কিছু দিন বিরতির পর আমার পাঠকদের এর থেকে ভালো আর কি দেয়া যায় –বাগদাদ আর মোসুলের রাস্তার খবর ছাড়া, যা তারা পড়তে চায়। এবং এর থেকে ভালো সময় হতে পারে না যখন চিকিতিতা বেশ কিছু মাস বাইরে থাকার পর বাগদাদ থেকে আবার ব্লগ করছেন এবং নিউরোটিক ওয়াইফ তার লেখার মাধ্যমে আমাদের কে রেড জোন (লাল এলাকা) ঘুরে দেখাচ্ছেন। বাগদাদ ডেন্টিস্ট বাগদাদে ছোট একটা বিরতির পর আবার মোসুলে ফিরে এসে দুই শহরের মধ্যে পার্থক্যের কথা বলেছেন।
বাগদাদ:
তারা বলে যে বাগদাদ আগের থেকে নিরাপদ হয়েছে- প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। এক দিক থেকে এটা সত্যি কিন্তু বিষয়টি পরিপ্রেক্ষিতের ব্যাপার আর আপেক্ষিক। চিকিতিতা ইরাকে ফিরে গেছেন তার বাসায়। তিনি লিখেছেন:
(ছবি : বাগদাদের মূল ট্রেন স্টেশন সৌজন্যে নিউরোটিক ওয়াইফ)
আমি বাতাসে এক ধরনের অগ্রগতি টের পেয়েছি, একটা ট্যাক্সি এক সময়ের আল-কায়দা অধ্যুষিত এলাকা থেকে এখনকার বদর নিয়ন্ত্রিত এলাকায় যাচ্ছে। শেষ বার আমি যখন বাড়ি এসেছিলাম, এটা কল্পনা করা যেত না! নতুন পরিবর্তনে আমি অবাক হয়েছি; সব চেক পয়েন্টে নকল গাছ রাখা আছে যাতে যারা ওই পথ দিয়ে আসা যাওয়া করছে তারা নিরাপত্তা ক্যামোফ্লাজ আর তরুনদের হাতে রাইফেল দেখে তাদের ক্ষতি হতে পারে ভেবে ভয় না পান।
আমাকে যেমন কথা দেয়া হয়েছিল… টাইগ্রিস নদীতে একটি ভ্রমণ। এটা শ্বাসরুদ্ধকর রকমের সুন্দর! জীবনে প্রথম বারের মতো আমি আমার শহরের ভিতরে ছবি তুলতে পেরেছিলাম, যদিও নৌকায় বসে, যে সব ছবি চিৎকার করে বলে আমি বাগদাদে গিয়েছিলাম!
শেষে আমরা থেমেছি আমার পছন্দের জায়গা কাদিমিয়া বাজারে, যেটি মনে হচ্ছে বেঁচে গেছে। কোন কিছু ভাঙ্গা নেই, উদ্ভাসিত চেহারা আর পুর্বেকার ইরাকি আবেদনে মনে হচ্ছে জায়গাটি জীবন্ত হয়ে আছে।
কিন্তু কিছু দিন পর বাস্তবতা তাকে আঘাত করে:
(ছবি: মনসুরে সাদ্দামের মসজিদ (এখনও দাঁড়িয়ে আছে) সৌজন্যে নিউরোটিক ওয়াইফ )
আমার আগের লেখায় মনে হচ্ছে আমি অনেক আগে সব কিছু আশা করে বলেছিলাম। আমার সাথে যাত্রা করা একজন, কোনমতে তার দম নিয়ে আর প্যান্টের ধুলা ঝাড়তে ঝাড়তে এসে আমাকে বলল যে সে এইমাত্র কোন মতে একটা বোমা হামলা বিস্ময়কর ভাবে বেঁচে এসেছে… আইইডিটি আমার ছেলে বেলার পাড়াতে আবার হামলা করেছে। আমার এই সহযাত্রীর যে বিষয়টি অবাক করেছে সেটা হল যখন সে পুরো দমে বাস ধরার জন্য দৌড়াচ্ছিল তখন সে হাসছিল। সাথে সাথে সে তার মজার মন্তব্য করেছে “রক্ষা যে ওটা গাড়ি বোমা ছিল না!” আমরা ভাগ্যবান নই কি!
নিউরোটিক ওয়াইফ গ্রীন জোন (সবুজ এলাকা) ছেড়ে বাগদাদের বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে একটি বিরল গাড়ি ভ্রমণ করেছেন আর স্থানীয় রেস্টুরেন্টে খেয়েছেন। তিনি বলেন:
জায়গাটায় বেশ ভীড়। লোকে এসে চলে যাচ্ছিল খালি টেবিল না পেয়ে। আমি দেখলাম তারা সবাই সুখী লোক। তরুণীরা নতুন ফ্যাশনের পোশাক আর মেক আপ নিয়ে, বড় আধুনিক সানগ্লাস মাথায় রেখে যা তাদের চোখকে চুলের হাত থেকে রক্ষা করছে আর বড় বড় কানের দুল পরেছে। আমার চারপাশের সব কিছু আর সবাইকে খুব রঙ্গীন আর জীবন্ত লাগছে। আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, খুব স্বাভাবিক!!!
