মিয়ানমারের সামরিক শাসকগোষ্ঠী বিশাল ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি বৃহৎ মারাবিজয়া বুদ্ধ মূর্তি উন্মোচন করেছে, যাকে সমালোচকরা জান্তার নৃশংস নেতৃত্ব থেকে বিভ্রান্তের প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছে।
সামরিক বাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখলের অব্যবহিত পরেই বিরোধী বাহিনী ও সমালোচকদের বিরুদ্ধে সহিংস দমনাভিযান চালায়। দুই বছরের বেশি সময় পরেও জান্তা বৈধতা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে না বলে প্রতিরোধ তীব্রতর হয়েছে।
জান্তা নেতা জ্যেষ্ঠ্য জেনারেল মিন অং হ্লাইং ১ আগস্ট দেশের রাজধানী নেপিততে মারাবিজয়া বুদ্ধ মূর্তিটি উন্মোচন করেন। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম একে “বিশ্বের সর্বোচ্চ মার্বেল পাথরের বসে থাকা বুদ্ধ মূর্তি” বলে অভিহিত করেছে।
মারাবিজয়া মানে মারা (বৌদ্ধ ধর্মে শয়তানের মতো) জয় করা। “বুদ্ধ শয়তানের হস্তক্ষেপকে জয় করেছেন।” এটিতে বর্মি সংখ্যাতত্ত্বে বিশেষ বিবেচিত নয় সংখ্যা সম্পর্কিত অসংখ্য চিহ্ন রয়েছে। এটি ব্যাখ্যা করে কেন মূর্তিটির ওজন ৫,২৯২ টন যার সংখ্যাগুলি আলাদাভাবে দুটি নয় পর্যন্ত যোগ করে। সিংহাসনের উচ্চতা ১৮ ফুট (আবার, দুটি নয়), এবং মূর্তির উচ্চতা ৬৩ ফুট (যা কয়েকটি নয় সংখ্যাকে যোগ করে)।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম মূর্তি নির্মাণের তাৎপর্য সম্পর্কে কথা জান্তা নেতাকে উদ্ধৃত করেছে, যিনি বলেছেন:
[মূর্তিটির] উদ্দেশ্য থেরোবাদী বৌদ্ধধর্মের একটি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় অবদান রাখার জন্যে মিয়ানমারে থেরোবাদী বৌদ্ধধর্মের বিকাশ দেখানো।
জান্তা প্রকল্পটিতে ৫,৮০০ কোটি কিয়াত (প্রায় ৩০১.৩৭ কোটি টাকা) ব্যয় করেছে। এটিতে ভারতের বৌদ্ধ ধর্মের সাতটি পবিত্র স্থান ও সারা মিয়ানমারের বিখ্যাত প্যাগোডাগুলি থেকে মাটি আনা হয়েছে। উৎসবের কক্ষটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় সংঘের [বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের] ৯০০ সদস্য ও ১,২০০ সাধারণ মানুষকে জায়গা দিতে পারে। কর্তৃপক্ষ বলেছে মূর্তিটি টেকসই উপকরণ দিয়ে তৈরি যা ১২০ মাইল বেগে ঝড় বা ৮.৮ তীব্রতার ভূমিকম্পের প্রভাব সহ্য করতে পারে।
সমালোচকরা উল্লেখ করেছে জান্তা গণতন্ত্রপন্থী শক্তিকে দুর্বল করার চেষ্টায় পূর্ববর্তী সামরিক স্বৈরশাসকদের মতো বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি ভক্তি দেখানোর পুনরাবৃত্তি করছে। সাবেক জান্তা নেতা জেনারেল নে উইন ১৯৮৬ সালে মহাবিজয়া (যার অর্থ অসাধারণ সাফল্য) প্যাগোডাকে পবিত্র করেন। জ্যেষ্ঠ্য জেনারেল থান শ্বে ২০০২ সালে লোকচাঁথা অভয়া লাভা মুনি নামে পরিচিত ইয়াঙ্গুনে একটি মার্বেল বুদ্ধ মূর্তিকে পবিত্র করার অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন।
থান লুইন টাইমসের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে বিখ্যাত সন্ন্যাসী সায়াদাও মিন থন নিয়া মিয়ানমারের সাধারণ নাগরিকদের দুর্ভোগের সময় প্যাগোডা নির্মাণের জন্যে জান্তাকে তিরস্কার করেন।
জনগণ যখন কষ্ট ও বড় দুঃখের মধ্যে তখন স্তূপ, প্যাগোডা এবং মূর্তি নির্মাণ বুদ্ধের শিক্ষা নয়। এটা শুধু দেখানোর জন্যে। বুদ্ধ তাঁর অস্থায়ী দেহের দিকে তাকানোর চেয়ে তাঁর শিক্ষার চর্চা পছন্দ করতেন। বুদ্ধের ধম্ম চর্চা করাই তাঁর প্রকৃত উপাসনা।
বুদ্ধ শিখিয়েছেন ধম্মকে চর্চার মাধ্যমে উত্তর দিতে হবে। সুতরাং সেনাবাহিনীর তাদের অপরাধ ঢাকতেধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ করছে। তাদের কাজ বুদ্ধের শিক্ষার বিরুদ্ধে।
নিষিদ্ধ স্বাধীন গণমাধ্যম কোম্পানি ইরাবতী সংখ্যাগরিষ্ঠরা যখন স্বৈরশাসনাধীন তখন একটি বৃহৎ বুদ্ধ মূর্তি নির্মাণের প্রহসনের দিকে ইঙ্গিত করেছে:
বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে নিজেদের বিশ্বাসের রক্ষক প্রতীয়মান করতে শাসকগোষ্ঠীর নেতাদের সবচেয়ে উঁচু বুদ্ধমূর্তি নির্মাণের মধ্যে একটি ভয়ানক প্রহসন রয়েছে; দেশের জনগণ নিজেদের বিশ্বের এই অংশে সবচেয়ে ক্ষুদ্র, অরক্ষিত ও কম সুরক্ষিত মানুষ মনে করে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার অর্থায়িত রেডিও মুক্ত এশিয়া মূর্তি সম্পর্কে তাদের পর্যবেক্ষণ জানতে কিছু বাসিন্দার সাক্ষাৎকার নিয়েছে৷
আমি নিশ্চিত সরকারি কর্মচারী ছাড়া কোনো বেসামরিক ব্যক্তি অনুষ্ঠানটিতে যায়নি। শুধু যোগদানে বাধ্য [জান্তা] কর্মীরা সেখানে গিয়েছে। এমনকি সামরিক বাহিনী তাদের জন্যে পরিবহনের ব্যবস্থাও করেছে।
আরেক বাসিন্দা বলেছেন তারা সাইটটি পরিদর্শন করবেন না।
আগের প্যাগোডার চেয়ে বেশি বিখ্যাত করতে আমরা জান্তাকে মূর্তিটি নির্মাণে প্রচুর অর্থ ও জনশক্তি ব্যবহার করতে দেখছি। সামরিক স্বৈরশাসকের রক্তমাখা হাতে নির্মিত বলে আমার এটি পরিদর্শনের কোন পরিকল্পনা নেই।
আগস্টের শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ বিনামূল্যে। কর্তৃপক্ষ বলেছে “মারাবিজয়া বুদ্ধ মূর্তির মতো আর কোনো স্থাপত্যকীর্তি কোথাও পাওয়া যাবে না, মূর্তিটির বিশদ রক্ষণাবেক্ষণের কাজগুলি অবশ্যই করা উচিত,” তাই চাঁদা নেওয়া আবশ্যক।
চাঁদা আদায়ের সিদ্ধান্ত জনসাধারণের মধ্যে উপহাসের সৃষ্টি করেছে কারণ নতুন প্যাগোডাটিই দেশের একমাত্র পবিত্র স্থান যেখানে তীর্থযাত্রীদের অর্থ প্রদান করতে হবে।
DVB Weekly Cartoon: Welcome to Maravijaya Buddha Statue, the world's largest and most expensive #WhatsHappeningInMyanmar pic.twitter.com/qEZvlwT9wf
— DVB English News (@DVB_English) August 22, 2023
ডিভিবি সাপ্তাহিক কার্টুন: বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে ব্যয়বহুল মারাবিজয়া বুদ্ধ মূর্তিতে স্বাগতম #মিয়ানমারেকীহচ্ছে