ভবনটি পরিচিতি পেয়েছিল সাদা বাড়ি নামে। কারণ বাড়িটির গায়ে আঁকা ছিল বিশাল একটি ম্যুরাল। কিন্তু সিটি হলের অনুমতি নেয়া হয়নি এমন অভিযোগ তুলে নমপেনের সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ সেটা মুছে ফেলেছে। আর মুছে ফেলার ঘটনায় সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এদের মধ্যে দেশটির তথ্য মন্ত্রীও রয়েছেন।
Street artists concerned following White Building mural debacle in #Cambodia #streetart #gr… https://t.co/f5AipNiVK1 pic.twitter.com/pAEIcp60FE
— The Phnom Penh Post (@phnompenhpost) December 20, 2015
কম্বোডিয়ার সাদা বাড়ির ম্যুরাল মুছে ফেলায় রাস্তা-শিল্পীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ম্যুরালটি এঁকেছিলেন আমেরিকান শিল্পী মাইলস ম্যাকগ্রেগর।তিনি এল ম্যাক নামেই বেশি পরিচিত। ইগলু হং প্রকল্পের অংশ হিসেবে তিনি এই ম্যুরালটি এঁকেছিলেন। সারাবিশ্বের শিল্পীদের শিল্পকর্মের প্রতি সমর্থন জানানোই ছিল প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এল ম্যাক তার ব্লগে লিখেছেন, সত্তরের দশকে খেমারুজদের শাসনামলে যেসব শিল্পী প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তিনি এটি এঁকেছেন:
This mural honors Cambodia's artists, both contemporary and those lost during the Cambodian genocide of the mid to late 1970s, when nearly all of the country's creative population was targeted and murdered by the regime.
এই ম্যুরাল কম্বোডিয়ার সেইসব শিল্পীদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে আঁকা হয়েছে, যারা আমাদের সমসাময়িক সময়ে এবং মধ্য সত্তর থেকে সত্তর দশকের শেষের দিকে গণহত্যায় প্রাণ হারিয়েছেন। উল্লেখ্য, ওই সময়ে দেশটির শিল্পীরা সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন।
ম্যুরাল আঁকার জন্য তিনি ওই ভবন বেছে নিয়েছিলেন, কারণ ওখানে অনেক শিল্পী মানুষের বসবাস:
Since I had the opportunity to paint such a large, visible wall in a place where there are seemingly no other large scale murals like it, I felt an extra sense of responsibility to paint something beautiful, meaningful, and uplifting.
I hope this mural can serve as a respectful tribute to the importance and perseverance of Cambodia's creative legacy, and possibly, in some small way, offer inspiration for younger Cambodian artists to sustain this legacy.
আমি ওই জায়গাটা বেছে নিয়েছিলাম, কারণ ওখানে অনেক বড় একটা ম্যুরাল আঁকার সুযোগ ছিল। এবং সেটা সব জায়গা থেকে দৃশ্যগোচর হবে। তাছাড়া এ ধরনের বড় ম্যুরালও সেখানে ছিল না। আবার আমি নিজের ভিতরে চমৎকার, অর্থপূর্ণ একটি ম্যুরাল আঁকার তাগিদ অনুভব করছিলাম।
আমার আশা ছিল, এই ম্যুরালের মধ্যে দিয়ে কম্বোডিয়ার শিল্পী সমাজের প্রতি গুরুত্ব ও সম্মান দেখানো হবে। কম্বোডিয়ার তরুণ প্রজন্মের শিল্পীরাও এ থেকে উদ্বুদ্ধ হবেন।
ভবনের দেয়ালে হাতে আঁকা চিত্রকর্ম দিন দিন দুর্লভ হয়ে উঠছে। একদিন আমি কম্বোডিয়ার রাস্তা ধরে হাঁটছি। আর মনে মনে খুঁজে বেড়াচ্ছি এমন এক দেয়াল যেখানে মনের আনন্দে আঁকাআঁকি করা যায়। এমন সময় এক পরাবাস্তব দৃশ্য আমার সামনে ভেসে উঠলো। এক পুরোনো অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের বাইরে মাদুর বিছিয়ে একজন মহিলা শাল বুনছেন। তার চারপাশে ভাঙা টাইলসগুলো স্তুপ করে রাখা। স্তুপিকৃত টাইলসগুলো অনেকটা ব্যাটম্যানের আকার নিয়েছে। আমরা তার কাছে গিয়ে কথা বললাম। তিনি তার বাড়ির বাইরের দেয়ালে আঁকাআঁকি করার অনুমতি দিলেন। আমি মায়ের জন্য একটা শাল কিনলাম। আমার ধারনা নমপেনের মাত্র দু’জন মানুষ এমন নিখুঁতভাবে শাল বুনতে পারে। যাই হোক, ভবনটি ছিল খুব পুরোনো। পঞ্চাশ দশকের পর থেকে ভবনটির কোনো সংস্কার হয়নি। এল ম্যাক এই অসাধারণ ছবিটি এঁকেছেন। ছবিটি ওই মহিলার, যিনি মাদুর বিছিয়ে শাল বুনেন। প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে যারা যাওয়া-আসা করেন, সবাই ছবিটি দেখতে পান। আমরা তার কঠোর পরিশ্রম ও বুনন দক্ষতার প্রতি সম্মান জানাই।
