কোমল পানীয় জমজম কোলার একটি বোতলের ছবি। সৃজনশীল সাধারন লাইসেন্সের আওতায় ছবিটি উইকিমিডিয়া থেকে সংগৃহীত।
মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় অনেকে শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে মেলবন্ধন ভুলে গেছে। বিশেষত সৌদি আরবে অবস্থিত পবিত্র মক্কাকে নিয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। মক্কার মসজিদ আল হারাম (পবিত্র মাসজিদ) আছে জমজম কূপ, পানির উৎস যা সৃষ্টিকর্তা দ্বারা তৈরি করা হয়েছে বলে সকল মুসলমানদের কাছে সমান সম্মানিত ।
হয়তো অনেকের কাছে জানা নেই অনেক বছর আগে এই নাম দিয়েই ইরানের জনপ্রিয় কোমল পানীয় জমজম কোলা’র নাম করণ করা হয়। .
মজার ব্যাপার হচ্ছে, সৌদি আরবে শিয়া ধর্মীয় নেতা নিমর আল নিমর এর মৃত্যুদন্ড বিরুদ্ধে প্রতিবাদে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া ইরান ও সুন্নি প্রধান সৌদি আরব মধ্যে সম্পর্কে অবনতি হলেও এই ইরানী কোলা পানীয় সৌদি আরবের কাছ বরাবরই পছন্দনীয়।
১৯৫৪ সালে ইরানের বাজারের জন্য পেপসি এর সম্পুরক হিসেবে তৈরী করা হয়েছে জমজম কোলা, যা পরে ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণভাবে জাতীয়করণ করা হয়। এই পানীয় মূলত মকার পবিত্র কূপের সাথে মিল রেখেই তৈরি করা হয় যা আজকে পার্শ্ববর্তী দেশ, যেমন সৌদি আরব, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) বিপণন করা হয়। উক্ত ঘটনার ফলে এইসব দেশের সাথে ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক পরিবর্তন এসছে- কেউ সম্পূর্ণরূপে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে অবনতি ঘটেছে।
বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, ২০০২ সালে যখন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সঙ্কটে ইজরায়েলকে আমেরিকার সমর্থনের ফলে আমেরিকান কোম্পানি, যেমন কোকা-কোলা, পেপসি এবং ম্যাকডোনাল্ড এর পণ্য বয়কট করে, তখন, সৌদি আরব ও উপসাগরীয় আরব দেশগুলোতে ইরানের জমজম কোলা খুব জনপ্রিয়তা পায়।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি রিপোর্টে জানা যায়, “২০০২ সালে সৌদি আরবে তীব্র গরমের সময় কোকাকোলা ও পেপসি একটি বর্জনের পর ইরানী এই পানীয় কোম্পানি ১ কোটি বোতল পানীয় সরবরাহ করে”!
সাম্প্রতিক উত্তেজনার জের ধরে ইরান, তার দেশে নাগরিকের জন্য হজ ওমরাহ সম্পাদনে স্থগিতাদেশ সহ ইরানে সব সৌদি পণ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। একইভাবে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র কূটনৈতিক সম্পর্কে ছেদ নয়, বরং ইরানের সঙ্গে সব বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে বলে ঘোষণা করেছে ।
ইরানের সামাজিক মিডিয়া ব্যবহারকারীরা যখন সৌদি আরবের মানবাধিকার অবস্থা এবং ইরানে সৌদি দূতাবাস এবং কনস্যুলেটে আক্রমণের উপর তীব্র মন্তব্য করছে, আর সৌদি আরব ও উপসাগরীয় আরব সামাজিক মিডিয়া ব্যবহারকারীদের ইরানী পণ্যের প্রতি তাদের অনাস্থা প্রকাশ করে বয়কটের ডাক দিচ্ছে।
যেমন, @ইরানের_প্রতি_মৃত্যু নামের একজন টুইটার ব্যাবহারকারী দাবি জানিয়েছেন, “ইরান তার ভ্রষ্ট উদ্দেশ্য হাসিল করতে যে কোন কিছু করতে পারে, এমনকি তাদের সরবরাহকৃত পন্যে বিষ প্রয়োগ করতে পারে। সাবধান, আপনি এর শিকার যেন না হন”।
তিনি আরও দাবি করেন:
اصيب بالسرطان الكثير من مواطني الدول التي تستورد بضائع ايران، فقاطعها قبل ان تكون المصاب القادم #مقاطعة_المنتجات_الإيرانية_مطلب
— معآ لطرد إيران (@Death_To_iran) January 7, 2016
যেসব দেশ ইরান থেকে পণ্য আমদানি করে, সেইসব দেশের অনেকেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে, আক্রান্ত হওয়ার আগে আপনি ওদের পণ্য বর্জন করুন ।
আরেকজন টুইট ব্যাবহার কারী, ডায়ালা আলখাইর, পণ্য বর্জনকে ধর্মীয় কাজ মনে করেন :
مقاطعة ايران واجب شرعي يأثم من يخالفه، لأن حقن الدماء يكون به وحقنها واجب شرعي #خلو_المنتجات_الإيرانية_تعفن #مقاطعة_المنتجات_الإيرانية_مطلب
— ديالى الخير (@DiyalaAlkhair) January 7, 2016
পণ্য বর্জন একটি ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার অংশ, যারা বর্জন করছেনা, তারা পাপ করছেন। কারণ, পণ্য বর্জনে রক্তপাত বন্ধ হবে, যা ধর্মীয় কাজ।
Another tweet by the same user double down on the rhetoric:
ايران تبني اقتصادها بدماء الاطفال والضعفاء، فاحذر ان تعينها بشراء سلعها #مقاطعة_المنتجات_الإيرانية_مطلب
— ديالى الصابرة (@DiyalaAlsabira) January 7, 2016
ইরানের অর্থনীতি শিশু ও দুর্বলের রক্তে তৈরি, আপনি যেন পণ্য কিনে ওদেরকে আরও শক্তিশালী না করেন।
বর্জনের ডাকের মুখে যখন ইরানী পন্যের অচলাবস্থা, তখন মুগাতা সাআ নামের একজন সৌদি নারী ইরানী পন্যের ছবি সংযুক্ত করেছেন,
مجموعة من المنتجات والسلع الإيرانية التي تم رصدها في الأسواق والمحلات #قاطعوهم #مقاطعه_المنتجات_الايرانيه_مطلب pic.twitter.com/COu7RJwFmw
— مقاطعة #وعي (@Mogatah_sa) January 7, 2016
আমরা বাজারে এইসব পন্য পেয়েছি, আপনি তা বয়কট করুন।
টুইটারে উল্লিখিত মন্তব্য ৩২০ বারের চেয়েও বেশী টুইট হয়েছে এবং ৬০ বার পছন্দ হয়েছে। অনেক সামাজিক মিডিয়া ব্যবহারকারীরা এই বার্তাকে বিভিন্ন বিন্যাসে প্রকাশ করেছে।
বহুল প্রচারিত আরেকটি টুইটে, ইরানী পণ্য বয়কটে সরকারকে সমর্থন করতে সৌদি নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
واجبك الإنضمام ومقاطعة منتجات أعداء الإسلام وقوفا مع قرار حكومتنا الرشيده بقطعها العلاقات التجارية مع إيران pic.twitter.com/HoMWowmPWH
— مقاطعة #وعي (@Mogatah_sa) January 8, 2016
আপনার দায়িত্ব হচ্ছে, ইসলামের শত্রুকে বর্জন ও ইরানের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন কর করতে সৌদি সরকারের পাশে দাঁড়ানো।
এতেই মনে হচ্ছে সৌদি আরবে জমজম কোলা পানকারিদের সংখ্যা সংকুচিত হতে যাচ্ছে। অন্যদিকে, ইরানের খাদ্য উৎপাদন কারী সাভোলা গ্রুপের মার্কেট বিপর্যয়ের ফলে সৌদি আরব স্টক মার্কেটে দরপতনের আলামত দেখা যাচ্ছে।