
কুয়েতি বিরোধীদলীয় নেতা মুসাল্লাম আল বারাককে সে দেশের শাসককে অপমানের অভিযোগে দুই বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। টুইটারে ছবিটি শেয়ার করেছেন @আলজিয়াদিকিউ৮।
“দেশটির শাসককে অপমানের” অভিযোগে নেতৃত্বস্থানীয় বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদ মুসাল্লাম আল বারাককে কুয়েত দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে কুয়েতি জাতীয় বিধানসভার (সংসদের) সাবেক সদস্যের বিরুদ্ধে অপমানজনক বক্তব্য প্রদানের অভিযোগ আনা হয়েছে, যে বক্তব্য তিনি ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে প্রদান করেছেন। বক্তৃতায় তিনি কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল আহমেদ আল জাবের আল সাবাহকে ক্ষমচ্যুত করার হুমকি দিয়েছেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, কুয়েতের জনগণ তাঁর এই “স্বৈরশাসন” আর মেনে নিবে না।
তাকে গত ২৯ অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিচার কাজ মুলতবি হওয়ার চারদিন পর জামিনে মুক্তি দেয়া হয়। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে তাকে পাঁচ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয় এবং কুয়েতি একটি আপিল আদালত গতকাল দেয়া রায়ে তাঁর শাস্তি কমিয়ে দুই বছরের কারাদন্ড দিল।
আল বারাক যখন ২০১২ সালে প্রথম গ্রেপ্তার হন, তখন এমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নিচে প্রদত্ত বিবৃতিটি প্রদান করে। বিবৃতিতে তাঁর গ্রেপ্তারকে “অত্যন্ত নিষ্ঠুর” হিসেবে বর্ননা করা হয়েছেঃ
এ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা কার্যক্রমের উপপরিচালক এ্যান হ্যারিসন বলেছেন, “শেখ সাবাহ আল-আহমেদ আল-জাবের আল সাবাহকে উদ্দেশ্য করে করা তাঁর শান্তিপূর্ণ সমালোচনার কারণে “মুসাল্লাম আল-বারাকের গ্রেপ্তার এবং প্রসিকিউসন একেবারেই নিষ্ঠুর আচরণ। ঘটনাটি কুয়েতে বিধানসভা এবং বাকস্বাধীনতার উপর বাঁধা প্রদান বেড়ে যাওয়ার একটি প্রকাশ্য লিখিত ঘোষণা।
“তিনি সহিংসতা কিংবা ঘৃণা উস্কে দিচ্ছেন না, তবে তাঁর শান্তিপূর্ণ বাকস্বাধীনতার অধিকারের চর্চায় নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন – কুয়েতি কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তুলে নিতে হবে। আর শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের জন্য যাদের বিরুদ্ধেই একই অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের অভিযোগ তুলে নিতে হবে।”
অনেকেই মনে করছেন যে আল বারাককে থামিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি ৫৯ বছর বয়সী একজন স্পষ্টবাদী জনপ্রিয় কর্ম সংঘের একজন সদস্য। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে বিধানসভার একজন সংসদ সদস্য।
কুয়েতি ব্লগার মোহাম্মাদ আলমুতাওয়ার মতেঃ
#Kuwait Appeals court sentences former MP Musallam Al-Barrak to two years in prison for remarks deemed to undermine the Amir
— Mohammad Almutawa (@mfmutawa) February 22, 2015
#কুয়েত আপীল আদালত সাবেক সংসদ সদস্য মুসাল্লাম আল-বারাকের বিরুদ্ধে আমিরের ভিত্তি দূর্বল করে দিতে মানহানিকর মন্তব্য করার অভিযোগে দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করেছে।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছেনঃ
Al-Barrak has a large following and is considered to be leading the opposition front in #Kuwait, now sentenced to 2yrs in jail… — Mohammad Almutawa (@mfmutawa) February 22, 2015
আল-বারাকের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাকে #কুয়েতে সম্মুখ সারির একজন বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি এখন দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত…
আল মুসাল্লামকে তাঁর ব্যক্তিগত অভিমতের জন্য এই দন্ড দেয়া হয়েছে,
বাহরাইনি মানবাধিকার রক্ষক নাবিল রাজাব তাঁর ২৬০,০০০ জন অনুসারীর উদ্দেশ্যে টুইটারে ব্যাখ্যা করেছেনঃ
إن #سجن_مسلم_البراك بسبب أراء تبناها او صرح بها هو انتهاك صارخ لحقوق الانسان وحريته في التعبير ويبين إن #الكويت مستمرة في تراجعاتها الحقوقية
— Nabeel Rajab (@NABEELRAJAB) February 22, 2015
মুসাল্লাম আল বারাককে তাঁর ধারণ করা অভিমত অথবা তাঁর প্রকাশিত মতামতের জন্য কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এটি মানবাধিকারের এবং তাঁর বাকস্বাধীনতা অধিকারের পুরাদস্তুর লঙ্ঘন। এটি এটাও প্রমাণ করে যে কুয়েত তাঁর মানবাধিকার অতীত রেকর্ডে পুনরায় ফিরে গেছে।
আরেকটি টুইটে তিনি আরও বলেছেনঃ
#سجن_مسلم_البراك في #الكويت هو إنتهاك للمواثيق الدولية لحقوق الانسان وكل النشطاء الحقوقيين والسياسين بمن فيهم المختلفين معه مطالبين بإذانته — Nabeel Rajab (@NABEELRAJAB) February 22, 2015
কুয়েতে মুসাল্লাম আল বারাকের কারাদন্ডে দণ্ডিত হওয়ার ঘটনাটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সন্ধি চুক্তির পরিপন্থী। যারা তাঁর সাথে সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছেন তারা সহ সকল সক্রিয় কর্মী এবং রাজনীতিবিদের এই ঘটনার নিন্দা জানান উচিৎ।
আর কুয়েতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কলামিস্ট ডঃ বাদের আলদাইহানি তাঁর ১৭০০০ জন অনুসারীর উদ্দেশ্যে টুইটারে ব্যাখ্যা করেছেনঃ
سجن مسلم البراك هو سجن سياسي فقضيته قضية سياسية من ألفها إلى يائها والقضايا السياسية من المفترض أن تحل سياسياً وليس جنائياً #سجن_مسلم_البراك
— د. بدر الديحاني (@DrAldaihani) February 22, 2015
যেহেতু তাঁর মামলাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক, তাই মুসাল্লাম আল বারাককে কারাদন্ড প্রদানের রায় একটি রাজনৈতিক রায়। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান অবশ্যই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিৎ, কোন ফৌজদারি মামলার মাধ্যমে হওয়া উচিৎ নয়।
আরেকটি টুইটে তিনি উল্লেখ করেছেনঃ
الناس لا يصدقون كيف يسجن المناضل الذي أفنى عمره يحارب الفساد المؤسسي بينما كبار الفاسدين وسراق المال العام يسرحون ويمرحون؟! #سجن_مسلم_البراك
— د. بدر الديحاني (@DrAldaihani) February 22, 2015
জনগণ বিশ্বাস করতে পারছে না, একজন সক্রিয় কর্মী যিনি তাঁর সারা জীবন ধরে কর্পোরেট দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই গেছেন তিনি এখন কারাভোগ করবেন। অন্যদিকে যারা জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করে এবং দেশের অন্যতম দুর্নীতিবাজ তারা মুক্ত অবস্থায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আল বারাকের কারাদন্ড সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে অনেক কুয়েতিই #سجن_ضمير_الأم হ্যাশট্যাগটির অধীনে টুইটারে কাজ করে যাচ্ছেন। যেহেতু আল বারাকের সমর্থকেরা তাকে উদ্দেশ্য করে হ্যাশট্যাগটি তৈরি করেছেন। তাই এটির অনুবাদ করলে দাঁড়ায় “জাতির বিবেকের কারাদন্ড”।
সুহেইল আল ইয়ামানির মতেঃ
الضمير الحي مشكلة كبيرة ومقلقة .. لذلك تلجأ بعض الأمم إلى التخلص من ضميرها حتى لا يعكر صفو ” دجّتها ” وفسادها! #سجن_مسلم_البراك
— سهيل اليماني® (@agrni) February 22, 2015
জলজ্যান্ত একটি বিবেক বেশ বড় এবং উদ্বেগজনক একটি সমস্যা… এ কারনে কিছু কিছু দেশ তাদের বিবেকের কাছ থেকে মুক্তি পেতে চায় যেন দূর্নীতি তাঁর নিজস্ব গতিতে চলতে পারে।