ওই বিল্ডিংয়ে একজন সাংস্কৃতিক কর্মী বাস করেন। তার নাম ময়ান থেরি। তিনি পেশায় দর্জি। ঐতিহ্যবাহী খেমার পোশাক তৈরি করে থাকেন। এল ম্যাক তার ম্যুরালের বিষয়বস্তু হিসেবে থেরিকেই বেছে নেন। তাকে বেছে নেয়ার কারণ হিসেবে এল ম্যাক জানিয়েছেন, তিনি ঐতিহ্যবাহী খেমার সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ ও প্রচার করছেন।
Look how beautiful it is… #Cambodia #goneforever pic.twitter.com/kP45Lk3vtZ
— Bun Sengkong (@bunsengkong) December 18, 2015
দেখুন, কতোটা সুন্দর দেখতে এটা।
এল ম্যাক ও তার টিম যখন সিটি কর্পোরেশনের অনুমতির জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই সময়ে সিটি হল কর্তৃপক্ষ খুব দ্রুত ম্যুরাল মুছে ফেলার আদেশ দেয়। স্থানীয় সরকারের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের দরখাস্ত মঞ্জুর করা হয়নি। কারণ, ম্যুরালটি নাকি খেমার ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে না। যাকে উপজীব্য করে ম্যুরালটি আঁকা হয়েছে, সেই ময়ান থেরিকে কেউ চেনে না। সেই কর্মকর্তা অবশ্য থেরির পরিবর্তে অন্য কোনো খেমার হিরোকে নিয়ে ম্যুরাল আঁকার পরামর্শ দিয়েছেন।
Municipality replaces mural by internationally famous artist with messy cover up. #Cambodia pic.twitter.com/UGo7OMTD31
— Will Jackson (@willjackson) December 17, 2015
সিটি কর্পোরেশন অগোছালোভাবে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পীর আঁকা ম্যুরাল মুছে দিয়েছে।
শুধু তাই নয়, সিটি হল শহরের অন্যান্য পথচিত্রগুলো সাদা রং দিয়ে মুছে দিয়েছে।
#Cambodia #streetart on Street 830 being whitewashed away by government-approved artists. @Poximity pic.twitter.com/MmLseXI0z5
— Luke Hunt (@lukeanthonyhunt) December 17, 2015
৮৩০ নম্বর রোডের পথচিত্রটি সরকার কর্তৃক মনোনীত শিল্পী সাদা রং দিয়ে মুছে দিচ্ছে।
সরকারের এহেন কর্মকাণ্ডে কম্বোডিয়ার সাধারণ মানুষ ব্যথিত হয়েছেন। এরাই আগে এল ম্যাকের ম্যুরালের প্রশংসা করেছিলেন। এদের দলে তথ্য মন্ত্রী খিয়াও কানহারিথও রয়েছেন। তিনি স্থানীয় সরকারকে ম্যুরাল মোছার পরিবর্তে শিল্পকর্মের প্রশংসা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
নম পেন শহরে বিক্ষিপ্তভাবে মদ জাতীয় পণ্যের শত শত বিলবোর্ড রয়েছে। স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ সেগুলো সরিয়ে ফেলছে না, সেটা নিয়ে অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন। অনেকে আবার এল ম্যাককে পরামর্শ দিয়েছেন, তার ম্যুরালে একটি বিয়ারের ছবি বসিয়ে দিতে। তাহলে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ এটা মুছবে না।
গ্রাফিতি কম্বোডিয়া ফেসবুক পোস্টে এই ঘটনাকে জনগণের শিল্পচর্চার প্রতি স্থানীয় সরকারের আক্রমণ হিসেবে বর্ণনা করেছে:
The Cambodian government is sending a clear message that public art will not be tolerated. Either that or they just spat out their dummy in the most fastidious way possible.
কম্বোডিয়ার সরকার পরিষ্কার বার্তা দিলো, তারা জনগণের শিল্পচর্চাকে বরদাস্ত করবে না। যেভাবে সম্ভব তারা তাদের চেহারা চিনিয়ে দিলেন।
কম্বোডিয়ার আরবান আর্ট ফেস্টিভ্যালের আয়োজক থিও ভ্যালিয়ার এই ইস্যুতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন:
…on one hand, I don’t approve of what City Hall did because it’s art and everything, but on the other hand, they didn’t have the authorizations. I’ve been in Cambodia long enough to understand the rules here, and we are really trying to play by the rules here.
একদিকে সিটি হল যা করেছে আমি তা মেনে নিতে পারছি না। কারণ এটা শিল্প। অন্যদিকে তাদের কাছে অনুমতি ছিল না। আমি দীর্ঘদিন ধরে বুঝতে চেষ্টা করছি, কম্বোডিয়ায় আইনকানুন আছে। এবং আমরা চেষ্টা করছি, এখানে যেন আইনকানুন নিজস্ব গতিতে চলে।
ম্যুরাল ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে সেটা ইউটিউবে টিকে থাকবে: