডার উন্নত করে। এই ছড়াগানগুলোর মাধ্যমে শিশুদের কাছে বিভিন্ন গল্প বলা হয় যার মাধ্যমে বাচ্চারা তাদের চিন্তা ও কল্পনাশক্তি উন্নত করতে পারে।
এছাড়াও চু চু টিভির ভিডিওগুলোতে জনপ্রিয় ছড়াগানের ঋণাত্মক দিকগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, হামটি ডামটি ছড়াগানের চুচু টিভির সংস্করণে, হামটি পড়ে যাবার পর বিস্মৃত না হয়ে তার ভুল থেকে শিক্ষা লাভ করে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যায়।
সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনস এর সেন্ট ভিনসেন্ট দ্বীপে বসবাসকারী মা ক্যামিল পিটার্স ফেসবুকে লিখেছেন:
The smile I get from my daughter when I put on Chu Chu TV for her, am tired of the show but am happy she likes it because she really learn alot from it.😃😃😃😃she's even repeating some words from it,so thumbs up to that!!! #carissaquietmode #herloveforlearning #herfavouriteshow #myhappychild #cantbtiredwhenshelearning
চু চু টিভি চালু করার পর আমার মেয়ের কাছ থেকে যে হাসিটা উপহার পাই সেটা অমূল্য। যদি আমি এটা দেখে দেখে ক্লান্ত, কিন্তু আমি খুশি যে এটা আমার মেয়ে পছন্দ করে, কারণ সে সত্যিই এর থেকে অনেক কিছু শিখছে। 😃😃😃😃 সে এমনকি বেশ কিছু শব্দও মনে রাখতে পারছে, তাই চুচু টিভিকে অভিনন্দন!!!
ব্রিটিশ ব্লগ “মিসিং স্লিপ” এর ব্লগার কারেন লেখেন কিভাবে চু চু টিভি তার ছেলের বেড়ে ওঠায় সাহায্য করছে:
I do feel we would have benefited from ChuChu TV though with youngest especially as he was more of a reluctant learner unless something seemed very fun and captivating for him. He tends to switch off otherwise, so I really want to introduce as many parents to ChuChu TV as possible who might have challenging pre-schoolers like I did and are in need of a little learning inspiration to pass the time.
আমি মনে করি আমরা চুচু টিভি থেকে উপকৃত হয়েছি। বিশেষ করে আমার কনিষ্ঠ ছেলে, যে একটি অনিচ্ছুক শিক্ষার্থী ছিল, সে এর মধ্যে মজার এবং তার জন্য চিত্তাকর্ষক কিছু খুঁজে পেয়েছে। সে নাহলে অনেক সময় চুপ করে বসে থাকত। তাই পড়াশোনা করার জন্যে প্রণোদনার প্রয়োজন এমন বাচ্চাদের অভিভাবকদের বলব যে আপনারা তাদের চুচু টিভির ভিডিওগুলো দেখাতে পারেন।
এই চ্যানেল ভাল আচরণ উৎসাহিত করে, সাথে সাথে সত্য বলা এবং সবার সাথে সুখদুঃখ ভাগ করার ব্যপারটিও। চম্পা ট্রি নামক ব্লগের ব্লগার, উদাহরণস্বরূপ, লিখেছেন কিভাবে তার ছেলে চু চু টিভির একটি ভিডিও দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন:
One day I watched him listening to a very interesting rhyme on the channel. It was about brushing your teeth. And, you won’t believe what followed soon-after. He went straight to the bathroom and picked up his little, blue toothbrush and started rubbing it against his gums.
একদিন আমি তাকে চুচু টিভি চ্যানেলে দাত মাজা নিয়ে একটি খুব আকর্ষণীয় ছড়া শুনতে দেখেছিলাম। আপনি বিশ্বাস করবে না যে এর পরে কি হল। সে সোজা বাথরুমে গিয়ে তার ছোট নীল টুথব্রাশ তুলে দাত মাজা শুরু করল।
তবে এই পুনরাবৃত্তিমূলক ছড়াগুলো বাড়ীতে অন্য মানুষের জন্য বিরক্তিকর হতে পারে।
Why yes son I want to watch the same thing again for the millionth time…#momneedsabreak #chuchutv #saveme
— MamaShelby (@scossey1990) June 6, 2016
কেন বাবা আমাকে লক্ষবার একই ভিডিও দেখতে হবে … #মায়েরওবিশ্রামদরকার
@sanchayan @hankypanty I can hear CHU CHU TV SURPRISE!! even in my nightmares.
— Rituparna Chatterjee (@MasalaBai) July 13, 2016
চুচু টিভি দুই বছরের বেশী বয়সী শিশুর মাতাপিতার জন্য একটি অভিশাপ। তাদের সব ছড়া আমার মুখস্থ হয়ে গেছে।
চু চু টিভির নতুন চ্যানেল আমার কানে বাজে!! এমনকি আমার দুঃস্বপ্নের মাঝেও!
টিউবফিল্টার এর সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে, বিনোদ চন্দর উল্লেখ করেন যে, ‘চু চু’ তার কন্যা হর্ষিতার ডাক নাম। তিনি বলেন, চ্যানেলটির সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ হচ্ছে এর মান নিয়ন্ত্রণ:
We concentrate on quality rather than quantity. We work hard on each and every aspect while creating a video which includes concept creation, lyrics, music, graphics, animation and then the final edit. We just don’t compromise and the results are showing.
আমরা পরিমাণের চেয়ে মানের দিকে মনোযোগ দিয়ে থাকি। আমরা প্রতিটি ভিডিও তৈরি করার সময় এর সৃষ্টি, কথা, সঙ্গীত, গ্রাফিক্স, অ্যানিমেশন এবং তারপর চূড়ান্ত সম্পাদনা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই উচ্চ মান বজায় রাখতে কঠোর পরিশ্রম করি। আমরা মানের ক্ষেত্রে কোন আপোষ করি না এবং ফলাফল তো দেখতে পাচ্ছেন।
শিশুরা দৈনিক কতক্ষণ টিভি বা অন্য মাধ্যমে ভিডিও দেখবে তা নিয়ে জোর বিতর্ক রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিটি আমেরিকান শিশু গড়পড়তাভাবে প্রতিদিন চার ঘণ্টার অধিক টিভি বা ভিডিও দেখে যা আমেরিকান একাডেমী অফ পেডিয়াট্রিক্স নির্ধারিত সীমার দ্বিগুণ। অত্যধিক হারে টেলিভিশন দেখার কুফল হচ্ছে এটি শিশুদের অনেক প্রয়োজনীয় শারীরিক ব্যায়াম থেকে বঞ্চিত করে। তবে, যদি আপনি স্বল্প নির্ধারিত সময়ে মানসম্পন্ন বিষয়বস্তু দেখানো নিশ্চিত করতে পারেন, বিশেষজ্ঞদের মতে, তা বাচ্চাদের কিছু ভাল দক্ষতা শেখাতে পারে। এছাড়াও, যে কোনো পিতা বা মাতা জানে যে বাচ্চাদের ব্যস্ত রাখার সম্ভবত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং স্বল্প খরচের (আয়া না রেখে) পদ্ধতি হচ্ছে তাদের টেলিভিশন দেখতে দেয়া বা ট্যাবলেট এবং মোবাইল ফোনে খেলা/ভিডিও দেখতে দেয়া।