একটি গণমাধ্যম অংশীদারিত্বের আওতায় কানেক্টাসে সুহেলিস তেজেরো লিখিত নিবন্ধের একটি উদ্ধৃতাংশ গ্লোবাল ভয়েসেসে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে।
ইকুয়েডরে ২০ আগস্ট, ২০২৩ অনুষ্ঠিত অশান্ত নির্বাচন শুধুই রাষ্ট্রপতি গুইলেরমো ল্যাসোর উত্তরসূরি নির্বাচনের প্রথম পদক্ষেপ নয়, এটা পরিবেশগত মজুদ ও দেশের যুধ্যমান অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সক্ষম কাঁচামালের উৎসদেশের দুটি অঞ্চলকে রক্ষার একটি অভূতপূর্ব পদক্ষেপও বটে।
দুটি ভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ইকুয়েডরের জনসংখ্যার ৫৯ শতাংশ ইয়াসুনি জাতীয় উদ্যানে তেল আহরণ বন্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছে, আর ৬৮ শতাংশ ছোট, মাঝারি বা বড় যে আকারেরই হোক না কেনচোকো আন্দিনো বায়োমণ্ডল রিজার্ভের সমস্ত খনন বন্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছে। এর পরিবেশগত সংরক্ষণের জন্যে এক দশক-দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে এটি পরিবেশগত আন্দোলনের জন্যে একটি বিজয়। তবে এই ব্যবস্থা কার্যকর হলে দেশের আর্থিক খাত কোথায় যাবে?
পরের বছরের মধ্যে ইকুয়েডরকে ইয়াসুনি এলাকায় হাইড্রোকার্বন উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। ইতোমধ্যে এটিকে অবশ্যই তেল ব্লক থেকে আসা তার মোট রাজস্বের ৭ শতাংশ ১২০ কোটি ডলার (প্রায় ১৩,১৭৩ কোটি টাকা) প্রতিস্থাপনের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এখনই এটি ঘটানোর একটি অনুপযুক্ত সময় বিষয়টিকে আরো খারাপ করে তুলেছে।
ইকুয়েডর বর্তমানে আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মহামারী ২০২০ সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা থেকে পুনরুদ্ধার টেকসই না হওয়াতে ২০২১ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিক থেকে এর অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ধীরগতির হয়ে এসেছে। ইয়াসুনি এলাকায় তেল আহরণ বন্ধের সাম্প্রতিক ব্যবস্থা পরিবেশের জন্যে ভাল হলেও এটি ইকুয়েডরের সামাজিক ও আর্থিক দৃশ্যপটের জন্যে সম্ভাব্য বিষয়গুলিকে আরো খারাপ করে তুলতে পারে।
#Ecuador marca un precedente mundial en el debate climático
En un histórico plebiscito los votantes ecuatorianos han decidido suspender la explotación de crudo en un yacimiento situado en una de las zonas más biodiversas del mundo: el Parque Nacional #Yasuní. /pw-ft pic.twitter.com/eQ9RBeYjVD
— DW Español (@dw_espanol) August 22, 2023
জলবায়ু বিতর্কে #ইকুয়েডর বিশ্বব্যাপী নজির তৈরি করেছে
একটি ঐতিহাসিক গণভোটে ইকুয়েডরবাসীরা বিশ্বের সবচেয়ে জীববৈচিত্র্যপূর্ণ অঞ্চলগুলির মধ্যে একটিতে তেলের সঞ্চিতির আহরণ বন্ধের পক্ষে ভোট দিয়েছে: #ইয়াসুনি জাতীয় উদ্যান।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাফায়েল কোরেয়া ইকুয়েডরের তেল আহরণ ত্যাগে সহায়তার জন্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ৩৬০ কোটি ডলার (প্রায় ৩৯,৫২০ কোটি টাকা) তহবিল আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইয়াসুনি সঞ্চিতি থেকে তেল উত্তোলনের পক্ষ নেন। গণভোটের ফলাফল জানার কয়েকদিনের মধ্যে কোরেয়া এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। “প্রতি বছর ১২০ কোটি ডলার (প্রায় ১৩,১৭৩ কোটি টাকা) মূল্যের একটি শিল্প হারালে বিশেষ করে কর্মকাণ্ডের এলাকায় একটি বিপর্যয়কর প্রভাব পড়বে।”
তেল বিশেষজ্ঞ লুই অলিভেরোসের মতে এতো অল্প সময়ে ইকুয়েডরের রাজস্ব বৈচিত্র্যময় করা অত্যন্ত কঠিন হবে। এটি শেষ পর্যন্ত গভীর অর্থনৈতিক পতন ও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণ হতে পারে। “ভেনিজুয়েলায় যা ঘটেছে তা ইকুয়েডরেও ঘটতে পারে। ইকুয়েডরের ডলারভিত্তিক অর্থনীতি এটিকে আরো জটিল করেছে, তাই এটিকে শাখান্বিত ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ করতে আরো বেশি খরচ হবে। ডলারভিত্তি একটি বড় সীমাবদ্ধতা,” তিনি উল্লেখ করেন।
ইকুয়েডর বর্তমানে পরিবেশ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মুখোমুখি তা লাতিন আমেরিকার আহরণবাদের উপর চলমান বিতর্ক ও এই অঞ্চলের কাঁচামালের উপর অত্যন্ত নির্ভরতা থেকে উত্তরণের প্রয়োজনীয়তাকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক কমিশন (ইসিএলএসি) থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে ২০২১ সালে এই অঞ্চলের রপ্তানির ৫৩.৮ শতাংশের জন্যে কাঁচামাল ছিল। এখানে বড় সমস্যা হলো দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলি “এখন কাঁচামালে তাদের রপ্তানি বিশেষীকরণকে আরো জোরদার করেছে।“
আপনি লাতিন আমেরিকায় যতো দক্ষিণে তাকাবেন, পরিস্থিতি ততো খারাপ দেখবেন। দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় সব দেশেই আহরণবাদ ও প্রচুর অর্থসহ ভোগ্যপণ্যের উচ্চ মূল্য চক্র দেখতে পাবেন। প্যারাগুয়ে, ইকুয়েডর ও ভেনিজুয়েলার অর্থনীতি সবই পণ্যের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। একটি নতুন সদস্য ঈর্ষণীয় তেলের মজুদ ব্যাপক বৈষম্যের দরিদ্র দেশ গায়ানা শীঘ্রই এই দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাবে যোগ দেবে। একটি হাইড্রোকার্বন শক্তিঘরে পরিণত হতে চলা গায়ানা শেষ পর্যন্ত এই হাইড্রোকার্বনের উপরই আশংকাজনকভাবে নির্ভরশীল থাকবে।
অর্থনীতিতে বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে সেরা ট্র্যাক রেকর্ডের দেশ মেক্সিকো যার কাঁচামাল এখন মোট রপ্তানির মাত্র ১১ শতাংশ। মেক্সিকোর বাজারের নিছক আকার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এর ভৌগলিক নৈকট্য দেশটির পণ্য নির্ভরশীলতার অবসান ঘটাতে সাহায্য করেছে।
সামগ্রিক পরিবেশ সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে দ্বিধা তুলনামূলক নতুন হলেও উপমহাদেশটির অর্থনীতির বৈচিত্র্যের প্রয়োজনীয়তা পুরনো বিতর্কের বিষয়। জাতিসংঘের লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক কমিশন (ইসিএলএসি), আন্তঃআমেরিকা উন্নয়ন ব্যাংক ও বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি পতনের আগে সম্পদ থাকার সময়ই ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র ভাঙ্গার জরুরি প্রয়োজনীয়তার উপর বারবার গুরুত্ব আরোপ করেছে।
একটি আকর্ষণীয় প্রণোদনা
জার্মানির কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লাতিন আমেরিকা গবেষণা কেন্দ্রের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হ্যান্স-ইয়ুর্গেন বুর্চার্ড পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে জনগণের কাছে কোনো সুবিধা না পৌঁছালেও আহরণবাদ থেকে পাওয়া সহজ রাজস্ব একটি আকর্ষণীয় প্রণোদনা। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে বেশ কিছু শিক্ষাগত সমীক্ষা সতর্ক করেছে এটি আকর্ষণীয় হলেও প্রায়শই ভারসাম্যহীন কাঁচামাল আহরণের সাংঘাতিক পরিবেশগত ও সামাজিক মূল্য চুকাতে হয়।
“আহরণবাদের নেতিবাচক প্রভাবে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মূল্যকে উপেক্ষা করে পরিবেশগত মূল্যের হিসাব-নিকাশকে মারাত্মকভাবে বিকৃতি করলেই কেবল অর্থনৈতিক সুবিধা দেখা সম্ভব,” লাতিন আমেরিকা কেন্দ্রের সামাজিক প্রতিবেশ বিদ্যা বিভাগের এদুয়ার্দো গুদিনাস তার “শেষবিন্দু পর্যন্ত: আহরণবাদ টেকসইকরণের আখ্যান” গবেষণাপত্রে লিখেছেন।
গুদিনাস তার গবেষণায় সতর্ক করেছেন সম্প্রদায়গুলিকেই শেষ পর্যন্ত মূল্য পরিশোধ করতে হয়। “এই সুবিধা থেকে অর্থনৈতিক খরচগুলি বাদ দেওয়ার কঠোর কোনো হিসেব না করায় সস্তা বিবেচনা করায় হাইড্রোকার্বন রপ্তানি স্বাভাবিকভাবেই ভাল ব্যবসা করে (…) উপেক্ষা করার উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক আখ্যানগুলি সারাক্ষণই আহরণবাদ থেকে এই খরচগুলিকে আলাদা করে, ” তিনি উল্লেখ করেন।
এই বিষয়ে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের প্রাক্তন জ্বালানি ও খণিজ মন্ত্রী আন্তোনিও ইসা কন্দে বিশ্বাস করেন বাস্তবেই অ-নবায়ন সম্পদের পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে টেকসই আহরণ সম্ভব। বেশ কয়েক বছর ধরে পর্যটন-নির্ভর রাজস্বের এই ক্যারিবীয় দ্বীপটি লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম খনিতে সোনা আহরণ ও ক্যারিবীয় অববাহিকায় তার সম্ভাব্য গ্যাসের মজুদ খোঁজার মাধ্যমে এর প্রাকৃতিক সম্পদের আরো বেশি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। “শুধু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আহরণ শিল্পের বিকাশ সম্ভব। প্রযুক্তিগত বা পরিবেশগত কারণে এটা করা সম্ভব না হলে যেখানকার জিনিস সেখানেই রেখে দেওয়া ভাল,” কনেক্টাসকে বলেছেন ইসা কন্দে।
তবে তিনি এই সমস্যাটি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রেও সমালোচনামূলক ছিলেন। তিনি বলেন, “খণিজ আহরণ বিরোধী আবেগে কর্তৃপক্ষের প্রতি অবিশ্বাসের চিহ্ন দেখায়,” তিনি বলেন। অ-নবায়নযোগ্য সম্পদ আহরণে উপমহাদেশের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা সরকারের জনগণকে পরিবেশগত প্রভাব কমাতে চেষ্টা করা ‘সবুজ আহরণবাদ’ এর মতো কোনো আহরণ বোঝানো সহজ করে না।
নিবন্ধের বাকি অংশ কানেক্টাস-এ পড়া যাবে।