বুরকিনা ফাসোতে ব্লগিং শুধু সময় ক্ষেপন নয়। এটি হাজার হাজার নেট ব্যবহারকারীদের জন্যে চোখ এবং কান এর মতো।
এই জন্য ১১-১৭ অক্টোবর থমাস সাঙ্কারার হত্যার ২০তম বার্ষিকী পালনের সময় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছিল যাতে যারা এই দিবস পালন করছে তাদের কথা না শোনা যায়।
যে দেশে এখনো এতো গোপনীয়তা সেখানে ব্লগ মনকে মুক্ত করে। যে দেশে সেন্সরশীপ সব কিছুতে আর মিডিয়া ক্ষমতার আড়ালে থাকে সেখানে অনেক সময় ব্লগারাই আসল সাংবাদিক। তারাই পারে সরকার বিরোধী কোন কিছু প্রকাশ করতে।
যদিও অধিকাংশ বুরকিনাবাসীরই ব্লগের সাথে সম্পৃক্ততা নেই কিন্তু বেশ কিছু সাংবাদিক আর সাধারন নাগরিক ব্লগিং করছেন। কেঊ কেঊ সংবাদপত্রে, রেডিও বা টেলিভিশনে প্রকাশিত খবর ব্লগে দিয়ে থাকে। অন্যেরা খবর বিশ্লেষন করে আর নিজেরা যা দেখেছে বা শুনেছে তা লেখে। এছাড়া তারা নিষিদ্ধ সংবাদও ছাপে। ব্লগ তখন আলোচনার একটা জায়গা হয় যেখানে বিতর্ক করা যায় কি করে বুরকিনাতে রাজনীতির উথ্থান ও পতন হয়।
এই ধরনের দেশ যে তার নাগরিকদের প্রকাশের অধিকার খর্ব করে তাকে তো একনায়কতন্ত্রের দেশ বলা যায়। তাই এই স্বৈরাচার দেশের গনতান্ত্রিক অবস্থানকে ধংস করছে। সেন্সরশীপ আর সেল্ফ সেন্সরশীপ প্রেসের আর প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে।
সাংবাদিকরা অনুভব করে যে তাদের কন্ঠরোধ করা হচ্ছে কিন্তু জনগনও তেমন বোধ করে। তারা সর্বদাই ভাবে যে তাদের কাছ থেকে কিছু একটা বুঝি লোকানো হচ্ছে। আন্ডারগ্রাউন্ড প্রেস একটি গুরুতপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। কিন্তু ব্লগ মানুষকে ভয় ছাড়া নিজেকে প্রকাশের সুযোগ দেয় আর এমন একটি ক্ষেত্র দেয় যেখানে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও মতামত অন্যেরা পড়বে ও মূল্যায়ন করবে।
বুরকিনা ফাসোর সাংবাদিক ও ব্লগার আমিতিপি কফি মনে করেন যে ব্লগিং মূলধারার মিডিয়ায় ভালো প্রভাব রাখবে।
“আমি আশা রয়েছে যে আমার সাথী ব্লগার আর সাধারন জনমত এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। আমি আশা করি যে বুরকিনা মিডিয়া এই বিতর্কে অংশগ্রহন করবে। তাদের ওই ক্ষমতা আছে নতুন মাত্রার বিশ্লেষন ও প্রকাশ প্রচার করা আর গনতন্ত্রকে নতুন রাস্তা দেখানো…আশা করা যায় কোন বাধা বা সেন্সরশিপ ছাড়া।”
বিপ্লবী ব্লগার
বিপ্লবী ব্লগার ফেলিক্স আমিতিপি কফি বলেছেন যে ২ বছর আগে তিনি নাগরিক সাংবাদিকতা আর মত প্রকাশের স্বাধীনতা উজ্জীবিত করার জন্য তার ব্লগ লে১০সিডেন্ট চালু করেছিলেন। এই ব্লগের বেশিরভাগ লেখা ব্যাঙ্গাত্মক সাপ্তাহিকী লে জারনাল দু জুদিতে প্রকাশিত হয়েছে যেখানে তিনি কাজ করেন। কফি তার ব্লগের গল্প আর তার সহকর্মীদের সমালোচনাও তুলে ধরেন।
লেফাসো নেট, বুরকিনার উপর পোর্টাল
লেফাসো ডট নেট একটা খবরের পোর্টাল যেখানে বুরকিনা ফাসোর বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত আর্টিকেল ছাপা হয়। এখানে পাঠকরা মন্তব্য রাখতে পারে পোস্টের নীচে যার ফলে বিতর্কের সুযোগ আছে।
লেফাসো নেট আরো প্রচার ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে আর সংখ্যাতে তা বোঝা যায়। এর প্রায় ৬০০০ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে এর নিউজলেটারের আর ২৫০০ জন গড়ে প্রতিদিন এর সাইট দেখে বিশেষ করে ফ্রান্স, বুরকিনা ফাসো, আমেরিকা আর কানাডা থেকে।
শুরু করার ৪ বছর পর লেফাসো নেট এখন প্রবাসীদের জন্যে মূল তথ্যের আধার হিসাবে কাজ করছে।
একটি ছোট্ট জিনিষ যা পৃথিবীকে উন্মুক্ত করেছে
“ সবাইকে স্বাগতম যারা দু:খ, আনন্দ, আশা, বিচারের জন্য সংগ্রাম, ভালোবাসার প্রকাশ অন্যদের সাথে ভাগ করতে চানঃ এক নতুন পৃথিবী সম্ভব!” লিখছেন ধর্মযাজক লাকোর তার ব্লগে।
লাকোর ৩০ বছর ধরে বুরকিনাতে একজন ধর্মপ্রচারক হিসেবে বসবাস করছেন। তিনি ব্লগ শুরু করেছেন আফ্রিকা, খ্রিষ্ট জীবন, ন্যায় আর শান্তি, ডাক টিকিট সংগ্রহ আর বংশতালিকা তৈরি ইত্যাদি পছন্দ ভাগ করে নেয়ার জন্য।
তিনি প্রথম লিখেছেন ২০০৬ এ যা ছিল নিকোলাস সারকোজিকে লেখা একটা চিঠি।
তার অনেক লেখা দৈনিক লো পেই(স) আর এবিসিবুরকিনার জন্য লেখা আর্টিকেল।
বুরকিনাকে দেখাও আর তার সংস্কৃতির উন্নয়ন করো
ওয়েব পোটাল মোনবুরকিনা শিল্পী, কারিগর আর টুরিস্ট গাইডদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বুরকিনা ফাসোর আবহমান সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চাচ্ছে। এর মাধ্যমে কেউ বুরকিনা ফাসো সম্বন্ধে মতামত জানাতে পারে। মনবুরকিনাতে মুখোশ পড়ে লোকজ নাচের ভিডিও আছে, এইডস নিয়ে চলচিত্র , গল্প আর কবিতা আছে।
“খবর একটি অধিকার, দাবি করো”
ফ্রেডারিক ইলবুদো সাপ্তাহিক লো'পিনিয়নের একজন সাংবাদিক আর তিনি একটি সংবাদ ব্লগ লেখেন। তিনি শ্লোগান দিচ্ছেন “খবর একটি অধিকার, দাবি করো!”
- রামাতা সোর