গ্ণমাধ্যমের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের এক মন্ত্রীর ‘যুদ্ধ’

Minister Winston Peters being interviewed by the media.

মন্ত্রী উইনস্টন পিটার্সের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে গণমাধ্যম। নিউজহাবের ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া পর্দাছবি

নিউজিল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স গণমাধ্যমের সাথে “যুদ্ধ” করার কথা বলে সরকারি সম্প্রচারকদের স্বাধীনতার অভাবের অভিযোগ করেছেন।

পিটার্স বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সনের অধীনে উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জনপ্রিয়তা ও জাতীয়তাবাদী নিউজিল্যান্ড প্রথম দলের প্রতিষ্ঠাতা ও নেতা। তিনি ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর দেশের নতুন সরকার গঠিত হওয়ার কয়েকদিন পর প্রকাশ্যে গণমাধ্যমকে তিরস্কারের মাধ্যমে তার মেয়াদ শুরু করেছেন। তিনি বিশেষভাবে কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন পূর্ববর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত ৫.৫ কোটি ডলারের জনস্বার্থ সাংবাদিকতা তহবিলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তিনি ২০২০ সালে দাবি করেছিলেন গণমাধ্যমকে “ঘুষ” দেওয়ার জন্যে (এটি) ব্যবহৃত হয়েছে।

মন্ত্রিসভার বৈঠকের এক পর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের “গাণিতিক মূর্খ” হওয়া বন্ধ করে “স্বচ্ছ” হতে বলার সাহস দেখিয়েছিলেন:

যাওয়ার আগ আপনি কি জনগণকে বলতে পারেন টাকা পেতে আপনাকে কীসে স্বাক্ষর করতে হয়েছে? আরো একটি প্রশ্ন করার আগে, টাকা পাওয়ার জন্যে আপনি কীসে স্বাক্ষর করেছেন তা জনসাধারণকে বলুন।

প্রবীণ রাজনীতিবিদ পিটার্সের দল ২০২০ সালের নির্বাচনে হেরেছে। অক্টোবর ২০২৩-এর প্রচারাভিযানের সময় “দুর্নীতিবাজ” ও “ময়লা ব্যবসায়ী”  বলে তিনি কিছু সাংবাদিকের নিন্দা করেন। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সংসদ অধিবেশনে তিনি গণমাধ্যমের প্রতি পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেন।

পিটার্সের নিউজিল্যান্ড প্রথম দলসহ তিনটি রক্ষণশীল দল সরকার গঠনের জন্যে একটি জোট গঠন করেছে। নতুন সরকার কর কমানো, আমলাতন্ত্র কমানো, আরো পুলিশকে প্রশিক্ষণ প্রদান ও মুদ্রাস্ফীতি কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা কোভিড-১৯ মহামারী পরিচালনার জন্যে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হলেও জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের জন্যে স্থানীয় সমালোচনার মুখোমুখি হওয়া প্রাক্তন ক্ষমতাসীন লেবার পার্টিকে পদচ্যুত করে।

জনস্বার্থ সাংবাদিকতা তহবিলের তিরস্কারে এটির মহামারী চলাকালীন বিজ্ঞাপনের আয় হারানো স্থানীয় গণমাধ্যম সংস্থাগুলিকে সমর্থনের লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করেননি পিটার্স। নিউজিল্যান্ড অন এয়ার নামের একটি স্বাধীন সংস্থা তহবিলটি পরিচালনা করেছিল। সংস্থাটির একজন বোর্ড সদস্য এন্ড্রু শ পিটার্সের বক্তব্যকে “দূষিত” এবং “অসত্য” বলে বর্ণনা করেছেন। তার বক্তব্য সংস্থাটির নিরপেক্ষতাকে ক্ষুন্ন করেছে বলে পরবর্তীকালে তিনি তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

অ্যানিমেশন রিসার্চের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নিউজিল্যান্ড অন এয়ারের প্রাক্তন বোর্ড সদস্য স্যার ইয়ান টেলর লিখেছেন মন্তব্যের জন্যে পিটার্সের ক্ষমা চাওয়া উচিত। তিনি সংস্থাটির বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বাধীনতার পক্ষাবলম্বন করেন।

সম্পূর্ণ স্বাধীন সংস্থা নিউজিল্যান্ড অন এয়ার বোর্ডের অনুমোদনই কেবল সাংবাদিকদের এই তহবিলগুলিতে প্রবেশের একমাত্র উপায় ছিল। আমাদের উপ-প্রধানমন্ত্রী “আপনি ৫.৫ কোটি ডলারের ঘুষ রক্ষা করতে পারবেন না” এই দাবি করে সম্পূর্ণ বোর্ডকে ঘুষে জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন বলে তাদের বেশ ন্যায্যভাবে এই ধরনের অযৌক্তিক, ও সম্ভাব্য মানহানির জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা আশা করা উচিত। তিনি যে কব্জির উপর থাপ্পড় পেয়েছেন তার চেয়ে অবশ্যই অনেক বেশি তার প্রাপ্য ছিল।

সানডে স্টার-টাইমসের সম্পাদক ট্রেসি ওয়াটকিনস লিখেছেন পিটার্স “ভুল নির্দেশনা ও ভুল তথ্য” এ জড়িত এবং “গণমাধ্যমের প্রতি আস্থা ও সম্মানকে আরো নষ্ট করার জন্যে” তিনি তার অফিস ব্যবহার করছেন।  তিনি যারা গণমাধ্যম সম্পর্কে পিটার্সের ভিত্তিহীন দাবির প্রতিধ্বনি করা কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যগুলিরও সমালোচনা করেছেন।:

কেন এতগুলি ক্ষমতাবান লোক এই যুক্তি-তর্কে এসেছে? কারণ এটি সত্য ও মিথ্যার সীমারেখাকে পঙ্কিল করে দেয়। কারণ একটি দুর্বল গণমাধ্যম তাদের জন্যে ভালো। কোন রাজনীতিবিদ এটা চান না? তারা বিশেষ করে গণমাধ্যমের কাছে জবাবদিহি করতে পছন্দ করে না এবং তারা সরকারি অফিসের যাচাই-বাছাই কম পছন্দ করে।

সীমান্তবিহীন প্রতিবেদকের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ব্যুরো পরিচালক সেড্রিক আলভিয়ানি নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সনকে একটি মুক্ত সংবাদপত্রের জন্যে সরকারের সমর্থন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়াও তিনি পিটার্সের বক্তব্যের নিন্দা করেছেন:

গণমাধ্যমের প্রতি নিউজিল্যান্ডের জনসাধারণের ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাসের প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের সম্পর্কে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করে উপ-প্রধানমন্ত্রী পিটার্স সংবাদপত্রের প্রতি নবনিযুক্ত সরকারের মনোভাব সম্পর্কে উদ্বেগজনক সংকেত পাঠাচ্ছেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .