১১ জুন আইপাক এর অনুষ্ঠানে বারাক ওবামার ‘জেরুজালেমকে ইজরায়েলের অবিভক্ত রাজধানী হিসাবে রাখা উচিত’ এমন উক্তি ফিলিস্তিনি কমকর্তাদের ক্ষুব্ধ করেছে। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন যে ওবামার অঙ্গীকার কে ‘একেবারে নাকচ করা হয়েছে'। সায়েব এরাকাত নামে আব্বাসের একজন সহকারী বলেছেন যে প্যালেস্টাইনি মধ্যস্থতাকারীরা পূর্ব জেরুজালেমকে প্যালেস্টাইনের রাজধানী হিসাবে দাবী অব্যাহতভাবে করে যাবে। এখানে উল্লেখ্য, আমেরিকা জেরুজালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী হিসাবে বর্তমানে স্বীকৃতি দেয় না, বরং মানচিত্রে তেল আবিব যেখানে আমেরিকা আর অন্যান্য দেশের দূতাবাস আছে তাকে ইজরায়েলের রাজধানী দেখানো হয়।
শুধুমাত্র ফিলিস্তিনি কমকর্তারা ওবামার মন্তব্যে ক্রুদ্ধ হন নি। প্যালেস্টাইনের ভিতরে আর বাইরে থাকা ফিলিস্তিনি ব্লগাররাও বিমর্ষ ছিল। আরাবিস্টো.কম এ লেখক ডঃ ঘাসান মিশেল রুবিজ মনে করেন ওবামা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছেন:
অতিথি ওয়াশিংটনের অন্যান্য রাজনীতিবিদের মতো, ইলিনিওসের সিনিটর ধনী আর ক্ষমতাশালীদের কাছে প্রতিশ্রুতি করেছেন ইহুদি রাষ্ট্রের প্রতি তার অযোগ্য বিশ্বস্ততা। কিন্তু ওবামা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছেন দ্বিধা দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে। ইজরায়েলের প্রতি তার বিশস্ততা দেখাতে গিয়ে তিনি ঘোষণা করেছেন যে জেরুজালেমকে অবিভক্ত থাকতে হবে ইহুদি রাষ্ট্রের রাজধানী হিসাবে। এই অবস্থান বর্তমান আমেরিকার অফিসিয়াল নীতির পরিপন্থী, যে নীতি অনুযায়ী জেরুজালেম নয়, তেল আবিব ইজরায়েলের রাজধানী। ওয়াশিংটন জেরুজালেমের মর্যাদার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে: এই শান্তির শহরের ভবিষ্যৎ নিয়ে আরব আর ইহুদী দুইজনকেই আলোচনা করতে হবে।
রুবিজ তার পর বলেছেন:
কিন্তু বিশদভাবে দেখলে, ওবামার মধ্যপ্রাচ্য নীতির ঠিক দিকে যাচ্ছে। যদি তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে তিনি হয়ত থেমে থাকা মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া আবার শুরু করতে পারবেন। তিনি খোলামেলা আছেন ইরান, সিরিয়া আর তার পার্টনারদের সাথে কথা বলার নীতিতে, ইরাক থেকে ঠিকমত সরে আসায় আর আরব -ইজরায়েল সংকটে একটা সিদ্ধান্তমূলক কথোপকথনে।
তারপর তিনি বলেছেন যে ওবামার একত্র করার ক্ষমতায় তিনি বিশাস করেন:
এই নির্বাচনের আরব আর ইহুদী আমেরিকান, সবার উচিত প্রথমে আমেরিকান হিসাবে ভোট দেয়া। তার মানে এই না যে নিজের পরিচয় সম্পূর্ণ ভুলে যেতে হবে। ওবামার সামর্থ আর ইচ্ছা আছে মধ্য প্রাচ্যে শান্তি আনা আর আমেরিকায় পরিবর্তন আনা। যদি তারা তাদের মনোভাব সবার জন্যেই জয় এই নীতিতে ঠিক করে তাহলে আরব আর ইহুদিরা ওবামাকে পারষ্পরিক বন্ধু হিসেবে পেতে পারে।
কুইকুই যিনি কাববফেস্ট এর জন্য লেখেন ওবামার দ্রষ্টিভঙ্গীতে ক্রুদ্ধ হয়েছেন:
পুরো প্রচারণার সময় ওবামা এমন ভাব করেছেন যেন বর্ণবাদ শুধু শেষ হয়ে যায় নি দেশে বরং সব সাদারা একই বিষয়ে চিন্তিত কিভাবে বর্ণবাদ কমানো যায়। এখন উনি এমনভাবে কথা বলছেন যেন জিওনিজমে অন্যায় কিছু নেই – বরং জিওনিজমকে সমর্থন করতে হবে। এই লোক প্রেসিডেন্ট হবে।
রবিন যিনি প্রায় প্যালেস্টাইনের হয়ে ব্লগে লেখেন ভাবছেন যে এই ধরনের কথায় ওবামা কতোজন ভোটার হারালেন:
প্রশ্ন হলো, তার এই ঠিক কাজের ফলে তিনি কতোজন ভোটার হারালেন? আমি এটা এখনো চিন্তা করছি কারন আমি ভাবছি তার এই বক্তব্য কে লিখে দিয়েছে আর তিনি কি আগে তা সমর্থন করেছেন কি না? এটা আমার মাথা থেকে যাচ্ছে না কারন জুনেস এর মতো আমিও বিশ্বাস করি না যে এই বক্তৃতায় বলা কথাগুলো বলার দরকার ছিল বিশেষ করে তার অবিভক্ত জেরুজালেম বিষয়ক মন্তব্য। এটার ফলে শেষ হতে থাকা অধিগ্রহণ/শান্তি প্রক্রিয়া/শেষ অবস্থার বিষয় যার ৪০ বছরের বেশী সময় ধরে কোন সমাধান হয় নি তার উপর শুধু কেরোসিন ঢালে নি, এটা এমন একটা মন্তব্য যা পরে তার নিশ্চয়ই মনে হয়েছে কিছুটা হলেও তার পিছিয়ে আসা উচিত কারন এ নিয়ে আরব বিশ্বে আর তার সাথে ইহুদীরা যারা শান্তি আর আগ্রগতি চায় তাদের মধ্যে একটা তোলমাচাল হবে।
ওবামার আইপাক বক্তৃতা নিয়ে ডিবান্ক দ্যা মিথস ব্লগ একটা মজার থিওরি দিয়েছে:
আইপাক, শক্তিশালি ইজরায়েলি লবি আর জিওনিস্ট বন্ধুভাবাপন্ন মিডিয়া ঠিক করেছে যে যেহেতু কালদের সংস্কৃতি বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে আর কালো এন্টারটেইনাররা যে কোন বার্তা ভালো পৌঁছাতে পারে, তাহলে শত্রুকে নিজের পক্ষে ব্যবহার করার সুযোগ কেন না নেয়া- অনেকটা আইকিদোর মতো। তাই তারা ঠিক করেছে একজন কালোকে প্রেসিডেন্ট করে তারা বেশ চালাক আর কম রহস্যময় হলো। আমি বলতে চাই যে কেইনি ওয়েস্ট কি টেলিভিশনে বলতে পারবে যেমন ক্যাট্রিনার সময় সে বলেছে যে সরকার কালো মানুষদের নিয়ে ভাবে না। কতো কার্যকর ডেভিড চ্যাপেলে আর মস ডেফ হবেন যখন তারা একজন কালো মানুষের সংস্থা নিয়ে কথা বলবে।
আপনারা তাহলে পরিকল্পনাটির প্রতিভা বুঝতে পারছেন। রাস্তার আন্দোলনরতদের নিয়ে হোয়াইট হাউজে দেন। তার ফলে রাস্তায় যেসব বিদ্রোহী প্রতিবাদ হত তারা এখন চুপ মেরে যাবে আর মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলবে, ”শেষ তাহলে হয়ে গেল, আমরা কি জিতলাম?”
পরিশেষে নো জাস্টিস, নো পিস… দ্যা বিগ পিকচার সোজাসুজি বলল:
আইপাকে ওবামার ভাষনের অনুলিপি দেখেন। প্রাথীদের শক্তভাবে কথা বলতে হয় আইপাকের সামনে। লক্ষ্য করবেন যে ওবামা ইজরায়লের ৪১ বছরের বেআইনি দখল বা অসংখ্য ইউ এন রেজুলেশন যা তারা ভংগ করেছে বা অসংখ্য আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন নিয়ে কোন কথা বলে নি।
আমি ভাবছি রন পল আইপাকে কি বলত, যদি এই পাগলের দলকে কিছু বলার তার সুযোগ হতো।
এই লেখাটি ভয়েসেস উইদাউট ভোটেও প্রকাশিত হয়েছে।