এল আলমা লানেরা, এটি একটি স্প্যানিশ বাক্য যার মানে হল সমতল ভূমির আত্মা। এটি ভেনিজুয়েলার দ্বিতীয় জাতীয় সঙ্গীতের নাম। দেশটিতে পার্টির অথিতিকে বিদায় দেবার সময় সাধারণত: গৃহস্বামী এই গানটি গান। ভেনিজুয়েলার যে যেখানে বাস করুক সকলেই এই গানের কথা গুলো জানেন। গানটি লিখেছেন রাফায়েল বলিভার করনাডো, একজন লেখক যিনি তার অসাধারণ সৃষ্টিকর্মের জন্য পরিচিত। তবে তিনি আরো বেশি পরিচিত তার অদ্ভুত এবং ভিন্নভাবে জীবন যাপন করার মধ্যে দিয়ে। তার কাজ বিশেষ করে তার জীবন ধারা এখন ভেনিজুয়েলার ব্লগ জগতে এবং ইন্টারনেট ফোরামে জীবিত আছে।
রাফায়েল বলিভার করনাডো ১৮৮৪ সালের জুন মাসের ছয় তারিখ ভিলা ডে কুরাতে (আরাগুয়া, ভেনিজুয়েলায়) জন্ম গ্রহণ করেন। সে সময়কার হুয়ান ভিনসেন্ত গোমেজ সরকারের একটি সাহিত্য বৃত্তি লাভ করার পর করনাডো বেছে নেন সাহিত্য জগতের এক অপ্রচলিত এবং অসাধারণ বর্ণীল পেশা (এবং একই সময়ে তিনি খোলাখুলিভাবে গোমেজ সরকারের বিরোধিতা করে যান)। তার লেখার ফলে গৌরব বা জনপ্রিয়তা কোনটিই জোটে নি তার সে সময়। বলিভার করনাডো সবসময় তার লেখা থেকে স্বল্প কিছু আয় করার উপায় নিয়ে ভেবেছেন। লেখাই ছিল তার বেঁচে থাকার উপায়, দুমুঠো খাবার জোগাড়ের অবলম্বন।
এখানে একটি মজার বিষয় আছে। সাহিত্যে কেউকেটা হতে গেলে একটি নাম থাকতে হয়। অনেক লেখালেখির পর কারো সাহিত্যে বেশ নাম হয়। মনে হয় বলিভার করনাডো তার নিজের নাম বিখ্যাত হবার জন্য অপেক্ষা করতে রাজি ছিলেন না, তার তো জীবন ধারন করতে হবে! সুতরাং ছাপার জন্য (এবং টাকা পাওয়ার জন্য) বলিভার বিশ্বাস করতেন যে তার কিছু লেখা এমন কোন মানুষকে দিয়ে দেওয়া, যারা আগে লেখক হিসেবে পরিচিতি বা যার লেখা আগে থেকে অন্যের কাছে পরিচিত। এর কারণ ছিল বলিভার বিশ্বাস করতেন পরিচিত লেখকদের লেখা দ্রুত ছাপা হবে এবং করনাডো ভালো টাকা পাবেন।
স্প্যানিশ ব্লগ মলেস্কাইন লিটারেরিও থেকে জানা যায়:
তার যে কেবল ছদ্ম নাম ( ৬০০ মতো) ছিল তাই নয়, তিনি সেই সমস্ত সাহিত্য সমালোচকদের নাম ব্যবহার করতেন যারা তার ছদ্ম নামে ব্যবহার হওয়া লেখাগুলোর সুনাম করত। এমনকি তিনি তার সময়ের অনেক বিখ্যাত লেখকের নামেও লিখে গেছেন যেমন রুফিনো ব্লাঙ্কো ফোমবোনা। ১৯২০ সালে তার সাহিতিক ও শৈল্পিক অসাধুতা ভয়ানক আকার ধারন করেন যখন বলিভিয়ার এক কবিতা সংকলনের সমস্ত (তার) লেখাগুলো তার উদ্ভাবিত বিভিন্ন ছদ্মনাম দিয়ে প্রকাশিত হয়। এর এক বছর পরে তিনি কোস্টারিকার একদল লেখকের নামে একই ঘটনা ঘটান।
এবং বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। এই লেখকের প্রতি উৎসর্গকৃত ভাষা, সাহিত্য, চিন্তা, কৌতুক, রাজনীতি, উন্মত্ততা এবং অন্য সব অর্থহীন বিষয় নিয়ে স্প্যানিশ ভাষার একটি ব্লগ রয়েছে , যার শিরোনাম লা ডুডা মেলোডিকা। এই ব্লগের লেখক অধ্যাপক বারেরা লিনেরাস আমাদের জানাচ্ছেন অন্যতম এক কৌতুহলী লেখক সম্বন্ধে একটি মজার গল্প:
এমন কি তিনি তার নিজের সম্পাদককে ব্যঙ্গ করতেন, রুফিনো ব্লাঙ্কো ফোমবানো এই ছদ্মনামে। (মুল লেখাটি থেকে তার ছদ্ম নামের তালিকাটি দেখে নিন) বলা হয়ে থাকে আসল রুফিনো ব্লাঙ্কো এই নকলবাজকে সব জায়গায় খুঁজেছেন যাতে সে পরবর্তী জীবনে অন্য নাম খুঁজে নেয়। সৌভাগ্য বশত: রুফিনো ব্লাঙ্কো তাকে কখনও খুঁজে পান নি। এছাড়া উল্লেখযোগ্য করনাডো যে সব বিদেশী নাম ব্যবহার করতেন (সারভানতেস , উনামুনো, সর হুয়ানি ইনেস , রিকার্ডো পামা , আমাদো নেরভো) অথবা যে উপায়ে তিনি ভেনিজুয়েলান কনসাল আলবার্তো উরবানেয়ারকে (সরকার প্রধান হুয়ান ভিসেন্ত গোমেজ এর চাটুকার) ব্যঙ্গ করতেন। উরবানেয়ার তাকে একজন ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন এবং সারা জীবন তাকে (করনাডোকে) খুঁজে বেরিয়েছেন। ( স্প্যানিশ ভাষায় মূল লেখাটিতে উরবানেয়ার ডাকনাম দেখুন)।
মনে হয় যে বলিভার করনাডো এল আলমা লানেরাতে যে কথা গুলো লিখেছিলেন তা তিনি ঘৃণা করতেন । যদি তার বিখ্যাত কাজ সেই গানের কথা গুলির দিকে তাকাই তাহলে তা তার সাথে এক অদ্ভুত বৈপরীত্য তৈরি করে। শেষে বলা যায় এই বর্ণীল চরিত্র সেই বিদ্রোহী চেতনার প্রতীক যারা সাহিত্য জগতে মূল সাহিত্যকে মূল্যায়ন না করে লেখকের নাম ও জশের উপর গুরুত্ব দেয়াকে ভৎসর্ণা করে। অধ্যাপক লিনেরাস আরো লিখছেন:
হয়তো এটা আমাদের উদ্দেশ্য নয় , কিন্তু বলিভার আমাদের সাহিত্যের ইতিহাস থেকে এক রহস্যকে আলোতে এনেছেন। তিনি জন জীবনে সাহিত্যের গুরুত্বকে তুলে ধরেছেন। যদি আপনি সাহিত্য অঙ্গনের কেউ না হন তাহলে লেখক হিসেব আপনি খুব সামান্য কিছুই হয়ত করতে পারবেন। যেহেতু সাহিত্য জগতে আমার কোন নাম নেই সেহেতু আমি সেই নাম গুলো ব্যবহার করবো যারা ইতিমধ্যে বিখ্যাত বা বিবেচিত। আমি তো আমার দাঁতে মাকড়সার জাল বুনতে পারি না। এর মানে হল, হয় আমাকে হয় খ্যাতি মান কারো নাম চুরি করতে হবে যা আমার না অথবা আমি না খেয়ে মরবো। এই চিন্তাকে বাদ দেবার বদলে তিনি এটা তার জীবনে নিয়ে নিয়েছিলেন এবং এই কাজ ছিল একটি চলমান গল্পের মতো। একজন সামাজিক ব্যক্তি তিনি নিজেই একটা ঘটনা তৈরী করে গেছেন যে ঘটনার মধ্যে তিনি বাস করতেন। এ এক অসাধারণ বিষয়।
বলিভার করোনাডোর ভাতিজা লেখকদের জন্যে একটি মজার ফোরাম চালু করেছেন (স্প্যানিশ ভাষায়)।