নির্বাসিত সক্রিয় কর্মীরা গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ দর্শন ‘হংকং সনদ ২০২১’ চালু করেছে

৮ জন সক্রিয় কর্মী একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হংকং সনদ ২০২১ ঘোষণা করেছেন। স্ট্যান্ড সংবাদ থেকে নেওয়া ছবি।

এই পোস্টটি মূলত চীনা ভাষায় ২০২১ সালের ১৫ মার্চ তারিখে স্ট্যান্ড সংবাদে প্রকাশিত হয়। বিষয়বস্তু ভাগাভাগি করে নেওয়ার একটি চুক্তির মাধ্যমে এই অনুবাদটি গ্লোবাল ভয়েসেসে প্রকাশিত হয়েছে।

হংকংয়ের নির্বাসিত আটজন সক্রিয় কর্মীর একটি দল হংকংয়ের জন্যে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক প্রচারণা কাজের কাঠামো অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি হিসেবে ১৪ মার্চ তারিখে “হংকং সনদ ২০২১” চালু করেছে।

একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নাথান ল, টেড হুই, গ্লেসিয়ার কোওং, সানি চেউং, ব্রায়ান লেউং, রে ওয়াং, বাগজিও লেউং এবং অ্যালেক্স চৌ একদলীয় শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী অন্যান্য গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্যে বিদেশে অবস্থানরত হংকংবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

হংকংয়ের বেশিরভাগ গণতন্ত্রীপন্থী নেতৃবৃন্দ গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনবিধি পুনর্লিখনের সর্বশেষ চীনা পদক্ষেপের প্রেক্ষাপটে দলটি গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের পক্ষের সকল পক্ষকে নিয়ে প্রবাসী হংকংবাসীদের একটি নিরপেক্ষ দল গঠনের গুরুত্বকে জোর দিয়েছে।

২০২০ সালের ১ জুলাই জাতীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকর হওয়ার পরে হংকং থেকে পালিয়ে আসা প্রাক্তন আইনজীবি নাথান ল ২০২১ সনদের লক্ষ্যটি ব্যাখ্যা করেন (টুইটারে উইলিয়াম ইয়াংয়ের মাধ্যমে পাওয়া উদ্ধৃতি):

আমরা এখানে সংহতি জানাতে এবং সিসিপির রাজনৈতিক দমন বিরুদ্ধে লড়াই করা মানুষকে হাল ছেড়ে না দিতে উৎসাহিত করতে এসেছি। আমরা আরো আশা করি যে আমাদের প্রবাসী সম্প্রদায় হংকংয়ের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং শহরের প্রতি আমাদের ভালবাসার মৌলিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখবে।

সনদটি বিদেশে বসবাসকারীদের দায়িত্বের রূপরেখা প্রণয়ন করে “প্রবাসী হংকংবাসীদের বিশ্বাস” দিয়ে শুরু হয়েছে:

আমাদের যে মূল্যবান স্বাধীনতা রয়েছে তা কাজে লাগিয়ে প্রবাসী হংকংবাসীরা হংকংয়ে সন্ত্রাসের শাসনের মাধ্যমে নিরব করে দেওয়া ব্যক্তিদের কণ্ঠস্বর শোনাতে হংকংয়ে এখন যা বলা যায় না তা বলবেন […] ঐক্যবদ্ধ থাকুন এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জালে জড়াবেন না।

দ্বিতীয় অংশে হংকংবাসীদের পরিচয়ের স্বাতন্ত্র্য এবং হংকংয়ের ভবিষ্যত এবং এর নানাবিধ বিষয় নির্ধারণে তাদের অধিকারের প্রতি জোর দেওয়া হয়। এটি নিবর্তনমূলক জাতীয় সুরক্ষা আইন বিলোপের এবং হংকংয়ে চীনের নিয়ন্ত্রণমুক্ত একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্যে আন্তর্জাতিক প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

তৃতীয় অংশটি গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা বাস্তবায়নের জন্যে চীনের “একদলীয় স্বৈরশাসন” বিলুপ্তিকে সংজ্ঞায়িত করেছে। হংকংয়ের আন্তর্জাতিক গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ডিজিটাল একদলীয় শাসন, সাংস্কৃতিক নির্মূলকরণ এবং তাইওয়ানের বিরুদ্ধে সামরিক হুমকির পাশাপাশি মধ্য মঙ্গোলিয়া, তিব্বত, জিনজিয়াং এবং অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘু গণহত্যার বিরুদ্ধে অন্যদের সাথে যোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এর চূড়ান্ত অংশে বলা হয়েছে যে হংকং আন্দোলন স্বাধীনতা, স্বায়ত্তশাসন, ন্যায়, বৈচিত্র্য, সমতা এবং গণতন্ত্রের সার্বজনীন মূল্যবোধকে একদলীয় শাসকগোষ্ঠি সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে প্রচারণার জন্যে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সামাজিক ও পরিবেশগত ন্যায়বিচারের প্রচারণাকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করবে।

সম্মেলনে ব্যাখ্যা করার সময় নাথান ল হংকংয়ের প্রবাসীদের মধ্যে সংহতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ লক্ষ্য করেছেন:

এই প্রবাসী হংকংবাসীরা খুব বৈচিত্র্যপূর্ণ, যাদের কেউ কেউ হংকং ছেড়েছেন ১৯৮৯ এর পরে, কেউ কেউ ২০১৪ সালের বিক্ষোভের পরে এবং ন্যান্যরা ২০১৯ এর বিক্ষোভের পরে। কেউ কেউ চেষ্টা করেছেন তাদের সম্প্রদায় গঠনে, কেউ রাজনৈতিক তদবিরের, কেউবা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে। এই সমস্ত লোকদের হংকংয়ে ভবিষ্যতের লড়াই নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে।

এই আট জন উদ্যোক্তা জোর দিয়ে বলেছেন যে হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন টিকিয়ে রাখার জন্যে সংহতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই সনদটি যারা বিদেশে সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন তাদের মধ্যে একটি সাধারণ দর্শন তৈরি করতে পারে।

বর্তমানে জার্মানিতে অবস্থানরত গ্লেসিয়ার কোওং নামের একজন সক্রিয় কর্মী সিসিপির রাজনৈতিক নিপীড়ন হংকংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় উল্লেখ করে ভবিষ্যত আন্তর্জাতিক প্রচারণাটি অন্যান্য দেশের গণতন্ত্রপন্থী সংগ্রামের সাথে সংযুক্ত করতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অধ্যয়নরত ব্রায়ান লেউংও একই মতামত পোষণ করেছেন:

২০১৯ সালের বিক্ষোভ চলাকালে হংকংবাসী বিশ্বকে তাদের কণ্ঠ শোনার আহ্বান জানিয়েছে। এখন আমাদের বিশ্বের সাথে সংলাপে গিয়ে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে মানুষের সংগ্রামের প্রসঙ্গটি বুঝতে হবে।

লেউং বলেছেন যে আগামী ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য হবে আন্তর্জাতিক সুশীল সমাজের সাথে সংযোগ স্থাপন করা, পরস্পরের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা অর্জন করা এবং অন্যান্য দেশে নীতিনির্ধারণে অবদান রাখা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নগর ভূগোল অধ্যয়নরত অ্যালেক্স চৌ বলেছেন যে প্রবাসী হংকংবাসীদের অবশ্যই পরিবেশগত ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক সংগ্রামে লিপ্ত হতে হবে এবং চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক পরিবর্তনের জন্যে অন্যান্য দেশের সাথে তদবির করতে হবে। তিনি বলেছেন যে জনগণ তাদের সংগ্রাম চালিয়ে গেলে হংকংয়ের গল্প বিয়োগান্তক হবে না:

হংকংবাসী হংকং বা বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন রাষ্ট্ররচিত লিপিটি পুনর্লিখন করে তার পরিবর্তে তাদের নিজেদের গল্প লিখতে সক্ষম।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .