দেশের অভ্যন্তরে নারীর প্রতি অপরাধ সংগঠনে ভারত অজনপ্রিয় হলেও ভারতের কিছু সংখ্যক নারী নেত্রী শীর্ষে উঠে এসেছেন এবং তাঁরা দেশের রাজনীতির গতিধারায় পরিবর্তন সাধন করেছেন।
বিশ্বের সবচাইতে বড় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ভারতে। বর্তমানে ভারতে নির্বাচন চলছে। আসুন আমরা ভারতের নেতৃত্বদানকারী নারী নেত্রীদের সাথে পরিচিত হই।
সোনিয়া গান্ধীঃ মক্ষিরাণী
ইতালীয় বংশোদ্ভূত সোনিয়া গান্ধী ১৯৯৮ সন থেকে ভারতের দুটো বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের অন্যতম দল ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০০৪ সালের নির্বাচনের পর গঠিত হওয়া রাজনৈতিক জোট ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ এলায়েন্স- এরও সভাপতি।
তিনি ঘাতকের হাতে নিহত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধীর স্ত্রী। তাঁর ছেলে রাহুল গান্ধী, গান্ধী পরিবারের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী। ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসের দ্বিতীয় প্রধান রাহুল গান্ধী দক্ষিন পন্থী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)- এর প্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর সাথে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ফোবর্স ম্যাগাজিনের ভাষ্য অনুযায়ী সোনিয়া হলেন ২০১৩ সালে বিশ্বের সবচাইতে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মধ্যে নবম। নেতা হিসেবে তাঁর সুনাম প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে তাঁর দলের বিভিন্ন দুর্নিতির কারনে, যেমন, তাঁর স্বামী এবং দল ১৯৯০ সালে অস্ত্র কেলেংকারীতে জড়িত ছিল, এতে করে ভারত সরকার সুইডিশ কোম্পানি বোফোর্স এর অস্ত্র বিক্রয় সংক্রান্ত অবৈধ প্রস্তাব মেনে নেয়। এ ঘটনার পর থেকে তিনি (সোনিয়া গান্ধী) একাধিক এ ধরণের টুইটার মন্তব্যের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন।
Factuals on Sonia Gandhi wealth. Where did she find her wealth; surely not on salary as President of Cong Party? pic.twitter.com/x2xLUxWBRJ
— K Khorana (@oldkrish) April 5, 2014
সোনিয়ার সম্পত্তির আসল ঘটনা। তিনি কোথা থেকে এত সম্পত্তি পেলেন; নিশ্চয়ই কংগ্রেস দলের সভাপতির বেতন থেকে নয়
জয়ললিতাঃ “আম্মা”
দক্ষিনের প্রদেশ তামিল নাড়ুতে প্রাক্তন অভিনেত্রী এবং বর্তমানে রাজনীতিবিদ জয়ললিতার ভক্তরা তাঁকে “ আম্মা” বা মা হিসেবেই চিনে। জয়ললিতা তামিলনাড়ুর মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং প্রদেশের দল অল ইন্ডিয়া আন্না ড্রাভিডা মুয়েন্ট্রা কাজাঘাম (এআইএডিএমকে) – এর প্রধান ছিলেন। তামিল নাড়ুর প্রসিদ্ধ প্রাক্তন অভিনেতা এবং প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ এম জি রামচন্দরন এর মাধ্যমে ১৯৮০ জয়ললিতার রাজনৈতিক অভিষেক ঘটে।
Jayalalitha Jayaram (#bday), the Queen of Tamil Nadu, dressed as the Queen of Egypt. (Anyone recognise the film?) pic.twitter.com/tQGrWcJQL3
— India in Pictures (@indiainpix) February 24, 2014
জয়ললিতা জয়ারাম(#বিডে) তামিল নাড়ুর রাণী, মিশরের রাণীর মত পোষাক পরেছিলেন। (কেউ কি সেই চলচ্চিত্রটির কথা মনে করতে পারেন?)
