মরোক্কো: ইরানের বিকল্প?

আনা অ্যাপলবাউম প্রকাশিত সম্প্রতি এক প্রবন্ধ দুটি আলাদা শিরোনামে দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে (মরোক্কো ইরানের ক্ষেত্রে এক বিকল্প) এবং স্লেট (মরোক্কো তার অতীতের সাথে শান্তি স্থাপন করলো) ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রবন্ধ মরোক্কোর ব্লগাদের জাগিয়ে তুলেছে। যথারীতি একই আলোড়ন ঘটেছে টুইটার এবং বিভিন্ন ফোরামে। প্রবন্ধটি জানাচ্ছে মরোক্কো গণতন্ত্রের এক আদর্শ যা ইসলামের সাথে মিলেমিশে আছে। ইরানে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রবন্ধের সমালোচনা করা হয়েছে মরোক্কোর শাসকদের সহজ করে দেখা এবং তার সাথে পশ্চিমা মুল্যবোধকে উভয় দেশে প্রবেশ করানোর জন্য।

মরোক্কোর লেখিকা, লাইলা লালামি এই প্রবন্ধ নিয়ে তার হতাশার কথা ব্লগে লিখেছেন, তিনি বলেছেন:

অ্যাপলবাউমের যুক্তি ছিল যে প্রতিবাদকারীরা পার্লামেন্টের বাইরে শান্তভাবে প্রতিবাদ করছিল, যা সুন্দর প্রতিবাদের চিহ্ন। আসলে পুরো বিষয়টি একটু অদ্ভুত ঘটনা। যদি ভদ্রমহিলা এখানে সামান্য সময়ও ব্যায় করে, দিনের পর দিন এখানে থাকে, দেখে কি ঘটছে, তাহলে ভদ্রমহিলা প্রতিবাদকারীদের শান্ত থাকা বা পুলিশের এ ধরনের প্রতিবাদ নিয়ন্ত্রনের প্রশংসা করতো না। এই নির্বাচন নিয়ে আর কিছু লেখার নেই: ভোট কম পড়েছে এবং নির্বাচনের ফলাফল যথরীতি আগের মতোই পুরোপুরি বিস্ময়কর কিছু নয়। যদি তিনি এটাকে কর্তৃত্বশ্বালী কর্তৃপক্ষের গণতন্ত্রের প্রতি উত্তরণের যোগ্যতা হিসেবে ধরে নেন তাহলে ঈশ্বর আমাদের সাহায্য করুন।

মরোক্কো বোর্ড ফোরামে যেখানে অ্যাপলবাউমের মুল লেখাটি ছাপা হয়েছিল সেখানে অনেক পাঠক লেখাটিকে একটি বিশেষ বিষয় হিসেবে নিয়েছে। এ্যাডিলস নামের একজন পাঠক লালামির সাথে একমত:

প্রবন্ধ পড়ে মনে হচ্ছে সাংবাদিক পর্যটক কোন কোন দৃশ্যে দেখে বিভ্রান্ত হয়েছে। এটা সত্যি যে সংসদের সামনে যে প্রতিবাদ হয় সেখানে পুলিশ প্রায়শ:ই কোন হস্তক্ষেপ করে না। প্রতিবাদকারীদের অনেকেই মাসের পর মাস সেখানে রয়েছে। কিন্তু তাতে কারো কিছু আসে যায় না।

সাংবাদিক হয়তো সেই দিন এই এলাকা দিয়ে যাননি যেদিন উত্তেজনাকর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছিল। সেদিন কারো মাথা যদি পুলিশের হাতে পড়ে তাহলে তারা যে তা ফাটিয়ে দেবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। এমনকি রাস্তায় চলাচল করা নিরীহ পথিক যার এই প্রতিবাদের সাথে কোন সর্ম্পক নেই সেও পিটুনির শিকার এবং পুলিশ বাহিনীর অপমানজনক গালাগালির শিকার হতে পারে।

লালামি তাছাড়াও অ্যাপলবাউমের বির্তকিত বিবৃতির উপর মন্তব্য করেছেন, যদিও লম্বা সময় ধরে মাথায় হেডস্কার্ফ এবং নীল জিনস পরা ফ্যাশন নয় তবে অনেক মেয়েকে দেখে মনে হয় যেন এ নিউ ইয়র্ক বা প্যারিসের এলাকা,” বর্ণনা করছেন:

বলা যায় এই বাক্য কখনই ব্যর্থ হয়না। যখন একজন পশ্চিমা সাংবাদিকক মরোক্কোয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমন্ধে লেখতে আসে, তখন এ সমন্ধে যে প্রবন্ধ তৈরী হবে তাতে তারা অব্যশিক ভাবে পোশক নিয়ে তাদের পছন্দের কথা বলবে। তারা অবশ্যই এখানকার পোশাককে খারাপ বা ভালো মুল্যবোধে ভুষিত করবে। জীনস=ভালো, জেলাবাস বা লম্বা আলখাল্লা=খারাপ। বলা যায় আনা অ্যাপলবাউম মরোক্কো ভ্রমন করেছেন এবং এ ধরনের অনেক মেয়ে এমন সব এলাকায় দেখেছেন যা নিউ ইর্য়ক বা প্যারিসের মতো দেখতে কোন এলাকা নয়’

