জানুয়ারি ২০১৫-এ ফিলিপাইনসে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছেঃ ম্যানিলা এবং লেয়েতেতে পোপ ফ্রান্সিসের আগমন; সেবুতে সিনুলগ উৎসব; এবং অবশ্য সেই একই সেবুতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গ্লোবাল ভয়েসেস সামিট।
সম্ভবত গ্লোবাল ভয়েসেস-এর এমন অনেক অংশগ্রহণ কারী রয়েছেন যারা ফিলিপাইনের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির সাথে পরিচিত নন, এবং এদিকে ইন্টারনেট অনুসন্ধান, আমার দেশের বেশ কিছু কৌতূহল সৃষ্টিকারী এবং গ্রহণযোগ্য তথ্য তুলে ধরবে, আর আমি কিছু তথ্য আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব, যা প্রথমবার এই দেশ ভ্রমণকারীর জন্য প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হবে।:
১.ফিলিপাইন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের এক দ্বীপমালা, যা ৭১০৭টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত, ফিলিপাইনের রয়েছে বিশ্বের অন্যতম এক দীর্ঘ উপকূলরেখা।দেশটি তিনটি প্রধান দ্বীপপুঞ্জে বিভক্তঃ লুজান, যেখানে রাজধানী ম্যানিলার অবস্থান; ভিসাইয়াস (সেবু, ভিসাইয়াস-এর কেন্দ্রে অবস্থিত); এবং মিন্দানাও, দক্ষিণের দ্বীপ এবং এখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ভ্রমণ বিষয়ক অনেক পত্রিকা, বোরাকেয় এবং পালাওয়ানকে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর দ্বীপগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
২ পূর্ব তিমুর ছাড়া, ফিলিপাইন হচ্ছে এশিয়ার একমাত্র ক্যাথলিক প্রধান রাষ্ট্র, উত্তরাধিকার সুত্রে স্পেনের কাছ থেকে এই ধর্ম এসেছে, কারণ দেশটি ৩০০ বছর স্পেনের কলোনি ছিল। ১৮৯৮ সালে স্বল্প সময়ের জন স্বাধীনতা অর্জন করার পর, আবার তা ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশে পরিণত হয়। দ্বীপটিতে ক্যাথলিক ধর্মের প্রাধান্য এবং ইংরেজি ভাষার জনপ্রিয়তা ব্যাখ্যা করার জন্য যেমনটা কিছু কিছু ফিলিপিনো বলে: “আমরা ৩০০ বছর চার্চের এবং ৫০ বছর হলিউডের অধীনে কাটিয়েছি”!
নাগরিক এবং নেতাদের মাঝে ক্যাথলিক বিশ্বাস গভীর হওয়ার কারণে, ভ্যাটিকান ছাড়া ফিলিপাইন এখনো বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে কোন বিবাহ বিচ্ছেদ আইন নেই।
আগামী মাসে পোপের ম্যানিলা এবং লেয়েতা ভ্রমণের জন্য ক্যাথলিক ফিলিপিনোরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ইতোমধ্যে ম্যানিলা ১৫ থেকে ১৯ জানুয়ারি শহরে কর্মহীন ছুটি ঘোষণা করেছে এবং রাষ্ট্রপতির দপ্তর ইঙ্গিত প্রদান করেছে যে ফিলিপিনো নাগরিকরা যাতে পোপের আগমনের সাক্ষী এবং তার কর্মকাণ্ডের শরীক হতে পারে তার জন্য সরকার হয়ত এই দিনগুলোকে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করতে পারে
৩। ম্যানিলা হচ্ছে ফিলিপাইনের প্রধান শহর এবং রাজনৈতিক রাজধানী। এটা ম্যাট্রো ম্যানিলার অংশ, যা ১৭টি শহর এবং পৌরসভার সমন্বয়ে গঠিত। মাকাতি সিটি হচ্ছে দেশটির অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু।
ভিসাইয়াসে, সেবু হচ্ছে এর প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র। দেশটিতে যে ৮০ টি প্রদেশ আছে, এটি তার একটি এবং এটি দেশটির সবচেয়ে সেরা পর্যটন কেন্দ্র। সেবু প্রদেশের রাজধানী সেবু সিটিতে জিভি সামিট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
সেবুকে, ফিলিপাইনের ক্যাথলিক ধর্মের জন্মস্থান হিসেবে জানা যায়। এটি খাবার, ধর্মীয় উৎসব, ক্যাথেড্রাল, পাখির অভয়ারণ্য, এবং প্রিষ্টিন দ্বীপের জন্য বিখ্যাত। সেবু বিমান বন্দর ম্যাকটান দ্বীপে অবস্থিত, যেখানে জনপ্রিয় সাদা বালুর সমুদ্রতট অবকাশ যাপন কেন্দ্র অবস্থিত।
ফিলিপাইনের অন্যতম এক বীর লাপু-লাপু (ম্যাকটানে যার স্মৃতিস্তম্ভ তাকে স্মরণ করছে), যিনি ছিলেন স্থানীয় এক গোত্রপ্রধান যে ১৬ শ শতকে স্প্যানিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় নিহত হয়।
৪. তথাকথিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় বলয়ে অবস্থিত হবার কারণে ফিলিপাইন প্রায়শ শক্তিশালী টাইফুন, ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে কেঁপে ওঠে। গত বছর টাইফুন হাইয়ান (স্থানীয় ভাবে ইয়োলান্ডা নামে পরিচিত) এর আঘাতের কারণে লেয়েত্তা এবং সামার আইল্যান্ড আন্তর্জাতিক শিরোনাম হয়ে ওঠে, যা ছিল ইতিহাসের রেকর্ড করা ক্রান্তীয় অঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী টাইফুন।
কিন্তু উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই, জানুয়ারি মাসে টাইফুন কালে ভদ্রে আঘাত হানে। এই সময়টা সমগ্র দেশটি ভ্রমণ করার জন্য চমৎকার সময় কারণ সাড়া দেশ জুড়ে এখন শীতল আবহাওয়া বিরাজ করছে। কতটা শীতল? সেই পরিমাণ ঠাণ্ডা নয়,যদি আপনি সে রকম কোন শীতের দেশের বাসিন্দা হোন, আর তাই আমি বলছি আপনার গ্রীষ্মের পোষাক গুছিয়ে ফেলুন এবং আর ভারী জ্যাকেট ঘরে রেখে আসুন। তবে সাথে ছাতা নিয়ে আসবেন কিন্তু!
৫. সেবুতে ভ্রমণ নিরাপদ। এখানে পুরো শহর জুড়ে সহজে ট্যাকিস পাওয়া যায় (সেবুতে কোন ট্রেন নেই) । এবং জীপনীতে অবশ্যই চড়বেন, যা এই দেশের প্রতীক এবং জনপ্রিয় গণ পরিবহন।
আর একবার যদি আপনি ম্যানিলা কিংবা সেবুতে অবতরণ করেন, মজা করা শুরু করুন কারণ এটাই দেশটির পর্যটনের আনুষ্ঠানিক স্লোগানঃ # ফিলিপাইনে আরো বেশী মজা;#ইটিজমোরফান (এখানে আরো বেশী মজা)। তাহলে জানুয়ারি মাসে আপনাদের সাথে দেখা হচ্ছে।