‘বর্জ্য ফেলা বন্ধ করুন': প্রশান্ত মহাসাগরীয় সম্প্রদায়গুলির জাপানের পারমাণবিক শোধিত জল অবমুক্তির প্রতিবাদ

Protest against Fukushima water

জাপানের ফুকুশিমা স্থাপনা থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে পরিশোধিত জল ফেলার বিরুদ্ধে ফিজিতে বিক্ষোভ। এক্স (আগেকার টুইটার) পোস্ট থেকে নেওয়া ৩৫০ প্রশান্ত মহাসাগরীয়র ছবি

জাপান অবলুপ্ত ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে শোধিত জল ছেড়ে দেওয়ার পর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল জুড়ে বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে

একটি ভূমিকম্প ও সুনামির ফলে ২০১১ সালের মার্চ মাসে ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে একটি পারমাণবিক বিপর্যয় ঘটে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ভূগর্ভস্থ জলকে দূষিত করে। এই জল ২০১১ সাল থেকে অকুস্থলে সংগ্রহ, শোধন ও সংরক্ষণ করা হয়েছে।

টোকিও বিদ্যুৎ শক্তি কোম্পানি (টেপকো) ২০২১ সাল থেকে উন্নত তরল প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা (এএলপিএস) নামের একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফুকুশিমার পরিশোধিত জলের “নিরাপদ” মুক্তির জন্যে অবকাঠামো প্রস্তুত করছে। জাপান সরকার এই পরিকল্পনাটি অনুমোদন করলেও বিভিন্নঅংশীজন শুধু জাপানে নয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও এর প্রভাব নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

সম্ভাব্য ক্ষতির দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগের মধ্যেই ২৪ আগস্ট জাপান শোধিত জল নিঃসরণ শুরু করে। টেপকো আগামী তিন দশকের মধ্যে জল ছাড়ার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেছে:

সামুদ্রিক নিষ্কাশনের প্রাথমিক পর্যায়ে একটি দুই-ধাপের প্রক্রিয়া ব্যবহার করে খুব অল্প পরিমাণ সাবধানে নিষ্কাশন করা হবে।

প্রথমত এএলপিএস শোধিত জলের প্রাথমিক নিষ্কাশনের ১ম ধাপে আজ খুব অল্প পরিমাণে এএলপিএস শোধিত জল সমুদ্রের জলের সাথে মিশিয়ে উল্লম্ব স্রাব দণ্ডে (উপরের জলের ট্যাঙ্কে) সংরক্ষণ করা হবে যাতে এএলপিএস শোধিত জল পরিকল্পনা অনুসারে পাতলা করা হচ্ছে কিনা যাচাই করা যায়। এই সঞ্চিত জলের নমুনা নিয়ে ট্রিটিয়ামের ঘনত্ব মেপে ২য় ধাপে চলে গিয়ে আমরা ২৪ আগস্ট থেকে সমুদ্রে অবিচ্ছিন্নভাবে নিঃসরণের দিকে যাবো।

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) টেপকোর প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করে পরিবেশের উপর শোধিত জলের “নগণ্য” প্রভাব উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

আইএইএ উপসংহারে পৌঁছেছে এএলপিএস -শোধিত জল নিষ্কাশনের জন্যে জাপানের পদ্ধতি ও কার্যক্রম প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মানগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বর্তমানে টেপকো পরিকল্পিত ও মূল্যায়িত সমুদ্রে ধীরে ধীরে পরিশোধিত জলের নিয়ন্ত্রিত নিঃসরণ মানুষ ও পরিবেশের উপর নগণ্য তেজষ্ক্রিয় প্রভাব ফেলবে।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় সরকারগুলির অফিসিয়াল গ্রুপ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ ফোরাম বলেছে শোধিত জলের অবমুক্তি সমর্থন বা প্রত্যাখ্যান নিয়ে বিভক্ত হলেও আরো তথ্য ও স্বচ্ছতার জন্যে তারা জাপানের সাথে সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখবে।

তবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় পরিবেশ গোষ্ঠীর কাছে শোধিত জল ফেলা এই অঞ্চলের সামুদ্রিক জীবন ও ভবিষ্যত ধ্বংসের সমতুল্য। প্রশান্ত মহাসাগরীয় ন্যায়বিচারের বিবৃতিটি বেসরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে এই জনপ্রিয় অনুভূতিকে প্রতিফলিত করে:

এভাবে জাপানের পারমাণবিক বর্জ্য জল ফেলার সিদ্ধান্তের প্রভাব সুদূরপ্রসারী ও সম্ভাব্যভাবে বিপর্যয়কর। এটি শুধু সামুদ্রিক জীবন ও বাস্তুতন্ত্রের প্রতি একটি গুরুতর হুমকির সৃষ্টির পাশাপাশি জীবন ও জীবিকার জন্যে এই জলের উপর নির্ভরশীল প্রশান্ত মহাসাগরীয় সম্প্রদায়ের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়েও গুরুতর উদ্বেগ উত্থাপন করে।

সুভা থেকে অ্যালবার্ট উদ্যানের কেন্দ্রস্থলে আজকের ফুকুশিমা পারমাণবিক বর্জ্য জল বিরোধী মিছিলের অংশ নিতে তরুণ ও বৃদ্ধ নানা বর্ণের জনসমুদ্র জড়ো হয়েছে।

ফিজিতে শত শত বাসিন্দা প্রশান্ত মহাসাগরে জাপানের শোধিত জল নিষ্কাশনের নিন্দা জানাতে রাস্তায় নামে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় নারীবাদ চর্চাকারী সম্প্রদায় সম্ভাব্য বিকিরণ মুখে পড়া নিয়ে সতর্ক করেছে:

#প্রশান্ত মহাসাগরে জাপানের #ফুকুশিমা পারমাণবিক বিপর্যয়ের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য জল ফেলার পদক্ষেপ আমাদের অঞ্চলে আন্তঃপ্রজন্মীয় বোঝা সৃষ্টি করছে। এই মারত্মক ও বিষাক্ত শিল্প নিয়ে বিজ্ঞান যাই বলুক না কেন, বিকিরণ উপশমের নিরাপদ কোনো পথ্য নেই।

ক্ষমতায়নের কথামালা ভাগাভাগি করা, এক মুহুর্ত নীরবতা পালন এবং জাপানের বিরোধিতা করে অনেক অংশগ্রহণকারীর শুয়ে পড়ার মিছিলটি অ্যালবার্ট উদ্যানে শেষ হয়। #পারমাণবিকমুক্তপ্রশান্তমহাসাগর #ফুকুশিমাকেনাবলুন #নতুনপরিচ্ছন্নপথ।

বিক্ষোভ চলাকালে সম্প্রদায়ের নেতারা কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মতো উন্নত দেশের পারমাণবিক পরীক্ষার কেন্দ্র হয়ে ওঠা প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন। একই সম্প্রদায়গুলি জলবায়ু পরিবর্তনের কঠোর প্রভাবের উচ্চতর ঝুঁকির মুখোমুখি। ফুকুশিমার পরিশোধিত জল নিষ্কাশনের কারণে সম্ভাব্য বিপর্যয়কর প্রভাবের কারণে সৃষ্ট যেকোনো হুমকি এই সম্প্রদায়ের দুর্ভোগকে আরো বাড়িয়ে তুলছে।

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরাও এই অঞ্চলে পারমাণবিক বিরোধী আন্দোলনে অনুপ্রাণিত স্লোগান দেয়: “(পারমাণবিক বর্জ্য) নিরাপদ যখন, টোকিওতেই ফেলুন! নিরাপদ যখন, প্যারিসে পরীক্ষা করুন! নিরাপদ যখন, ওয়াশিংটনে সংরক্ষণ করুন! কিন্তু আমাদের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে পারমাণবিক মুক্ত রাখুন!”

সংখ্যায় শক্তি

গতকাল আমরা প্রশান্ত মহাসাগরে জাপানের শোধিত পারমাণবিক বর্জ্য জল নিষ্কাশন শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের উদ্বেগ জানাতে আমাদের নাগরিক দায়িত্ব ও অধিকার প্রয়োগ করেছি। আমরা সবসময় একটি #পরিচ্ছন্নপ্রশান্তমহাসাগরের পক্ষে কথা বলেছি এবং আমাদের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তা করবো।

সামোয়া-বংশোদ্ভূত নিউজিল্যান্ডের নাগরিক ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ইতিহাসবিদ ডঃ মার্কো ডে  জং তেউইলা ফুতাইয়ের সাথে কথা বলার সময় আলোচনা করেছেন প্রশান্ত মহাসাগরে ভিন্নমতের কণ্ঠ নীরব করতে কীভাবে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করা হচ্ছে৷

প্রশান্ত মহাসাগরীয় জনগণ অবৈজ্ঞানিকভাবে এটি মোকাবেলা করছে বলে পরামর্শ দেওয়া ঔপনিবেশিক দায় এড়ানোর একটি সর্বোচ্চ রূপ যা আমাদের সম্মিলিত অধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও আন্তঃপ্রজন্মীয় প্রভাবগুলির প্রতি আমাদের যথার্থ উদ্বেগকে অস্বীকার করে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় মানুষ বলে আমরা জটিল সমস্যাগুলি বুঝতে পারিনা বলাটা শুধু বর্ণবাদী ছকের দিকে ঝুঁকে পড়া একটি অসত্য। সত্যিই আমরা আমাদের অধিকার সম্পর্কে জানি এবং এটি একটি আন্তঃসীমান্ত ক্ষতির সমস্যা।

আপনার প্রশান্ত মহাসাগরীয় সামাজিক বা অর্থনৈতিক বিশেষাধিকার ও ক্ষমতা থাকলে এটিকে ভালোর জন্যে ব্যবহার করুন। এটি অন্যদের কাছে ছেড়ে দেবেন না।

#ফুকুশিমাপারমাণবিকবর্জ্যজল ফেলার অবিচারের বিরুদ্ধে উচ্চস্বরে বলুন!

জাপান ও আমাদের নেতাদের চাপ দিয়ে এটি বন্ধ করতে সাহায্য করুন! আমাদের ও আগামী প্রজন্মের জন্যে আসুন! #শক্তিশালীপ্রশান্তমহাসাগর

জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ডফিলিপাইনেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে, চীন জাপানের কয়েকটি প্রিফেকচার থেকে সামুদ্রিক খাবার আমদানি নিষিদ্ধ করেছে

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .