
সোফিয়ার কেন্দ্রীয় বাস স্টেশন। ছবিঃ নিকোলা গ্রুএভ, ক্রিয়েটিভ কমনস লাইসেন্সের অধীনে ব্যবহৃত।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং ব্লগার আনাসতাস ভ্যানগেলি বুলগেরিয়ান পুলিশের হাতে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ননা করেছেন। তিনি মেসেডোনিয়া থেকে পোল্যান্ড যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটেছে। একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তিনি এ ঘটনার বর্ননা দিয়েছেন। দুইজন সশস্ত্র পুলিশ কর্মকর্তা ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ তারিখে সোফিয়াতে বাস স্টেশন থেকে দূরে একটি নির্জন স্থানে তাকে ততক্ষণ পর্যন্ত “শাস্তি” প্রদান করেছেন, যতক্ষণ না তিনি তাদের কিছু টাকা দিয়েছেন। পরিশেষে তিনি লিখেছেনঃ
এটি আমার জীবনের সবচেয়ে হতাশাজনক একটি অভিজ্ঞতা। এ ঘটনাটি কয়েকজন লোকের কাছে বর্ননা করার পর তারা যখন আমাকে কটুক্তি এবং বাজে মন্তব্য করতে শুরু করল, তখন আমি আরও বেশি হতাশ হয়ে পরিঃ
- যেহেতু আমাকে “দেখতে একজন বিদেশি” এবং ধনী লোক বলে মনে হয়েছে, তাই আমার কাছ থেকে তারা টাকা চেয়েছে।
- যেহেতু আমি আমার চীনা বই নিয়ে আস্ফালন করেছি এবং আমাকে দেখে বেশ ধনী বলে মনে হয়েছে, তাই তারা আমার কাছ থেকে টাকা চেয়েছে।
- আমার এ ধরনের ঘটনার কথা জানা থাকা এবং তা থেকে সাবধান থাকা উচিৎ ছিল।
- আমার মাটি কামড়ে থাকা উচিৎ ছিল। উল্লেখ্য, তাদের সাথে কোন কক্ষে যাওয়া এবং তাদেরকে আমার কাছে টাকা চাওয়ার সাহস দেয়া ঠিক হয়নি।
- আমার অভিযোগ করা উচিৎ হয়নি। কারন এ ধরনের ঘটনা প্রতিদিনই অহরহ ঘটছে এবং আমি কোন বিশেষ কেউ নই।
উপরের এই সবগুলো বক্তব্য শুধুমাত্র ব্যাপকভাবে বিস্তৃত দুর্নীতি এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তর এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কেই বলা হয়নি বরং অন্যের আবেগ অনুভূতির প্রতি সহানুভূতির অভাব থাকার কারনেও বলা হয়েছে। অথবা তারা হয়তোবা ভাবতেই পারছেন না যে একদিন এ ধরনের ঘটনা তাদের সাথেও ঘটতে পারে। অথবা হতে পারে এটি একটি নির্দেশনা যে জনগণ ধরেই নিয়েছেন এ অবস্থার তেমন পরিবর্তন হবে না; বরং তাদের এ দায়িত্বজ্ঞানটুকু থাকা উচিৎ ছিল যে এ ধরনের পরিস্থিতিতে তাদের কিছু করা উচিৎ। পরিশেষে শাসনতন্ত্র এককভাবেই পুলিশ বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে; আমাকে যাদের নিরাপত্তা দেয়ার কথা ছিল তাদের হাতেই আমি (আমার কোন বুলগেরিয়ান পাসপোর্ট না থাকা সত্ত্বেও – তাদের সাথে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন রকম কৌতুক না করা সত্ত্বেও) ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছি। এক্ষেত্রে সকল ধরনের প্রাসঙ্গিক মন্তব্য একেবারেই বেমানান।
উপরে উল্লেখিত প্রতিক্রিয়াগুলো হচ্ছে “গনতন্ত্র থেকে দূরে সরে যাওয়ার” সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। লিমাতে ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত গণতন্ত্রের জন্য বিশ্ব আন্দোলনের সপ্তম সম্মেলনে এ কথাগুলোই ব্যক্ত করা হয়েছেঃ
“…দুর্নীতি এখানে এতোটাই বিস্তার লাভ করেছে যে জনগণ এটিকে একটি রীতি বলে মেনে নিয়েছে”।
এ ঘটনা নিয়ে ভ্যানগেলি যে ফেসবুক পোস্ট লিখেছেন তা নিয়ে লোকজন (বিভিন্ন ভাষায়) বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। তারা স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, “একজন বিদেশির সম্পদ কেড়ে নেয়ার” মতো এ ধরনের ঘটনা তাদের সাথে বহুবার ঘটেছে। দুঃখজনকভাবে ১৯৯০ সালের পর থেকে বুলগেরিয়ান পুলিশ নিয়মিতভাবেই এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে তবে তারা এ সময়ে এসে এই দিনে সেসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি মোটেও আশা করেননি। মন্তব্যকারীদের কেউ কেউ অন্যান্য কয়েকটি দেশেও একই ধরনের অভিজ্ঞতার শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। এ তালিকায় রাশিয়া থেকে কেনিয়া কোন দেশই বাদ যায়নি। সক্রিয় কর্মী বেসিম নেবিউ লিখেছেনঃ
লক্ষ্য করুন, তারা আপনাকে কীভাবে তড়িঘড়ি করে জিজ্ঞাসা করেছিল যে বিমান বন্দরে আপনাকে কোন ফ্লাইটে উঠতে হবে কিনা? এ প্রশ্নের উত্তরেই তারা ‘আপনার উপর প্রাধান্য বিস্তার করা যাবে কিনা’ তা বুঝে নিয়েছে। আমার একজন বন্ধু কেনিয়াতে বাস করেন। তিনি একবার এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়ে একটি ব্লগ পোস্ট লিখেছিলেন। ব্লগ পোস্টটিতে তিনি বর্ননা করেছিলেন, কীভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ তাদের “সুযোগ খরচ” আদায় করে নেয়। দিনে ৮ ঘন্টা দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় তারা সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করে থাকে। যাদের কাছ থেকে তারা সুযোগ নিতে পারবে না তাদেরকে তারা এড়িয়ে চলে। আর তাই বোবার অভিনয় করার যেকোন কৌশল এবং খুব বেশি মন খারাপ না করে থাকার কৌশলটি বেশ ভালো কাজে দেয়। প্রায় ১৫ মিনিট আপনাকে যাচাই করার পর যদি কোন কিছু না নিতে পারে তবে আপনাকে ছেড়ে দিয়ে তারা আরও সহজ কোন শিকার খুঁজে নেয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া বুল্গেরিয়ান পুলিশের শীতকালীন পোশাক। ভুক্তভোগীর বর্ণনা অনুযায়ী, পুলিশ অফিসারটি সবুজ পোশাক এবং সাধারণ পুলিশের ব্যাজ পরিহিত ছিল।
বুলগেরিয়ান ব্লগার কমিতাতা তাঁর পোস্টের [বুলগেরিয়ান] ভেতরেই ভ্যানগেলির পোস্টটি “তারা আমাদের সুরক্ষা দেয় এবং এটা কোন নাট্যশালা নয়” শিরোনামে অনুবাদ করেছেন। পোস্টটিতে সন্দেহজনক পুলিশি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সে ব্যাপারে প্রশংসা উল্লেখ করে স্থানীয় প্রসঙ্গ সম্পর্কে মতামত অন্তর্ভুক্ত রয়েছেঃ
Системата на МВР не е реформирана. Предното неслужебно правителство положи големи усилия, но поради липса на решителност и политическа воля, реформите останаха скромни и далеч не необратими.
অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যপ্রনালী সংস্কার করা হয়নি। সাবেক সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করার যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। তবে সুষ্পষ্টতা এবং রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার অভাবে মন্ত্রনালয়টির সংস্কার কাজ পরিমিত এবং বার বার পরিবর্তন হওয়ায় একই অবস্থাতেই রয়ে গেছে।
কমিতাতা তাঁর এই পোস্টটিতে টুইটারে হওয়া আলোচনারও [বুলগেরিয়ান] উদ্ধৃতি দিয়েছেন। পোস্টে বুলগেরিয়ানরা জিজ্ঞাসা করেছেন, বাস স্টেশনে যাত্রীদের তল্লাশি করার কোন অধিকার পুলিশের আছে কিনা? পাশাপাশি তারা পুলিশী তল্লাশি [বুলগেরিয়ান] চলাকালীন নাগরিক অধিকার বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়েছেন।