
ইসরায়েলের বিমান হামলার পরে গাজার অধিবাসীরা শহর পরিষ্কার করছেন। সূত্রঃ ডালিয়া আলা-নাজ্জার ব্লগ।
“নিজের ভিতরে ডুবে যাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে লেখালেখিকে আমি নোঙ্গর হিসেবে ব্যবহার করছি।” ২০ বছর বয়সী ডালিয়া আল নাজ্জার তার ‘গাজায় যাপিত জীবনের ডায়েরি’ ব্লগটির উপস্থাপনায় এমনটিই বলেছেন। “আমি আমাদের যাতনার গল্প বলার জন্য আমার জীবনকে উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কারণ আমি অনুভব করছি, বেঁচে থাকার জন্য শহীদদের কাছে আমি ঋণী।”
গত ৮ জুলাই তারিখ থেকে ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় স্ট্রিপের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্রটেকটিভ এজ নামের ব্যাপক হামলা শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১,৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত, ১০,০০০ এরও অধিক আহত এবং ৪,৫০,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
গত ছয় বছরের মধ্যে গাজায় এটি ইসরাইলের তৃতীয় সামরিক হামলা। ইসরায়েল গাজা এবং পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে, তাই অধিকাংশ বিশ্ববাসী এবং জাতিসংঘ স্থানটি ইসরায়েল দ্বারা “দখল” বলে বিবেচনা করে।
তাঁর বেঁচে থাকার দুঃখজনক বাস্তবতা সত্ত্বেও, ডালিয়ার ব্লগ হচ্ছে জীবনের একটি স্তবগান। তার দেওয়া ঘটনার আখ্যান বা বর্ণনায় স্থান পেয়েছে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে বোমা ফেলার প্রতিক্রিয়া থেকে শুরু করে ধ্বংসস্তুপ থেকে শহর পুনঃর্নির্মাণের জন্য সংগঠিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান পর্যন্ত। অন্ধকার ব্যঙ্গকৌতুকের মধ্যে সিক্ত তার লেখা আমাদের অবিরত বিস্ফোরণ প্রত্যক্ষ করায়, যার ভয়াবহতায় গাজা কেঁপে উঠেছে প্রতিনিয়ত।
আমি নিজেকে জড়িয়ে ধরে পালঙ্কে বসেছিলাম। হাঁটুর উপর আমার মাথা ঠেস দিয়ে আমার চারপাশে ঘুমানো ভাইবোনদের দেখছিলাম। জীবিত থাকা সম্পর্কে ভীতিকর ব্যাপারটি হচ্ছে, মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা, যখন আপনি লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানার আগে আপনার উপর উড়ন্ত রকেটের শব্দ শুনতে পাবেন .. সব সময় আমি সেই শব্দ শুনি, আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসে, আমার কাঁধ উঁচু হয়ে যায় এবং আমার ঘাড় নিচে নেমে আসে, আমাকে টুকরো টুকরো করে ফেলার অপেক্ষায় রয়েছে .. বিস্ফোরণ শোনার পরে, আমি দম নিয়ে বললাম, “ওহ! ওটা খুবই কাছাকাছি ছিল!” .. যেগুলো সাড়া রাতে শতাধিক বার ঘটেছে। আমার মনে অনুভূত হওয়া ত্রাস, ভয় এবং ব্যথার কথা আমি বর্ণনা করতে পারব না, আমার চুল পড়ে যাচ্ছে, যদি আমি বেঁচে থাকি তবে আমি নিশ্চিত যে এই দুঃস্বপ্নের পরে আমাকে একটি পরচুলা পড়তে হবে।
ডালিয়া এছাড়াও তার পরিবার এবং নিকটস্থ লোকজনদের আমাদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন:
আমার বোন সারা, ইতিমধ্যে জেগে গেছে। আমি ৩ ঘন্টার জন্য যখন ঘুমিয়ে পরেছিলাম, তখনকার না পাওয়া সংবাদ সম্পর্কে তার কাছে জিজ্ঞাসা করলাম।
“তুমি আসলে এটা সম্পর্কে শুনতে চাও না” সে দু:খের সাথে বলল।
“কি ঘটেছে ?” আমি আবেগপূর্নভাবে জিজ্ঞাসা করলাম।
“তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে”
আমি চিৎকার করে বললাম, “কি, কখন, কিভাবে কেন কেন কেন!!”
“আমি জনাব নেতানিয়াহুকে ফোন করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু তিনি ফোন ধরলেন না”
গাজায় জীবন এবং মৃত্যুর এই সুন্দর উপাখ্যানের জন্য ডালিয়া আল-নাজ্জার এর ব্লগ অনুসরণ করুন এবং এখানে সুপারমুনের অধীনে ৭২ ঘন্টার মানবিক যুদ্ধবিরতির সময় একটি জনাকীর্ণ আশ্রয়কেন্দ্রে তার পরিদর্শন সম্পর্কেও পড়ুন।