বিশ্বের যে সমস্ত দেশে কিশোরীদের গর্ভধারণের হার সর্বোচচ থাইল্যান্ড তাদের মধ্যে অন্যতম। হিসেব করে দেখা গেছে যে থাইল্যান্ডে বছরে গড়ে প্রায় ১২০,০০০ জন কিশোরী গর্ভবতী হয়ে পড়ে এবং যদি আমরা জাতীয় অর্থনীতি এবং সামাজিক উন্নয়ন গবেষণা সামাজিক বোর্ড (এনইএসডিবি)-এর উপসংহারের কথা বিশ্বাস করি তাহলে এখন কিশোরীদের এই অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণের জন্য অংশত জনপ্রিয় যোগাযোগ সাইট ফেসবুক দায়ী।
এনইএসডিবি তথ্য প্রকাশ করেছে যে দেশটির ১৮ থেকে ২৪ বছরের নাগরিকরা সবচেয়ে বেশী সংখ্যায় ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে, যা মোট ব্যবহারকারীর ৪০ শতাংশ।
বোর্ড বলছে যে কিশোরীদের এই ভাবে গর্ভধারণের জন্য অংশত ফেসবুককে দায়ী করা যায় কারণ কিছু তরুণ অনলাইনে উত্তেজনাকর বার্তা বা ভিডিও ক্লিপ রাখে।
অন্যদিকে সাকসিত সিয়াসোমবাত এই ঘটনার জন্য থাইল্যান্ডে যথাযথ যৌন শিক্ষার অভাবকে দায়ী করেছে:
কিশোরীদের এই অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের জন্য সর্ব বৃহৎ সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইটের উত্তেজক উপাদানকে দায়ী করা হচ্ছে, যার কারণে কিশোরীরা অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে। অথবা এর এক অনেক সহজ ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে, থাইল্যান্ডের যৌন শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে থাইল্যান্ড প্রচণ্ডসমস্যা বিরাজ করছে।
যদি নৈতিক ক্ষোভকে এক পাশে রাখে যায়, তাহলে ক্ষমতাশালীরা হয়ত দেখতে পাবে যে, কিশোরীদের গর্ভধারণ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হচ্ছে যথাযথ যৌন শিক্ষা প্রদান এবং একে এড়িয়ে যাবার বদলে যৌনতার বিষয়ে প্রকৃত বাস্তবতা গ্রহণ করা ।
রেসিফেল্ডারডো মন্তব্য করেছে যে কিশোরীদের গর্ভধারণের সাথে সামাজিক প্রচার মাধ্যমের কোন সম্পর্ক নেই:
কিশোরীদের গর্ভধারণ অথবা যৌন মিলনের সাথে ফেসবুক এবং অন্য সব সামাজিক প্রচার মাধ্যমের আদতে কোন সম্পর্ক নেই। এটা আসলে হরমোনের বিষয়। এমনকি সামাজিক প্রচার মাধ্যম ফেসবুকে নির্মাতার মায়ের জন্মেরও ঢের ঢের আগেও তরুণ তরুণীরা মিলিত হত।
এছাড়াও টেস্টি থাইল্যান্ড, দেশটিতে যৌন শিক্ষার ক্লাশের পরিমাণ ক্রমশ কমে আসার বিষয়টি উল্লেখ করছে :
সর্বোপরি ১৮ বছর বয়স্ক একটি মেয়ে মূলত কিশোরী, কিন্তু আইনত সে সাবালিকা, আর এটাই প্রাপ্ত বয়স্ক হবার বয়স। কাজেই কিশোরীদের গর্ভধারণের জন্য ফেসবুককে দায়ী করার কোন মানে হয় না।
থাইল্যান্ডে কিশোরীদের গর্ভধারণের পরিমাণ কমছে না কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটির স্কুলগুলোতে ক্রমশ যৌন শিক্ষার প্রদানের হার নাটকীয় ভাবে কমিয়ে আনা হয়েছে। থাইল্যান্ডের বাবা মা তাদের সন্তানকে, সন্তান ধারণ না করার বিষয়ে শিক্ষা দিতে পারে, তারা পারে কি?
ফ্যাক্ট বা ফ্রিডম এগেনস্ট সেন্সরশিপ থাইল্যান্ড নামক সংগঠন পিতামাতার ভূমিকার বিষয়টির উপর গুরুত্ব প্রদান করছে:
নিঃসন্দেহে ফেসবুক হয়ত কাউকে কোন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে, কিন্তু যে সমস্ত বাবা মা খেয়াল করে না তার সন্তান কম্পিউটারে কি করেছে তারা আসলে উত্তম পিতা মাতা না। হয়ত ছেলের বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলা প্রয়োজন…অনেক বেশী বেশী ফুটবল খেলার দরকার।
@থাইমিথবাস্টারের কাছ থেকে কিছু টুইটার প্রতিক্রিয়া এখানে তুলে ধরা হল :
#থাইল্যান্ড # ফেসবুক এটা করেছে এবং অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের কারণে থাই কিশোরীদের গর্ভধারণের ক্ষেত্রে ফেসবুককে দায়ী করা হচ্ছে … বিস্মিত এই কারণে যে, দশ বছর আগে একই ঘটনার জন্য কাকে দায়ী করা হত…প্রেম?
@কোকোনাটসব্যাংকক, ভাবনাটা ছিল যে, আমরা সব সময় ভেবে এসেছি অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের কারণে কিশোরীরা গর্ভবতী হয়ে পড়ে, দৃশ্যত ফেসবুক আসলে এই ঘটনা ঘটায়!
এমন নয় যে এবারই প্রথম কিশোরীদের গর্ভধারণের জন্য কেউ ফেসবুককে অভিযুক্ত করল, গত বছর ইন্দোনেশিয়ার মধ্য জাভার এক ধর্মীয় নেতা, দেশটির অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে বিবাহ করা এবং কিশোরীদের মধ্যে অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণের হার বেড়ে যাবার কারণে সর্ববৃহৎ এই সামাজিক মাধ্যমকে দায়ী করেন।