জর্জিয়ার রাষ্ট্রপতি অভিশংসন প্রক্রিয়াকে পরাজিত করেছেন

ছবি আরজু গেবুলায়েভা

ক্ষমতাসীন জর্জীয় স্বপ্ন পার্টি জর্জিয়ার রাষ্ট্রপতি সালোমে জুরাবিশভিলিকে তার ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে জর্জিয়ার সদস্যপদ পেতে ইউরোপ সফরের সিদ্ধান্তের জন্যে অভিশংসন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল ন্যূনতম ১০০ জনের সমর্থন জোগাড় করতে পারেনি। সংসদীয় ১৫০ ভোটের মধ্যে মাত্র ৮৬ জন সংসদ সদস্য অভিশংসনের পক্ষে এবং একজন সদস্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। বিরোধী বাকি সংসদ সদস্যরা হয় ভোট দেয়নি অথবা অধিবেশন সম্পূর্ণ বর্জন করেছে। ফলে একই অভিযোগে রাষ্ট্রপতি জুরাবিশভিলিকে অভিশংসনের জন্যে সংসদ আবার ভোটে যেতে পারবে না।

আলাদাভাবে ক্ষমতাসীন জর্জীয় স্বপ্ন সাংবিধানিক আদালতে জর্জীয় সংবিধানের ৫২ ধারায় বিধৃত শুধু সরকারের সম্মতিতে বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি প্রতিনিধিত্বমূলক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন এমন লঙ্ঘনের দায়ে রাষ্ট্রপতি জুরাবিশভিলির বিরুদ্ধে মামলার কথা বলেছে। আদালত ১৬ অক্টোবর সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুমতি ছাড়া আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বিদেশে সরকারিভাবে সফর করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে বলে রাষ্ট্রপতি সালোমে জুরাবিশভিলিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।

জুরাবিশভিলির আইনজীবীদের একজন মাইয়া কোপালেশভিলি ইন্টারপ্রেস নিউজকে বলেছেন, “সাংবিধানিক আদালতের সত্যিই রাষ্ট্রপতির সংবিধান লঙ্ঘনের বিষয়টি নিশ্চিতের আইনগত বা বাস্তব ভিত্তি ছিল না। ন্যায্য পরিস্থিতিতে আদালত […] এই সিদ্ধান্ত নিতো না।”

তা সত্ত্বেও আদালতের রায় ক্ষমতাসীন দলকে জুরাবিশভিলির বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া – শেষ পর্যন্ত সংসদীয় ভোট অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়, যা গন্তব্যহীন।

অভিশংসন অধিবেশনে সংসদের ভাষণে জুরাবিশভিলি সংবিধান লঙ্ঘন অস্বীকার করে বলেছেন ভোটটি জর্জিয়ার “ইউরোপীয় ভবিষ্যতের” ক্ষতি করবে। “এই প্রক্রিয়ায় আমি কোনো কিছু থেকে বঞ্চিত হবো না। আজ আমার নয়, আপনাদের ভাগ্যের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আপনি আমাকে নয় বরং আপনার – দেশের – ইউরোপীয় ভবিষ্যতের – অভিশংসন করছেন আর আপনার [অভিশংসনের পক্ষে] প্রতিটি ভোট আমাদের এই ভবিষ্যতের বিরুদ্ধেই একটি ভোট,” বলেছেন জুরাবিশভিলি।

রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন।

পরের দিন তিনি জর্জিয়ার বিক্ষোভ আইনে বিক্ষোভের সময় তাঁবু বা ‘অস্থায়ী কাঠামো’ স্থাপন নিষিদ্ধ করা ও মার্কিন-নিষিদ্ধ প্রাক্তন প্রসিকিউটর জেনারেল ওটার পার্টসখালাদজের জর্জীয় নাগরিকত্ব কেঁড়ে নেওয়ার বিতর্কিত সংশোধনীতে ভেটো দেন

মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের মতে ওয়াশিংটন রাশিয়ার অর্থনীতির “ব্যবস্থাপনা পরামর্শ খাত পরিচালনা বা পরিচালিত হওয়া” এবং জর্জিয়ার উপর রাশিয়ার “কুপ্রভাব” সম্পর্কিত থাকার কারণে জর্জিয়ার প্রসিকিউটর জেনারেল হিসেবে ২০১৩ সালে দেড় মাস কাজ করা পার্তসখালাদজেকে নিষিদ্ধ করেছিল।

অধিবেশন শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে রাষ্ট্রপতি প্রশাসন বিদেশি কূটনীতিকদের অধিবেশনে যোগ দিতে না দেওয়ার জন্যেও সংসদের সমালোচনা করে

একটি ক্রমবর্ধমান বিভাজন

বেশিরভাগ ক্ষমতা সংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকলেও জর্জিয়ার রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের ক্ষমতা সামান্য এবং প্রধানত প্রতিনিধিত্বমূলক কার্যাবলীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। চলমান আক্রমণের মধ্যেও রাশিয়ার প্রতি মোটামুটি উষ্ণ সম্পর্ক রাখা ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে রাশিয়ার ইউক্রেনে আগ্রাসনের পরেই কেবল রাষ্ট্রপতি জুরাবিশভিলি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নেন। তিনি চলমান যুদ্ধ ও রাশিয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে দলটির বক্তব্যের নিয়মিত সমালোচনা করেন

সরকার চাপিয়ে দেওয়া বিদেশী চর আইনের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে রাস্তায় বিক্ষোভের সময় রাষ্ট্রপতি জুরাবিশভিলিও জনগণ ও বিরোধীদের পাশে ছিলেন।

ক্ষমতাসীন সরকারের সাথে রাষ্ট্রপতির মতভেদের আরেকটি পদক্ষেপ হলো ২০২৩ সালের জুন মাসে ২০২২ সালের মে মাসে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত বিশিষ্ট বিরোধী সাংবাদিক নিকোলোজ গ্যারামিয়াকে ক্ষমার সিদ্ধান্ত

ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে জর্জীয় স্বপ্ন পার্টি রাষ্ট্রপতির আন্তর্জাতিক সফর নিষিদ্ধ করলেও রাষ্ট্রপতি নিষেধাজ্ঞার পরোয়া না করেই সফরের সিদ্ধান্ত নিয়ে ৩০ আগস্ট ইউরোপের উদ্দেশ্যে জর্জিয়া ত্যাগ করেন। অনলাইনে জর্মন রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমায়ারের সাথে তার সাক্ষাতের ছবি প্রচারিত হলে ক্ষমতাসীন দল রাষ্ট্রপতির “সংবিধান লঙ্ঘন করছেন” কারণ তিনি ইউরোপীয় নেতাদের সাথে দেখা করার জন্যে অনুমোদিত নন

জর্জীয় বিরোধী দল ও ইউরোপীয় সংসদের বেশ কয়েকজন সদস্য ক্ষমতাসীন জর্জীয় স্বপ্নের রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন পদক্ষেপের দ্রুত নিন্দা জানায়। একটি যৌথ বিবৃতিতে মুক্ত সমাজ জর্জিয়া ফাউন্ডেশন ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালসহ জর্জীয় সংস্থাগুলি বলেছে, “জর্জীয় স্বপ্নের জর্জিয়ার রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের দেশটির আকাঙ্ক্ষার উপর আক্রমণ।”

জুরাবিশভিলির অভিশংসন ভোটে আনার আগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জর্জিয়া শাসক দলকে “জর্জিয়ার ইউরোপীয় একীকরণ প্রক্রিয়া নস্যাৎ” প্রচেষ্টার দায়ে অভিযুক্ত করেছে

জর্জিয়ার ইইউ আকাঙ্ক্ষা

রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণের কিছুদিন পরে জর্জিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যত্বের পরিকল্পনা ঘোষণা করে। তারপর থেকে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে একাধিক সিদ্ধান্ত, বিবৃতি ও সমালোচনার কারণে ক্ষমতাসীন জর্জীয় স্বপ্ন পার্টি অস্বস্তিতে রয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকার স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিয়েও উল্টোপথ ধরেছে।

সম্প্রতি ২০২৩ সালের মে মাসে জর্জিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইরাকলি ঘারিবাশভিলি বুদাপেস্টে রক্ষণশীল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জোট (সিপিএসি) সভায় যোগ দিয়ে তিনি এলজিবিটিকিউ+ জনগণের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করে দাবি করেন তারা দেশের “ঐতিহ্যগত পারিবারিক মূল্যবোধের” বিরুদ্ধে প্রচারণা ছড়াচ্ছে। তবে ক্ষমতাসীন সরকারের শুধু এলজিবিটিকিউ+ বিরোধী অবস্থান বা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের অবনতিশীল ট্র্যাক রেকর্ডই শুধু আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেনি। জর্জীয় স্বপ্ন ইউক্রেন আক্রম পর থেকে রাশিয়ার সাথে তার সম্পর্কের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০২৩ সালের মে মাসে পুনরায় রাশিয়ার সাথে ফ্লাইট চালু করা এবং নিষিদ্ধ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারগুলিকে জর্জিয়া পাড়ি দেওয়ার অনুমতি দেওয়া।

ব্রাসেলসে জুরাবিশভিলির সাথে বৈঠকের পর ইউরোপীয় পর্ষদের সভাপতি চার্লস মিশেল ইইউ-এর আগের পর্যবেক্ষণ পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন সরকার “ন্যায়বিচার, অভিজাততন্ত্র বিরোধিতা এবং দুর্নীতি বিরোধী ও গণমাধ্যমে বহুত্ববাদ” সংস্কার চালিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ইইউ জর্জিয়ার প্রার্থীতা সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

ইইউ ২০২৩ সালের নভেম্বরে জর্জিয়ার ইইউ সদস্যপদ প্রার্থীতা সম্পর্কে একটি সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .