সংবাদে জানা গেছে রয়টার্সের হয়ে কাজ করা ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার মোলহেম বারাকাত গত ২০ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে নিহত হয়েছেন। তিনি আলেপ্পোর আল কিন্দি হাসপাতালে অবস্থানরত বিদ্রোহীদের সাথে বাশার আল আসাদ-এর বাহিনীর লড়াই-এর সংবাদ সংগ্রহ করার সময় মারা যান।
আলেপ্পো মিডিয়া সেন্টারের হাসুন আবু ফায়সাল এ্যাসোসিয়েট প্রেসকে জানায় হাসপাতালের কাছে এক কার্পেট ফ্যাক্টারির কাছে সংঘটিত যুদ্ধে বারাকাত-এর সাথে ফ্রি সিরিয়ান আর্মি বিপ্লবী যোদ্ধা তার ভাইও নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থলে তার রক্তমাখা ক্যামেরার সরঞ্জামও পাওয়া গেছে:
Mulhem Barakat, young photographer who worked with Reuters and @aleppomediacent, killed covering battle in Aleppo: pic.twitter.com/VBlZggMQBN
— Omar (@omarsyria) December 21, 2013
তরুণ ফটোগ্রাফার মোলহেম বারাকাত রয়টার্স এবং @আলেপ্পোমিডিয়াসেন্ট-এ কাজ করত, সে আলেপ্পোর যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছে।
আবু ফয়সাল একই সাথে উল্লেখ করেছে যে মাত্র কয়েক মাস আগে থেকে বারাকাত যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করা শুরু করে যখন মে মাসে সে রয়টার্সের সাথে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করা শুরু করে।
বারাকাতের ফেসবুকের প্রোফাইল অনুসারে ৮ মার্চ, ১৯৯৫-এ জন্ম গ্রহণ করা এই সিরীয় কিশোর যখন প্রাগ ভিত্তিক ফটোসাংবাদিক স্তানিস্লাভ ক্রুপার-এর সাথে সাক্ষাৎ করে, তখন বারাকাত তাকে জানায় প্রতিদিন ১০ টি ছবির জন্য রয়টার্স তাকে ১০০ মার্কিন ডলার প্রদান করবে এবং যদি দি নিউ ইয়র্ক টাইমস লেন্স ব্লগ দিনের ছবি হিসেবে কোন একটি ছবি পছন্দ করে তাহলে তাকে আরো ৫০- থেকে ১০০ মার্কিন ডলার প্রদান করবে।
এদিকে কুপার বলছে যে সে বিশ্বাস করে রয়টার্স বারাকাতকে ছবি তোলার যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে, পাশাপাশি সে জানাচ্ছে যে বারাকাতের কাছে “মারণাস্ত্রের প্রতিরোধের উপাদান- কোন বুলেটপ্রুফ পোষাক, কোন হেলমেট ছিল না”।
তার মৃত্যুর বিষয়ে সংবাদ প্রদান করতে গিয়ে আম্মান ভিত্তিক সাংবাদিক রানদা হাবিব বলছে:
Young photographer Molhem Barakat killed in #Syria. News outlets should stop using young stringers who are putting their lives on the line
— Randa HABIB (@RandaHabib) December 21, 2013
সিরিয়ায় তরুণ ফটোগ্রাফার মোলহেম বারাকাত নিহত হয়েছে। সংবাদপত্রসমূহের অবশ্যই জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে এমন কাজে তরুণ সাংবাদিকদের ব্যবহার করা উচিত নয়।
নিজের অবস্থানের বিষয়টি আবার তুলে ধরে বিবিসির উর্ধ্বতন বিশ্ব ঘটনাবলী প্রযোজক স্টুয়ার্ট হিউজ টুইট করেছেন যে বারাকাতের বয়স এবং তার অনভিজ্ঞতার বিষয়ে রয়টার্স অনেকটা দায়সারা ভাবে উত্তর প্রদান করেছে। সে রয়টার্সকে নীচের প্রশ্নগুলো করেছিল :
-মোলহেমের বয়স নিয়ে প্রশ্নবোধক সংবাদ এসেছে, যার বয়স ছিল ১৭ থেকে ১৯ বছর। আপনারা কি এই বিষয়টি পরিষ্কার করতে সক্ষম?
-যদি তা না পারে, তাহলে রয়টার্স কি ভাবে এই সংবাদের উত্তর প্রদান করবে যে মোলহেম-এর বয়স ছিল ১৭ বছর, যার ফলে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাজ্যের আইনে সে এক অপ্রাপ্তবয়স্ক?
– এই নিদারুণ পরিবেশে কাজ করা এই তরুণ ফ্রিল্যান্সার বয়স যাচাই করার ক্ষেত্রে রয়টার্স কি প্রমাণপত্র পেশ করবে?
– মোলহেম বারকাত নিদারুণ পরিবেশে কাজ করার কিংবা প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিল কিনা রয়টার্স কি এই বিষয়ে সচেতন ছিল। সে কি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রতিরোধক উপাদান পরেছিল অথবা তার কাছে প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম ছিল কিনা?
-সিরিয়ায় ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যারা কাছ করছে তাদের জন্য সামগ্রী কেনার ক্ষেত্রে রয়টার্সের বর্তমান নীতি কি?
রয়টার্স যার জবাব প্রদান করেছে:
মোলহেম বারাকাত-এর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত, যিনি এক ফ্রিল্যান্স কাজের ভিত্তিতে রয়টার্সের কাছে ছবি বিক্রি করত। বিপজ্জনক এবং ভয়াবহ এক যুদ্ধক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সবচেয়ে ভালভাবে রক্ষা করার জন্য এ সময়ে এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করাকে আমরা যথাযথ মনে করি না।
যুক্তরাজ্যে বাস করা এক আমেরিকান নাগরিক কোরি পেইন যুক্ত করেছে যে রয়টার্স হয়ত বারাকাতকে ভিন্ন সমস্যা থেকে দূরে সরে থাকতে সাহায্য করেছে, কিন্তু তার মৃত্যুতে উঠা প্রশ্নগুলো তারা এড়িয়ে যেতে পারে না:
আমরাও জানি যে যুদ্ধ মানে বিপর্যয় এবং মোলহেম যদি ওই সব ছবি না তুলত তাহলে সে হয়ত হাতে অস্ত্র তুলে নিত। সিরিয়ায়, রয়টার্স দল হয়ত ভেবেছিল যে তারা হয়ত মোলহেমকে সাহায্য করছে- আর কোন এক ভাবে তারা তা করেছিল।
তার মানে এই নয় যে পরিস্থিতি এই তরুণকে এভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল, উক্ত প্রতিষ্ঠান সে সব প্রশ্নের দায় এড়াতে পারে।
ব্রিটিশ সাংবাদিক এবং ফটোগ্রাফার হান্নাহ লুসিন্ডা স্মিথ, যিনি প্যান-আরব পত্রিকা আশরাক আল আওসাত-এর জন্য বারাকাতের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিল, তিনি এক ব্লগ পোস্টে বলেন যে বারাকাত এক সুখী কিশোর থেকে এলোমেলো হয়ে যাওয়া তরুণ হিসেবে বিভ্রান্ত ছিল যে এক সময় আল কায়েদায় যোগ দেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান ছিল [আত্মঘাতি বোমা হামলাকারী ছিল, কিন্তু] সে এক ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ শুরু করেছিল, যাদের সাথে সে কাজ করত তাদের কয়েকজনকে সে অনুসরণ করতে পারবে এই আশায়।
![Molhem Barakat, self portrait, taken February 14, 2013 [photo source: Barakat's Facebook profile]](https://globalvoicesonline.org/wp-content/uploads/2013/12/529623_343147729129988_1487559590_n.jpg)
মোলহেম বারকাত, নিজের তোলা ছবি, ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে তোলা [ছবি সূত্র: বারাকাতের ফেসবুক প্রোফাইল]
ফেসবুকে এক দীর্ঘ আলাপে আমি তাকে আলেপ্পো ত্যাগ করে তুরস্কে চলে আসতে উৎসাহ প্রদান করেছিলাম। তাকে প্রত্যাখান করা হয়। তার কাছে পাসপোর্ট ছিল না এবং তার কাছে কোন টাকা ছিল না। তার পরিবার তখনো সিরিয়ায় বাস করছিল এবং সে পরিবার বা বন্ধুদের ছেড়ে আসতে চায়নি।
তবে, ভদ্রমহিলা শেষে বলেন যে তিনি আশা করেন রয়টার্স বারাকাতের ক্ষেত্রে দায়িত্ব গ্রহণ করে তার জীবনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে:
আমি আশা করি যে রয়টার্স নামক প্রতিষ্ঠানটি বারাকাতের ক্ষেত্রে সেভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবে, যা আমি গ্রহণ করতে পারিনি এবং আমি আশা করি, যে ছবি তুলতে গিয়ে সে মৃত্যুবরণ করেছিল, তা সে করেছিল এই আশায় যে সেগুলো সে উক্ত প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করতে পারবে, সেই প্রতিষ্ঠানটি এখনো তার ক্ষেত্রে সে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবে।