জাপানে মিনামাটার স্থায়ী বাসিন্দাদের মাঝে ৫০ বছরেরও বেশী সময় পরে পারদের বিষক্রিয়া মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। মারাত্মকভাবে বিষাক্ত বর্জ্য পানি থেকে পাওয়া স্থানীয় দূষিত সামুদ্রিক খাবার থেকে এটি ছড়াচ্ছে। এ ধরনের একটি দুঃখজনক ঘটনা যেন আবার না ঘটে, তাই জাতিসংঘের নকশা করা একটি সন্ধিপত্রে ৯২ টি দেশ স্বাক্ষর করেছে।
দ্য মিনামাটা কনভেনশন অন মার্কারী হচ্ছে পারদের বিষক্রিয়া নিয়ে বৈধভাবে তৈরি করা একটি বৈশ্বিক দলিল। গত ৭ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে জাপানে সম্মেলন চলাকালে এই দলিলটি গৃহীত হয়।
মিনামাটা শহরটির নামে এই দলিলটির নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৫০ সাল থেকে এখানকার অধিবাসীরা পারদের বিষক্রিয়ার শিকার। বিজ্ঞান এবং পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিক রেবেকা কেসলার, এনভায়রনমেন্টাল হেলথ পারস্পেকটিভ নামের একটি জার্নালের অনলাইন সংস্করণে “মিনামাটা রোগ” এ আক্রান্তদের গল্প ব্যাখ্যা করেছেনঃ
১৯৫৬ সালের জুলাই মাসে জাপানের শিরানুই সমুদ্রে মিনামাটা শহরটির কাছের একটি জেলে গ্রামে শিনোবু সাকামতো নামে একটি মেয়ে শিশু জন্ম গ্রহণ করে। শীঘ্রই তাঁর বাবা-মা বুঝতে পারলো যে কোথাও একটি সমস্যা আছে। সুস্থ স্বাভাবিক বাচ্চারা তিন মাস বয়সে যখন তাঁদের মাথা তুলতে পারে তখন সাকামতো তা পারতো না। সে খুব ধীরে বড় হতে লাগলো এবং সে অস্বাভাবিকভাবে দেরীতে হামাগুড়ি দিতে শুরু করে। তিন বছর বয়সে সে মুখ দিয়ে অতিরিক্ত নাল ফেলা শুরু করে এবং এখনও সে হাটতে পারে না। তাঁর বাবা-মা তাঁকে একটি স্থানীয় হাসপাতালে বসবাসের জন্য পাঠিয়ে দেয়। সেখানে সে হাটতে ও হাত ব্যবহার করতে শেখা এবং অন্যান্য মৌলিক কাজকর্মগুলো করতে শেখার জন্য থেরাপি নিতে চার বছর কাটায়। অতঃপর খুব শীঘ্রই কয়েকজন চিকিৎসক সেরেব্রাল পালসি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে সম্মত হন।
সাকামতোর এই অবস্থা কোন একটি বৃহত্তর জিনিসেরই অংশ বলে প্রমান করে। তাঁর জন্মের কয়েক বছর আগে মিনামাটা উপসাগরে মাছ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক জীব মৃত অবস্থায় পাওয়া যেতে থাকে। সামুদ্রিক পাখিগুলো তাঁদের উড়ার ক্ষমতা হারাতে শুরু করে এবং বিড়ালগুলো মারা যেতে থাকে। এগুলোর বেশীরভাগই খিঁচুনিতে মারা যায়, যার কারনে স্থানীয়রা একে “নাচুনে রোগ” বলে। এরপর, সাকামতোর জন্মের দুই মাস আগে সেই এলাকার জেলে পরিবারগুলোতে একটি অজানা স্নায়ুবিক রোগে সর্ব প্রথম আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে রিপোর্ট করা হয়। সাকামতোর বড় বোন, মাইয়ুমি এবং বেশকিছু পরিবারের প্রতিবেশীদের মাঝে পরীক্ষানিরীক্ষা করে একটি রহস্যজনক অসুস্থতা লক্ষ্য করা গেছে। এই অসুস্থতার কারন হিসেবে দূষিত সামুদ্রিক খাবারকে দায়ী করা হচ্ছে। ১৯৫৭ সালে বিজ্ঞানীরা এই অসুস্থতার একটি নাম দিয়েছেনঃ মিনামাটা রোগ।
সেই বাচ্চা মেয়ে শিনবু সাকামতো এখন মিনামাটা রোগাক্রান্তদের দলনেতা। মিনামাটা সম্মেলনের কূটনৈতিক কনফারেন্সের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক এনজিও এবং নাগরিক দলগুলোও একত্রিত হয়েছে এবং তথ্য আদানপ্রদান করেছে। গত ৮ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে রাসায়নিক দূষনের বিরুদ্ধে নাগরিক (সিএসিপি) এর সাথে দ্য ইন্টারন্যাশনাল পিওপিস এলিমিনেশন নেটওয়ার্ক (আইপিইএন) যৌথভাবে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সেখানে তাঁরা শিনবুকে সাথে নিয়ে তাঁদের বিষাক্ত ধাতু বিষয়ক মিনামাটা ঘোষণাটি উপস্থাপন করেছে।
আইপিইএন এর প্রধান বিজ্ঞান ও প্রায়োগিক উপদেষ্টা জো ডিগাঙ্গি বলেছেনঃ
পারদ বিষয়ক দলিলটি বিশেষকরে মিনামাটার সাথে সংযুক্ত। কারন, এটি নির্দিষ্ট করে ভবিষ্যতে পারদের বিষক্রিয়া প্রতিরোধ করতে মিনামাটা ট্র্যাজেডি থেকে সারা বিশ্বের সরকারদের শিক্ষা গ্রহণ করা এবং সে শিক্ষা প্রয়োগ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত, সত্যিকার মর্মাহত ঘটনাটি এখনও মিমাংসা করা যায়নি।
মিনামাটা নামটির সাথে সাথে কাজ করার একটি বিশেষ দায়িত্ব এবং একটি সুযোগ চলে আসে, যেন মিনামাটা নামটি শুধুমাত্র একটি ট্র্যাজেডির সাথে যুক্ত নয় বরং পারদের ব্যাপক বিষক্রিয়ার বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ ঘটনার সমাধান হিসেবে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।