আইন ১৪০: লেবাননে আড়ি পেতে শোনা

Beirut. Photo by Varun Shiv Kapur via Wikimedia Commons (CC BY 2.0)

বৈরুত। ছবিঃ ভরুন শিভ কাপুর। উইকিমিডিয়া কমেন্স (CC BY 2.0)

সবগুলো লিঙ্ক আরবি ভাষার ওয়েবসাইটকে নির্দেশ করে।

লেবাননে সরকারি কর্মকর্তারা জাতির নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে লেবানিজ জনগণের ইলেকট্রনিক যোগাযোগ সম্পর্কিত তথ্য কোন রকম বাধানিষেধ ছাড়াই প্রদান করার পূর্ণ অনুমতি দিয়ে একটি প্রস্তাব দিয়েছে। বিবরণ অনুসারে, গত মাসের একটি সংসদ অধিবেশনে এই প্রস্তাব নিয়ে সংক্ষিপ্ত এবং উত্তপ্ত বিতর্ক হওয়ার পর অবশেষে এই প্রস্তাবটি পাস করা হয়েছে। মূলধারার লেবানিজ প্রচার মাধ্যমগুলোতে এই খবরটি তেমন গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা হয়নি। তারা সংসদে এই আইন পাস করাকে কেবলমাত্র ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক দলে ফাটল ধরার আরেকটি ফলাফল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ব্যবহারকারীদের উপর এই আইনের কতটুকু প্রভাব পড়বে অথবা গোপনীয়তা যে একটি মানব অধিকার সেই ধারণার উপর এই আইনের প্রভাব কতটুকু পড়বে তা নিয়ে তেমন কোন আলোচনা করা হয়নি। তাই বলে আইনটির প্রভাব সম্পর্কে যাচাই বাছাই না করে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

আইনটির প্রথম অনুচ্ছেদে বলা আছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তির উপর কড়া নজর রাখার জন্য লেবাননের আইনটি সকল ধরনের ইলেকট্রনিক যোগাযোগ – যেমন তারের মাধ্যমে এবং তারবিহীন যেকোন মাধ্যমে, স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে গোপনীয়তার অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করে।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সারা লেবানন জুড়ে থ্রিজি প্রযুক্তি সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। তাই অনলাইন যোগাযোগের জন্য যেসব তথ্য প্রয়োজন এই আইনের অধীনে সেগুলো পেতে সরকার আবেদন জানিয়েছে। সরকারের এই তথ্য নেওয়ার আবেদন লেবাননের লক্ষ লক্ষ অধিবাসীকে প্রভাবিত করছে। এটি ১৪০ আইনকেও লঙ্ঘন করছে। জাতীয় জবাবদিহিতা সংস্থার প্রধান বিচারপতি আউনি রামাদান লিখিত দলিলে ব্যাখ্যা করেছেন, “চার মিলিয়ন লেবানিজ নাগরিকের ফোন কল সম্পর্কিত তথ্য উপাত্ত ফাঁস করা [নিষিদ্ধ]। কেননা, সকল লেবানিজ নাগরিক সন্দেহভাজন হতে পারে না।” 

যেহেতু লেবাননের আইন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারনত ফ্রেঞ্চ আইন ব্যবস্থাকে অনুকরণ করে, তাই ফ্রান্সে সন্দেহভাজন ব্যক্তির উপর নজরদারী করা আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে জানতে ২০১২ সালে ফ্রান্স সফরে যাওয়ার জন্য একটি প্রতিনিধি দল গঠন করা হয়। রামাদান ব্যাখ্যা করেছেনঃ “বিচারপতি চকরি সাদেরের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিচরণ করা কয়েকজন প্রযুক্তিবিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিনিধি দলটি জেনেছে যে ফ্রেঞ্চ কর্তৃপক্ষ সকল ধরনের তথ্য উপাত্ত সামরিক বিভাগকে…  প্রদান করাকে অনুমোদন করে না। বাস্তবিক অর্থে, যোগাযোগ সম্পর্কিত তথ্য উপাত্ত সমূহ পরিচালনা করার লেবানিজ কৌশলটি (ফ্রেঞ্চ সরকারের) কোন প্রচলিত রীতি নয়।”  

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সাথে লেবানিজ সরকার নিজেই তাঁর বৈধ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তির উপর নজরদারির ক্ষেত্রে যোগাযোগের উপর মানবাধিকার প্রয়োগ সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক মূলনীতিতে এই ইস্যুর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বেশ কিছু ধারণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে, বৈধতা – গোপনীয়তার অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে যেকোন ধরনের সীমাবদ্ধতা অবশ্যই আইন দ্বারা নির্ধারিত হতে হবে; প্রয়োজনীয়তা – অপরাধী সম্পর্কে তদন্তের জন্য কর্তৃপক্ষকে যোগাযোগের তথ্য উপাত্ত ব্যবহার করতে অবশ্যই স্বচ্ছ  প্রয়োজনীয়তা দেখাতে হবে; এবং যোগ্য বিচারিক কর্তৃপক্ষ – সন্দেহভাজন ব্যক্তি সম্পর্কে নজরদারি সম্পর্কে দৃঢ় সংকল্প। এতে তথ্য উপাত্ত ব্যবহারের জন্য আবেদন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। অবশ্যই যোগ্য ও নিরপেক্ষ বিচারিক কর্তৃপক্ষের দ্বারা এসব আবেদন পর্যালোচনা এবং অনুমোদন করতে হবে। 

লেবানিজ সরকার নিজেই তাঁর প্রনীত আইন লঙ্ঘন করছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে নাগরিকের গোপনীয়তা অধিকার সম্বন্ধে সরকার যথেষ্ট সম্মান দেখাচ্ছে না। বরং, সরকার সকলের সাথে  সন্দেহভাজন হিসেবে আচরণ করছে। কোন রকম মূলনীতি তারা অনুসরন করছে না। বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকার এবং লেবানিজ রাষ্ট্র বার বার প্রমাণ করেছে যে নাগরিকের প্রয়োজন মেটানো এবং অধিকার প্রদান করা তাদের অন্যতম অগ্রগণ্য বিষয় নয়। নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকার উপেক্ষা করে সরকার সমগ্র জাতির নিরাপত্তাকেই কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। 

 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .