
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৫ ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলোতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। ছবিটি তোলা হয়েছে ভারতের এলাহাবাদ থেকে। ছবি তুলেছেন রিতেশ শুক্লা। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (১২/২/২০১৫)।
সারাবিশ্বের ক্রিকেট ভক্তদের চোখ যখন টিভি পর্দায় বিশ্বকাপের ম্যাচে আটকে আছে, তখন নেপালের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের ক্রিকেট মাঠ জন্ম দিলো এক আবেগময় ও সাহসী ঘটনার। এদিন ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৫-এ পাকিস্তান ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে গেলেও কাঠমাণ্ডুতে অনুষ্ঠিত উইন্টার কাপ ইন্টারন্যাশনাল হুইলচেয়ার ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে পাকিস্তান নেপালকে ৩-০ হারায়।
পাকিস্তানের ইসলামাবাদের ইকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ওয়াসিম টুইট করেছেন:
Congrats Pakistan for winning Winter Cup International Wheelchair Cricket Tournament Series on Feb. 20 (Nepal) pic.twitter.com/wfah1XljZL
— Shahid Waseem (@shahidwaseem44) February 22, 2015
নেপালে অনুষ্ঠিত উইন্টার কাপ ইন্টারন্যাশনাল হুইলচেয়ার ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ সিরিজ জয়ের জন্য পাকিস্তান দলকে অভিনন্দন।
ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলের বাজে পারফর্মেন্সের দিকে ইঙ্গিত করে পিটিভি’র একজন ক্রীড়া প্রতিবেদক লিখেন:
“We are Better than the Team in World Cup”..Pakistan WheelChair Cricket Team wins series 3-0 against Nepal. pic.twitter.com/VMHAn9M6Yw
— X è é § h ä ñ (@Xeechilly) February 21, 2015
বিশ্বকাপ ক্রিকেট দলের চেয়ে আমরা ভালো। পাকিস্তান হুইলচেয়ার ক্রিকেট দল নেপালের বিরুদ্ধে ৩-০ তে জয়ী হয়েছে।
গত ১৮-১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫-এ নেপালের স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন এই ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিল। প্রতিটি ম্যাচ ছিল ১০ ওভারের। পাকিস্তান আর নেপাল দল তিনটি করে ম্যাচ খেলে।
সাংবাদিক গজেন্দ্র বুদ্ধাথোকি অর্থনীতি ও উন্নয়ন ইস্যুতে লেখালিখি করেন। তিনি এই অদম্য সাহসী খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে লিখেছেন:
YOU ARE GREAT GUYS! PROUD ON YOU! THE FIRST WHEELCHAIR CRICKET By SPINAL CORD INJURIES #WHEELCHAIRCRICKET pic.twitter.com/Yw3MsLeumz
— Gajendra Budhathoki (@gbudhathoki) February 21, 2015
আপনারা সত্যিই সাহসী মানুষ। আপনাদের জন্য গর্ব অনুভব করি। মেরুদণ্ডের আঘাত অ্যাসোসিয়েশন প্রথমবারের মতো আয়োজন করলো হুইলচেয়ার ক্রিকেট।
শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষদের জন্য কাজ করে ন্যাশনাল সিটিং অ্যান্ড মবিলিটি নামে একটি সংস্থা। সংস্থাটি টুইট করেছে:
RT @Criceverest: Nepal vs Pakistan — 1ST InterNational Wheelchair Cricket Series. : pic.twitter.com/wRsVOU1sDv @ChangeFdn @TheRealPCB @KANepal:
— MOBILITY (@MobilityNSM) February 19, 2015
নেপাল বনাম পাকিস্তান- প্রথম ইন্টারন্যাশনাল হুইলচেয়ার ক্রিকেট সিরিজ।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল হুইলচেয়ার ক্রিকেট টুর্নামেন্টে নেপালের ১৪ জন খেলোয়াড় অংশ নেন। তাদের সবাই মেরুদণ্ডের আঘাতে আক্রান্ত। এদের ছয়জন মাওবাদী হামলায়, বাকীরা দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডের আঘাতের শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পাকিস্তান থেকে ১৬ জন হুইলচেয়ার ক্রিকেটার নেপালে এসেছিলেন। তাদেরও এটা প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল।
সাধারণ ক্রিকেট খেলার মতো হুইলচেয়ার ক্রিকেটে প্রতি দলে ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকেন। তবে খেলা সর্বনিম্ন ১০ এবং সবোর্চ্চ ২০ ওভারে হয়ে থাকে। পিচের দৈর্ঘ্য থাকে ১৬ গজ। আর বাউন্ডারি হয়ে থাকে ৪৫-৫০ গজের মধ্যে।
সাধারণ ক্রিকেটের মতো এখানে ব্যাটসম্যান এক, দুই এবং তিন রান নিতে পারেন। ব্যাটসম্যান বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে চার ও ছয় রান নিতে পারেন। তাছাড়া সাধারণ ক্রিকেটের মতোও ওয়াইড ও নো বলের নিয়ম রয়েছে।
আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের প্রথা অনুযায়ী চলতি বছর নেপাল ব্লাইন্ড উইমেনস ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফর করবে। সেখানে তারা পাকিস্তান ব্লাইন্ড উইমেনস দলের বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজ খেলবে। পাকিস্তান ব্লাইন্ড ক্রিকেট কাউন্সিলের তথ্যমতে, সিরিজে পাঁচটি টি২০ ম্যাচ থাকবে। আর পাকিস্তানের পাঁচটি শহরে খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে।
২০১৪ সালে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব ব্লাইন্ড নেপাল আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে নেপালের ব্লাইন্ড উইমেনস ক্রিকেট দল ব্রিটেনের ব্লাইন্ড উইমেনস ক্রিকেট দলকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজ বিজয়ী হয়েছিল।
নেপালি দলের বিজয়ের পর নেপালনিউজ.কম নামের একটি নিউজ পোর্টাল লিখে:
Nepal makes 3-0 clean sweep vs @UKFemaleVICric in 1st ever women's #BlindCricket series. http://t.co/C7PNhi4MjH pic.twitter.com/YTbYZ0IrZ9
— Nepalnews.com (@nepalnews_com) October 28, 2014
প্রথমবারের মতো আয়োজিত উইমেনস #ব্লাইন্ডক্রিকেট সিরিজে নেপাল ব্রিটেনের ব্লাইন্ড উইমেনস ক্রিকেট দলকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছে।
নেপালের ব্লাইন্ড উইমেনস ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের মতো দু’জন নেপালিজ নারী হুইলচেয়ার খেলোয়াড়ও উইন্টার কাপ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিলেন। তারা হলেন লক্ষ্মী ঘিরিমি এবং হেমকালা সানুয়ার। ২০ বছর বয়সী লক্ষ্মী জানিয়েছেন, বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলো বাড়িতে বসে দেখবেন।
মেরুদণ্ডের আঘাত হোক কিংবা দৃষ্টিহীনতা, কোনো কিছুই এই অদম্য সাহসীদের বিশ্বকাপের উচ্ছ্বাস থেকে দূরে রাখতে পারবে না।