গত কয়েক দশ ধরে, ক্যারিবীয় শিল্পকলার অন্যতম প্রধান স্থান-ত্রিনিদাদের চিত্রশিল্প, দু’টি ক্রমশ বাড়তে থাকা আলাদা জগতে পরিণত হচ্ছে। প্রথমটি বেশ কিছু গ্যালারি ও সংগ্রাহক দ্বারা পরিচালিত, যারা উভয়ে বাণিজ্যিক ও রক্ষণশীল। এখানে সর্বোচ্চ প্রশংসা (এবং দাম পাওয়া যায়) সংরক্ষিত রয়েছে ঐতিহ্যবাহী চিত্রকলার বিষয়ে, যেমন পটভুমি ও স্থির জীবন। তার সাথে চমৎকার “বিমুর্ত” ছবিরও কদর রয়েছে। ত্রিনিদাদের অন্য চিত্রকলা জগৎের কেন্দ্রে রয়েছে একদল শিল্পী যারা তুলনামুলক আধুনিক ও অন্যান্য মাধ্যমে শিল্পকে এগিয়ে নেবার উদ্যেগ নিয়েছে- ত্রিমাত্রিক ভাবে কোন স্থানে শিল্প সৃষ্টি করা, যাকে বলা হয় ইনস্টলেশন, ভিডিও, শব্দ, ধারণাগত কাজ- যা শিল্পের নিরীক্ষাধর্মী চরিত্র এবং কাজের নিত্য নতুন উদ্ভাবনা (“ইম্প্রোভাইজেশন”) এর মাধ্যমে এবং এই সব শিল্পীদের লক্ষ্য আন্তর্জাতিক সামলোচকদের দৃষ্টি আর্কষণ করা।
দশ বছর ধরে, ২০০৭ সাল পর্যন্ত, ত্রিনিদাদের অন্যতম প্রধান কনটেম্পরারি আর্ট ইনিস্টিটিউট বা সমসাময়িক চিত্রশিল্পের প্রতিষ্ঠান ক্যারিবীয় কনটেম্পোরারি বা সমসাময়িক শিল্পকলার (সিসিএর) জন্য এক অলাভজনক শিল্প সংগঠন ছিল, যা স্টুডিও ও প্রদর্শনীর স্থান ভাড়া দিত এবং একদল প্রভাবশালী শিল্পীর বাসা ও বিনিময়ের ব্যবস্থা করে দিত। কিন্তু ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময় অতিরিক্ত অর্থ জোগানের ব্যবস্থা করতে ব্যার্থ হবার পর সিসিএ বন্ধ হয়ে যায় (একে রুপান্তরিত করা হয় ব্লগের আকারে তৈরী করা অনলাইন পত্রিকা, আর্ট পেপারে)। ত্রিনিদাদের অনেক শিল্পী এর প্রথামিক প্রতিক্রিয়ায় আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু দুই বছরের মধ্যে তারা দেখতে পায় নতুন ভাবে প্রস্ফুটিত ছোট্ট কিন্তু শক্তিতে ভরপুর চিত্রশিল্প নিয়ে তৈরী প্রজেক্ট ও সংগ্রহশালা। একদল তরুণ চিত্রশিল্পী অনলাইন মিডিয়ার চাতুর্যপূর্ণভাবে ব্যবহার করে, যেমন ব্লগ এবং ছবি খুঁজে বেড়ানো সাইট ফ্লিকারে তাদের কাজগুলো প্রর্দশন করা। তারা আবিষ্কার করে অনলাইনে তাদের চিন্তা ও অনুশীলন করা সম্ভব এবং তারা সেখানে সামলোচনা মুলক কথোপকথন সৃষ্টি করতে পারে।
সম্প্রতিক কালের এক গুরুত্বপূর্ণ সমসাময়িক ছবি প্রর্দশনীর এলাকা এলিস ইয়ার্ড। পোর্স্ট অফ স্পেনের উডব্রুক এলাকার প্রতিবেশি অঞ্চলের এক পুরোন বাড়ির উঠোনের পেছনে এক পরীক্ষামুলক সৃষ্টিশীল ছবি প্রর্দশনীর এলাকা তৈরী করা হয়। এলিস ইয়ার্ড ব্লগ এক ধরণের পত্রিকা যা এই স্থানে যে অনুষ্ঠান হয় তার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে। এর মধ্যে রয়েছে সঙ্গীত এবং নাটকের অনুষ্ঠান বা প্রর্দশন, শিল্পীদের প্রজেক্ট এবং আলোচনা। অনেক শিল্পী যারা এলিস ইয়ার্ডে তাদের কাজ প্রর্দশন করেছে তারা তাদের কাজের সংগ্রহশালা তৈরী করে ব্লগের মাধ্যমে। এদেরর মধ্যে রয়েছে মার্লোন ডারবু, মিশেল ইসাভা, এ্যাডাম উইলিয়ামস, জেমি লি লোয় এবং নিকোলাই নোয়েল (লি লোয় এবং নোয়েল, একসাথে তৃতীয় এক শিল্পী মার্লোন গ্রিফিথ মিলে যৌথভাবে কাজ করেন।)
ইরোটিকআর্টটিটির জন্য সম্প্রতি যে দশটি স্থান বেছে নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে এলিস ইয়ার্ড অন্যতম। এখানে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে উত্তেজক বা ইরোটিক শিল্পের প্রথম প্রর্দশনী সপ্তাহ চলছে। এতে কয়েক ডজন শিল্পীর কাজ প্রদর্শিত হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা, শিল্পী রিচার্ড রাউলিন্স। তিনি এছাড়াও একটি শিল্প ও নকশা বিষয়ক ইলেকট্রনিক বা ই-পত্রিকা বের করেন যার নাম ড্রাকোনিয়ান সুইচ (প্রায় প্রতি মাসেই প্রকাশিত হয়)। এই পত্রিকা পিডিএফ আকারে ডানলোড করা (নামানো) যাবে। স্থাপত্যবিদ টেরি স্মিথ-এক স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান কো-এরডির সাথে কাজ করেন, তার অন্যতম আরেক ডিরেক্টর হলেন সীন লিওনার্ড, এলিস ইয়ার্ড এর পেছনের মানুষটি- তিনি ২০০৮ সালে এক নতুন প্রজেক্ট চালু করেছেন। এর নাম আইএনডিআগ্রুভ জীবন রীতি। এটি ত্রিনিদাদের শিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ, লেখক এবং অন্যদের ধারাবাহিক ভিডিও সাক্ষাৎকার। এই সৃষ্টশীল নেটওয়ার্কের অন্য সদস্যরা হলেন রোডেল ওয়ার্নার যিনি ফ্রীপেপারে> ব্লগ করেন, ব্রায়ানা ম্যার্কাথি (প্যাশনফ্রুট), তানিয়া মারিয়া উইলিয়ামস এবং এ্যান্ডারসন মিচেল(ব্লিডআর্ট)।
এই সমস্ত প্রজেক্ট ও স্বতন্ত্র শিল্পীদের মধ্যে একটা মিল রয়েছে। তারা যে কোন চাপ ছাড়াই তাদের পরীক্ষামুলক কাজ করার প্রবণতা বজায় রাখে, যা তৎক্ষনাত বিক্রিযোগ্য হয় এবং তারা একসাথে মিলে আধুনিক শিল্প নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিতির ক্ষতিপুরণ করে, তাদের জন্য অর্থ যোগানের প্রস্তাব করে এবং অন্য সব সমর্থনের জন্য চেষ্টা করে। প্রদর্শনীর জন্য প্রথাগত গ্যালারির বদলে তারা উন্মুক্ত স্থান ব্যবহার করে, ব্যায়বহুল সুচীপত্র ছাপার বদলে তারা তাদের কাজ অনলাইনে সংরক্ষণ করে এবং তারা তাদের শিল্প ও অনুষ্ঠানের জন্য কোন সাংবাদিক সম্মেলন করে না, তার বদলে তারা বড় আকারে নির্ভর করে সোশাল নেটওয়ার্ক যেমন ফেসবুকের উপর, যেমন (উদাহরণ হিসেবে বলা যায় শিল্পী ওয়ানেডল ম্যাকশিন একটি এনিমেটেড মিউজিক ভিডিও তৈরী করেছেন, ব্যান্ড ১২ এর জন্য যা ত্রিনিদাদের ফেসবুকের নেটওয়ার্কের সদস্যদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে)। এর ফলে অনেক সময় শক্তিস্ফুরণ ও প্রায়শই নৈরাজ্যপূর্ণ চিত্রশিল্পের আগমন ঘটে, যার কোন একক কেন্দ্র নেই।
ত্রিনিদাদ প্রেস খুব সামান্য গুরুত্বের সাথে সংস্কৃতিক বিষয় নিয়ে লেখা ছাপায়। অনলাইনে এই সমস্ত কাজ নিয়ে জটিল আলোচনাও যথারীতি বাড়ছে। শিল্পী আডেল টড একটি ব্লগ চালান, যার নাম সেক্সিপিংক। “এর উদ্দেশ্য একটা ফোরাম তৈরী করা যা ক্যারিবীয় শিল্পের উপাদান সমন্ধে আলোচনা করবে, তার ইতিহাস এবং সমসাময়িক বিষয়াবলির সাথে এসবের সম্পর্ক”, তার সাথে ছোট আকারের প্রবন্ধ ও সাক্ষাৎকার- এক সাম্প্রতিক পোস্টে ভদ্রমহিলা তরুণ শিল্পী এলিসিয়া মিলনে সমন্ধে আলোচনা করেন; আরেকটি পোস্ট ছিল রিচার্ড রাউলিন্স এর স্কেচবুক থেকে কিছু নির্ধারিত ছবি। টড এছাড়াও দি বুকমান -এর শিল্পী রিচার্ড বোলাইকে সহযোগিতা করেন। এটি একটি ব্লগ যা সময় বিশেষে শিল্প সমন্ধে পর্যালোচনা করে। তার সাথে এখানে রয়েছে বোলাই এর করা মুল চিত্রশিল্পগুলো। চিত্রশিল্পী ক্রিস্টোফার কোজিয়ার তত্বাবধান করেন এসএক্সস্পেস ব্লগের – একটি সাইট যা ক্যারিবিয়ান শিল্পীদের উপর মনোযোগ দেয়- স্মল এ্যাক্স নামের পত্রিকার জন্য প্রায়শই পর্যালোচনা ও প্রবন্ধ লেখেন।