ইন্দোনেশিয়া: ব্যভিচারীদের পাথর ছুড়ে মারা হবে

অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনকারী বিবাহিত বা ব্যভিচারীদের জন্য একটা দু:সংবাদ রয়েছে। আচেহর স্থানীয় সংসদ এক আইন পাশ করেছে, যার ফলে বিবাহিত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা যদি প্রাপ্তবয়স্কদের (অবৈধ সম্পর্ক) কোন অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে, তবে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে অপরাধীকে পাথর ছুড়ে মারা হবে।

অবিবাহিত ব্যভিচারী এবং সমকামীদের জন্যও এক খারাপ সংবাদ রয়েছে: আচেহর নতুন আইনে প্রত্যেক ব্যক্তির অপরাধের জন্য শাস্তি হিসেবে ১০০ বেতের বাড়ি ও ১০০ গ্রাম খাঁটি সোনা প্রদান করতে হবে।

আচেহ ইন্দোনেশিয়ার এক স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ, যেখানে ইসলামী বা শরিয়া আইন চালু করা হয়েছে। জনসংখ্যার দিক দিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র।

দি র‌্যাব নামের ব্লগারের এই বিতর্কিত নতুন আইনের পর্যালোচনা করার অভিজ্ঞতা হয়েছে এবং এই আইনের সাথে সম্পৃক্ত বিষয় গুলোকে তিনি চিহ্নিত করেছেন:

পাথর ছুড়ে মারা এক ধরনের শাস্তি,যারা ব্যভিচার জাতীয় অপরাধ করে তাদের জন্য প্রযোজ্য, তবে এটা কেবল তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হবে, যারা বিবাহিত এবং জেনে শুনে এই অপরাধ করে। যারা অবিবাহিত, একই অপরাধে তাদের শাস্তি ১০০ ঘা বেতের বাড়ি। এই অপরাধের প্রমাণ নেওয়া হয় শপথ করার মাধ্যমে, যে শপথ করে সে জানে যে যদি সে মিথ্যা বলে, তা হলে সে ইহকাল ও পরকালের জন্য নিন্দনীয় এক কাজ করল।

অনেকের কাছে এই বিষয়টি যথেষ্ট মজার বলে মনে হতে পারে, কিন্তু এই কোয়ানুনে (স্থানীয় আইন) মজার কিছু নেই, যদি কোন মহিলা বিবাহের আগেই গর্ভধারণ করে তা হলে, যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া তাকে অভিযুক্ত করা যাবে না।

এ ছাড়াও কোয়ানুন ধর্ষণের বিচার করে। ধর্ষণ যদি পায়ু বা মুখেও ঘটে থাকে তারও বিচার করে থাকে। তবে বিরক্তিকরভাবে যে সংজ্ঞাটি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা হল স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে কোন ধর্ষণ সংঘটিত হয় না বলে বিবেচনা করা হবে।

কোয়ানুন-এর অন্য কৌতূহলজনক দিকটি হল কোন অপরাধের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ খাঁটি স্বর্ণ জরিমানা করা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি কেউ লিওয়াথ অথবা মুশাহক এর মত অপরাধ করা অবস্থায় ধরা পড়ে, তা হলে তার জন্য শাস্তি হচ্ছে ১০০ গ্রাম বেতের বাড়ি এবং ১০০০ গ্রাম খাঁটি সোনা অথবা ১০০ মাস জেল।

বিনসার পাকপাহান বিশ্বাস করেন এই অযৌক্তিক আইন ইন্দোনেশিয়ার জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।

আমি আবিষ্কার করলাম, এই সংবাদ খুবই বিরক্তি কর। আমার দৃষ্টিতে এই বিশেষ আইনের প্রয়োগ অনেক বেশি রাজনৈতিক, সেই সমস্ত লোকদের জন্য, যারা সংসদ থেকে বের হয়ে আরো বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করার চেষ্টা করবে তাদের নিজেদের রাজনৈতিক দলের খাতিরে। এই বিষয়টি ইন্দোনেশিয়ার মধ্যপন্থী মুসলিমদের জন্য এক নেতিবাচক ঘটনার সৃষ্টি করবে। আমি জানি যদিও আমার সকল বন্ধু এ ব্যাপারে একমত নয়, কিন্তু বেশীর ভাগ মুসলিম বন্ধু এই আইনটিকে অর্থহীন, অযৌক্তিক, বল প্রয়োগকারী এবং ইন্দোনেশিয়ার জন্য একেবারেই প্রযোজ্য নয় বলে মনে করে।

ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা থেকে টুইটারে বেশ কিছু প্রতিক্রিয়া এসেছে:

টবিবুডিয়ারটানো: খুব শীঘ্রই আমি আচেহ প্রদেশে যাচ্ছি না।
টমিসিয়াহান: কেন আমরা পেছনের দিকে যাচ্ছি??
ডিহিলিসিয়া: আমি মনে করি এটা মানবাধিকারের বিরুদ্ধে।
অহিভি: আচেহে প্রদেশ পাথর ছুড়ে মারা ও বেত্রাঘাতের শাস্তি প্রদান করে আইন পাশ করেছে: আমি মনে করেছিলাম এটা কেবল ওল্ড টেস্টমেন বাইবেলে টিকে রয়েছে। নিজেকে চিমটি কেটে দেখি, আমি কি ২০০৯ সালে রয়েছি নাকি যীশুর জন্মের ২০০০ বছর আগের সময়ে রয়েছি?
ইয়োগীবিউ: বুউউউউ! আমি ঈশ্বরের নামে প্রতিজ্ঞা করছি, আমি কখনই সেখানে যাব না।
এরদিনা: এখন আচেহতে ঘটনা আরো ভীতিকর হয়ে দাঁড়াবে।
এরদিনা: আমি যখন এই সংবাদ পড়ি যে আচেহতে পাথর ছুড়ে মারার আইন পাশ হতে যাচ্ছে, আমি অবিশ্বাসে মাথা নাড়িয়েছি। কি ভাবে আমরা এ রকম ঘটনা ঘটাতে পারি?

রাইটস গ্রুপ এই আইনের সমালোচনা করেছে এই বলে যে এটি “নিষ্ঠুর এক আইন এবং মানবতার অপমান”।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .