আদালতের রায়ে ইন্দোনেশীয় মন্ত্রীর মানহানিতে অভিযুক্ত দুই রাজনৈতিক কর্মী মুক্ত

Human rights defenders Fatia Maulidiyanti and Haris Azhar

মানবাধিকার সুরক্ষক হারিস আজহার (বাম) এবং ফাতিয়া মৌলিদিয়ান্তির বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়া সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ্য মন্ত্রীর মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে। হারিস আজহারের চ্যানেলে ইউটিউব ভিডিও থেকে পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।

ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তার একটি আদালত একজন সরকারি মন্ত্রীর মানহানির অভিযোগে অভিযুক্ত দুই মানবাধিকার রক্ষাকারীকে খালাস দিয়েছে

ইউটিউবে ২০২১ সালের আগস্টে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে সক্রিয় কর্মী ফাতিয়া মৌলিদিয়ান্তি ও হারিস আজহার পাপুয়ায় খনির ধ্বংসাত্মক প্রভাব ও প্রদেশে বড় ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় সামরিক বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা খনির কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয় প্রতিবেদন উল্লেখ করেছে যাতে লুহুত বিনসার পান্ডজাইতান, সামুদ্রিক ও বিনিয়োগ বিষয়ক সমন্বয়কারী মন্ত্রী ও পাপুয়ায় একজন প্রাক্তন সামরিক জেনারেল রয়েছে। এই জেনারেল পান্ডজাইতান খনির স্বার্থের সাথে সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করে পরবর্তীতে মৌলিদিয়ান্তি ও আজহারের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেছেন। তিনি তাদের ক্ষমা প্রার্থনা ও ১০ হাজার কোটি রুপিয়া (প্রায় ৭১.৩৫ কোটি টাকা) ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

২০২৩ সালের এপ্রিলে বিচার শুরু হয়ে নভেম্বর মাসে প্রসিকিউটররা একটি অভিযোগ জারি করলে আদালত 8 জানুয়ারি অভিযোগ খারিজ করার আগে মোট ৩২ বার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

খালাসের সিদ্ধান্তের একটি উদ্ধৃতিটি বলেছে “ভিডিওতে যা পাওয়া গেছে তা একটি অধ্যয়ন, মতামত  বিশ্লেষণ ও সুশীল সমাজের জোট পরিচালিত একটি সমীক্ষার ফলাফলের মূল্যায়ন” বলে এতে অপমান বা মানহানির কোনো উপাদান ছিল না।

পাপুয়াতে বিচার, শান্তি ও সততা সৃষ্টির জন্যে ফ্রান্সিসকানের সচিবালয়ের নির্বাহী পরিচালক ফাদার আলেকজান্দ্রো রাঙ্গা রায়টিকে স্বাগত জানিয়ে পাপুয়া ইস্যুতে আরো বেশি লোককে কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন:

আমি আশা করি আরো বেশি সক্রিয় কর্মী জাতীয় পর্যায়ে পাপুয়ার ইস্যুগুলিকে খোলামেলাভাবে জবাবদিহি দাবি করার সাহস পাবে যাতে পাপুয়ার জনগণের পক্ষ নিয়ে সরকারি নীতিমালা পাপুয়াবাসীদের বৈশিষ্ট্য ও স্থানীয় প্রজ্ঞার প্রতি আরো বেশি মনোযোগ দেয়।

পাপুয়া একটি সম্পদ-সমৃদ্ধ প্রদেশ যেখানে স্থানীয় সম্প্রদায়কে বাস্তুচ্যুত করার জন্যে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি তীব্র সামরিক অভিযানের সমালোচনা করে আসছে। বিভিন্ন গোষ্ঠী ইন্দোনেশিয়ার ১৯৬০-এর দশকে অধিভুক্ত অঞ্চলটি শাসন করার অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করে পাপুয়াবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবি করে আসছে।

আমরা জিতে গেছি! ফাতিয়া ও হারিস জিতেছে! 👉 ফাতিয়া ও হারিসের খালাসের রায় যেন একটি সতেজ হাওয়া আর গণতন্ত্রের আশা

মানবাধিকার ও উন্নয়নের এশীয় ফোরামের (ফোরাম-এশিয়া) নির্বাহী পরিচালক মেরি আইলিন দিয়েজ-বাকালসো জোর দিয়ে বলেছেন জনস্বার্থের বিষয়ে কথা বলার জন্যে এই দুই কর্মীকে “বিচারিক হয়রানির” সম্মুখীন হতে হবে না:

ফাতিয়া ও হারিসের খালাস মানবাধিকার রক্ষাকারীদের অপরাধীকরণের বিরুদ্ধে একটি ইতিবাচক নজির স্থাপন করেছে। তা সত্ত্বেও প্রথমে তাদের এই বিচারিক হয়রানির শিকার হওয়া উচিত ছিল না। ফাতিয়া ও হারিস কেবল একজন সরকারি কর্মকর্তার সংঘটিত সম্ভাব্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা তুলে ধরে তাদের কাজ করে যাচ্ছিলেন। এটা জনস্বার্থের বিষয়।

কর্তৃপক্ষের ইলেকট্রনিক ও তথ্য লেনদেন (ইআইটি) আইনকে হাতিয়ার বানানোর আরেকটি প্রমাণ হিসেবে কর্মীরা ফাতিয়া ও হারিসের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাটি উদ্ধৃত করেছে। সুশীল সমাজের গোষ্ঠী সিভিকাসের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় গবেষক জোসেফ বেনেডিক্ট আইনের দমনমূলক বিধানগুলি পর্যালোচনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন:

এটিকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানদণ্ডের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সমস্ত বিধান পর্যালোচনা ও বাতিল করতে হবে। সরকারকে অবশ্যই মানবাধিকার রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক আচরণের অবসান ঘটাতে এবং মানবাধিকার রক্ষাকারী ও সুশীল সমাজ সংস্থাগুলিকে স্বাধীনভাবে নিরাপদে কাজ করতে দিতে হবে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্দোনেশিয়ার ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ অনুসারে ৫৩৫ জনকে জড়িত করে কমপক্ষে ৫০৪টি মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে নির্বিচারে ইআইটি আইন ব্যবহার করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্দোনেশিয়ার নির্বাহী পরিচালক উসমান হামিদ আইন সংস্কার করতে ও সরকারি কর্মকর্তাদের সমালোচনা করার জন্যে আটক কর্মীদের মুক্তি দিতে  ফেব্রুয়ারির রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জ করেছেন

বেকসুর খালাসটি এখন আরো সক্রিয় কর্মী, সাংবাদিক, ও শুধু সরকারি নীতির বিরোধিতা বা সমালোচনা বা রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব সম্পর্কে উদ্বেগ উত্থাপনের জন্যে আটকদের মুক্তির সূচনা করবে।

আগামী মাসের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে সকল প্রার্থীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি তাদের পরিপূর্ণ অঙ্গীকার ও তাদের নির্বাচনী মঞ্চে প্রকাশ্যে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিত।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মন্ত্রী লুহুত বলেছেন তিনি সরকারি প্রসিকিউটরদের পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ মুলতবি করে দেবেন।

আমরা আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে অত্যন্ত মূল্যায়ন করি এবং আশা করি ন্যায় ও সত্যের স্বার্থে প্রতিটি আইনি প্রক্রিয়াকে আরো স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলকভাবে পরিচালিত হবে। আমরা সকল পক্ষকে আইনি প্রক্রিয়াকে সম্মান ও প্রতিটি প্রক্রিয়ার জন্যে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার আহ্বান জানাই।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .