বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশের বেশি মুসলমান। তাই রমজান মাস এলেই দেশটির চেনা চিত্র যেন বদলে যায়। এ সময় সব রাস্তাঘাট ইফতারের ডালি নিয়ে সেজে ওঠে।
শহরের প্রতিটি রেস্টুরেন্ট, তা পাঁচতারকা হোটেল হোক কিংবা রাস্তার দোকান সবাই ঐতিহ্যবাহী থেকে স্পেশাল সব ধরনের ইফতার আইটেম বানিয়ে থাকে। রাস্তার উপরে টেবিল পেতে দোকান সাজিয়ে তাতে ইফতারের আইটেম সাজিয়ে রাখে। পাশেই থাকে গ্যাসের চুলা। তাতে গরম গরম ইফতার প্রস্তুত হতে থাকে আর বিক্রেতারা হাঁক ডাক দিতে থাকে। রমজানের সময়ে ঢাকা শহরে এটাই প্রধান চিত্র হয়ে উঠে।
বিডিনিউজ২৪.কম এর একটি ভিডিও চক বাজারের ঐতিহাসিক ইফতার বাজারের আমেজ তুলে ধরছে। ঐতিহাসিকরা বলে এই বাজার চার শতক ধরে চলছে।
বাংলাদেশে ইফতারের নানা “শাহী” পদে মোঘল আমলের রন্ধনকলার ছাপ রয়েছে। নিচে বাংলাদেশের ইফতারের নানা পদ তুলে ধরা হলো:
শাহী জিলাপী:
শাহী হালিম:
শাহী দই বড়া:
এ প্রসঙ্গে ব্লগার বোকা মানুষ লিখেছেন:
ষোড়শ শতকে মোঘল সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয়ে ঢাকায় ডেরা ফেলার সময়টায় তারা সাথে করে নিয়ে আসে তাদের রাঁধুনি দলকে। কারণ, মোঘলদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল আরাম আয়েশ আর বিলাস বহুল জীবনাচার যার অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল তাদের মুখরোচক নানান খাবার দাবার। আর এসব খাবারের অন্যতম উপাদান ছিল হরেক রকম মশলা আর তেলের যথেষ্ট ব্যবহার। আর মোঘলদের এই বিলাসী জীবন যাপনের জন্য সাথে করে বয়ে আনা কর্মচারী-খানসামা-বাবুর্চি একসময় যথেষ্ট হয়ে উঠে না, ফলে আশেপাশের লোকালয় হতে বহু লোকের চাকুরী জোটে মোঘল পরিবারসমূহে। অন্যান্য পদের মত হেঁসেলেও স্থান হয় কতিপয় রন্ধন কারিগরের। আর তাদের হাত ধরেই মোঘল খাবার প্রাসাদের বাইরে বিস্তৃতি পায়।
সুতি কাবাব:
খাসির রান রোস্ট:
আস্ত মুরগির রোস্টঃ
আস্ত খাসির রোস্ট।
বড় বাপের পোলায় খায়
“বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গা ভইরা নিয়া যায়” এইভাবে ছড়া কেটেই বিক্রেতারা বিক্রি করেন:
আর অনেক বাসায় ইফতারের আইটেমের চিত্র এরকমঃ
ইফতারের কয়েকটি সাধারণ পদ।
বাংলাদেশে ইফতার শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। ইফতারকে কেন্দ্র সম্প্রতির বন্ধনও দৃঢ় হয়। নীচের ক্যাপশন জানাচ্ছে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা শতাধিক দরিদ্র মুসলমানদের ইফতার খাওয়াচ্ছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের সম্প্রতির চমৎকার উদাহরণ এটি।
“Bangladeş'in başkenti Dakka'daki bir Budist tapınağı, her gün müslümanlara iftar yemeği veriyor..”@ntahakilinc #bangladesh #dakka #budist #müslüman #iftaryemeği A photo posted by طوبا (@tubadursun793) on
বাংলাদেশে ইফতার আইটেমে রয়েছে বিপুল বৈচিত্র্য। ঘূর্ণায়মান ঘোরা-ফেরা ব্লগে আশা লিখেছেন:
বাংলাদেশে ইফতারে নানা ধরনের খাবার-দাবারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে সাধারণ ইফতার আইটেমের মধ্যে রয়েছে পিঁয়াজু, বেগুনি, জিলাপি, মুড়ি, হালিম, খেজুর, সমুচা, ডাল পুরি, ছোলা, মাছের কাবার, মোঘলাই পরোটা, পিঠা, নানা ধরনের মিষ্টি, তরমুজসহ নানা ফলমূল। তাছাড়া পানীয় হিসেবে রুহ আফজা এবং লেবুর সরবত সবার ঘরে ঘরে দেখা যায়। পরিবারের সবাই একসাথে ইফতার করতে পছন্দ করেন। তবে মসজিদগুলোতেও ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
ব্লগার মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী একদিন ইফতারের সময় একটি শপিং কমপ্লেক্সে ছিলেন। সেসময়ে সেখানকার খাবারের দোকানগুলোতে কেমন ভিড় হয় তা নিয়ে সামহোয়্যারইন ব্লগে লিখেছেন:
ইফতার সময়ের আধ ঘন্টা আগে এসেও দেখি এই লেভেলে তিল ধারণ করার স্থানটুকু নেই। সব সীট বুকড। তারপর করিড়োর, হাটার চিপা গলি, মেঝের মাঝখান সব খানেই ব্লকড। কিছু খাবার অর্ডার দিয়ে যে নিয়ে আসবো সেই পথটুকুও যেন বন্ধ। […]
2 টি মন্তব্য
ভাই পোস্টটা অনেক সুন্দর লাগলো। পোস্ট দেখে বাংগালিত্ব ফুটে উঠলো।