আরেকটি বিবৃতি যা অ্যাপলবাউম করেছেন সেটিও পাঠকের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। ভদ্রমহিলা লিখেছেন, একবার ইরানের শাহের কথা ভাবুন, তিনি কি ছিলেনমরোক্কো বোর্ডের একজন পাঠক যিনি নিজেকে মরোক্কান প্যাট্রিয়ট বা মরোক্কোপ্রেমী বলে দাবী করেন, তিনি এই বিবৃতির সমালোচনা করেছেন:

হয়তো তিনি ফক্স নিউজ নামের প্রতিষ্ঠানের একজন সাংবাদিক হতে পারেন কিন্তু এই মহিলা যা লিখেছেন তার কোন কিছুই সঠিক নয়।

মরোক্কোর এমন অনেক গুরুত্বপুর্ন বিষয় রয়েছে যার সামাধান করতে ১০০ বছর লাগবে না। দেশটির সেই সমস্ত লোকের প্রয়োজন যারা এই মুহুর্তে ক্ষমতায় আছে। তারা কেবল এই মুর্হুতে কেতাবে যে আইন আছে তাকে শক্তিশালীভাবে প্রয়োগ করবে।

এদেশে কোন জবাবদিহীতা নেই এবং বইয়ে সংযুক্ত কোন আইনের প্রয়োগ নেই। এটা কোন দুর্ঘটনা নয়, এটা তৈরী করা হয়েছে। বিশেষ এই বিষয়গুলো সব সমাজেই রয়েছে । ভালো ঘটনাগুলো হঠাৎ ঘটে এবং তা আপনার চেহারায় সমানেই ঘটে, যেন তা মরোক্কোর সব জায়গায় ঘটছে।

যখন আপনি বলেন যে ইরানের শাহের কথা ভাবতে এবং তা কি ছিল তা নিয়ে ভাবতে, তখন আপনি পরিস্কার করে দেন, আপনার রাষ্ট্রের চিন্তার সাথে আপনার অবস্থান পরিস্কার। আপনাদের উদ্দেশ্য ইরানকে শয়তান প্রতিপন্ন করা।

অবশ্যই অনেকে রয়েছেন যাদের কাছে এই প্রবন্ধের কিছু অংশ বা আংশিক অংশ সত্য বলে মনে হয়। মাগরেব ব্লগ মন্তব্য করেছে:

আজকের ওয়াশিংটন পোস্ট প্রশংসাসূচক এক সুন্দর মরোক্কোর ছবি তুলে ধরেছে। আনা অ্যাপলবাউম এই দেশটিকে ধীর কিন্তু গভীরভাবে রুপান্তর ঘটা এক দেশ হিসেবে দেখছেন। এক ঐতিহ্যবাহী রাজতন্ত্র থেকে দেশটি শাসনতান্ত্রিক রাজতন্ত্র বা কাগজে কলমে রাজতন্ত্র থাকবে এমন দেশে রুপান্তরিত হচ্ছে। এই ঘটনাটি ঘটছে সত্যিকারের একদল রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে। এখানে তুলনামুলকভাবে প্রচার মাধ্যম স্বাধীন। এখান দেখা যায় নতুন রাজনৈতিক নেতা- মারাকাশের মেয়রও নতুন- তার বয়স ৩৩ বছর এবং তিনি একজন মহিলা – এই দেশে এক পারিবারিক আইন তৈরি করা হয়েছে যা শরীয়া আইন ও আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার আইন উভয়কে সাথে তুলনা করার যোগ্য। যেমনটা আমি অন্য এক জায়গায় মত দিয়েছিলাম, এটা দাবী করা ঠিক হবে না যে মরোক্কোয় নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র রয়েছ। কারন এখানে রাজতন্ত্র এখনো বিশাল ক্ষমতার অধিকারি। তাদের আইনী অধিকার ও স্বেচ্ছা ক্ষমতা রয়েছে।

মাজাগান নামে মরোক্কো বোর্ডের আরেকজন পাঠক অ্যাপলবাউমের অংশের জবাবে আমার লেখার (দুর্বল বিকল্প) উপর মন্তব্য করেছে যে সে দুটি দৃষ্টিভঙ্গির সাথে তুলনা করে আবিস্কার করেছে উভয়ের দুর্বলতা।

একটি অংশে মরোক্কোকে প্রাচ্য হিসেবে ছবির মতো দেখার জন্য এক শিক্ষার্থীর জন্য উপযুক্ত স্থান। পশ্চিমের দৃষ্টিতে মরোক্কো ঠিকমতোই চলছে। অন্যদিকে তা সাম্রাজ্যবাদের অনুগামী এবং জনগণের স্বাধীনতাকে দমিয়ে রাখে।

মরোক্কোর (বিজ্ঞান/ঘটনা) অন্য প্রিজমের সাথে খাপ খায় না। এর নির্বাচন প্রক্রিয়া বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে যা অবশ্য সর্বময় ক্ষমতার অধিকারীদের হাতে আবার পুনরুদ্ধার হয়েছে। এখন দেশের মধ্যে তারা সবচেয়ে বড় নাগরিক এবং রাজনৈতিক বিতর্কে তারা স্থান করে নিয়েছে।

সময় বলবে মরোক্কোর নতুন রাজনৈতিক অভ্যাস তাদের অবস্থানে শক্ত হয়ে দাড়াতে পারবে কি না এবং ব্লগাররা তাদের শাসন পরিচালনা নিয়ে বিশ্লেষণ করতে থাকবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .