
এভারেস্ট পর্বতশৃঙ্গের নিকটবর্তী ইমজা হিমবাহ গত ২০ বছরে একটি বড় হ্রদে পরিণত হয়েছে। ছবি: নেপালি টাইমসের কিরিল রুসেভের মাধ্যমে পাওয়া। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।
মূলত নেপালি টাইমসে প্রকাশিত এই নিবন্ধটির একটি সম্পাদিত সংস্করণ একটি বিষয়বস্তু ভাগাভাগি চুক্তির অংশ হিসেবে গ্লোবাল ভয়েসসে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে।
হিমালয়ের বরফ গলে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগজনক প্রতিবেদন প্রকাশ করার চার বছর পর বিজ্ঞানীরা এখন সমস্যাটি আগের চিন্তার চেয়েও গুরুতর বলে সতর্ক করেছে।
নতুন গবেষণায় হিমালয়ের তুষার, বরফ ও ভূগর্ভস্থ চিরহিমায়িত অঞ্চলের সবচেয়ে সঠিক মূল্যায়নে বলা হয়েছে: এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ হিমালয়ের হিমবাহগুলি তাদের বরফের ভরের ৮০ শতাংশ হারাতে পারে। অনুসন্ধানগুলি শুধু পর্বতগুলির জন্যে নয়, বিশ্বের উচ্চতম পর্বতের জলের উপর নির্ভরশীল ভাটির এশীয় দেশগুলিতে বসবাসকারী প্রায় দুই শত কোটি লোকের জন্যে গুরুতর পরিণতির কথা বলছে।
আরো পড়ুন: হিমালয়ের একটি জল সংকট মানে জলবায়ু সংকট
কাঠমুন্ডু-ভিত্তিক সমন্বিত পর্বত উন্নয়নের আন্তর্জাতিক কেন্দ্র আইসিআইএমওডি ২০১৯ সালে হিন্দুকুশ হিমালয় মূল্যায়ন প্রকাশ করলেও নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে হিমালয়ের হিমবাহগুলি ২০১০-এর দশকে আগের দশকগুলির তুলনায় ৬৫ শতাংশ দ্রুত অদৃশ্য হয়ে গেছে। সেই হারে আগামী দশকগুলিতে গলন ত্বরান্বিত হবে।
হিন্দু কুশ হিমালয়ের জল, বরফ, সমাজ ও বাস্তুতন্ত্র সমিতি (হাই-ওয়াইজ) প্রতিবেদন সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির উপর ভিত্তি করে পর্বতের গলে যাওয়া তুষার, বরফ ও ভূগর্ভস্থ চিরহিমায়িত অঞ্চল কিভাবে হিমালয়ের জল-অববাহিকার জল, বাস্তুতন্ত্র ও সমাজকে প্রভাবিত করবে তার ছবি আঁকে।
সূক্ষ্ণভাবে-পর্যালোচিত সমীক্ষাটি বিশ্বের এক চতুর্থাংশ জনগণকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহকারী এবং চারটি বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্যের হটস্পটের আবাসস্থলের গুরুতর পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করে।
হাই-ওয়াইজ প্রতিবেদনটি শতাব্দীর মাঝামাঝি যার পরে সেচ, গৃহস্থালি ব্যবহার, শিল্প ও জলবিদ্যুতের জন্যে হিমালয়ের নদীতে আরো কম জল পাওয়া যাবে সেই সময়কে “সর্বোচ্চ জল” চাহিদা বিবেচনা করে। একই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম আবহাওয়া এই ভূতাত্ত্বিক ও পরিবেশগতভাবে ভঙ্গুর পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধ্বস ও বন্যার ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলবে।

পশ্চিম নেপালের সাইপাল হিমালের দক্ষিণ মুখ গত ১৫ বছরে কমে যাওয়া বরফ দেখাচ্ছে। নেপালি টাইমসের মাধ্যমে পাওয়া ছবি। অনুমতিসহ ব্যবহৃত।
“জলবায়ু নিষ্ক্রিয়তা বাড়ছে,” বলে বাংলাদেশস্থ জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়নের আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের সলিম উল হক সতর্ক করেছেন৷ “এই প্রতিবেদন অনুসারে হিন্দুকুশ-হিমালয় (এইচকেএইচ) অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্যে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ৷ আমাদের অবশ্যই এখন এই অঞ্চল ও এর জনগণকে রক্ষার জন্যে কাজ করতে হবে।”
প্রতিবেদন অনুসারে ভঙ্গুর পার্বত্য বাসস্থানের উপর গলে যাওয়া বরফমণ্ডলের প্রভাব বিশেষভাবে তীব্র এবং এটি বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্যের উপর উপর্যুপরি প্রভাব ফেলবে।
“এইচকেএইচ-এর প্রতিবেশ-অঞ্চলের ৬৭ শতাংশ এবং এই অঞ্চলের চারটি বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্যের হটস্পটের ৩৯ শতাংশ সুরক্ষিত এলাকার বাইরে থাকায়এইচকেএইচ-এর অসাধারণ জীববৈচিত্র্য জলবায়ু প্রভাবের জন্যে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ,” প্রতিবেদনটিতে সতর্ক করা হয়েছে৷
হিমালয়ে বসবাসকারী প্রায় ২৪ কোটি এবং অববাহিকার ১৬টি এশীয় দেশের আরো ১৬৫ কোটি মানুষ হিমালয়ের বরফ গলে যাওয়ায় জলের ঘাটতিতে আক্রান্ত হবে। হিমালয়ের কৃষকরা ইতোমধ্যে চরম আবহাওয়ার কারণে ফসলের ক্ষতি, পশুখাদ্যের ঘাটতি ও গবাদি পশুর মৃত্যুর মুখোমুখি।
১২টি দেশের ৩৫ জন বিজ্ঞানীর তৈরি করা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, “বিপত্তিগুলি আরো জটিল ও ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে।”
প্রতিবেদনটি নীতিনির্ধারকদের বিশ্বের এক চতুর্থাংশ জনগণকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহকারী জলবায়ু পরিবর্তনের উপর্যুপরি প্রভাবগুলির জন্যে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এটি অনিবার্য আসন্ন ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় জরুরী আন্তর্জাতিক সমর্থন ও আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং সম্প্রদায়গুলিকে মানিয়ে নিতে সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছে।