মার্টিনিক: “মানুষের মতো চিন্তা করুন”, শুধু ফ্রান্সে নয়

মিস ব্ল্যাক ফ্রান্স ২০১২ নির্বাচনকে ঘিরে বিতর্কের মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর আরেকটি প্রশ্ন আফ্রিকীয় বংশোদ্ভুত ফরাসি জনগণ আলোচনা করছে: প্রেক্ষাগৃহ এবং নাট্যমঞ্চগুলোতে মার্কিন চলচ্চিত্র “থিন্ক লাইক এ ম্যান (মানুষের মতো চিন্তা করুন)“-এর মুক্তি বাতিল নিয়ে।

মার্কিন চলচ্চিত্রটি কীভাবে ফরাসি সামাজিক বিতর্কের জায়গা করে নিয়েছে?

যতোই বিস্ময়কর হোক না কেন উত্তরটি চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করা সমস্ত কালো কুশীলবেই নিহিত। দেশের বহুজাতি ভিত্তিক জনসংখ্যার সকল উপাদান ন্যায্যভাবে প্রদর্শন না করার জন্যে প্রায়শঃই ফরাসি চলচ্চিত্রের প্রতি আঙ্গুল তোলা হয়। লে ইনটাচেবলস (অস্পৃশ্য) চলচ্চিত্রের জন্য ফরাসি আফ্রিকীয় অভিনেতা ওমর সাই  ২০১২ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে সিজার পুরস্কার অর্জন করেছেন। সিনেমাটির সাম্প্রতিক সাফল্য আফ্রিকা এবং ক্যারিবীয় বংশোদ্ভুত ফরাসি নাগরিকদের মধ্যে বিশাল গর্ব এবং আশা্র সঞ্চার করলেও সেটা গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনের একটি সন্ধিক্ষণ রূপে প্রতিভাত হতে পারেনি।

মানুষের মতো চিন্তা করুন সিনেমার পোস্টার

মার্টিনিকের ব্লগার বন্ডামাঞ্জাক এই কলঙ্কিত বিজয়ের পর খুবই নাক সিটকিয়েছেন। তিনি যেমন ব্যাখ্যা করেছেন [ফরাসী] যে ওমর সাইয়ের এই পুরস্কার মনোনয়নের সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে হয়নি, বরং তা ঘটেছে থিয়েটার দর্শকদের বিশাল সংখ্যার কারণে।

Et la France comme un seul homme oublie que Omar Sy ne figurait pas sur la liste des nominés aux Césars […] Il a fallu que ‘Intouchables’ touche la barre des 19 000 000 d'entrées que ça râle un peu beaucoup pour que ce flagrant délit de mauvais scénario soit reconnu par l'immonde monde du cinéma français. Mais qu'on se rassure, cette récompense n'est qu'une opportuniste goutte d'eau dans un désert qui avance.

আর সমস্ত ফরাসি জনগণ শুধু একজন ওমর সাই’কেই সিজার মনোনয়নের জন্যে চূড়ান্ত তালিকাভুক্ত করতে ভুলে গিয়েছিল […] থিয়েটারে এর ১ কোটি ৯০ লক্ষ দর্শক হওয়ার পরই কেবল জনগণ ফরাসি সিনেমা শিল্পের ঘৃণার মনোভাবটি নিয়ে চিৎকার করতে শুরু করে এবং তারা তাদের ভুল স্বীকার করে। তবে নিশ্চিত থাকুন এই পুরস্কারটি চালিয়ে নেয়ার জন্যে মরুভূমির মধ্যে সুযোগসন্ধানী জলের একটি বিন্দু মাত্র।

সিনেমাতে বর্ণবাদী (জাতিগত) প্রোফাইলিং কীভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে?

মার্টিনিকের ব্লগ বো কে জনগণ নিগ্রো সংবাদের ফেসবুক পৃষ্ঠায় “ফ্রান্স চলচ্চিত্রে দম্পতির দুজনকেই কৃষ্ণাঙ্গ দেখতে চায় না” শিরোনামে প্রকাশিত একটি নোট [ফরাসী] সম্পর্কে রিপোর্ট করেন। ব্যাপক প্রচার পাওয়া এই বিশ্লেষণটি ফ্রান্সের সাম্প্রদায়িকতা এবং রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি করেছে যেগুলো থেকে হয়তো চলচ্চিত্রটি প্রত্যাখ্যানের ব্যাখ্যা পাওয়া যেতে পারে।

Il faut rappeler qu'il y a dans l’État français, une stratégie socio-politique qui tend à prôner le métissage plutôt que la valorisation des communautés. Dans la comédie ‘Think like a Man’, les couples noirs sont mis en avant.

ফরাসি রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক কৌশলটি কমিউনিটিগুলোকে মূল্যায়ন করার পরিবর্তে বরং নানা জাতির মধ্যে সম্পর্ককে বেশি সমর্থন করে। “মানুষের মতো চিন্তা করুন” কমেডিতে মনোযোগ কৃষ্ণাঙ্গ দম্পতি উপর নিবদ্ধ।

এই নোট অনুসারে ফ্রান্সে আফ্রিকীয়-মার্কিন চলচ্চিত্রগুলোকে (তাদের লাভজনকতা সত্ত্বেও) আটকে দেয়ার অন্য ব্যাখ্যাটি হলো:

À noter, les films de l'acteur et producteur noir Tyler Perry ne sont jamais programmés dans les salles françaises ou alors ils sortent directement en DVD. Pourtant ce producteur a pour habitude de dominer le box-office américain avec des films comme ‘Why did I get Married’ et “For Colored Girls”. La société française dans toute son hypocrisie ne veut surtout pas diffuser des films de producteurs noirs qui gagnent des millions de dollars en faisant passer un message positif pour la diaspora africaine grâce à leurs films.

‘আমি কেন বিবাহিত’ এবং ‘অশ্বেতাঙ্গ মেয়েদের জন্যে’-এর মতো চলচ্চিত্র দিয়ে মার্কিন বক্স-অফিসে বরাবর নেতৃত্ব দেয়া সত্ত্বেও কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা এবং প্রযোজক টাইলার পেরি'র সিনেমাগুলো কখনো কোনো ফরাসি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়নি বা শুধুমাত্র ডিভিডিতে মুক্তি পায়। আফ্রিকীয় অভিবাসীদের একটি ইতিবাচক বার্তা প্রদান করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করা কৃষ্ণাঙ্গ প্রযোজকদের সিনেমা প্রদর্শন করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে ফরাসি সমাজ ভণ্ডের মতো আচরণ করে।

একইভাবে, লা স্ক্যান্দালিউজের মহিলা ব্লগারদের সম্মিলনের মতো অন্যান্য ফরাসি আফ্রো-ক্যারিবীয় নেটনাগরিকরা কিছু কিছু বিখ্যাত ফরাসি চলচ্চিত্রের পত্রিকা এবং ওয়েবসাইট প্রকাশ্যে যেভাবে সিনেমাটির এবং এর চরিত্রাভিনেতাদের অবমূল্যায়ন করেছে, তার জন্যে নিন্দা জ্ঞাপন করে [ফরাসী]:

Première.fr ne comprend pas comment un film avec une majorité d’acteurs noirs peut-être premier du box office! Ne connaissant aucun acteur, ils se permettent alors d’écrire «cette comédie au pitch classique et sans tête d’affiche (le chanteur Chris Brown est le nom le plus connu du générique).» Faut il vous faire la filmographie de tous les acteurs ? Non car cela est votre travail !

কীভাবে আসলে কৃষ্ণাঙ্গপ্রধান একটি চলচ্চিত্র বক্স-অফিসের নেতৃত্ব দেয় সেটা প্রিমিয়ারে, এফআর (Première.fr) বুঝতে পারে না! যেহেতু তারা কোন অভিনেতাদেরই চিনেন না, তাই তারা লিখতে সাহস করেন যে ‘এই কমেডির কাহিনীটি প্রচলিত এবং এতে কোন বিখ্যাত অভিনেতা (যাদের মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত গায়ক ক্রিস ব্রাউন) নেই।’ পাঠকরা কী সব অভিনেতাদের জন্যে ফিল্মোগ্রাফি তৈরী করে? না এটা আপনাদের কাজ!

লা স্ক্যান্দালিউজ অনুসারে, বিশ্ববিখ্যাত এসব আফ্রিকীয়-মার্কিন অভিনেতাদের সম্পর্কেও জ্ঞানের এই অভাব একটি ফরাসি প্রবণতারই প্রতিধ্বনি তোলে:

Mais peut-être que dans un pays comme la France où on a du mal à faire tourner des acteurs noirs, la surprise ne peut-être que grande face au succès de «Think Like a Man» ! Qui, d’ailleurs, n’est pas présenté comme un film afro par ses acteurs ni par son réalisateur, c’est un film universel, ce qui explique son succès au box office!

হয়তো ফ্রান্সের মতো দেশে যেখানে কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতারা কদাচিতই কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সেখানে “মানুষের মতো চিন্তা করুন” এর বিশাল সাফল্য বুঝতে পারা খুবই বিস্ময়কর! না অভিনেতা-অভিনেত্রীরা না পরিচালক কেউই চলচ্চিত্রটিকে কেবল আফ্রিকীয়-মার্কিন হিসেবে উপস্থাপন করেনি। এটি একটি সার্বজনীন চলচ্চিত্র, যা চার্টগুলোর মাধ্যমে এর সাফল্যের ব্যাখ্যা দেয়!।

আফ্রিকীয় অভিবাসীভিত্তিক আফ্রিক.কম (Afrik.com)  আরো যোগ করে এর ভার বাড়ায়  [ফরাসী]:

Si l’article de Première.fr semble certainement mal documenté, c’est avant tout un exemple parmi d’autres du refus des diffuseurs et du milieu du cinéma français de miser sur des films dans lesquels la majorité des acteurs sont noirs ou même de miser sur leur éventuel succès. Sous couvert de logiques économiques frileuses, ce «genre» de films, qu’ils soient américains ou français, n’existent quasiment pas dans les salles françaises.

প্রিমিয়েরে.এফআর প্রকাশিত নিবন্ধটিতে একেবারে স্পষ্টভাবেই গবেষণার একটি অভাব রয়েছে।  তবে সর্বোপরি অন্যান্যগুলোর মতো কৃষ্ণাঙ্গপ্রধান অভিনেতা-অভিনেত্রীসমৃদ্ধ চলচ্চিত্র অথবা এর সম্ভাব্য সাফল্য নিয়ে ফরাসি চলচ্চিত্র শিল্পের ব্যবসা করতে না চাওয়ার আরো একটি উদাহরণ। ফরাসি বা মার্কিন যাই হোক না কেন, এ'ধরনের’ চলচ্চিত্রকে আটকে দেয়ার জন্যে তারা ফরাসি প্রেক্ষাগৃহগুলোর দেয়া একটি ঝুঁকিহীন আর্থিক যুক্তির আড়ালে লুকাতে চায়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .