তিউনিসিয়া: ”জনতা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা চায়”

আমাদের এ পোস্ট টি তিউনিসিয়া বিপ্লব ২০১১ সংক্রান্ত স্পেশাল কাভারেজের অংশ

“জনতা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা চায়” সম্প্রতি তিউনিসিয়ার রাস্তায় এ স্লোগানটি শোনা যাচ্ছে।

গত সরকারের শাসনামলে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক দুই মন্ত্রীর মুক্তির প্রতিক্রিয়া হিসেবে জনতা এ প্রতিবাদ করে। আদালত গত সপ্তাহে প্রাক্তন পরিবহনমন্ত্রী আবে রাহিম জৌয়ারী ও বিচারমন্ত্রী বেসির টেক্কারীকে নিরপরাধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে অপর একটি দুর্নীতির দায়ে জৌয়ারীর বিরদ্ধে তদন্তের জন্য সমন জারী করা হয়।

৮ই আগস্ট তিউনিসের প্রাণকেন্দ্রে প্রতিবাদ

৮ই আগস্ট তিউনিসের প্রাণকেন্দ্রে প্রতিবাদ, ব্যানারে লেখা ‘জনতা চায় স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা’, ছবি- নাসির তালেল এর ফেসবুক পাতা থেকে

বলা হয়ে থাকে যে মন্ত্রীদ্বয় ক্ষমতা তাঁদের নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে লাভবান হন। বহিস্কৃত রাষ্ট্রপতি জিনে এল আবেদিন বেন আলির স্বৈর শাসনামলে বহু বছর ধরে বিচার ব্যবস্থা তাঁর যে খেলার পুতুলে পরিণত বিপ্লবের ছয় মাসেরও বেশি সময় পরেও সে বিচার ব্যবস্থার কোন উন্নতি হয় নি।

ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ, এবং সাবেক সরকারের আমলে গোয়েন্দাগিরি ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাদিয়া আজেরবিকে প্যারিসের উদ্দেশে তিউনিসিয়া ত্যাগের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে তাকে তিউনিস কারথেজ বিমানবন্দরে কেউ বাধা প্রদান করে নি।

প্রাক্তন দুর্নীতি বাজ কর্মকর্তাদের বিচার করতে সক্ষম এবং যারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের হত্যার জন্য দায়ী তাদের বিচারে সক্ষম সে ধরনের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবী তিউনিসিয়াতে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।

ব্লগার লীনা বেন মেহনি কর্তৃক ধারণকৃত এ ইউটিউব ভিডিওটিতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীরা তিউনিসের প্রাণকেন্দ্রে গত ৮ আগস্ট ২০১১ তে শ্লোগান দিচ্ছে “গণতন্ত্র একটি কর্তব্য, জাতীয় বিপ্লব একটি কর্তব্য” তাঁরা জাতীয় সঙ্গীত ও গাইছিল:

http://www.youtube.com/watch?v=l5Td9P_Uwxk&feature=player_embedded

তিউনিসে বাসকারী মার্কিন ব্লগার এরিক চার্চিল গত ৫ই আগস্ট লিখেন:

বেন আলির সঙ্গীদের বিচারের বিষয়ে বিচারকগণ ধীর লয়ে বিচার সম্পন্ন করছেন। গত বৃহস্পতিবার দীর্ঘ দিন ধরে গত সরকারের ক্ষমতায় থাকা প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী আবেরাহিম জৌয়ারীর মুক্তি অনলাইন সক্রিয়তাবাদীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।

সক্রিয়তা বাদীরা বিষয়টিকে বিপ্লবের প্রতি অবমাননাকর বলে মনে করছেন, বিগত শাসনামলের দুর্নীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে।

নাওয়াত-এর ব্লগার আব্দেররাজ্জাক লিখেন[আরবি]:

الحقوقيّين و آلاف التونسيين من الذين تظاهروا و اعتصموا سابقا مازالوا يطالبون بمحاسبة كلّ المسئولين الذين أهدروا المال العام أو تلوّثت أيديهم بدماء الشهداء أو كانوا سببا في سجن الأبرياء و تعذيبهم…غير أنّ الكثير من الأسماء التي يشار إليها تصريحا لا تلميحا، بقيت دون ملاحقة أو مساءلة
হাজারও তিউনিসিয় ও আইনজীবী বিক্ষোভ ও অবস্থান ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে যারা জনগণের টাকা নষ্ট করেছে, যাদের হাত শহীদের রক্তে রঞ্জিত, এবং যারা নিরীহ জনগণকে অত্যাচার করেছে তাঁদের জেল খাটিয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবীতে আজও বিক্ষোভ করছে…যদিও অনেক নামই শোনা যায় তারপরেও তারা বিচার প্রক্রিয়া ও জবাবদিহিতার বাইরে আছে।

লীনা বেন মেহনি তাঁর ব্লগে ‘বিপ্লব চলমান’ শিরোনামের প্রবন্ধে লিখেন:

গত সপ্তাহে তিউনিসিয়রা কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছে। একটার পর একটা খারাপ খবর এসেছে। দুর্নীতি ও বেন আলি আর তাঁর স্ত্রীর প্রতি আনুগত্যের জন্য খ্যাত মিসেস সাদিয়া আজেরবি […] বেন আলির শাসনামলে তিউনিসিয় জনগণের প্রতি অপরাধ সংঘটনে অভিযুক্ত দুই মন্ত্রীর মুক্তি […] এ দুই দুঃখজনক ঘটনায় তিউনিসিয়রা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তিউনিসিয় আদালতের বাইরে আয়োজিত ছোট্ট অবস্থান ধর্মঘট ছিল প্রথম নজির। কিছু আইনজীবী সাফল্যজনকভাবে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এবং বিপ্লব অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বক্তৃতা করেন। আজ রাজধানীতে সমাবেশের আয়োজন করা হয় এবং জনতা তিউনিসিয় শ্রমিকদের ইউনিয়ন ভবনের বাইরে থেকে তিউনিসের প্রধান সড়ক পর্যন্ত হেটে এসে থিয়েটারের বাইরে দাঁড়িয়ে মুক্তির শ্লোগান দেয়।

বেন আলি ও তাঁর স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বিচারকার্য জনতাকে তৃপ্ত করতে পারছেনা, যে পর্যন্ত তিউনিসিয় বিচার কতৃপক্ষ দেশত্যাগ করে সৌদি আরবের জেদ্দায় অবস্থানকারী বেন আলি ও তাঁর পরিবারকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে না পারবে সে পর্যন্ত তাদের অনেকেই এ বিচারকার্যকে “নাটক” বলে মনে করেন।

ব্যানারে বলা হয়েছে 'জনতা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা চায়। পরিস্কার কর, পরিস্কার কর, শুরু কর বিচার মন্ত্রী চেব্বি কে দিয়ে। চেব্বি ভাগ!' ছবি-  ফ্লিকারের থেকে আফেফ আব্রুজির সৌজন্যে।

ব্যানারে বলা হয়েছে ‘জনতা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা চায়। পরিস্কার কর, পরিস্কার কর, শুরু কর বিচার মন্ত্রী চেব্বি কে দিয়ে। চেব্বি ভাগ!’ ছবি- ফ্লিকারের থেকে আফেফ আব্রুজির সৌজন্যে।

বিচার মন্ত্রনালয় জনগণকে এই বলে একাধিকবার আশ্বস্ত করেছে যে, তিউনিসিয়ার বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন এবং বেন আলির শাসনামলে যারা জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করেছে তাদের এবং যারা বিপ্লব চলাকালে প্রতিবাদকারীদের জীবন হননে দায়ী তাদের বিচারে তারা সচেষ্ট রয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের এ বাণী ব্লগার ও বিক্ষোভকারীদের কাউকেই সন্তুষ্ট করতে পারেনি।

সারাহ ব্যাখ্যা করেন [ফরাসি ভাষায়]:

Toujours selon le communiqué du ministère de la justice, la magistrature ainsi que les juges d’instruction sont totalement indépendants depuis le 14 janvier. Dans ce cas, deux hypothèses se présentent : soit ceux qui étaient en charge du dossier sont irresponsables et incompétents et il faut les virer, soit notre justice est totalement pourrie et la chute de l’ancien régime traînera la chute de plusieurs juges, magistrats et avocats corrompus. Personnellement, j’opte pour cette seconde hypothèse

বিচার মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় সবসময় বলা হয়েছে যে তদন্তকারী বিচারক ও বিচার ব্যবস্থা ১৪ জানুয়ারি থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন। এ ক্ষেত্রে যে দুটো ধারনা পাওয়া যায় তাহলো অভিযোগ দায়েরের ক্ষেত্রে তারা হয় দায়িত্ব জ্ঞানহীন ও অদক্ষ, তাদের ছাটাই করা উচিত অথবা আমাদের বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং গত সরকারের পতন মনে হয় একাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট এবং আইনজীবীর পতন ডেকে আনবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি দ্বিতীয় ধারনার পক্ষে।

মিসরের সাথে তুলনা করে অনেকেই তিউনিসীয় বিচার ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করতে পারেন।

@দি ফ্যান টুইট করেন [আরবি]:

خبر عاجل: حسني مبارك ونجليه ووزرائه يطالبون بمحاكمتهم بتونس #justicetunisie #tunisie LOL
তাজা খবর: হোসনী মুবারাক, তার ছেলেরা এবং মন্ত্রীরা তিউনিসিয়ায় গেছেন বিচার পাবার জন্য

ইতোমধ্যে তিউনিসিয় নেট নাগরিকরা সামাজিক প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে আরেকটি প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন। “জনতা আরেকটি বিপ্লব চায়” শিরোনামে ফেসবুকে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে, এটা সংঘটিত হবে আগামী শনিবার রাতে [১৩ আগস্ট]

আমাদের এ পোস্ট টি তিউনিসিয়া বিপ্লব ২০১১- সংক্রান্ত স্পেশাল কাভারেজের অংশ

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .