
ভারত স্বর্ণ ভালবাসে। এই বছরের শুরুতে ভারতে স্বর্ণের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়, যার ফলে লোকজন এই মূল্যবান ধাতু কেনার জন্য দোকানে ছুটে যায়। ছবি সঞ্জয় কর্মকার। কপিরাইট ডেমোটিক্সের (১৮/৪/২০১৩)।
ভারতের দক্ষিণ পশ্চিমের প্রদেশ কেরালা স্বর্ণের প্রতি আকর্ষণের বিষয়ে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। গত বছর নিউইয়র্ক টাইমস কেরালাকে “স্বর্ণের নিজের দেশ” নাম উপাধি দেয়। এই প্রদেশে ভারতের মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশ বাস হলেও, প্রতি বছর এই প্রদেশ ভারতের মোট স্বর্ণের ২০ শতাংশ ব্যবহার করে। এশিয়ার কয়েকটি বৃহৎ স্বর্ণের শোরুম এই কেরালায় অবস্থিত। এখানে সদ্যজাত শিশু জন্মের পর তাকে সোনার গুঁড়ো মধু মাখিয়ে খাওয়ানোর ঐতিহ্য রয়েছে। সাধারণত এখানে কনেকে পা থেকে মাথা অবধি সোনার অলংকারে মোড়ানো হয়।
আর এই কারণে ভারতের অঙ্গরাজ্য কেরালার অভিনেত্রী রিমা কালিংগাল, সম্প্রতি আলোচনায় উঠে আসেন যখন তিনি এই মূল্যবান ধাতু ছাড়া সাদাসিদে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। যখন তার সাথে কাজ করা বেশীরভাগ চলচ্চিত্র তারকা কোন গয়নার দোকানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করে, সেখানে তার সিদ্ধান্ত একটি দিকনির্দেশনা প্রদান করল।
তার এই সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ তিনি ফেসবুকে ব্যাখ্যা করেছেন:
പ്രിയരെ, നവംബർ ഒന്നാം തിയതി, കേരളപിറവി ദിനത്തിൽ ഞങ്ങൾ വിവാഹിതരാവുന്ന വിവരം സസന്തോഷം അറിയിക്കട്ടെ. ഞങളുടെ മാതാപിതാക്കളുടെയും സുഹൃത്തുക്കളുടെയും സാനിദ്ധ്യത്തിൽ എറണകുളം കാക്കനാട് രെജിസ്ട്രാർ ഓഫീസിൽ ഒരു രജിസ്റ്റർ വിവാഹത്തിൽ ഒതുങ്ങും ചടങ്ങുകൾ. ബന്ധുക്കളേയും, സഹപ്രവർത്തകരെയും, സുഹൃത്തുക്കളേയും, മാധ്യമപ്രവർത്തകരേയും ക്ഷണിച്ച് വിരുന്ന് നൽകേണ്ട നാട്ടുനടപ്പുണ്ട് എങ്കിലും, തല്ക്കാലം ആ ചിലവുകൾ ഒഴിവാക്കി നിങ്ങളുടെ എല്ലാവരുടെയും പേരിൽ വിവാഹ ചിലവുകൾകായുള്ള പണം എറണകുളം സർകാർ ആശുപത്രിയിൽ അർബുദ രോഗത്തോടു മല്ലിടുന്ന സാധാരണക്കാരായ രോഗികളുടെ ചികിത്സക് വേണ്ടി കൊടുക്കുകയാണ്. ഈ തുക ഞങളുടെ രണ്ടുപേരുടെയും സിനിമയിൽ നിന്നുള്ള വരുമാനമാണ്. എല്ലാവരുടെയും സ്നേഹത്തിനും പിന്തുണക്കും നന്ദി പറയന്നു. എം പി. പി രാജീവിനോടും, എറണകുളം ജനറൽ ആശുപത്രിയിലെ ഡോക്റെര്മാരോടും, അതോടൊപ്പം ഞങളുടെ മനസറിഞ്ഞ് കൂടെ നിന്ന മാതാപിതാക്കളോടും സുഹൃത്തുക്കളോടും പ്രത്യേകം നന്ദി അറിയിക്കുന്നു.
സ്നേഹത്തോടെ -
റിമ കല്ലിങ്കൽ, ആഷിഖ് അബു
আজ, যদি আজ আমার দাদী জীবিত থাকত, তাহলে আমাকে কনের বেশে দেখে দারুণ খুশী হতেন, সাথে সাথে আপদমস্তক সোনার গয়নায় মোড়ানো না দেখে তার হৃদয় ভেঙ্গে যেত! ছোট থেকে, আমি জানতাম যে আমি আমার বিয়েতে এত গয়না পড়তে চাই না… নান্দনিক কারণে…
কিন্তু যতই আমি বড় হতে থাকলাম, ভিন্ন অনেক কারণে আমার ভেতর এই অনুভূতি জোরালো হতে থাকল, আর আজ আমি যখন বিয়ে করতে যাচ্ছি, আমি চাই এই সুন্দর জীবনটা যা আমার রয়েছে এবং চলচ্চিত্র আমাকে যে অসাধারণ অবস্থান তৈরী করেছে তা আমাকে যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এক জোরালো মত প্রদানের জন্য জায়গা তৈরী করে দিয়েছে, যা কিনা আমরা এখনো নির্লজ্জ এবং নীরবে অনুসরণ করে থাকি, আর আমি আমার এই সিদ্ধান্ত সেই সমস্ত লক্ষ লক্ষ পিতামাতার উদ্দেশ্য উৎসর্গ করলাম, যারা সন্তানের বিয়ের খরচ জোগাতে সারা জীবন পার করে দেয়!আজ, আমি এক টুকরা সোনাও অঙ্গে জড়াবো না 🙂
স্বর্ণ ইতিহাসে কেরালা
অনেক সভ্যতা এবং সংস্কৃতিতে স্বর্ণের উন্মাদনা বিষয়টি ইতিহাসে ভালোভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ফারাও, রাজা, মহারাজা এবং ৪৯-এর তথাকথিত আমেরিকার পশ্চিম, সকলের এই মূল্যবান ধাতুর প্রতি আগ্রহ ছিল।
স্বর্ণের প্রতি ভারতের ভালবাসা বিনিয়োগের চেয়ে বেশী। এই বিষয়ের সাথে আবেগ, সংস্কৃতি, ধর্মীয় ও আর্থ সামাজিক বিষয় যুক্ত রয়েছে। এই হলুদে ধাতুর প্রতি ভারতের ভালবাসা ইতিহাস ৪,০০০ বছরের পুরোনো, যখন সিন্ধু উপত্যকার নাগরিকরা প্রথম সোনাকে অলংকারে রূপান্তরিত করে। একই সাথে এর টিকে থাকার ইতিহাস রয়েছে; স্বর্ণ হচ্ছে এমন এক উপাদান যাকে কেউ সংরক্ষণ করে রাখতে পারে এবং কোন ধরনের আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই সহজে তা হস্তান্তর করতে পারে। ভারতের লক্ষ লক্ষ নাগরিক সোনার গয়না বন্ধক রেখে ব্যবসা বা সিকিউরিটিজ-এ বিনিয়োগ করে।
এই মূল্যবান ধাতুর সাথে মানুষের সংশ্লিষ্টতা অনেক গভীরে। যদিও তা শুধুমাত্র সোনার জন্য নয়, তবে এই সোনা না থাকলে সাধারণ ভারতীয়কে ইতিহাস আরো বাজে ভাবে জায়গা করে নিতে হত, আর এ কারণে, নয় বছরের এক বালিকা নিরুপমা ইতিহাসে নিজেকে ঠাঁই করে নেয়, যে ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ কলোনি থাকা অবস্থায় শক্তিশালী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য তার সকল সোনার গয়না স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দান করে দেয়।
কেরালার স্বর্ণ ইতিহাসের শুরু তখন থেকে যখন রোমানরা সোনার বিনিয়মে মশলা কিনত। এখন কেরালার স্বর্ণ শিল্পে প্রায় ২০০,০০০ জন নাগরিক কাজ করে এবং এই বলা হয়ে থাকে প্রদেশে ৫,০০০ খুচরা বিক্রেতা রয়েছে।
সোনার প্রতি আকর্ষণের বিষয়টি আরো দৃশ্যমান হয় বিয়ের অনুষ্ঠানে, যে অনুষ্ঠানে কনেরা এত বেশী এই মূল্যবান ধাতু পড়ে যে গয়নার ওজনের ভারে কনের ঠিকমত হাঁটতে না পারা একটা সাধারণ দৃশ্য।
http://youtu.be/_Cv2I3uNiys
“যৌতুক কেবল স্বর্ণ নয়”
