মেমোরি ইন ল্যাটিন আমেরিকা ব্লগে, লিলি ল্যাংট্রাই নামক ব্লগার চিলির রাজধানী সান্তিয়াগো নিয়ে “স্মৃতিকাতর এলাকা” শিরোনামে ধারাবাহিক আকারে বেশ কয়েকটি লেখা লিখেছেন: যা ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩ সালে দেশটির সোশ্যালিস্ট রাষ্ট্রপতি সালভাদোর আয়েন্দের সরকারকে অপসারিত করা সামরিক অভ্যুত্থান সংক্রান্ত ভবন কিংবা এলাকা বিষয়ে, এই অভ্যুত্থানের ফলে ১৭ বছরের এক স্বৈরশাসনের জন্ম হয়, যার নেতৃত্বে ছিল আগুস্টো পিনোশে। ২০১৩ সালের এই বছরটিতে এই অভ্যুত্থানের ৪০ বছর পূর্তি হল।
১. স্মৃতি এবং মানবাধিকারের এক সংগ্রহশালা
এই অনলাইন সফরের শুরু স্মৃতি ও মানবাধিকার সংগ্রহশালা [স্প্যানিশ ভাষায়] দিয়ে, লিলিয়ে ব্যাখ্যা করেন “ বিশাল এবং আঘাত তৈরী করে এমন এক সাইট”:
বেদনাদায়ক বিষয় হচ্ছে আপনি ভেতরের কোন ছবি তুলতে পারবেন না, যা সত্যিকারের এক লজ্জাজনক বিষয়, কারণ আমার কাছে সবচেয়ে আঘাত প্রদান করা বিষয়টি হচ্ছে বিশাল দেওয়ালে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের ছবিতে পুরো এলাকা পরিপূর্ণ। এখানে এমন একটি স্থান রয়েছে যেখানে আপনি দাঁড়াবেন আর সে দিকে তাকাবেন, তখন দেখতে পাবেন ব্যক্তির নাম এবং ছবি।
নিচের তলার বিভিন্ন স্থানে ১৯৭৩ সালের এই অভ্যুত্থান এবং তৎপরবর্তী বিভিন্ন ঘটনার ফুটেছ প্রদর্শন করা হয়েছে। যতই আপনি উপরের তলাগুলোতে যাবেন, ততই দেখতে পাবেন সেখানে রয়েছে বিভিন্ন ঘটনার দৃশ্য যেমন নির্বাসন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একাত্মতা, প্রচার মাধ্যমের সংবাদ এবং নির্যাতন- যার মধ্যে রয়েছে গা শিউরানো এক যন্ত্র (যার নির্মাতা–জেনারেল ইলেকট্রনিক্স- বিষয়টি এমন নয় যে তারা কেবল এই উদ্দেশ্য যন্ত্রটি নির্মাণ করেছিল!)। মেঝেতে বিভিন্ন প্রদর্শনীর যন্ত্র ১৯৭৩ সালের অভ্যুত্থানের ফুটেজ প্রদর্শন করছে। এখানে বন্দীদের তৈরী বিভিন্ন সামগ্রী এবং চিলির বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানের ছবিও রয়েছে।
লিলিয়ে এখানে আরো উল্লেখ করেছে যে এই এলাকা এমন স্থান নয় যেখান এসে কেউ বিশেষভাবে ছদ্ম -নিরপেক্ষতা অথবা পিনোশে-পন্থী বা বিরোধী হবার চিন্তা সমভাবে করতে পারে, এবং সে জাদুঘরের তালিকার উদ্ধৃতি প্রদান করছে:
স্মৃতির এক ভবন নির্মাণের কাজকে অবশ্যই নৈতিকতার দ্বারা পরিচালিত করতে হবে; আমাদের যে সীমাহীন এক সম্মিলিত আঘাতের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তার এক পাঠ নির্মাণ করতে হবে যা এক প্রমাণ, ঘটনার শিকার এবং অপরাধীর এক ইতিহাস, দোষী এবং নির্দোষদের। জাদুঘরে স্মৃতির সংগ্রহশালা নির্মাণের উদ্দেশ্য হচ্ছে তা যেন এমন এক স্থানে পরিণত হয় যা আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সহাবস্থানে নৈতিকতার ভিত্তিতে মানবাধিকারে সংস্কৃতি এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ তৈরীতে সাহায্য করে। আর কেবল মাত্র এর মাধ্যমে আমরা স্বৈরাচারকে আর নয়, এমন দাবী শাক্তিশালী করতে পারি।
ফ্লিকারে আপনারা জাদুঘরের আরো ছবি দেখতে পাবেন (যার মধ্যে ভেতরের কয়েকটি ছবিও অর্ন্তভুক্ত রয়েছে)।
২. লন্ড্রেস ৩৮
আরেকটি পোস্টে লিলিয়ে প্রাক্তন এক বন্দীশালা এবং নির্যাতন কেন্দ্র লন্ড্রেস ৩৮ সম্পর্কে লিখেছে যার নাম :
ডিনা (গুপ্ত পুলিশ) এটিকে সরকার বিরোধীদের নির্যাতন এবং আটকে রাখার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করত, অন্তত ৯৮ জন এখানে বা এখানকার অত্যাচারের ফলে পরে মৃত্যুবরণ করে [স্প্যানিশ ভাষায়]। এই ভবনের সামনে কোবেল পাথরে নিহতদের নাম খোদাই করা আছে [ জার্মানীর স্টোলপারস্টাইনের অনুরূপ)।
তিনি যোগ করেন:
প্রথমে আমি দেওয়ালের অবস্থা থেকে খানিকটা বিস্মিত হয়েছিলাম, কিন্তু যখন আমি দেখলাম সে সময় সেটা কৃত্রিম ভাবে ঝক্ঝকে রাখা হয়েছে তখন নিঃসন্দেহে বিষয়টিকে অনেক বেশী যৌক্তিক মনে হল। এতে আপনি নিঃসন্দেহে অনেক বেশী উপলব্ধি করতে পারবেন সে স্থানে যে অত্যাচার সংঘঠিত হয়েছে সে ব্যাপারে; যদিও এই বিষয়টি ভাবতে সত্যি অবিশ্বাস্য লাগে যে স্থানটি কতটা কেন্দ্রীয় এক এলাকায় অবস্থিত। ইলোভেচিলি.সিএল লিখেছে যে উচ্চস্বরে ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত ভেসে আসার কারণে এই ভবনটি পরিচিত ছিল- যখন আপনি উপলদ্ধি করবেন যে এই সঙ্গীত আসলে কোন বিষয়টি চাপা দেওয়ার জন্য বাজানো হত, তখন আপনার গা শিউরে উঠবে।
৩. লামনেডা
একই সাথে লিলিয়ে চিলির রাষ্ট্রপতি ভবন নিয়ে লেখা একটি পোস্ট অর্ন্তভুক্ত করেছে, যেখান ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালের সেই অভ্যুত্থানের সময় বোমা ফেলা হয়েছিল।
ডেমোক্রাসিটিজে এই বোমাবর্ষণ নিয়ে ফ্রান্সিসকো ভেরগারা পেরুচিয়ে লিখেছে :
এই ভবন যেটিকে জাতীয় স্বাধীনতা এবং প্রজাতন্ত্রের এক প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা সামাজিক অগ্রযাত্রার এক নির্মিত প্রকাশ, তা জাতি এবং সংবিধানের আনুগত্যের শপথ নেওয়া স্বদেশী সামরিক বাহিনির সদস্যদের দ্বারা সম্পূর্ণ প্রজ্বলিত এবং ধ্বংস হয়। কল্পনা করুন যে দুটি এফ-১৬ বিমান হোয়াইট হাউজ কিংবা দুটি টাইফুন বিমান বাকিংহাম প্রাসাদ ধ্বংস করছে… এমন এক দৃশ্য যা বিশ্বাস করা সত্যি কঠিন। এই হামলা ছিল প্রজাতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক যুগের ইতি টানার এক চিহ্ন।
৪. নিখোঁজদের স্মৃতিফলক
লিলিয়ে তার সান্তিয়াগোর স্মৃতি নামক সিরিজ পোস্টের শেষটিতে “নিখোঁজ হয়ে যাওয়াদের স্মৃতিফলকের” কথা উল্লেখ করেছে। এটি একটি বিশাল পাথরের দেওয়াল যার মাঝে ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের নাম খোদাই করা হয়েছে।
তিনি ব্যাখ্যা করেন যে এই স্মৃতিচিহ্নটি একটি করবস্থানের ভেতরে অবস্থিত :
আমি সব সময় স্মৃতিচিহ্নকে, প্রকৃত পক্ষে জীবন সাজানোর একটি অংশ হিসেবে দেখতে ভালবাসি। এই ক্ষেত্রে, স্মৃতিফলকের নিচে অনেক লেখা, ছবি, ছোট ছট চিহ্ন, ফুল এবং এ রকম জিনিসে পূর্ণ। এটি একটি বিনম্র স্থান, কিন্তু তা এক কবরস্থানে অবস্থিত। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এর আগে ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের শোক প্রকাশের জন্য কোথাও কোন জায়গা ছিল না এবং তাদের জীবনকে চিহ্নিত করার কোন স্থান ছিল, এখন তাদের তা রয়েছে আর তারা রাজধানীর প্রধান কবরস্থানকে দেশের ইতিহাসের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছে।
ল্যাটিন আমেরিকার স্মৃতি এবং মানবাধিকার সম্বন্ধে আরো জানতে লিলির ব্লগে প্রবেশ করুন। আপনি তার টুইটার একাউন্ট @লিলিয়ে_ল্যাংট্রাই-এ প্রবেশ করতে পারেন।
৫. জাতীয় স্টেডিয়াম
সবশেষে আমরা চিলির সান্তিয়াগোর আরো একটি স্থানকে স্মরণের জন্য যুক্ত করব। এটি হচ্ছে জাতীয় স্টেডিয়াম ( এস্টাডিও নাসিওনাল স্প্যানিশ), যা বন্দী এবং নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হত।
গ্লোবাল পোস্টে যেমনটা পাসকাল বোনেফোয় ব্যাখ্যা করেছেন, “ হিসেবে অনুসারে সেখানে বন্দীরা সংখ্যা ছিল ৭,০০০ থেকে ২০,০০০ জন, যার মধ্যে ১,০০০ জন ছিল নারী। […] সাইক্লিং ট্র্যাকে, প্রশাসনিক ভবনে, করিডোরে এবং মাঠে অত্যাচার সংঘঠিত হয়েছিল। স্টেডিয়ামে ঠিক কতজন মানুষ নিহত হয়েছিল অথবা সেখান থেকে অদৃশ্য হয়েছিল তার কোন সঠিক তথ্য নেই”।