১৯৯৬ সালে জয়ললিতার বাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে ১০,০০০ এরও বেশি সিল্ক শাড়ি এবং কয়েক হাজার কিলোগ্রাম সোনা ও রূপা পাওয়া গেলে তিনি ভারতের ইমেলদা মার্কোস নামে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি কিছুদিনের জন্য কারাগারেও ছিলেন। ভক্তদের কাছে জয়ললিতা বা “পুত্রাচি থালাভি”, (বিপ্লবী নেতা) এবার দক্ষিনপন্থী বিজেপি এবং কংগ্রেস জোটের বাইরে ছোট ছোট দলের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা তৃতীয় ফ্রন্টে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মমতা বন্দোপাধ্যায়ঃ “বড় দিদি”
ভক্তরা মমতা বন্দোপাধ্যায়কে “দিদি” নামেই ডাকে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী এবং নিখিল ভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস দলের প্রধান। ২০০২ সালে প্রথম মহিলা রেলমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে ভারতীয় রাজনীতিতে তিনি নিজেকে পরিচিত করে তোলেন। পশ্চিমবঙ্গের নন্দীগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য ভূমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে কৃষকদের আন্দোলনকে তিনি সমর্থন করেন।
ফেসবুকে “দিদি”র ৬৮৮,০০০ এরও বেশি ভক্ত আছে। নির্বাচন কমিশনের আইন না মানায় তিনিও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন:
A concerted movement to stifle free speech in India. ‘WB govt. moves to ban film criticizing Mamata Banerjee. http://t.co/lbz4SXwKfn
— Narahari Vittal Rao (@vnarahari) February 25, 2013
ভারতে বাক সংবরণ করতে একটি সমন্বিত আন্দোলন। পশ্চিম বঙ্গ সরকার মমতা বন্দোপাধ্যায়কে সমালোচনা করা একটি চলচিত্র নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের আইন না মানাঃ
Election Commission tells Mamata govt to comply with directives, transfer officials
— India Today (@IndiaToday) April 8, 2014
নির্বাচন কমিশন মমতাকে নির্দেশনা মানতে নির্দেশ দিয়েছেন,কর্মকর্তাদের বদলি করতে হবে
মায়াবতীঃ “ছোট বোন”
উত্তর ভারতের উত্তর প্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী মায়াবতী সামাজিক উত্তরণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৯৭৭ সালে তিনি রাজনীতিতে যোগদান করেন। তিনি বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) – এর প্রধান। হিন্দিতে বহুজন মানে “বহু ধরণের মানুষ” যারা ভারতীয় সমাজের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীভুক্ত।
মায়াবতীর সমর্থকেরা তাঁকে পছন্দ করলেও রাজধানী লখনৌ শহরজুড়ে তাঁর নিজের মূর্তি স্থাপন এবং কয়েক মিলিয়ন মূল্যের রুপী দিয়ে তৈরি মালা পরিধান করার কারণে তিনি সমালোচিত।
Can you forget Mayawati's garish garland made of currency notes? #MoneyMaya #janlokpal pic.twitter.com/FqZkIkh
— Voice of the people (@janlokpal) September 6, 2011
মায়াবতির টাকার মালার কথা কি আপনারা ভুলে গেছেন?
সুষমা স্বরাজঃ স্বোপার্জিত নারী
লোক সভা নামে খ্যাত ভারতীয় সংসদের বর্তমান বিরোধী দলীয় নেত্রী হলেন স্বরাজ। দেশের প্রধান ডানপন্থী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির তিনি একজন সদস্য। নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও এ দলের অনেকেই প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ছিলেন। টুইটারে তাঁর ভক্তের সংখ্যা মিলিয়নেরও অধিক।
স্বরাজ ছিলেন সর্ব কনিষ্ঠ ক্যাবিনেট মন্ত্রী।
The winner with greatest share of votes in 2009: Sushma Swaraj (BJP), 78.8%, from Vidisha, Madhya Pradesh http://t.co/IxVPQfpngk #1bnvotes
— CNN-IBN News (@ibnlive) April 8, 2014
২০০৯ সালে সর্বাধিক ভোটে বিজয়ীঃ সুষমা স্বরাজ (বিজেপি), মধ্য প্রদেশের বিদিশা থেকে তিনি পেয়েছেন ৭৮.৮%
বর্তমানে আরও অনেক নারী নেত্রী রয়েছেন যারা ভারতীয় রাজনিতীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন এবং সরকার গঠনে নীতি নির্ধারনী সিদ্ধান্ত প্রদান করছেন। এদের মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির স্মৃতি ইরানি, ভারতীয় কম্যুনিষ্ট পার্টির বিন্দ্রা কারাত এবং ভারতীয় জনতা পার্টির উমা ভারতি অন্যতম।