পশ্চিম আফ্রিকা: মাদক চোরাকারবারী আর সেনা স্বৈরশাসক-রাজনীতিবিদ

ক্যাপ্টেন দাদিস কামারার ছেলে মোরিবা জুনিয়র দাদিস কামারার দেহ কুইবেকের লঙ্গুয়েইলের একটি সুইমিং পুলে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় যেখানে সে পড়াশোনা করছিল। সাথে সাথে ধারণা করা হয় এই অপরাধ মাদক চোরাকারবারীর দ্বারা সংগঠিত হয়েছে। এন্টোনিও মাজিটেল্লি এরই মধ্যে নিশ্চিত করেছেন যে গিনি মাদক ব্যবসার প্রধান একটি কেন্দ্র। ওয়েবসাইট কোনাকরাইনিউজ.নেট প্রশ্ন করেছে বিশ্বে অনেক মানুষ যা চিন্তা করছিল:

সাধারণ ডুবে গিয়ে মৃত্যু, নাকি পূর্বপরিকল্পিত হত্যা?

কোনাকরি থেকে, ইব্রাহিমা কোয়াচি.কম এ স্মরণ করেছেন:

এই ঘটনার প্রথম সংস্করণ কোকেইন চোরাকারবারীদের পক্ষ থেকে হিসাব সমান করার একটা ব্যাপারের কথা বলেছে। সামরিক জান্টার প্রধান মুসসা দাদিস কামারা ২০০৮ সালের ২৩শে ডিসেম্বর সামরিক অভ্যুত্থানের পরের দিন এই চোরাকারবারি নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দিয়েছিলেন… আমাদের মনে আছে যে এই ধরণের ক্ষমাহীন লড়াই এর মধ্যে, দাদিস কামারার শাসন শুরু হয় সেক্রেটারী অফ স্টেটসের কার্যক্রম দ্বারা যিনি মাদক আর সংগঠিত অপরাধ রোধের জন্য দায়ী। মাদক চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুসা থিগবরো কামারা নির্দেশ দেন ধরে নেয়া হয়, যার ফলে বেশ কয়েকজন গিনির নাগরিক আর বিদেশীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আর গিনির জেলে আটক রাখা হয়েছে, আর কোনাকরিতে বর্তমানে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তবে, কুইবেকের জুরি চিকিৎসক দ্বারা করা ময়না তদন্তে হত্যার সম্ভাবনা বাদ দেয়া হয়েছে। অর্থ দিয়ে করানো হত্যার ব্যাপারটি সত্যি হলে অবশ্য খুব অবাক কিছু হত না, কারণ গিনিতে ১২ মাস ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ক্যাপ্টেন দাদিস কামারার অন্যতম ভালো কাজ ছিল মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম শুরু করেন সেটি। এই তত্ত্ব, যদিও এই ক্ষেত্রে ঠিক না, দেখায় যে এই দেশে মাদক সাম্রাজ্যের মালিকরা কতো ক্ষমতাবান হয়ে গেছেন। মামাদোউ সিরে সাভানে এই ব্যাপারে লিখেছেন গিনি২৪.কমে:

সুন্দর শহরতলীতে যেখানে প্রজাতন্ত্রের ধনীরা থাকে সেখানে বিশাল সব ভিলায় মাদক চোরাকারবারিরা আরামে আছে। প্রতিদিন দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আসত প্রাইভেট প্লেন, যেগুলো গিনি মেরিটাইমের সোকোর ভূমিতে বা নিউ গিনির ফারানাহ ভূমিতে পার্ক করা থাকত। আর কোনাকরির মত অসংখ্য রাজধানী যাকে এই নেটওয়ার্ক কিনে নিয়েছে, ‘রাত্রে’ মাদকে ছেয়ে গেছে। থামুন, আরো আছে! পরিচিত দামী গাড়ি যেমন ‘ইনফিনিটি’, ‘তুয়ারেগ’, প্রেস্টিজ’, আকুরা, আর্মাদা, কিউ৭ বা আর একটা এক্স৫, কোনাকরির রাস্তা ভরা…

সেনাবাহিনী দ্বারা কুৎসিতভাবে ক্ষমতা নেয়ার পরে, অনেককে গ্রেপ্তার করা হয় আর তাদের স্বাক্ষ্য নেয়া হয়। ওয়েবসাইট লেজাফ্রিকস.কম তুলে ধরেছে ২০০৯ সালের মার্চ মাসে আরটিজিতে (গিনিয়ান রেডিও টেলিভিশন) প্রচারিত উসমান কন্টের সাক্ষ্য, যিনি মৃত প্রেসিডেন্ট লান্সানা কন্তের ছেলে:

…মুখোমুখি দাঁড়াবার একটা ব্যাপারে যেখানে বাদি আর বিবাদি মুখোমুখি হয়েছে, যার নিরীক্ষা করেছে ক্যাপ্টেন মুসা তিগবরো কামারা, যাকে স্টেট সেক্রেটারি দুই মাস আগে নিয়োগ দিয়েছেন আর যিনি মাদক আর সংঘবদ্ধ অপরাধ রোধের জন্য দায়ী: ‘আমি জানি যে গিনিতে মাদক চোরাচালানে আমি অভিযুক্ত,” স্বীকার করেছেন উসমান কোন্তে গিনির মানুষের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। “যারা আমাকে চেনেন তারা জানেন যে আমি মিথ্যা বলি না। এটা সত্যি, আজকে আমি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত; আমি সেটা মানি, কিন্তু আমি এর প্রযোজক না।“ এর থেকে বেশী কিছুর প্রয়োজন ছিল না কোন্তের শাসন আমলের ভূতপূর্ব ক্ষমতাধর লোকদের গ্রেপ্তারের জন্য, আর তারই সাথে নতুন আর ক্ষমতাবান ব্যক্তির সাথীরা, ক্যাপ্টেন দাদিস কামারা, যাকে উসমান কোন্তের বন্ধু হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

মাদক চোরাকারবারীদের এই ঢুকে পড়া প্রশাসনের ভিতরে আর স্থানীয় সেনা গিনির মধ্যে সীমিত না, কিন্তু এটা পুরো পশ্চিম আফ্রিকার ব্যাপার। চীনা সংবাদ সংস্থা জিনহুয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে আফ্রিস্কুপ.নেট জানিয়েছে:

ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য সেনেগাল মাদক চোরাকারবারীদের প্রিয় যাতায়াতের রাস্তায় পরিণত হয়েছে, জানিয়েছেন মাদকের বিরুদ্ধে লড়িয়ে খেলোয়াড়রা…যেমন চাইরিক সোবতাফো, আফ্রিকায় মাদক চোরাচালান এর বিরুদ্ধে জাতিসংঘের আঞ্চলিক ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ, বলেছেন যে পশ্চিম আফ্রিকা কোকেন চোরাচালানের গুরুত্বপূর্ণ স্থলে পরিণত হয়েছে। “ল্যাটিন আমেরিকা থেকে প্লেন আর জাহাজ ভরা কোকেইন আসে পশ্চিম আফ্রিকার খারাপভাবে নিয়ন্ত্রিত বন্দর আর বিমানবন্দরে। ধারণা করা হচ্ছিল যে ২০০৯ সালে পশ্চিম আফ্রিকার ভেতর থেকে চোরাচালানকৃত কোকেইনের পরিমাণ ২০ টন হবে আর তার মূল্য ইউরোপের খোলা বাজারে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার,” তিনি বলেছেন।

সাহেলিবাসীও এ নিয়ে চিন্তিত। বাবা আহমেদ আফ্রিকাটাইম.কমে লিখেছেন একটি জাতিসংঘের রিপোর্টের বরাত দিয়ে:

“আজকে সাহেলিতে ইসলামিক সংস্থারা এত বেশী নিয়ন্ত্রনে যে তারা মাদক চোরাকারবারীদের উপরে টোল আরোপ করছে।“

কিন্তু বাকি দেশগুলোর মধ্যে, সম্ভবত এই আক্রমণে সব থেকে বেশী নাজুক অবস্থানে আছে গিনি-বিসাউ। পরিস্থিতি এমন যে পশ্চিম আফ্রিকার দেশের কমিউনিটি আর পর্তুগিজ বলা দেশের কমিউনিটির অনুরোধে গিনি বিসাউ সরকার একটি শান্তি রক্ষী বাহিনী গ্রহণ করেছেন। এই লক্ষ্যে, অপারেশন্সপেই.নেট সাইট গত ১৩ই আগস্ট, ২০১০ তারিখে এই প্রতিবেদনে জানিয়েছেন:

…এই মিশন তার লক্ষ্য হিসাবে দেখবে ‘সাধারণ কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দান, রাজনৈতিক- সেনা সমস্যা থামানো, সামরিক অভ্যুত্থান উৎসাহিত না করা, আর সেনা আর নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংস্কার এর প্রস্তাবনা করা’ সব কিছু মাদক চোরাকারবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে। গিনি – বিসাউ এই সেনাদের গ্রহন করেছে গত পহেলা আগস্ট।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .