তুজলায় বসনীয় গণহত্যার স্মরণ: ‘ঘৃণা পোষণ না করলেও আমরা কখনোই ভুলবো না’

বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার তুজলার একটি রাস্তায় ২০২৩ সালের বসনীয় গণহত্যা স্মরণ অনুষ্ঠানের ঘোষণা — স্রেব্রেনিৎসায় নিহত ৮,৩৭২ জনের নামোচ্চারণ। ছবি: তুজলা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন অনুষদের শিক্ষার্থী পর্ষদ, অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

মূলত সংঘর্ষ-পরবর্তী গবেষণা কেন্দ্রের (পিসিআরসি) একটি প্রকল্প বলকান আলোচনায় প্রকাশিত রামো তুসিচের এই নিবন্ধটির একটি সম্পাদিত সংস্করণ একটি বিষয়বস্তু ভাগভাগি চুক্তির অধীনে গ্লোবাল ভয়েসেস পুনঃপ্রকাশ করেছে।

স্রেব্রেনিৎসার পতনের পরে ১৯৯৫ সালের জুলাইয়ে বেঁচে থাকা অনেক মানুষ জড়ো হওয়া তুজলায় প্রতি জুন ও জুলাই মাসে স্রেব্রেনিৎসার গণহত্যার স্মরণ করা হয়। এই বছর বার্ষিক স্মরণে ন্যায়বিচারের দাবি ও স্মরণের গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে অন্যান্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিক্ষোভ প্রদর্শন, স্মারক মিছিল ও গণহত্যার শিকারদের না্মোচ্চারণ করা হয়েছে। স্মরণের বার্তাটি স্পষ্ট: “আমরা ঘৃণা না করলেও আমরা কখনোই ভুলবো না।”

স্রেব্রেনিৎসা নারী সমিতির সভাপতি নুরা বেগোভিচ গণহত্যায় তার পরিবারের নিকটবর্তী ১৮ জন সদস্যকে হারিয়েছেন। তার আত্মীয়দের দেহাবশেষ চিহ্নিত ও শনাক্ত করার প্রক্রিয়াটি নতুন করে বেদনার সাথে স্বস্তিও এনেছে। গণহত্যায় নিহত দেহাবশেষ এখনা না পাওয়ার কারণে তার খালা বাদে তার প্রিয়জনদের সবাইকে পোটোকারির স্রেব্রেনিৎসা স্মৃতি কেন্দ্র কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তার অনেক আত্মীয়ের দেহাবশেষ শুধু আংশিকভাবে পাওয়া গেছে যার মধ্যে তার ভাইয়ের অবশিষ্টাংশ সবচেয়ে কম সম্পূর্ণ।

“আপনার প্রিয়জনের দেহাবশেষ কোথায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় তা না জানলেও দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়ার পরই আপনি অপরাধের আসল মাত্রা দেখতে পাবেন। তবেই আপনি বুঝতে পারবেন তারা আপনার প্রিয়জনের সাথে কী করেছে,” বেগোভিচ বলেন।

স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যার ২৮তম বার্ষিকী সম্পর্কে, তিনি বলেছেন গণহত্যা অস্বীকারের জেদ খুবই বেদনাদায়ক। “গণহত্যায় আপনি সবাইকে হারানোর পর কেউ যখন বলে গণহত্যা কখনো ঘটেনি, সেটা খুব বেদনাদায়ক এবং আঘাত দেয়। মনে হয় আমার কখনো কেউ ছিল না,” তিনি বলেন।

প্রতি মাসের ১১ তারিখে স্রেব্রেনিৎসা র নারীরা তুজলায় গণহত্যাকে ভুলে না যাওয়া নিশ্চিত করার পাশাপাশি ন্যায়বিচারের দাবিতে একটি বিক্ষোভ করে। “আমরা দাবি করছি যারা এটা করেছে তাদের শাস্তি হোক, তাদের জবাবদিহি করা হোক। সবাই দোষী নয়। অপরাধীদের নাম আছে,” অপরাধীদের খুঁজে বের করে চিহ্নিত করার গুরুত্ব তুলে ধরে বেগোভিচ বলেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন তারা কা্রো প্রতি ঘৃণা পোষণ করে না করলেও যা ঘটেছে তা তারা কখনোই ভুলবেন না। “যখন তারা গণহত্যাকে অস্বীকার করে, তারা আমাদের প্রিয়জনের অস্তিত্বকেও অস্বীকার করে। (তাহলে) আমাদের কাছ থেকে কে কেড়ে নিলো?” তিনি জিজ্ঞাসা করেন।

Amina Hodžić, source: private archive

আমিনা হোজিচ। ছবির উৎস: ব্যক্তিগত সংরক্ষণাগার, অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

তুজলা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন অনুষদের শিক্ষার্থীরাও গণহত্যাকে স্মরণ করে। টানা তৃতীয় বছরের মতো শিক্ষার্থী পর্ষদ তুজলার স্লোবোদা চত্বরে জনসমক্ষে গণহত্যার শিকারদের নামের একটি পাঠের আয়োজন করছে। “এর সাথে আমরা যা ঘটেছে তার উপর গভীর প্রতিফলনকে উৎসাহিত করতে চাই এবং এভাবে পড়ার মাধ্যমে প্রতিটি শিকারকে একটি কণ্ঠস্বর দিতে ও তাদের সেইভাবে দৃশ্যমান করতে চাই,” বলেছেন তুজলা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন অনুষদের শিক্ষার্থী পর্ষদ সম্মেলনের সভাপতি আমিনা হোজিচ।

স্মৃতির সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে এসব করা হলেও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি অন্যদিকে, যেখানে একটি ভিন্ন স্মৃতির সংস্কৃতি যুদ্ধাপরাধীদের উদযাপন করে।

“তরুণদের এই সংস্কৃতির চর্চা ও লালন করাটা ধ্বংসাত্মক। এই ধরনের জিনিস ও কর্মকাণ্ড অবশ্যই আমাদের জন্যে একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে এবং কোনটি সঠিক, কোনটি সত্য ও ন্যায্য তা দেখাতে হবে, কারণ বিশ্ব আমাদের উপর নির্ভর করে, “হোজিচ উপসংহারে বলেছেন।

স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যাকে ঘিরে স্মৃতির সংস্কৃতি বিশেষ করে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে লালিত হয়। এরকম একটি কর্মকাণ্ড হলো টানা দ্বিতীয় বছর তুজলা ক্যান্টনের বসনীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র (বিকেসি টিকে) আয়োজিত স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যা স্মরণের দিন।

তুজলা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন অনুষদের শিক্ষার্থীদের স্রেব্রেনিৎসার জন্যে পঠন। ছবি: তুজলা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন অনুষদের শিক্ষার্থী পর্ষদ, অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

“অনুষ্ঠান সুচিতে তিনটি বইয়ের প্রচার ও বিচারিক রায়ের একটি প্রদর্শনী রয়েছে। অনুষ্ঠান শেষে ১০ জুলাই ‘স্রেব্রেনিৎসা ৮,৩৭২র জন্যে শান্তিপূর্ণ মিছিল’ নামে একটি প্রতীকী পদযাত্রা রয়েছে, যেখানে তুজলার নাগরিকরা বিকেসি টিকে থেকে স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যার শিকারদের চত্বর পর্যন্ত একটি প্রতীকী ৮,৩৭২ পদক্ষেপের পদযাত্রা করে,” ব্যাখ্যা করেছেন সরকারি প্রতিষ্ঠান বিকেসি টিকেরএকজন বিশেষজ্ঞ জনসংযোগ সহযোগী নেদিম কুদিচ।

এসব অনুষ্ঠান স্মৃতির সংস্কৃতি গড়ে তোলা ও ক্ষমার পাশাপাশি ক্রমাগত স্মরণ উৎসাহিত করতে চায়। কোন ঘৃণা না থাকলেও নিহতদের বেঁচে থাকা আত্মীয়দের তাদের প্রিয়জনকে স্মরণ করে প্রার্থনা করার ও করার একটি জায়গা দেওয়ার জন্যে কবর দেওয়ার জন্যে শুধু নিখোঁজদের অবশিষ্টাংশ খুঁজে পাওয়ার আশা। সারাবছর ধরে ও বিশেষ করে ১১ জুলাই, বেগোভিচ স্রেব্রেনিৎসার জন্যে এই প্রার্থনাটি পুনরাবৃত্তি করেন:

আমরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি। শোক যেন আশা হয়ে ওঠে।.প্রতিশোধ যেন ন্যায়বিচারে পরিণত হয়। মায়ের অশ্রু প্রার্থনা হয়ে উঠুক। আর যেন স্রেব্রেনিৎসা না হয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .