দি ওয়ার্ল্ডের জন্য ক্যারোল হিল এই প্রবন্ধ এবং রেডিও প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন যা ২৫ অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে পিআরআই.অর্গে প্রথম প্রকাশিত হয় এবং লেখা বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে এখানে পুনরায় প্রকাশ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে আগমনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত টিকেটের অন্যতম হচ্ছে এইচ-১ বি নামক ভিসা। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৮৫,০০০ ব্যক্তিকে এই ভিসা প্রদান করে থাকে, মূলত প্রযুক্তিগত দক্ষতা যাদের অনেক বেশী, যারা সিলিকন ভ্যালি নামক এলাকায় এসে ডেরা বাঁধতে চায়, কেবল তাদের এই ভিসা দেওয়া হয়। কিন্তু এইচ-১বি ভিসা প্রাপ্ত অনেকের স্ত্রী বা স্বামীর যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার বা নিজের আয়ে নিজের জীবন গড়ার উপায় নেই-অন্তত বর্তমান এই সময় পর্যন্ত।
মঙ্গলবার, ওবামা প্রশাসন ঘোষণা প্রদান করেছে যে তারা এইচ-৪ (এইচ ফোর) নামক ভিসার আইন কানুন যাচাই করে দেখবে। এই ভিসা তাদের জন্য এইচ-১বি ভিসা প্রাপ্ত নাগরিকদের স্ত্রী বা স্বামীদের প্রদান করা হয়ে থাকে,এর উদ্দেশ্য এইচ ফোর ভিসা প্রাপ্তদের কেউ কেউ যেন আইনগত ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অনুমতি পায়, যা শুরু হবে এ বছরের মে মাসে। নতুন এই আইনের অধীনে এইচ-১বি ভিসা প্রাপ্ত ব্যক্তির স্ত্রী বা স্বামী কাজের অনুমতির কাগজপত্র এবং সামাজিক নিরাপত্তা পরিচয়পত্র (স্যোশাল সিকিউরটি কার্ড) পাবার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
নেহা মহাজন, যিনি এখন থেকে প্রায় সাত বছর আগে ভারত থেকে তার স্বামীর সাথে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন, সে বলে “ আমি এখন সত্যিকারের নিজের আমিতে পরিণত হব, এখন থেকে আমি কেবল আমার স্বামীর স্ত্রী হয়ে রইব না”। নেহার স্বামী ভারতের এক প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান চাকুরে হিসেবে ভারতের নতুন দিল্লি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে বদলী হয়ে আসে। নেহা বলে “আমি এখন বাইরে যেতে পারব, আমার নিজের ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারব। যদি চাই, আমি আমার নিজের ব্যবসা চালু করতে পারব। আমি যদি চাই তাহলে বাইরে যেতে এবং পড়ালেখা করতে পারব। এখন আমার আর কেবল ঘরের কাজ করার মত সীমাবদ্ধতা নেই”।
মহাজন জানায়, এটা কেবল কাজের বিষয় নয়, সে কয়েক বছর আগে নিউজার্সির বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু যেহেতু তার কোন সিকিউরিটি নাম্বার ছিল না, তাই কেউ তাকে কোন শিক্ষা ঋণ প্রদান করেনি। সে বলে যে, “এখানে যুক্তরাষ্ট্রে এতদিন আক্ষরিক অর্থে আমার কোন পরিচয় ছিল না, কারণ আমি পুরোপুরি আমার স্বামীর উপর নির্ভর ছিলাম। যখন তারা আমাকে এইচ-৪ ভিসা প্রদান করে, তখন তারা এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল যে সত্যিকার অর্থে আমি যেন তার উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকি”।
এইচ-৪ ভিসাধারীরা যাতে কাজ করার অধিকার পায় মহাজন সেই প্রচেষ্টায় যুক্ত ছিলেন। বিদেশী কর্মীদের স্ত্রী বা স্বামী, যারা স্যোশাল মিডিয়ায় একটিভ, তাদের “এইচ-৪ ভিসা এক অভিশাপ” শিরোনামে এক ফেসবুক পাতা এবং ব্লগ রয়েছে।
ভারতে মহাজন এক টিভি সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। যখন তার স্বামীর কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিলে যে তাকে তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাবে, তখন মহাজন সন্তান ধারনের জন্য কাজ থেকে ছুটি নেয়। মহাজন বলে “ আমি তার সাথে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই, কারণ আমেরিকা হচ্ছে স্বপ্নের এক দেশ”।
সে সময় কেউ একজন তাকে বলেছিল যে সে সেখানে কাজ করতে পারবে না, কিন্তু সে বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নেয়নি। যখন সে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে হাজির হয় এবং কাজের জন্য প্রচার মাধ্যমে কর্মরত ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে, তারা এই বিষয়ে অনমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেঃ চাকুরী তো দূরে থাক, কাজের অনুমতিপত্র ছাড়া এমনকি এখানে ইন্টার্নশীপ পাওয়াও অসম্ভব।
স্বামীর মত,নেহার পক্ষে এই এইচ-১বি ভিসা জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। সে বলে, আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নই, আমার পড়ালেখা এই বিষয় সংক্রান্ত নয়, কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা, এবং নিজের দক্ষতা, শিক্ষা ও প্রতিভাকে সজীব রাখার জন্য সে নিউজার্সিতে বার্ষিক চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজক এক সংগঠনের হয়ে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার হিসেব করে দেখেছে যে সংখ্যায় প্রায় ১৭৯,০০০ জন এইচ-১বি ভিসা প্রাপ্ত নাগরিকের স্ত্রী বা স্বামী প্রথম বছর কাজের অনুমতি পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবে এবং পরবর্তীতে প্রতি বছর ৫৫,০০০ হাজার নাগরিক এর জন্য আবেদন করতে পারবে। কিছু কিছু সমালোচক এই আইনের বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত হেনেছে, তাদের মতে বিদেশী কর্মীদের স্ত্রী বা স্বামীরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের চাকুরী ছিনিয়ে নেবে। মহাজন এর পাল্টা যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে যে সে এক বৈধ অভিবাসী হিসেবে এদেশে এসেছে এবং আমেরিকার নাগরিক হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।
মহাজন বলে, আমি আপনার এক প্রতিবেশী, আমি আর আপনি একই এলাকায় বাস করি, এমনকি যদিও আমি কোন আয় করি না, কিন্তু আমি আমার কর দেই। আমি আপনার চাকুরী ছিনিয়ে নেব না, আমি এক বিনিয়োগকারী হতে ইচ্ছুক এবং যদি আমাকে অনুমতি দেওয়া হয় তাহলে আমি আমার নিজের ব্যবসা খুলতে চাই, আর এখন আমি ঠিক তাই করতে যাচ্ছি, কাজে এখানে কারো চাকুরী ছিনিয়ে নিতে আমার আগমন নয়”।