এমনকি যদিও তা অবৈধ, কিন্তু তারপরেও যৌতুক (কনের পরিবার থেকে বর বা বরের পরিবারকে প্রদান টাকা কিংবা সম্পদ) কেরালার যাপিত জীবনে অস্বাভাবিক কোন বিষয় নয়, যদিও বিয়ের দিন কনের গয়না পড়ার যে ফ্যাশান এমন নয় যে তা যৌতুক প্রথার কোন অংশ। গত কয়েক দশক ধরে ভারতে যৌতুকের কারণে ঘটা সংঘাত এবং মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধিতে, এই প্রথা এক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রিমা কালিংগালের বিয়ের দিন সোনার গয়না না পড়ার সিদ্ধান্তকে অনেক নেট নাগরিক যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে এক লড়াই হিসেবে দেখছে এবং তারা এতে উল্লসিত।
সিয়া সিয়াইয়া নামক ভদ্রমহিলা, যিনি দুবাইতে বাস করেন, তিনি বলেছেন যে তিনি কালিংগালের একই অনুভূতি তার সন্তানের মাঝে ছড়িয়ে দেবেন:
রীমা তোমাকে ভালবাসি… যদি এখন এটা আমার (বিয়ে) হত, তাহলে আমি সেই একই অবস্থান গ্রহণ করতাম। এখন আমি আমার সন্তানদের মাঝে এই দৃষ্টিভঙ্গি স্থাপন করতে চাই। 🙂
ব্লোগান তার ব্লগে চিন্তা প্রকাশ করছে প্রচার মাধ্যম এই ঘটনায় কেন এই অভিনেত্রীর প্রতি মনোযোগ প্রদান করেনি:
ഒരു ജനതയുടെ സ്വര്ണ്ണ ഭ്രമത്തെ ഒരു പെണ്ണ് സ്വന്തം വിവാഹം കൊണ്ട് വെല്ലുവിളിച്ചപ്പോള് അത് ചര്ച്ച ചെയ്യാന്, ഇരുണ്ട ‘സ്വര്ണ്ണ മനസ്സുകളിലേക്ക്’ ഒരു നുറുങ്ങുവെട്ടമെങ്കിലും പകരാന് അവസരം വന്നപ്പോള് ‘സാമൂഹ്യ പ്രതിബദ്ധത’ മുഖ മുദ്രയാക്കി എഴുതിച്ചേര്ത്ത മാധ്യമ പന്നന്മാരൊന്നും മുന്നോട്ട് വന്നില്ല ,
അരക്ക് താഴേക്ക് അഭിരമിക്കാന് ഒന്നുമില്ലാത്ത സ്ത്രീവിഷയങ്ങള് ആര്ക്കുവേണം?
സഞ്ചരിക്കുന്ന ജ്വല്ലറികളായിക്കൊണ്ട് കല്യാണ മണ്ഡപത്തിലേക്ക് കയറിയ ചില നടിമാരുടെ വിവാഹങ്ങള് ഇതേ മാധ്യമങ്ങള് ആര്ഭാടമാക്കിയിരുന്നു എന്നുകൂടി ഓര്ക്കുക.
এমন এক সংস্কৃতি যেখানে সোনার প্রতি উন্মাদনার জন্য লজ্জিত হওয়া উচিত, সেখানে রিমার এই অবস্থানের প্রতি আমরা খুব একটা মনোযোগ প্রদান করিনি, আর প্রচার মাধ্যম কখনো এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সাহস করেনি, তার বদলে তারা ধনী এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের জমকালো বিবাহ অনুষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যখন যৌনতাড়িত ঘটনার শেষ পর্যন্ত আলোচিত হয়েছে, সেখানে এক নারীর এই অসাধারণ মনোভাবের ঘটনাকে সামান্যতম জায়গা প্রদান করা হয়নি।
কেবল ফ্লিম ক্রিটিক নামে পরিচিত এক ব্লগার লিখেছে:
കല്യാണ ദിവസം തിരഞ്ഞെടുക്കുന്ന കാര്യം തൊട്ട് ആഷിക് – റീമ ജോടികള് മലയാളിത്തവും , ലാളിത്യവും ഒരുപോലെ കാത്തുസൂക്ഷിച്ചു . എല്ലാ മതസ്ഥരും രഹസ്യമായി നാളും , മുഹൂര്ത്തവും നോക്കുന്ന ഇക്കാലത്ത് , മലയാളിത്തവും , കേരളീയതയും വാചകക്കസര്ത്തുകള് മാത്രമാകുന്ന ഇക്കാലത്ത് , കേരളപ്പിറവി ദിനത്തില് മുഹൂര്ത്തത്തിന്റെ തീട്ടൂരങ്ങളില്ലാതെ രണ്ടു റോസാപുഷ്പാലംകൃതമായ മാലകള് പരസ്പരം അണിയിച്ച് ലളിതമായി അവര് വിവാഹിതരായപ്പോള് കാലാകാലങ്ങളായി നിലനില്ക്കുന്ന പല മാമൂലുകളും തകര്ന്നു വീണു .
রীমা এবং [তার স্বামী] আশিককের বিষয়ে আমার অনেক আপত্তি রয়েছে, তবে তারা সত্যিকারের একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কেবল মাত্র গোলাপের মালা গলায় দিয়ে, তারা খুব সাধারণভাবে বিয়ে করল, যা অত্যন্ত ইতিবাচক এক বিষয়।
তবে সকল ব্যবহারকারী অভিনেত্রীর এই মন্তব্যে এতটা উল্লসিত ছিল না।
রেশমি ভাভা, আইআইএসইআর-পি-আর এর গবেষণার ছাত্রী, সে তার গুগল প্লাস একাউন্টে লিখেছে:
സ്ത്രീധനമെന്നാല് സ്വര്ണ്ണമെന്നു നിസ്സാരവത്കരിക്കുന്നതിനോടു യോജിപ്പില്ല എങ്കിലും..
যৌতুক কেবল স্বর্ণের বিষয় নয়, এটা এই বিষয়ে খুব সাধারণীকরণ করা হবে আর এতে আমার আপত্তি রয়েছে। তবে তারপরেও এই দৃষ্টিভঙ্গিটি খুব কৌতূহল জনক।
শ্রীবীথা পি. ভি সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অফ কর্নাটকের এক সহকারী অধ্যাপক, রাউন্ড টেবিল ইন্ডিয়ার ওয়েব সাইটে তিনি এক কৌতূহলজনক অবস্থান গ্রহণ করেছেন:
ঘটনাক্রমে, রিমার মত উচ্চবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীরা বিয়েতে সোনার গয়না না পড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সহজ, তার বদলে অন্য কিছুতে লাখ লাখ টাকা ঢালতে পারে। তাহলে অন্য সব নীচু জাতি এবং দলিতদের বেলায় কি হবে যারা এমনকি চাইলে যাদের সোনার গয়না পড়ার সামর্থ্য নেই, বিশেষ করে কেরালার আর্থ–সামাজিক প্রেক্ষাপটে যেখানে সোনার গয়না এক সামাজিক মর্যাদার প্রতীক! তাহলে অন্য সব নীচু জাতি এবং দলিতদের ব্যাপারে কি হবে যারা মনে করে যে সোনার গয়না পড়ে নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারা তাদের অধিকার? এ ক্ষেত্রে অন্য সব নীচু জাতি এবং দলিতদের কি হবে, যারা নিরুপায় হয়ে বিশ্বাস করে যে কেবল সোনার গয়না পড়ে তারা জাত প্রথার মোকাবেলা করতে পারবে?
শ্রীবীথা একই সাথে “কাল্লুমালা সামারামা” (পাথুরে গয়নার বিদ্রোহ) কথা উল্লেখ করেন, যা কেরালার কোল্লামের কাছে কাঞ্জাভেল্লিতে সংঘঠিত হয়েছিল। যেখানে অচ্ছুৎ জাতির (পুলাইয়া) নারীদের সোনার এবং পাথরের গয়না পড়ার জন্য উচ্চ জাতির নারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছিল। .
যেখানে ভারতীয়রা এখনো সুশাসনের জন্য লড়াই করছে এবং যেখানে ভারতীয়দের এখনো কোন সামাজিক নিরাপত্তা বলয় নেই, এবং যখন গ্রাম্য জীবনে এখনো উত্তম ব্যাংক প্রথার অভাব রয়েছে। এমন এক বিনিয়োগ যা তাদের সামাজিক গতিশীলতায় সামনে এগিয়ে নেওয়ার এক সম্ভাবনা তৈরী করে এই পছন্দের এই মূল্যবান ধাতু।