আড়াই বছর আগে যখন সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তখন বিভিন্ন জিহাদপন্থী দলগুলো তাদের বাহিনীতে যোগদানের জন্য তরুণদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। এই পুরো সময় জুড়ে ক্রমাগত চলতে থাকা গণহত্যার দৃশ্য প্রকাশ হতে থাকার বিষয়টি হাজার হাজার অতিরক্ষণশীল নাগরিকদের এই সমস্ত দলগুলোতে যোগদানের এক উপাদান হিসেবে কাজ করে; আর সৌদি আরব জিহাদী যোদ্ধাদের এক অন্যতম উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত সপ্তাহে একটি বিশিষ্ট ঘটনা সৌদি টুইটারস্পেয়ার এ বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো,যখন ১৬ বছর বয়সী , মথ আল-হামিলি এই দলে যোগদান করার জন্য সিরিয়ায় আসে, মোয়াথ হচ্ছে রিমা আল-জউরিশ এর ছেলে, যে তার স্বামীকে স্বেচ্ছাচারীভাবে কারারুদ্ধ করে রাখার বিরোধিতা করায় ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার কারণে পরিচিতি লাভ করেছিল। তার স্বামী আবদুল্লাহ আল-হামিলি কে আদালতের নির্দেশ ছাড়াই ১০ বছর কারারুদ্ধ করে রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়। যদিও, একজন বিচারক তার মুক্তির নির্দেশ দেন , কিন্তু তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়। আল-জউরিশ ছিলেন সেই সমস্ত মহিলাদের একজন, ফেব্রুয়ারিতে যারা গ্রেফতার ও কারাবন্দী হওয়ার আগে একটি বহুল আলোচিত অবস্থান ধর্মঘটে-এ অংশগ্রহণ করে। তার পারিবারিক গৃহ অবরোধ করে রাখা হয় এবং সন্তানদের কারো সাথে যোগাযোগে বাঁধা দেওয়া হয়। মায়ের মুক্তি দাবী করায় মোয়াথকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
বুধবারে, আল-জউরিশ টুইট করে [আরবী ভাষায়]:
#نفير_معاذ_الهاملي الحمدالله الذي بنعمته تتم الصالحات ابشركم بوصول ابني معاذ لشام اسأل الله لناوله الثبات pic.twitter.com/gGg4jDCJZq
— ريما الجريش (@twit_rima) September 25, 2013
@টুইট_রিমা: হে মহান আল্লাহ,আপনার এই সকল অসীম মেহেরবানির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, আমার পুত্র মোয়াথ সিরিয়ায় এসে পৌছেছে। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি মোয়াথকে শক্তি দেন।
তিনি আরো বলেন:
ابني أوذي في بلاد الحرمين بسبب نصرته للمعتقلين فلن اسلمة لقمة سائغة للطواغيت فأرض العزة أرحم به .. #نفير_معاذ_الهاملي
— ريما الجريش (@twit_rima) September 25, 2013
@টুইট_রিমা: কারাবন্দীদের সমর্থন করার জন্য আমার সন্তান এখানে [সৌদি আরবে] হয়রানির শিকার হয়েছে। স্বৈর শাসকদের আমি খুব সহজে আমার সন্তানদের ছিনিয়ে নিতে দেব না। মর্যাদা এবং গৌরবান্বিত ভুমি তার জন্য অনেক ক্ষমাশীল হবে।
আল-হায়াত পত্রিকা রীমাকে নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত কাহিনী প্রকাশ করে [আরবি ভাষায়], যেটিতে বর্ণনা করা হয় :
وقالت: «اتصلت بي مندوبة من وزارة الداخلية اسمها أم محمد، كانت تحذرني من ابني معاذ».
