প্রায় তিন বছর দেওয়ালের বাইরে থাকার পর, এক ব্লগার যে কিনা ছদ্মনামে থাকতে চাইছে নিয়েছে- সে জেলখানার ভেতরের জীবন সম্বন্ধে গল্প বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে বলছে, সে এমন এক অপরাধের জন্য গ্রেফতার হয়ে যে অপরাধে কেউ নিহত হয়নি, বা কারো শরীরে আঘাতের সৃষ্টি হয়নি। সে এমন এক জীবন সম্বন্ধে পুনরায় যাচাই করার জন্য ব্লগ করছে যেই জীবন থেকে সম্প্রতি সে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
সে সময় আমি জানতাম না কেন এ কাজটি করেছিলাম, কিন্তু আমি সে সময় দুর্বল এবং আতঙ্কিত ছিলাম এবং এলাকা ত্যাগ করলাম। আমি বাড়ি ফিরে গেলাম, গাড়িটা নিলাম এবং গাড়ি চালানো শুরু করলাম। আমি জানতাম না আমার এই যাত্রা কোথায় গিয়ে শেষ হবে।
অন্য কথায়, আমি পালিয়ে গেলাম।
আমার মনের ভেতর কেবল একটাই চিন্তা ছিল: মৃত্যুকে গ্রহণ করার মধ্যে দিয়ে কেবল আমি পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইব। ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা ছিল কিন্তু সেই মূহুর্তে তাদের কথা ভাবার সময় আমার ছিল না…..
যেমনটা আমি বলেছি, আমি কাউকে শারিরীকভাবে আঘাত করিনি। কারণ যখন ঘটনাটি ঘটে সে সময় তারা পাশে ছিল না।
যাই হোক পরবর্তী দুই মাস আমি সারা জাপানের এদিক ওদিক পালিয়ে বেড়িয়েছি। আমি সাউনাস নামক ছোট ঘর, অতি ক্ষুদ্র বাক্সের মত ঘর দিয়ে তৈরি সস্তা ক্যাপসুল হোটেলে এবং পার্কে রাত কাটিয়েছি। যখন আমি নারা উদ্যোনে থাকতাম তখন হরিণেরা কাছে চলে আসত। সেটা ছিল বেশ ভয়ের ব্যাপার…..
টোকিওর একটি ক্যাপসুল হোটেল থেকে আমাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগ পর্যন্ত সব সময় আমি হোটেলে কামরা নেওয়ার সময় ভূয়া নাম ব্যবহার করেছি। আমি জানি না কেন, গ্রেফতার হওয়া হোটেলে আমি আমার প্রকৃত নাম এবং ঠিকানা ব্যবহার করলাম। কাজেই যখন হোটেলের কর্মচারী বিষয়টি দেখল সে পুলিশকে ডাকল।
পুলিশ আমার ব্যাংকের হিসাব পরীক্ষা করে দেখেছিল এবং তারা জানত যে আমি সারা জাপানে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। কাজেই যে সব এলাকায় আমি ছিলাম সেখানকার সকল স্নানঘর ও হোটেলে আমার নামে এক সতর্ক বার্তা জারি করে রাখা হয়েছিল।
আমি মনে করি সময়টা ছিল রাত ১০টা, যে ক্যাপসুল বা বাক্সের মত ঘরে আমি ঘুমিয়েছিলাম হাঠাৎ তার পর্দা খুলে গেল এবং একজন বলে উঠল’ “আমরা পুলিশের দল”। “আপনি জানেন কেন আমরা এখানে”।
হোটেলের লম্বা বারান্দায় তিনজন গোয়েন্দা এবং একজন পুলিশ ছিল। যেহেতু আমাকে পুলিশের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়, তাই তারা আমার হাতে কোন হাতকড়া লাগায়নি, কিন্তু তারা খুব শক্ত করে আমার প্যান্ট ধরে রেখেছিল। কাছের এক শুঁড়িখানার গুণকীর্তনে নিযুক্ত ব্যক্তিটির এ ব্যাপরে ধারণা ছিল না এখানে আসলে কি ঘটছে। সে আমার কাছে এসে প্রশ্ন করল। কিন্তু সে সময় আমার মাথা একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল এবং আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি ঘটছে……..
