সৌদি আরবের আওয়ামিয়াতে ২৩ জন “চিহ্নিত” লোকের খোঁজ চলাকালে মানুষ হত্যা

image

গত ৫ সেপ্টেম্বর তারিখে সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী সাঁজোয়া ট্যাংক নিয়ে ২৩ “চিহ্নিত” তালিকা – এর ২৩ জন সক্রিয় কর্মীকে গ্রেপ্তার করতে পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ, আওয়ামিয়াতে অভিযান চালায়। ফাধেল আল-সাফওয়ানি, মুনতাধির আল-সুবাইতি এবং মোহাম্মাদ আল-লাব্বাদের বাড়ি বাহিনীর তীব্র গুলিতে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। বাকি রয়ে যাওয়া আট জন “চিহ্নিত” সক্রিয় কর্মীর মধ্যে – তাঁদের তিন জনের কেউই নন। কিন্তু এলোপাথাড়ি গুলি করায় বেশ কিছু সংখ্যক লোক আহত হয় এবং ১৯ বছর বয়সী আহমাদ আলী আল-মিসলাব শহীদ হয়েছেন। আওয়ামিয়ার টুইটার ব্যবহারকারীরা রিপোর্ট করেছে, আহমাদ তাঁর একজন প্রতিবেশীর বাড়িতে কান্নার আওয়াজ শুনে সাহায্য করতে ছুটে গিয়েছিল। সে সৈন্যদের সামনে পরে যায় এবং পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাকে পায়ের পাতায় এবং পিঠে গুলি করা হয়। দু’জন যুবক তাকে ধরা ধরি করে তাঁর বাড়িতে নিয়ে গেলে, সেখানে তাঁর বাবার কোলে সে মারা যায়। পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, যারা তাকে মৃত অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে এসেছে তাঁদেরকে আল-মিসলাবের বাবা লক্ষ্যহীন ভাবে মোটর সাইকেল আরোহীদেরকে দোষারোপ করেছেন – এটি এমন একটি গল্প যা তাঁর বাবা অস্বীকার করেছেন। তাঁর বাবা একটি লিখিত বক্তব্য এবং একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। ভিডিওটিতে নিরাপত্তা বাহিনী ও পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের পুলিশ বিভাগকে তাঁর ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন এবং জড়িতদের শাস্তি দাবি করে ন্যায় বিচার চেয়েছেন।

আহমেদ এমশিখসও অবাক [আরবি] হয়েছেনঃ

আওয়ামিয়াকে ট্যাংক দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। যখন আমরা সবাই জানি [বাহিনী], সবগুলো মোটরসাইকেলে গুলি করার জন্য সবুজ বাতি জ্বালানো ছিল, তখন মুখোশ পরা মোটর সাইকেল আরোহী দু’জন লোক কীভাবে চলাচলের সাহস করলেন ?

মোহাম্মাদ আল-নিমারের মতো কোন কোন সক্রিয় কর্মী এই অভিযানটি মানুষকে ভয় দেখাতে চালানো হয়েছে বলে মনে করেন। জনগন ২৩ “চিহ্নিত” লোকের সমর্থনে যেন প্রতিবাদে অংশ না নেয়, অর্থাৎ ৬ সেপ্টেম্বর, পরবর্তী দিনগুলোর জন্য এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতো কিছুর পরেও প্রতিবাদ হয়েছে এবং “চিহ্নিত” সক্রিয় কর্মী এবং সেসব শহীদদের ছবি তুলে ধরা হয়েছে। “আমি পরবর্তি শহীদ, আমি অত্যাচারের ভয় পাই না” প্রভৃতি স্লোগান সমস্বরে উচ্চারিত হয়েছে। সেসব স্লোগানের মধ্যে আরো ছিলঃ

এই পরিস্থিতির কোন নিরাপত্তা সমাধান নয়, বরং একটি রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন।

সক্রিয় কর্মী ওয়ালিদ সুলাইস মন্তব্য করেছেনঃ

রক্তের ভাষা কখনো জাতি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না এবং স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পারে না। একটি নিরাপত্তা সমাধান, এমনকি যদি এটা সফলও হয়, তবুও ক্ষণস্থায়ী। এবং সমাজ আবারো বিস্ফোরিত হবে। সমাধানটি হওয়া উচিৎ রাজনৈতিক।

বাহরাইন থেকে নাদের আব্দুলইমাম মন্তব্য করেছেনঃ

শহীদ আহমেদ আল-মিসলাবই সৌদি আরবে প্রথম শহীদ নন। যেহেতু তেল ও অস্ত্রের বিনিময় চুক্তির কারনে বহির্বিশ্ব নীরব আছে, তাই তিনি শেষ শহীদও হবেন না। এটি রক্তের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

২৩ জন চিহ্নিত লোককে অন্যান্য অভিযোগের পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা এবং বিদ্রোহ সৃষ্টির অভিযোগেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁদেরকে কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পন করতে বলা হয়েছিল। তাঁদের অনেকেই সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, তাঁদের একমাত্র অপরাধ হচ্ছে তাঁদের অধিকার দাবি করা। ২৩ জনের দু’জন - খালেদ আল-লাব্বাদ এবং মুরসি আল-রেবকে হত্যা করা হয়েছে। আগের অভিযানে (তাঁদের মধ্যে শেষ হত্যা করা হয়েছে আব্বাস আল-মাজরা এবং তাঁর ছয় ভাই, যারা সবাই আল-মিসলাবের চাচাতো ভাই) সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি থাকা আরও আটজন “চিহ্নিত” লোক অবস্থায় ছয় জন নিজে আত্মসমর্পন করেছে।

image

গত ৯ সেপ্টেম্বর আহমেদ আল-মিসলাবের মরদেহ তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জনগণ শহীদদের জন্য সমুচিত প্রতিশোধ চেয়ে আন্দোলন করায় তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানটি একটি বিশাল মিছিলে পরিণত হয়।

২০১১ সালের মার্চ মাস থেকে তথাকথিত আরব বসন্তের শুরুর সাথে সাথে পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ কাতিফে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়লে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ২০ জনেরও বেশি লোক মারা যায় এবং ৮৫০ জন লোক গ্রেপ্তার হয়। প্রায় ১৯০ জন এখনও কারাগারে আছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .