পাকিস্তানী-কানাডীয় বংশোদ্ভুত সাংবাদিক এবং তথ্যচিত্র নির্মাতা শারমিন ওবায়েদ চিনয় সম্প্রতি, শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্রের (স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র) অস্কার পুরস্কার জিতেছেন। ২০১০ সালে তিনি তার “পাকিস্তান: তালেবানের শিশু” নামক তথ্যচিত্রের জন্যে একটি এমি পুরস্কার জিতেছিলেন”।
প্রায় সব পাকিস্তানি দৈনিক সংবাদপত্র এটিকে প্রথম পৃষ্ঠার খবর বানিয়েছে (দি নিউজ, ডন, জং, এক্সপ্রেস নিউজ)। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মিজ চিনয়ের জন্যে সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার ঘোষণা করেছেন।
এই খবরটি টুইটের একটি বন্যা বইয়ে দিয়েছে। সবাই আত্মপ্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা ও চলচ্চিত্র পরিচালক শারমিনকে অভিনন্দিত করছে:
@@জেমাইমা_খান: আপনাদের বলেছি, আপনাদের বলেছি, আপনাদের বলেছি এটা পাকিস্তানের বছর … @শারমিনওচিনয়কে অভিনন্দন … তার উজ্জ্বল তথ্যচিত্র মুখ রক্ষা‘র জন্যে অস্কার জয়ে।
@@সুহাসিনীএইচ: ওমা, শারমিন ওবায়েদ চিনয় শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্রের জন্যে জিতেছে!! ঐসব পোড়া ওয়ার্ড যারা দেখেছে… বিশ্বকে তার কাজটি দেখতে হবে।
@নাতাশাথ_এইচ_এজাজ:#শারমিন ওবায়েদ-চিনয়: আপনি আমার চোখে অশ্রু এনেছেন! খুব গর্বিত!
@সামরামুসলিম: আজকে আমি আগের চেয়ে গর্বিত এক #পাকিস্তানী হিসেবে চলাফেরা করি, আপনি @শারমিনওচিনয় এবং আপনার #অস্কার জয়ের কারণে!
@কামরান জাভেদ: অভিনন্দন! পাকিস্তান মুখ রক্ষা‘র জন্যে শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্র হিসেবে ১ম অস্কার পুরস্কার জিতেছে।
মহিলাদের উপর এসিড সহিংসতার প্রভাব সম্পর্কিত একটি তদন্তধর্মী তথ্যচিত্র নির্মাণের কারণে শারমিন ওবায়েদ চিনয়কে অস্কার পুরস্কার দেয়া হয়েছে। তার তথ্যচিত্রটি পাকিস্তানে নারী অধিকারের খারাপ অবস্থার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। তার ‘মুখ রক্ষা‘ নামের ফিল্মটিতে এসিড আক্রান্ত হওয়ার পর মহিলারা কিভাবে জীবন যাপন করেন তা দেখানো হয়। ছবিটিতে ব্রিটিশ-পাকিস্তানী শল্যবিদ মুহাম্মদ জাওয়াদের কাজও দেখানো হয় যিনি এই ভোগান্তি পার করা মহিলাদের মুখমণ্ডল রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। পাকিস্তানে এসিড আক্রমণ একটি ‘গার্হস্থ্য অপরাধ'। আর যখন এধরনের অপরাধীরা আইনের শাসন থেকে পালিয়ে যায় তখন ন্যায় বিচারের নামে একটি প্রহসন ঘটে।
তথ্যচিত্রটির ওয়েবসাইটটিতে চলচ্চিত্রটির মিশন সম্পর্কে বিস্তারিত আছে। এর মূল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র একটি “ভয়ঙ্কর অপরাধ তুলে ধরা” নয় বরং পাকিস্তানে অ্যাসিড সহিংসতা বন্ধ করা। একটি সক্রিয় কর্মী গ্রুপ ‘এসিড সারভাইভার পাকিস্তান’ – যাদের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্রটি অস্কার জয় করে – এই ভয়ঙ্কর অপরাধটি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরী এবং একে সমাজ থেকে সম্পূর্ণ নির্মূল করতে সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার, সচেতনতা, যুবক-যুবতীদের শেখানো এবং রেডিও/টেলিভিশনে প্রচারণা ব্যবহারের পরিকল্পনা করে।
আমিনাহ্ কাদীর তার ব্লগে পোস্টে যথাযথভাবেই শারমিনকে অনুপ্রেরণা পাওয়ার মতো একজন মডেল হিসেবে অভিহিত করেন। এছাড়াও পুরস্কারটি পাকিস্তানের নরম ইমেজ তৈরীতে সাহায্য করবে। শারমিন নিজেই অস্কারটিকে পাকিস্তানের মহিলাদের জন্যে উৎসর্গ করেন। যতক্ষণ পাকিস্তানে শারমিনের মত মহিলারা রয়েছেন, ততক্ষণ সমাজ পরিবর্তনের আশা আছে।
সবশেষে এই তথ্যচিত্রটি ২০১১ সালের ডিসেম্বরে জারিকৃত এসিড নিয়ন্ত্রণ ও এসিড অপরাধ প্রতিরোধ আইনটি প্রয়োগে সাহায্য করবে। নতুন সংশোধনীর ফলে অপরাধী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে এবং ১০ লক্ষ রুপি (২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১২-এর হার হিসেবে ১১,০০০ ডলার) ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে।
অস্কারের ধন্যবাদ ক্যামে-এ (ধন্যবাদ প্রদান ভাষণ) শারমিনের বার্তাটি ছিল:
এটা পাকিস্তানের সবার জন্যে-যারা প্রতিটি দিন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত-আপনাদের জন্যে।