মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষ বৌদ্ধ ধর্মীয় উদযাপনের সময় সাত হাজারেরও বেশি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং ক্ষমতাচ্যুত নেতা অং সান সু চি ও উইন মিন্টকে আংশিক ক্ষমা করেছে। সমালোচকরা বলছে আন্তর্জাতিক চাপ কমাতে ও বিরোধীদলকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সেনাবাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখলের অব্যবহিত পরেই স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও রাষ্ট্রপতি উইন মিন্টকে আটক করে। একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জান্তা বেসামরিক শাসন পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিলেও দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সহিংসভাবে সকল প্রকার ভিন্নমতকে দমন করে দেশকে একটি বর্ধিত জরুরি অবস্থার অধীনে রেখেছে।
বিরোধীদের লক্ষ্য করে দমনাভিযান সত্ত্বেও গণতন্ত্রপন্থী শক্তিগুলি জনসমর্থন অর্জন অব্যাহত রাখায় সামরিক বাহিনী তার শাসনকে স্থিতিশীল করতে ব্যর্থ হয়েছে। জান্তাবিরোধী কর্মী ও জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি সামরিক স্বৈরশাসনকে হটানোর জন্যে প্রচারণা শুরু করেছে।
এদিকে স্বাধীন গণমাধ্যম সংস্থাগুলি ধারাবাহিকভাবে জান্তার বর্বরতা ও দেশজুড়ে সংঘাতের প্রভাব প্রকাশ করেছে। মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষও কূটনৈতিক স্বীকৃতি ও সংখ্যাগরিষ্ঠ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন লাভ করতে পারেনি।
তীব্র সংকটের মধ্যে সামরিক সরকার বুদ্ধের দেওয়া প্রথম ধর্মোপদেশ স্মরণের ধম্মসেটক্য দিবস উপলক্ষ্যে ৭,৭৪৯ জন বন্দিকে মুক্তি দিলেও রাজনৈতিক বন্দিদের সহায়তা সমিতি জানিয়েছে তাদের হিসেবে অভ্যুত্থানের পর থেকে বন্দি ১৯,৭৩৩ জন কারাবন্দীর মধ্যে মাত্র ১২০ জন রাজনৈতিক বন্দি এই সাধারণ ক্ষমায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
অং সান সু চি ১৪টি অন্যান্য মামলায় দোষী সাব্যস্ত থাকায় ও উইন মিন্টের কারাদণ্ডের মেয়াদ মাত্র চার বছর কমানোতে প্রদত্ত আংশিক ক্ষমা তাদের মুক্তির দিকে পরিচালিত করবে না।
বিরোধীদলের মুখপাত্র ক্ষমাটিকে “প্রসাধনী” আখ্যা দিয়ে বলেছেন “আন্তর্জাতিক চাপ কমাতে এই পদক্ষেপটি সরাসরি শাসকগোষ্ঠীর নোংরা রাজনীতির গ্রন্থ থেকে বেরিয়ে এসেছে।” আরেক বিরোধীদলীয় নেতা গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
“We welcome any improvement in Daw Aung San Suu Kyi conditions, but the military’s ‘pardon’ changes nothing. It does not change the daily bombing of villages, 17,000 people still in prison, economic ruin. It does not change our determination to end military rule in Myanmar.”
— Mahn Winn Khine Thann (@MahnWinnKhine) August 1, 2023
“আমরা দ’তে (রাজধানীতে) অং সান সুচির অবস্থার যেকোনো উন্নতিকে স্বাগত জানালেও সামরিক বাহিনীর ‘ক্ষমা’ কিছুই পরিবর্তন করবে না। এটি গ্রামে প্রতিদিনের বোমা হামলা, এখনো কারাগারে থাকা ১৭,০০০ মানুষ, অর্থনৈতিক ধ্বংসের পরিবর্তন করবে না। এটি মিয়ানমারে সামরিক শাসন অবসানে আমাদের সংকল্পকে পরিবর্তন করবে না।”
একজন রাজনৈতিক কর্মী জোর দিয়ে বলেছেন জান্তা বিরোধী প্রতিরোধ গতি পেতে থাকবে:
Even the most brutal armed gang, as such, has to respond to the calls of the people amid continued peoples’ resistance.
Their game is nothing new. But the resistance & our calls for political change offer long-lasting solutions for #Myanmar.
March on twd our goals. ✊️ https://t.co/kn5klS7FWf
— Thinzar Shunlei Yi (@thinzashunleiyi) August 1, 2023
এমনকি সবচেয়ে নৃশংস সশস্ত্র দলকেও ক্রমাগত প্রতিরোধের মুখে জনগণের আহ্বানে সাড়া দিতে হয়।
তাদের খেলা নতুন কিছু না হলেও আমাদের প্রতিরোধ ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের আহ্বান #মিয়ানমারের জন্যে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান প্রদান করে।
আমাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ✊️
একটি সম্পাদকীয়তে সংবাদ ওয়েবসাইট মিয়ানমার_এখন উল্লেখ করেছে জান্তা বিরোধী শক্তি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করতে একটি পুরানো কৌশল ব্যবহার করছে।
এর সবই পূর্ববর্তী শাসকগোষ্ঠীর খেলার বই থেকে বেরিয়েছে।: সামরিক বাহিনী তার অবস্থান নরম করতে ইচ্ছুক এমন বিভ্রম তৈরি করতে সু চিকে ব্যবহার করে দেশীয় প্রতিরোধ দুর্বল ও আন্তর্জাতিক মতামতকে বিভক্ত করতে এই কল্পকাহিনী ব্যবহার করছে।
পূর্বে প্রাক্তন সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার কারণে অভ্যুত্থানের পরে আটক অস্ট্রেলীয় অর্থনীতিবিদ শন টার্নেলও জান্তার জারি করা ক্ষমাকে উপহাস করেছেন।
A regime that remembers everything, but learns nothing. But, they seek to manipulate a world that, when it thinks about Myanmar at all, neither remembers nor learns. Will Myanmar’s junta get away with it? Are people that foolish, gullible, ignorant and selfish? pic.twitter.com/cAANhu2yak
— Sean Turnell (@TurnellSean) August 1, 2023
একটি শাসকগোষ্ঠী সবকিছু মনে রাখলেও কিছুই না শিখে তারা কিছু মনে না রেখে বা শিখে মিয়ানমারের কথা চিন্তা করা একটি বিশ্বকে পরিচালনা করতে চায়। এটা করে মায়ানমারের জান্তা কি রেহাই পাবে? জনগণ কি এতোটাই বোকা, ভোলা, অজ্ঞ ও স্বার্থপর?
তিনি জোর দিয়ে বলেন ক্ষমতাচ্যুত নেতাদের গ্রেপ্তার করাই উচিত হয়নি:
যাদেরকে প্রথমে সাজা দেওয়াটাই উচিত হয়নি তাদের কারাদণ্ডের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে মিয়ানমারের সমস্যার সমাধান হবে না। মিয়ানমারে বাস্তব পরিবর্তন সম্ভব হলেও “ক্লিক নেওয়ার চালাকি” যতোই আকর্ষণীয় হোক না কেন অর্থহীন অঙ্গভঙ্গির প্রশংসা থেকে সেটা আসবে না। সত্যিই খুশি হওয়ার মতো কিছু না হওয়া পর্যন্ত এই ধরনের ব্যাপক অনলাইন প্রলোভনের লাইক বোতামটি না চাপাই ভাল।
একটি সম্পাদকীয়তে সংবাদ ওয়েবসাইট ইরাবতী ক্ষমাটিকে “অভিভূত করার মতো হলেও হাস্যকর” বলে বর্ণনা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জান্তার বিরুদ্ধে তার চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
ক্রিয়াশীল সকলের উচিত অবিলম্বে সু চি ও ক্ষমতাচ্যুত সরকারের অন্যান্য আটক নেতাদের পাশাপাশি নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও অন্যান্য সকল রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবি জানানো।
মিয়ানমারে আসিয়ান [দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির সমিতি] ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্থিতিশীলতা ও শান্তি পুনরুদ্ধার করতে হলে শাসকগোষ্ঠীর ওপর চাপ বাড়ানো-কমানো নয় বরং বিরোধীদলীয় গণতান্ত্রিকদের সমর্থন করার এখনই সময়।