আমার ইচ্ছা হচ্ছিল ক্যামেরা বের করে শত শত ছবি তুলতে। আমি চাচ্ছিলাম পুরো বিশ্ব দেখুক যে , যে যাই বলুক যে ইরাকে ঘটছে, রকেট, বোমা হামলা, হত্যা, অপহরন, এখানে সব সময় জীবন আছে। সব সময়।
হয়তো একটা কারন বাগদাদের স্থিতিশীল অবস্থা নিয়ে বলা হচ্ছে তার বাসিন্দা দের এই ধরনের ইচ্ছা। বাগদাদের বাইরের পৃথিবী দেখে চিকিতিতা তার বন্ধুদের এই ধরনের ইচ্ছাকে অন্য আলোকে দেখেন। তিনি লিখেছেন:
(ছবি: বাগদাদের কিছু দোকান সৌজন্যে নিউরোটিক ওয়াইফ)
আমি ইরাকে ভালো দিক আর পরিবর্তন দেখা বন্ধ করে দিয়েছি, কিন্তু আমার বন্ধু তা করে নি। সে এখানকার জীবন তার চোখ দিয়ে দেখাতে এত উৎসুক ছিল কোন কিছু দিয়ে যা আমাকে শান্তি আর সহ অবস্থানের মিথ্যা একটা ধারণা দিতে পারে। সে ব্যর্থ হয়েছে। সে ঠিক বলেছে যে বিকাল ৫টার পর দোকান খোলে, কিন্তু তা আবার সন্ধ্যা ৭টায় বন্ধ হয়ে যায়, এখানে আমি কোন অগ্রগতি দেখতে পাই নি … মসজিদের বাইরে এখনো কাঁটা তার দিয়ে ঘেরা, চলন্ত অবিশ্বাসের প্রতীক। আমি যাত্রীদের জাতিগত অপমানকর কথা বলতে শুনেছি, এটা ভালো কথা না আর তার নিজের মা আমাকে বলেছে আরেক ঘটনা। তাদের বাড়ীর পাশে যে মেয়েদের জন্য প্রাইভেট স্কুল রয়েছে তারা যোদ্ধাদের কাছ থেকে হুমকি পেয়েছে তাদের যোগ্য বয়ো:জোষ্ঠ্য পুরুষ শিক্ষককে বের করে দিতে না হলে তারা পুরো স্কুল উড়িয়ে দেবে।
মোসুল
বাগদাদ ডেন্টিস্ট মোসুলে তার কাজে ফিরেছেন বাগদাদে ছুটি কাটিয়ে। তিনি ওই শহরে একা থাকা একজন যুবা পেশাজীবির জীবনের ধারনা দিয়েছেন:
আমার বাড়ীতে থাকা বিপদ জনক কারন ন্যাশনাল গার্ড বা আমেরিকান সৈন্যরা একা একজন পুরুষকে থাকতে দেখলে তাকে সন্ত্রাসী ভেবে ধরে, পড়শীরা ভয় পেয়ে কথা বলতে চায় না আর তারা আমাকে পরিষ্কার কোন উত্তর দেয় না…
আমি আমার বন্ধুদের সাথে দেখা করেছি, আর নতুন ডেন্টিস্ট সেখানে ছিল… রাতের মধ্যে আমরা হাসছিলাম আর কথা বলছিলাম আর গান গাচ্ছিলাম আর কেউ গুলি ছুড়ছিল… শুক্রবার, অ্যালার্ম এর কাজ করল ভয়ঙ্কর একটা বিস্ফোরণ যা আমাদের জাগিয়ে দেয়ার পর আর আমরা একে অপরের খোঁজ নিচ্ছিলাম যে কেউ আহত হল কিনা।
এমনকি এই শহরের বিশ্ববিদ্যালয় আর তার ছাত্ররাও সংঘর্ষ এড়াতে পারে না। আন্টি নাজমা লিখেছেন:
আজকে পরিস্থিতি টানটান ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্টকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল, আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে অনেক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল।
আমরা আজকে জানতে পারলাম যে আমাদের প্রিয় সহপাঠি্র ‘এম’ কে কয়েকদিন আগে গুলি করা হয়েছে। তারা আমাকে জানাল যে গুলি তার পায়ে লেগেছে আর সে ঠিক আছে। আমি খবরটি শুনে বিস্মিত হলাম, কেউ আমাদেরকে বলেই নি, যেন আমাদের কোন মাথা ব্যাথাই নেই।
পরিশেষে:
বাগদাদের বাসায় আটকে থাকলেও মার্শমেলো২৬ তার চেয়ারে বসে পৃথিবী ভ্রমণের রাস্তা পেয়েছে:
(ছবি: দোকানের জানালায় খেলনা সৌজন্যে নিউরোটিক ওয়াইফ)
হ্যা, আমি আমার চেয়ারে বসে আছি, আমার লাল আপেল মজা করে খাচ্ছি। আমি অস্ট্রিয়া – ফেন্দারহ্যাং, জাপান, ইউরোপের পুরানো জিনিষের দোকান, রাতে সুপার মার্কেট আর অজানা কোন এক জায়গার শহরের কেন্দ্র ভ্রমণ করে এসেছি।
গুগুল সার্চ এর মাধ্যমে সব কিছুই সম্ভব, আমি কোন একটা টেকনোলজির ওয়েবসাইটে পড়ছিলাম, আর একটা মন্ত্র পেয়েছি যেটা গুগুল এর সার্চ বারে লিখলে সারা পৃথিবী লাইভ ক্যামেরায় দেখা যায়: সেটি হল liveapplet (লাইভঅ্যাপ্লেট)।
আপনি বিমানবন্দর, মেট্রো, নিউ ইয়র্ক টাইম স্কোয়ার, কারখানা, চিড়িয়াখানা ছবিসহ দেখতে পাবেন!
যদিও আমি প্লেনে চড়িনি আর সিরিয়া ছাড়া কোন দেশে যাইনি আমার মনে হয়েছে আমি যেন এই সব দেশে গিয়েছি গুগুলের মাধ্যমে… আমি সব সময় বলি, আমি প্রযুক্তি ভালোবাসি।