পুলিশ থানার এক কক্ষে শুরু হওয়া আমার জীবন
ঠিক বেলা ৯.০০ টার সময় গোয়েন্দারা এলো এবং আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে নিয়ে গেল। এই প্রথমবার তারা আমাকে হাতে হাতকড়ি পরিয়ে হাত শরীরের পিছন দিকে রেখে সেখানে নিয়ে গেল। হাতকড়াটা ছিল বেশ দৃঢ় এবং ভারী। এখন আমি পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করলাম যে আমি গ্রেফতার হয়েছি।
সেদিন সারাদিন ধরে তদন্ত চলল। আমি কিছু জিনিস ঠিকভাবে মনে করতে পারি না এবং কিছু জিনিস ভুলে গেছি। কিন্তু কখনো যদি আমি কোন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম, সাথে সাথে তারা টেবিলে বাড়ি দিয়ে গর্জন করে উঠেছিল, “মিথ্যাবাদী” অথবা “সেই বিষয়টি মনে করে দেখুন”! আমার মনে হচ্ছিল যেন আমি একটি পুলিশী ছবি দেখছি এবং এটা একটা রহস্য যে কি ভাবে আমি শান্ত ছিলাম।
যে গোয়েন্দা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল তারা ধূমপায়ী ছিল না। কাজেই তারা আমাকে বলল যে জিজ্ঞাসাবাদের মাঝে আমি কেবল তিনটি সিগারেট খেতে পারব। পরে আমি আবিষ্কার করলাম যে এর কোন অর্থ নেই।
যখন আমি কোন তথ্যে রাখার জন্য টাইপ করা কয়েকটি পাতায় স্বাক্ষর করলাম, তখন আমি খেয়াল করলাম, আমি যা বলেছিলাম পাতায় অন্যভাবে লেখা হয়েছে। যেমন তারা লিখেছে, এটা অনেকটা একই রকম, তাই নয়কি? অথবা অনেকটা একই রকমের প্রকাশভঙ্গি, কিন্তু আমি তাদের বিষয়গুলো ঠিক করে দিলাম। সে সময় আমি জানতাম না বিচার প্রক্রিয়া সম্বন্ধে জানতাম না তবে এরপর আমি খুবই আনন্দিত ছিলাম যে আমি বিষয়টিকে ঠিক করে দিয়েছিলাম…
পুলিশের বন্দীশালার কক্ষে ইয়াকুজা প্রধান (জাপানী মাফিয়া গ্রুপের বস), গুন্ডা, চীনা, ইরাকী, আমেরিকার এবং এরকম অনেক দেশের নাগরিকও সেখানে ছিল। এদের অপরাধও নানাবিধ। বিদেশী এবং গুণ্ডারা উদাসীন থাকত, কিন্তু বসেরা খুব সাহায্য করত। তারা আমার মত এক নবাগতকে প্রসাধন সামগ্রী এবং হালকা নাস্তা দিত।
পুলিশ থানায় তুলনামূলকভাবে আমাদের ভালোভাবে যত্ন করা হয়েছিল এবং যদি তাদের আপনি টাকা দেন তাহলে তারা সপ্তাহে একদিন পটেটো চিপস, ক্যান্ডি, ফলের রস জাতীয় পানীয়, মিষ্টি , রুটি অথবা অন্য সব জিনিস এনে দেবে।
যে আমাকে নির্বাক করে দিল সে একজন আমেরিকার নাগরিক। সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল, তার ফলে তারা নারী বা সংখ্যালঘু কয়েদির জন্য তৈরি করা এক কক্ষে আলাদা করে রাখল। সে সারা রাত ধরে চিৎকার করল, পুলিশের গায়ে আঘাত করল এবং মল ত্যাগ করল.. কাজে যতবার তাকে অন্য এক জায়াগায় নিয়ে যাবার প্রয়োজন হয়ে পড়ছিল তাকে নড়ানোর জন্য তিনজন পুলিশের প্রয়োজন হয়ে পড়ছিল। সে বলছিল, তোমরা আমেরিকার প্রতি খারাপ আচরণ কর, কারণ তোমরা যুদ্ধে হেরে গেছ! কি নির্বোধ।
অনুবাদকের জন্য এক কঠিন সময়….