নারী ও শিশুদের ঘরোয়া নির্যাতন সম্পর্কে সচেতনতার মাস পালিত হচ্ছে আমেরিকায় এই অক্টোবরে। এর লক্ষ্য হচ্ছে নির্যাতিত মহিলা আর শিশুদের পক্ষে অবস্থান নেয়া ব্যক্তি ও সংস্থাগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা ও একসাথে ঘরোয়া নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজ করা।
এই সমস্যা কিন্তু কোন দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ঘরোয়া নির্যাতন সারা বিশ্বে দেখা যায়। এটি এমন একটা অসুখ যা শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধনী, দরিদ্র সব সমাজে আছে। তুলনামূলকভাবে বেশীরভাগ বাংলাদেশী নারী ঘরোয়া নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। এখানে উল্লেখ করছি কি ভাবে বাংলাদেশের ব্লগাররা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে বেগবান করছে এবং অপরাধীদের বিচারের দাবী জানাচ্ছে। এটি প্রমান করে সাইবার এক্টিভিজমের শক্তি।
সামিহা এশার মাধ্যমে আমরা ব্রাক ইউনিভার্সিটির লেকচারার নাদিনে মুরশিদ এর কাহিনীটা দেখি যেখানে সাজিদ হক নামে কলম্বিয়া ইউনিভাসিটিতে পড়ুয়া তার স্বামী তাকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করেছে:
নাদিন মুরশেদ: তার বিয়ের দিনে (বামে) ও স্বামী কর্তৃক নির্যাতিত হবার পর
ছবি হাজার কথা বলে কিন্তু নাদিনের লেখা আরো বলেঃ
আমার ভাগ্য ভালো যে আমি একমাস নির্যাতন সহ্য করেও বেচে আছি। আমি ইন্নালিল্লাহ বলে মরার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলাম, কিন্তু তা আর হয়নি। তার বদলে আমার নষ্ট হওয়া চেহারা যাতে না দেখতে হয় সেজন্যে একটা কাপড় দিয়ে আমার মুখ ঢেকে সে আমাকে ধর্ষন করেছিল।
পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আর সাজিদ এখন নিউ ইয়র্ক পুলিশের হেফাজতে আছে। নারীজীবনের বাংলাদেশ ফ্রম আওয়ার ভিউ ব্লগে ড: ক্যাথরীন ওয়ার্ড এ সম্পর্কে আরো তথ্য দিয়েছেন:
স্বামীর বড়লোক পরিবার তার পরিবারকে মিথ্যা মামলার ভয় দেখাচ্ছে। সম্প্রতি নামকরা মহিলা বিষয়ক সংস্থা আর নেত্রীরা নাদিন আর তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানোর ব্যাপারে প্রতিবাদ করে বাংলাদেশ আর আমেরিকায় তার বিচার দাবী করেছে।
কেউ কেউ ফেসবুকে একটি গ্রুপ তৈরি করেছে “জাস্টিস ফর নাদিন” নামে আর অন্যরা তার পরিবারকে দোষী প্রমান করার জন্য অপরাধীদের পরিবার আর বন্ধুরা যে ভুল তথ্য দিচ্ছে তার বিরুদ্ধে লিখে প্রতিবাদ করছে।
আধুনিকা ব্লগে কিছু ভীতিকর পরিসংখ্যান আছে:
দেখা গেছে যে প্রতি বছর আমেরিকায় ৩০ লাখ মহিলা খুব কাছের কারো দ্বারা নির্যাতিত হয়। কিন্তু দক্ষিন এশিয়ার কমিউনিটিতে এই সংখ্যা ৪১% এর মত, যেখানে জীবন সংগী পুরুষরা নারীদের শারিরিক/যৌনভাবে নির্যাতন করছে। এই সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে কারন অনেক দক্ষিন এশিয়ার নারীরা কোন ধরনের আচরন ঘরোয়া নির্যাতন তাও ঠিকমত জানে না অথবা বলতে ভয় পায়।
এই ব্লগে এমন কিছু আমেরিকান সংস্থার নাম আছে যারা ঘরোয়া নির্যাতন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দেয় আর নির্যাতিতদের সাহায্য করে থাকে।
এখন আমরা বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের দিকে নজর দেই।
রাহেলা
২২ অক্টোবর ২০০৭ মানবী রাহেলা সম্বন্ধে একটি লেখা পোস্ট করে যেখানে বলা আছে কি করে তিন বছর আগে তার আগের সহকমীসহ একদল লোক তাকে গণধর্ষন করে, তার গায়ে এসিড ঢালে ও গলা কেটে ফেলে রাখে। মারা যাবার আগে সে তার মায়ের কাছে তার সাথে এমন কারা করেছে তাদের নাম বলেছিল। অক্টোবর ২৯,২০০৭ এ প্রথম শুনানি হবে এই কেসের। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র তার জন্য লড়ছে। দোষীরা লুকিয়ে আছে আর হয়তো পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমানের অভাবে তারা ছাড়া পেয়ে যাবে। তার স্বামী সে মারা যাবার ছয় মাস পরে আবার বিয়ে করেছে আর সে খুশি যে রাহেলা তার অথবা তার পরিবারের কারো নাম নেয়নি। এই ধরনের ঔদাসিন্য আর এক ধরনের নির্যাতন!
মানবী তার লেখায় ব্লগার ও পাঠকদের অনুরোধ করেছেন এই খবরটি সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে বিশেষ করে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে যাতে রাহেলা ন্যায় বিচার পায়। তার লেখা এই পযন্ত ২২২ টি মন্তব্য পেয়েছে। জ্বিনের বাদশা জাস্টিস মাস্ট প্রিভেইল নামে আর একটা লেখা দিয়েছেন যার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশী ব্লগারদের পিটিশন তৈরি, স্থানীয় মিডিয়াতে খবর প্রচার আর সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোর মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টির কথা বলেছেন।
আর এটি যাদুমন্ত্রের মত কাজ করেছে কারন স্থানীয় মিডিয়ায় খবরটি একের পর এক ঘটনাটি সম্বন্ধে রিপোর্ট আসছে। মানবীর এই লেখায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয় সাংবাদিক ফয়সাল নই রাহেলার গ্রামে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করছেন। অক্টোবর ২৯ এ রাহেলার কেস নিয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল সংবাদ প্রচার করবে। রাহেলা সুবিচার পাবে কিনা সময় তা বলবে কিন্তু মানবীর একটি লেখা সমাজে এমন উদ্দীপনার তৈরি করেছে যা নজিরবিহীন।
একটা ইমেইলে মানবী স্বীকার করেছেন:
এখন মনে হচ্ছে যেন রাহেলাকে ত্যাগ করা হয়নি, তাকে ভুলে যাওয়া হয়নি। এই বিপুল সাড়া প্রমান করে যে আমরা সবাই একই ধর্মের অনুসারী, এবং তা হচ্ছে মানবিকতার।
আমি সব সাইবার একটিভিস্টদের অনুরোধ করছি আপনার সমাজে এই ধরনের ঘরোয়া নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন আর এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ান। অনেক সময় পরিবর্তন আনার জন্যে একজনের উদ্যোগই যথেস্ট হয়।
5 টি মন্তব্য
bhalo sonjojon – toofan
a samparke aro sambad pracher hoa uchit
are we aheading inti anti-DARWIN’s theory. it may happen we will reach into beast agin.and this very near futre
আমিও নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানাই। নির্যাতকদের বিরুদ্ধে আমার প্রবল ঘৃণা আছে।