পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বন্যার ব্যাপকতা ও তার ভয়াবহতা সব দিক থেকেই বিশাল। এই বন্যা এই পর্যন্ত ১৬০০ জীবন কেড়ে নিয়েছে এবং পাকিস্তানের জনসংখ্যার এক দশমাংশ, প্রায় দুই কোটি লোক বন্যা দুর্গত হয়েছে এবং অনাহার ও কষ্টে জীবন যাপন করছে। ১৬০,০০০ বর্গ কিলোমিটার, অর্থাৎ পাকিস্তানের প্রায় এক পঞ্চমাংশ ভূমি, পানিতে ডুবে আছে।
বন্যা দুর্গতদের অতিসত্বর খাদ্য, বাসস্থান, ঔষধ, অর্থ এবং অন্যান্য সাহায্য দরকার। এই দুর্যোগ মোকাবেলায় পাকিস্তান সরকারের পদক্ষেপগুলো ধীরগতির হয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারের রয়েছে দুর্বল পরিকাঠামো, অর্থ এবং অন্যান্য সম্পদের অভাব এবং লাল ফিতার দৌরাত্মের কারণে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এনডিএমএ) কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তবে এটি উত্সাহব্যঞ্জক যে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে যুবারা এগিয়ে আসছেন দুর দূরান্তের বন্যাদুর্গতদের কাছে ভ্রমণ করে ত্রাণ পৌঁছে দেবার জন্যে। এবং আরও বেশী করে পাকিস্তানের নেট নাগরিকেরা এগিয়ে আসছেন এবং তাদের কাজকে দৃশ্যমান করছেন লাইভ ব্লগ, টুইটার, চিত্র এবং ভিডিওর মাধ্যমে। তাদের কাজ সত্যিই উল্লেখযোগ্য এবং তা অন্য সমাজের জন্যে দৃষ্টান্তমূলক হতে পারে, বিশেষ করে দেখানোর জন্যে যে নেট নাগরিকরাও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সমাজকে সাহায্য করতে পারে – যা সরকারী সীমিত কর্মকাণ্ডকে ছাপিয়ে যায় অনেক সময়।
আমরা গর্বিত যে পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন গ্লোবাল ভয়েসেস লেখক দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করছেন ত্রাণ বিতরণের জন্যে। গ্লোবাল ভয়েসেস লেখক আওয়াব আলভি এবং ফয়সাল কাপাডিয়া পাকিস্তানের মোটরস্পোর্ট ক্লাব, অফরোড পাকিস্তান এবং এসএরিলিফ এর সহায়তায় অনলাইন এবং সরাসরি দান সংগ্রহ করায় লিপ্ত হয়েছেন।
গত দুইদিন ধরে পাকিস্তানের মোটরস্পোর্ট ক্লাব এবং অফরোড পাকিস্তান এর স্বেচ্ছাসেবকেরা বেশ কিছু গভীর আলোচনায় লিপ্ত হয়েছি যে কোন পথে আগানো সবচেয়ে কার্যকরী হবে। আমরা স্থানীয়ভাবে তহবিল সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলাম এবং প্রায় ২৫ লাখ পাকিস্তানী রুপি পর্যন্ত দান পাবার আশ্বাস পাওয়া গেছে। এসএরিলিফের অনলাইন সাহায্য সংগ্রহ কর্মসূচী (প্রথম কয় দিনেই) ২২৭৮ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে কয়েকজন সদয় দাতার কারনে (এবং এটি বাড়ছে ক্রমাগত)। এর খবর চারদিকে ছড়ালে আমার মনে হয় রমজান মাসে এই পেপালে দানের উপায়টিকে অনেকেই সহজ দান পদ্ধতি হিসেবে বেছে নেবেন এবং আমরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তহবিল সংগ্রহ করতে পারব। (টিথ মায়েস্ট্রো)
এই দল গত ১৪-১৫ই আগষ্ট তাদের প্রথম ত্রাণ কর্মসূচীতে সিন্ধের সুক্কুর অঞ্চলে যায়। টুইটার এবং জিপিএস ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে তারা তাদের ভ্রমণকে লিপিবদ্ধ করে:
২৪ লাখ পাকিস্তানী রুপি মূল্যের ৬ ট্রাক ত্রাণসামগ্রী (নিয়ে যাওয়া হয়েছে যার মধ্যে)- ১৬ লাখ আশি হাজার রুপি মূল্যের চার ট্রাক মৌলিক খাদ্য, ৪,৪৩,৫৮৫ টাকা মূল্যের ম্যাক্রো থেকে কেনা এক ট্রাক বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী এবং ষষ্ঠ ট্রাকে ছিল ৩ লাখ ৭৫ হাজার রুপি মূল্যের তাবু এবং পানির বোতল। আমরা ট্রাকে আরও বহন করছি ২৫০ টিন রান্না করা বিরিয়ানি যা আমাদের এক বন্ধু দান করেছেন। আমরা কোন ঔষধ সামগ্রী নিচ্ছি না তবে ভবিষ্যৎে আলাদা চিকিৎসা সামগ্রীর ত্রাণ কর্মসূচী নেবার ইচ্ছা আছে। (টিথ মায়েস্ট্রো)
ড: আওয়াব আলভি সুক্কুরে বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ বিতরণের বেশ কিছু ছবি তার ব্লগে তুলে দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি টুইটারে সরাসরি তার ত্রাণকার্য সম্পর্কে জানাচ্ছেন এবং তিনি দাতাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
করাচির আর এক গ্লোবাল ভয়েসেস লেখক সানা সালিম, যিনি “ফিউচার লিডার্স অফ পাকিস্তান (এফএলপি)” নামক একটি বেসরকারি সংস্থার প্রকল্প সমন্বায়ক, সিন্ধ এবং সোয়াট ভ্যালিতে ভ্রমণ করেছেন। সানা তার অভিজ্ঞতা ডন ব্লগে বর্ণনা করেছেন:
আমাদের দিন শুরু হয় ত্রাণ বিতরণের জন্যে বন্যাদুর্গত এলাকা খুঁজে বের করা। ঠাট্টা জেলার সুজাওয়ালকে ত্রাণ বিতরণের জন্যে মূল ক্যাম্প হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। জেলা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানা যায় সুজাওয়ালে ২৭,৫০০ বন্যার ফলে সৃষ্ট উদ্বাস্তু পরিবার আছে। এরা খুবই শোচনীয় অবস্থায় আছে – অনেকেই রাস্তার পাশে চারপাইর উপর বা কোন রকমে বানানো খড়ের ছাউনির নীচে বসবাস করছে। আমরা সুজাওয়ালের গভীরে প্রবেশ করলে দেখি তাদের বাসস্থানের অবস্থা আরও করুণ হচ্ছে। বেশ অনেক যায়গায়ই রাস্তাঘাট পানিতে ভরে যায় এবং অনেক পরিবারকে বিদ্যুৎবিহীন যায়গায় আশ্রয় নিতে হয়। সাপ, পোকামাকড় এবং নেড়ি কুকুর চারপাশে প্রচুর দেখা গেছে এবং এই পরিবারগুলো আক্রমণের হুমকির মধ্যে রয়েছে।
তিনি উল্লেখ করছেন:
এই ধরণের উদ্যোগ প্রমাণ করে যে পাকিস্তানের এখনও আশা আছে। যেখানে মানুষেরা এই কঠিন সময়ে একে অপরকে সাহায্য করছে এবং দুর্যোগের সাথে লড়ে যাচ্ছে, আমরা আশা করতে পারি যে সারাবিশ্বের লোক লাখো বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে।
আপনারা তার আরও প্রত্যক্ষদর্শী বিবরণ পাবেন দ্যা অবজার্ভার্স এবং তার টু্ইটার একাউন্টে।
গ্লোবাল ভয়েসেস লেখক ফারহান জানযুয়া এবং আম্মার ইয়াসির পাকিস্তান ইয়থ এলায়েন্সের মত প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের ত্রাণ কর্মসূচীর বিবরণ টুইটারের মাধ্যমে জানাচ্ছেন।
আরেকজন গ্লোবাল ভয়েসেস লেখক সালমান লতিফ বেশ কিছু ইউটিউব ভিডিও তুলে দিয়েছে যা বিভিন্ন ত্রাণ উদ্যোগ তুলে ধরছে। নীচের এই ভিডিওতে মুজাফ্ফারগর এবং মেহমুত কোট এ সাম্প্রতিক ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচী তুলে ধরা হচ্ছে।
আপনারা নেট নাগরিকদের পাঠানো ত্রাণ কর্মসূচী সম্পর্কে এবং অন্যান্য বিভিন্ন তথ্য পাবেন যদি #পিকেফ্লাডস ও #পিকেরিলিফ টুইটার হ্যাশটাগ অনুসরণ করেন।