তিনি বলেন: “উম মোহাম্মদ নামের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক কর্মকর্তা আমাকে আমার সন্তান মোয়াথ থেকে সতর্ক করে দেয়।”
টুইটের মাধ্যমে আল-জাউরিশ ঘটনাটি তুলে ধরছে:
جريدة الحياة رتبو الكلام على مايريدون وليعلم الصحفي اني سجلت الاتصال اولا مندوبة الداخليه لم تحذرني من .. ابني بل هددتني به وقالت سوف يكون بجانب والده بسجن وهددتني بإبنتي ماريه ذات ١٣ عام وقالت سوف تخسرين ابنائك..ايضا اخبرت ان ذهاب ابني لسوريا احب الي من سجون المباحث لانه راى اثار التعذيب وسمع من والده ماحصل له داخل السجون…فلا اريد ان تتكرر مأسات والده من جديد يذهب الى ارض العزة ويستنشق هواء الحريه احب الي من سجون المباحث وتعذيب..ايضالم تذكر الصحيفه ان المباحث تضايقني وتحاول جاهده ان تمارس علي صنوف التعذيب النفسي ولم تذكران زوجي صدر بحقه افراج [1][2][3][4][5]
আলহায়াত পত্রিকাটি নিজেরা যেভাবে চেয়েছে সেভাবে আমার বিবৃতিটি ছেপেছে। আমি সাংবাদিকদের জানাতে চাই যে আমি ফোন কলগুলো রেকর্ড করে রেখেছি। প্রথমত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাকে আমার ছেলের সম্বন্ধে সতর্ক করেনি, তারা আসলে আমাকে এই বিষয়ে হুমকি প্রদান করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা উক্ত মহিলা বলেন যে আগামীতে তার ছেলেও বাবার মত কারাবন্দী হতে পারে। তিনি একই সাথে আমার মেয়ের নাম উল্লেখ করে আমাকে হুমকি প্রদান করেন। সে বলে যে আমি তাদের হারিয়ে ফেলবে। আমিও তাকে বললাম যে আমি আমার ছেলেকে গোয়েন্দা পুলিশ এর কারাগারের চেয়ে সিরিয়াতে থাকা বেশী পছন্দ করবো। সে অত্যাচারের ফলাফল নিজে প্রত্যক্ষ করেছিলো এবং তার বাবার সাথে জেলে কি হয়েছিলো তা সে তার কাছে শুনেছিল। আমি চাই না তার বাবার সাথে যে বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে তার পুনরাবৃত্তি হোক। আমি চাই সে জেলখানার গোয়েন্দা পুলিশের অত্যাচারে মাঝে না থেকে মর্যাদার সাথে থাকুক এবং মুক্তির নিঃশ্বাস গ্রহণ করুক। পত্রিকাটি এটা প্রকাশ করেনি যে আমাকে হয়রানি করা হয়েছে এবং আমাকে মানসিক ভাবে অত্যাচার করারও চেষ্টা করা হয়েছে। পত্রিকাটি এটাও প্রকাশ করেনি যে আমার স্বামীর মুক্তির আদেশ আছে।
এই বিষয়ে টুইটারে আসা প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র। যারা জিহাদপন্থী তারা এই সংবাদে ছিল উত্তেজিত এবং তারা তরুণদের এই যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য উৎসাহ প্রদানে এই সংবাদটিকে বেছে নিয়েছে। অন্যদিকে অনেকে বেপরোয়া মনোভাব এবং সন্তানের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়ার জন্য মাকে অভিযুক্ত করেছে।
নাদা এ লিখেছে:
ليس أسوأ من أم ترسل ابنها للموت بإسم جهاد مزعوم الا من يصفق لها! الى اين نسير ؛( #نفير_معاذ_الهاملي
— Nada.A (@nada0075) September 25, 2013
যারা তথাকথিত জিহাদে একজন সন্তানকে ঠেলে দেওয়ার জন্য মায়ের প্রতি উল্লাস প্রকাশ করছে তারা ওই মহিলার চেয়ে নিকৃষ্ট। আমরা কোথায় যাচ্ছি? ?!
এর আগে যারা শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছিল, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রেফতার এবং কারাদণ্ডের মত শাস্তি লাভের পর সহিংস এবং উগ্রবাদীতে পরিণত হয়। বর্তমানে কারাবন্দী সাহসী সৌদি সুশীল এবং মানবাধিকার সংস্থার ( সৌদি সিভিল এন্ড পলিটিক্যাল রাইটস অ্যাসোসিয়েশন বা এসিপিআরএ) সদস্য মোহাম্মদ আল- কাহতানি সংবাদ প্রদান করেছেন যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বন্দীদের সিরীয় যুদ্ধে যোগদানে উৎসাহ প্রদান করে :
فضيحة جديدة لوزارة الداخلية #السعودية عرضت على بعض الشباب الموقوفين على خلفية المظاهرات الموافقة على الذهاب للقتال في سوريا مقابل العفو #حسم
— Mohammad Al-Qahtani (@MFQahtani) January 30, 2013
@এমএফকাহতানি : সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নতুন কেলেঙ্কারী: যদি সিরিয়ার যুদ্ধে যেতে আগ্রহী হয় তাহলে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শনের কারণে গ্রেফতারকৃত কয়েকজন তরুণকে মুক্তির সুযোগ প্রদান করছে।
এছাড়াও, এসিপিআরএ সদস্য আবদুল্লাহ আল হামেদও বিচারকের দ্বারা সংঘঠিত একই ঘটনার কাহিনী বর্ণনা করছে:
قالت أم محمد الطلق: الذي قتل في سورية( في خطابها للملك)القاضي الحسني نهى ابني وزملاءه ال١٩عن المظاهرات وحرضهم قتال الشيعة هناك!!
— د. عبدالله الحامد (@Abubelal_1951) February 25, 2013
@ আবুবেলাল_১৯৫১: মোহাম্মদ আল-তালাক, যে কিনা সিরিয়ায় নিহত হয়েছে, বাদশাহ-এর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তার মা বলছে: বিচারক আল হুসনি আমার ছেলে এবং তার সহযোগী ১৯ জন বিক্ষোভকারীকে, বিক্ষোভ প্রদর্শনের ব্যাপারে সতর্ক করে দেয় এবং তাদের সিরিয়ায় যুদ্ধ করার জন্য বলে !