ভোট দেয়ার অধিকার নিয়ে নাগরিকদের নেতৃত্বে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কয়েকদিন আগে যে প্রযুক্তিগত মঞ্চের উপর ভিত্তি করে গণভোট গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল সেটি ব্যাপক ভাবে ডিডস আক্রমণের শিকার হয়েছে।
২০ জুন তারিখ থেকে ২২ জুন তারিখ পর্যন্ত সংবিধান সংশোধন নিয়ে অনুষ্ঠিত একটি গণভোটে নাগরিকদেরকে ভোট প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানান হয়। শহরের কার্যনির্বাহী প্রধান কে হবেন তা নির্ধারণ করার নির্বাচনে সকল নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে এই গণভোটটি।
বিশ্বজনীন ভোটাধিকার বিষয়ে সম্প্রতি নাগরিক প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে। এই প্রস্তাবনাটিকে কেন্দ্র করে জনগণ যেন একটি ঐকমত্যে পৌছাতে পারে তাই “অকুপাই সেন্ট্রাল উইথ লাভ এন্ড পিস” নামের একটি নাগরিক দল হংকং বিশ্ববিদ্যালয় এবং হংকং পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সোশ্যাল পলিসি স্টাডিজ বিভাগে একটি জনমত জরিপের আয়োজন করেছে। গ্রুপটি তাদের সার্ভারের মাধ্যমে এই নাগরিক গণভোটের জন্য ভোট প্রদানের ব্যবস্থা করে।
ভোটারদের নিবন্ধনপূর্ব তথ্য গ্রহণের মাধ্যমে এইচকেইউ এর জনমত জরিপ কার্যক্রম (পিওপি) শুরু করা হয়েছিল। এ কার্যক্রমের জন্য তাদের অনলাইন সিস্টেম পরীক্ষা করার ৩০ ঘন্টা পর গত ১৩ জুন তারিখে সিস্টেমটি ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অব সার্ভিস (ডিডস) আক্রমনের শিকার হয়েছে। এটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সার্ভার বিপর্যয় বলে মনে করা হচ্ছে। তখন থেকেই তাদের অন্যতম দুইটি ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী এই প্রকল্পের জন্য কাজ করতে তাদের অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন।
বেইজিং সমর্থক রাজনৈতিক দলগুলো মনোনয়নের জন্য নির্ধারিত চ্যানেল সম্পর্কে বিতর্ক উস্কে দিয়ে এই নাগরিক গণভোটের সমালোচনা করছেন। হংকং এর বেশিরভাগ অধিবাসী মনে করেন, একটি মনোনীত কমিটির দ্বারা মনোনয়ন প্রদানের এই পদ্ধতিটি একটি ছাঁকন প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করে। এ ছাঁকন পদ্ধতিতে বেইজিং এর জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত প্রার্থীদেরকে বাদ দিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
১৬ জুন তারিখে এইচকেইউ পিওপি এর ইস্যু করা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আমাজন ওয়েব সার্ভিস (এডব্লিউএস), ক্লাউনফেয়ার এবং ইউডোমেইন যৌথভাবে ভোট প্রদানের এই প্রক্রিয়াটি তদারকি করবে। এই তিনটি ওয়েব সার্ভিসের সবগুলোই ১৪ এবং ১৫ জুন তারিখে ব্যাপক ভাবে ডিডস আক্রমণে জর্জরিত হয়েছে। এডব্লিউএস ২০ ঘন্টায় ১০ বিলিয়ন সিস্টেম রিকোয়েস্টের রেকর্ড ধারণ করেছে। ক্লাউডফেয়ার প্রতি সেকেন্ডে ৭৫ জিবি ডিডস রেকর্ড ধারণ করেছে। আর ইউডোমেইন রেকর্ড ধারণ করেছে প্রতি সেকেন্ডে ১০ জিবি।
যেহেতু আক্রমণটি বেশ শক্তিশালী মাত্রায় ছিল, তাই তিনটি ওয়েব সেবা প্রদানকারীর সবাই জোরপূর্বক সাময়িকভাবে তাদের সেবা কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। একজন বিশেষজ্ঞের হিসাব অনুযায়ী, কমপক্ষে ৫,০০০ কম্পিউটার ব্যবহার করে এই হামলা চালান হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ১০ হাজারেরও বেশি সংখ্যক কম্পিউটার ব্যবহার করে আক্রমণ চালানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
আমাজন গত ১৬ জুন তারিখে ডিএনএস হোস্টিং সার্ভিস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেন এইচকেইউ পিওপি এবং ইউডোমেইন এটির নিরাপত্তা সুরক্ষা সেবা বন্ধ করে দিতে পারে। ক্লাউডফেয়ার এখন ভোট প্রদান ব্যবস্থায় সেবা প্রদানকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে।
আইটি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এন্থনি লাই তাঁর ফেসবুক পাতায় ডিজিটাল আক্রমণের মানচিত্রটি পোস্ট করেছেন। এইচকেইউ পিওপি ভোট প্রদানের ব্যবস্থা পরীক্ষা নিরীক্ষা করার আগে এবং পরে ১০ জুন এবং ১৪ জুন (শুরুতে দেখুন) তারিখের আক্রমণের মাঝে তুলনা করে তিনি এই মানচিত্রটি তৈরি করেছেনঃ
এইচকেইউ পিওপি ভোট প্রদানের ব্যবস্থার স্থায়িত্ব সমস্যার একটি সমাধান খুঁজে বের করতে কাজ করছে। তারা ১২৫ টি টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে ভোট প্রদানের ব্যবস্থা করার চিন্তা করছেন। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় ১২ ঘন্টায় মাত্র ৭০ হাজার ভোট গ্রহণ করা সম্ভব। ওসিএলপি আশা করছে, এই নাগরিক গণভোটে ৩ লাখেরও বেশি সংখ্যক ভোটার অংশগ্রহণ করবে।
এইচকেইউ পিওপি ২০১২ সালেও ডিডস আক্রমণের শিকার হয়েছিল। প্রধান কার্যনির্বাহীর নির্বাচনটি তখন একটি কৌতুক পূর্ণ বিশ্বজনীন ভোটাধিকার নির্বাচনে পরিণত হয়েছিল।