বিভেদ আর ধর্মীয় মতভেদের এই বিশ্বে, একত্রীকরণের প্রচেষ্টা নিয়ে গত ১২ই নভেম্বর একটি বিশেষ আর বহুল প্রতীক্ষিত তত্ত্ব মুক্তি পেয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা আর মহৎ চিন্তাবিদদের অনেক মাসের সম্মিলিত অনলাইন আর অফলাইন কাজের ফসল হিসেবে এটি রচিত হয়েছে।
২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে টেড পুরস্কার জিতেছিলেন ভূতপূর্ব রোমান ক্যাথোলিক নান ক্যারেন আর্মস্ট্রং, যিনি নিজেকে ‘ফ্রিল্যান্স মনোথিস্ট’ হিসেবে ডাকেন। এই পুরস্কার বছরে তিনজন উৎকৃষ্ট ব্যক্তিকে দেয়া হয় যারা প্রত্যেকে পান ১ লাখ ডলার এবং আরো গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিষ লাভ করেন – ‘বিশ্বকে পাল্টাবার একটা ইচ্ছার পূরণ।“
টেড এর মানে প্রযুক্তি, বিনোদন আর ডিজাইন এবং এই তিন জগৎ থেকে মানুষকে একত্র করতে এটি কনফারেন্স হিসেবে (১৯৮৪ সালে) শুরু হয়। এর পর থেকে এর ক্ষেত্র আরো বিস্তৃত হয়েছে।
বর্তমান বিশ্বে ক্যারেন আর্মস্ট্রংকে ধর্ম নিয়ে একজন মৌলিক আর ভাবনা উদ্রেককারী চিন্তাবিদ হিসেবে দেখা হয়। তিনি আশা করেছিলেন সহনশীলতার চার্টার তৈরি করার। এটি একটি তত্ত্ব যেখানে বিশ্বের সকল ধর্মের মূল বিষয় আর নৈতিক বিষয়গুলো ‘সোনালি আইন’ হিসেবে থাকবে। তিনি টেড সমাজের কাছে এইভাবে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন:
“আমি আশা করি এই চার্টারের সৃষ্টি, পদযাত্রা আর প্রচারণাতে আপনারা সাহায্য করবেন। আব্রাহামের তিন ধর্মীয় ধারা – ইহুদীবাদ, খৃষ্ট ধর্ম আর ইসলাম এর সম্মিলনে প্রথম সারির একদল উদ্বুদ্ধ কারী চিন্তাবিদ তৈরি করবেন এই তত্ত্ব যা বিশ্বের ন্যায় বিচার আর সম্মানের মূল মন্ত্রের উপরে প্রতিষ্ঠিত।“
সম্মিলিত প্রক্রিয়া:
সহনশীলতার চার্টার লেখার গুরুত্বপূর্ণ সূচনা ছিল উন্মুক্ত লেখা প্রক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী লোকেদের অংশগ্রহণ। যে সব মন্তব্য জমা পড়েছিল তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয় যা এখনও চলছে। চার্টার এখন চূড়ান্ত ভাবে উন্মোচিত করা হয়েছে এই সাইট (http://www.charterforcompassion.org) এ। সারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মানুষ এই চার্টারে অবদান রেখেছেন; এটা ধর্ম, মতবাদ আর জাতীয় পার্থক্য ছাড়িয়ে গেছে। এতে প্রথম সারির চিন্তাবিদরা লিখেছেন বিভিন্ন ঐতিহ্য থেকে আবেগ, অর্ন্তদৃষ্টি, জ্ঞান গত আস্থা আর আশা নিয়ে।
সহনশীলতার চার্টারের দ্যা কাউন্সিল অফ সেজেস এর মধ্যে সন্নিবেশিত হয়েছে বিশিষ্ট চিন্তাবিদ আর বিভিন্ন বিশ্বাসের প্রতিনিধিরা – যেমন শেখ আলি গোমাহ (মিশরের বড় মুফতি), রাব্বি ডেভিড স্যাপারস্টাইন (ইহুদিবাদের ধর্মীয় কার্যক্রম রিফর্ম সেন্টার), সাদ্ভি চৈতন্য (ধর্মীয় গুরু আর্শ ভিজনায়া মান্দিরাম আশ্রমের) আর আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু (কেপ টাউন, দক্ষিণ আফ্রিকার অবসরপ্রাপ্ত আর্চ বিশপ)।
বিশ্বব্যাপী চার্টারের সহযোগীর মধ্যে আছে অন্যান্যদের মধ্যে টেড, ট্যানেনবাউম সেন্টার, ধর্মীয় নেতাদের বিশ্ব কাউন্সিল, আল-গাজ্জালি সেন্টার, ধর্ম, সংস্কৃতি আর শান্তি ইন্সটিটিউট।
বিশ্বব্যাপী ১৭০টির বেশী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে সহনশীলতার চার্টার উন্মোচন করার জন্য (আপনি নিজেরটাও করতে পারেন)। চার্টারের উদ্বোধন এরই মধ্যে অনেক উৎসাহী সমর্থন গড়ে তুলেছে আর বিশ্ব ব্লগ জগৎে আলোচনাও হচ্ছে।
সহনশীলতার চার্টারের দৃষ্টিকোন:
মালয়েশিয়ার সাংবাদিক নিকি চিয়ং তার ব্লগে লিখেছেন, ”মালয়েশিয়াবাসীদের আমন্ত্রণ করা হয়েছিল সহনশীলতার মানে তাদের কাছে কি সেটা একটা স্টুডিওতে রেকর্ড করার জন্যে। এই বক্তব্যগুলো দিয়ে একটা ভিডিও নির্মিত হয়েছে ১২ই নভেম্বর সহনশীলতার চার্টার উন্মোচনের দিন প্রচারণার জন্য।“
আইজাত ফায়েজ মালয়েশিয়ায় সহনশীলতার চার্টারের চিত্রায়নে অংশগ্রহণে তার অভিজ্ঞতার কথা ব্লগ করেছেন। র্যান্টিংস বাই এমএম জানিয়েছেন যে মালয়েশিয়াতে চার্টারের উদ্বোধন করবেন আনুষ্ঠানিকভাবে ইয়াব তুন আব্দুল্লাহ আহমাদ বাদাউই। বিকালে তরুণদের একটা প্যানেলের পরে হবে বিভিন্ন ধর্মের প্যানেল।“
ইহুদি আর মিশ্রধর্মের যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক তিক্কুন আহ্বান করেছে, ”সবার এই সুযোগ নেয়া উচিত আপনার চার পাশের সবাইকে মনে করিয়ে দেয়ার সহনশীলতার ক্ষমতা সম্পর্কে আর সেই সব উপায় নিয়ে চিন্তা করা যেখানে সহনশীলতা ব্যবহার করে বিশ্বকে পরিবর্তিত আর রোগমুক্ত করা যায়।“
বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে সুজাতোর ব্লগ লিখেছে: “আমাদের সকলের উচিত আমাদের অংশটুকু করা ধর্মকে ব্যবহার করে সৃষ্টিশীলভাবে আর গঠন মূলক ভাবে পরিবেশের সাথে সাড়া দেয়া, এটাকে সাহায্যের শক্তিতে পরিণত করা কষ্ট দেয়ার চেয়ে ভালোবাসা আর আপন করা জাগিয়ে তোলা অজ্ঞানতা আর বাদ দেয়ার মনোভাবের চেয়ে।“
ওগিল্ভি পাবলিক রিলেশন ফার্মের ব্লগ ৩৬০ ডিজিটাল ইনফ্লুয়েন্স এই প্রশ্নটি করেছেন, ”সহনশীলতা কি ‘ছোঁয়াচে”?
যুক্তরাষ্ট্রে ব্রায়ান কার্নেল এর বিপক্ষে তর্ক করেছেন বিশেষ করে ‘সোনালি আইন’ সম্পর্কে যেটা চার্টারের কেন্দ্রে আছে। এটাকে ‘মূল্যহীন ভালো অনুভব করার আশা’ নামে ডাকা উচিৎ কারণ এটি ‘আসল নৈতিক কষ্ট’ সমাধান করে না।
2 টি মন্তব্য
এই খানে সনদটা বাংলা করা হয়েছে। আন্তর্জালে খুঁজতে গিয়ে পেলাম
http://shorob.com/?p=4422
ধন্যবাদ বাপ্পি!